Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

ভারত গৌরব জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা (পর্ব-২১) । বাসুদেব দাস

Reading Time: 2 minutes

জ্যোতিপ্রসাদের নাটকগুলিতে সামাজিকতা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং নারীর মহিয়সী রূপ তথাসক্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ চরিত্র সমূহের দুর্বলতানিষ্ক্রিয়তাএবং উদাসীনতা লক্ষ্য করার মতো । তিনি নাটকগুলিতে নারী চরিত্রকে প্রাধান্য দান করে পুরুষের চেয়েওসক্রিয় করে গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি নারী এক একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। নারীর প্রেম, ঈর্ষা,প্রতিশো্‌ধ, আত্ম বলিদান ইত্যাদি মানবীয়দোষগুণের  মধ্য দিয়েজ্যোতিপ্রসাদ নাটক গুলিতে প্রতিটি নারীকে অনন্য রূপে তুলে ধরেছেন। উষার প্রেম,চিত্রলেখারদায়িত্ববোধ, কাঞ্চনমতীর সততা, লভিতার দেশপ্রেমের সঙ্গে ইতিভেনের ঈর্ষার মধ্য দিয়ে নারী মনের বিচিত্র রূপ নাটক সমূহের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন।


আরো পড়ুন:ভারত গৌরব জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা (পর্ব-২০) 


মাত্র ১৪ বছর বয়সে রচিত ‘শোণিত কুঁয়রী’ নাটকের মুখ্য চরিত্র উষা আপন ব্যক্তিত্বে উদ্ভাসিতা,সকালের কিরণের মতো স্নিগ্ধ, নির্মল, সজীব এবং আকর্ষণীয়।নারীসুলভকমনীয়তা,লজ্জা,মান অভিমান,সরলতা তথা সখীর প্রতি বন্ধুত্বের দাবির সঙ্গে অন্তর ভরে থাকা প্রেমের আকুলতা উষাকে এক অপূর্ব মানবীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। উষার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিস্ফুটহয়েছে তাঁর অপরূপ রূপ লাবণ্য। অন্যদিকে চিত্রলেখাকে অঙ্কন করেছেন অনন্ত সৌন্দর্য তৃষ্ণার প্রতি ব্যাকুল, সৌন্দর্যের পূজারী বুদ্ধিদীপ্ত তথা সখীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে পারার মতো অশেষ ধৈর্য এবং সাহসে অসাধ্য সাধন করতে পারা একজন নারী হিসেবে। দেবতা-দানব, গন্ধর্ব কিন্নর প্রত্যেকেরই চিত্র অঙ্কন করতে পারার মতো অলৌকিক শক্তির অধিকারিণী চিত্রলেখা বিশেষ চেষ্টায় দেবতা থেকে দৈত্য পর্যন্ত প্রত্যেকের চিত্র অঙ্কন করে অবশেষে ঊষার স্বপ্ন কুমার অনিরুদ্ধকে চিত্রপটে তুলে এনে যেন কৃতার্থ হয়েছে।

 জ্যোতিপ্রসাদেরদ্বিতীয় নাটক ‘কারেঙরলিগীর’র মুখ্য দুটি নারী চরিত্র শেয়ালি এবং কাঞ্চনমতী। বলিষ্ঠ মনের অধিকারিণী কাঞ্চনমতী  নিজের প্রেমাস্পদের প্রতি মনের প্রেম  অক্ষুন্ন রেখে সামাজিক রীতিনীতি নতশিরে মেনে নিয়ে সুন্দর কোঁয়রের পত্নী হওয়ার জন্য এগিয়ে গেছে । সামাজিক পরিবেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোরমতো  সাহস তার নেই। অপযশ,অপমান ,দুর্নামের প্রতি সদাসতর্ককাঞ্চনমতী  সুন্দরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে  আত্মত্যাগকে একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেন সমাজের প্রতি ,পুরুষতান্ত্রিক সমাজের খেয়াল খুশি দাম্ভিকতার প্রতি এক বিদ্রূপ উপহাস তথা অবজ্ঞার সুর ও প্রতিধ্বনিত হয়েছে। মরেও অমর হয়ে রয়েছে এই দুই নারী।

জ্যোতি প্রসাদের প্রতিটি নাটকেই নারীর জ্যোতির্ময়ী রূপের প্রতিফলন ঘটেছে। পৌরাণিক, কাল্পনিক তথা বাস্তবের সংমিশ্রণে তৈরি প্রতিটি নারী চরিত্রই নাটক গুলিকে করে তুলেছে অধিক আকর্ষণীয় । নারীর সুখ-দুঃখ প্রেম- ভালোবাসা, ঈর্ষা- ত‍্যাগ ইত্যাদির মতো আবেগ অনুভূতিকে সূক্ষ্মভাবে নিরীক্ষণ করে প্রকাশ করা প্রতিটি নারীর চরিত্রই জ্যোতিপ্রসাদের সৃজনশীল যাদুস্পর্শেনবরুপ লাভ করেছে । প্রতিটি নাটকের প্রতিটি চরিত্রই যেন আমাদের অত্যন্ত পরিচিত, অত্যন্ত আপন হয়ে জীবন্তরূপে ধরা দিয়েছে।

ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন অনুধাবন করলে রবীন্দ্রনাথ এবং জ্যোতিপ্রসাদের মধ্যে এক সুমধুর জীবন পরিবেশের একতা অনুভব করা যায়। দুজনেই সম্পদশালী নাগরিক পরিবারের ব্যক্তি। স্বভাবে মার্জিত এবং সুশোভন, অথচ দুজনের মনের বাংলোতে কোনো ড্রইং রুম ছিল না, যা মদ গর্বী, অহংকারী, সবসময় উঁচু নিচুর ধারণা থাকা আভিজাত্যের দাম্ভিকতায় পূর্ণ। জন জীবনের জীবন কৃষ্টির আরাধনা ছাড়া দুজনেরই ছিল না কোনো প্রার্থনাগৃহ:

জনতার হৃদয়ে আমার সোনালি দেশ

আমি পরি বিশ্ববেশ

নতুন দৃষ্টিতে দেখি সৃষ্টি অনিমেষ।

নানা ভাষা

নানা জাতি- বর্ণ জিনি

                                                                                                                   

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>