কালপুরুষের কবিতাগুচ্ছ
কবি তরিকুল ইসলাম যিনি কালপুরুষ নামেই বেশি পরিচিত। আজ ১৬ আগষ্ট তাঁর জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
যুদ্ধ
লেজহীন একজন দীর্ঘ পুরুষ প্রেম করছে
একজন সুন্দরী ঝগড়াটে কুমারী মহিলার সঙ্গে
সুতরাং
যুদ্ধ শেষ
এখন ধীরে মাথাগুলো গোনা যাবে
রক্তাক্ত নদীগুলো সেচে ফেলে পানিও বদলে দিতে হবে
সঙ্গম
তোমার সাথে আবার দ্যাখা হবে
কোথায়? পুলসিরাতের শুরুতে
হলে ভালো অলৌকিক প্রশ্নসমূহ নিয়ে
আলোচনা করা যাবে
তারপর মাইলের পর মাইল
ঘোড়ায় চড়ে ঈশ্বরের সমুখে গিয়ে
দাঁড়াবো তিনি দেখতে পুরুষের মতো কিনা
প্রমাণ হয়ে গেলে
যেই পূর্ব প্রতিজ্ঞামতো চুমু খেতে উদ্যত হবো
প্রেম আমাদের থেকে বহুদূরে ঘোড়ার কেশরে জিনে হারিয়ে গেলো
শিশুরা গোল হয়ে শীতঘুমের মতো মা’য়েদের স্তনে শুয়ে আছে যেন
আমাদের রক্তে তখনও এই শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সঙ্গমের স্মৃতিটি ভেসে চলছে
মনে পড়বে
সরাইখানা
নরকের পশ্চিম দিকে সরাইখনায়
তলস্তয় ও হেমিংওয়ের দ্যাখা পাওয়া যাবে
নিশ্চিত জেনে পাপ সংগ্রহের ( পাপ কি কোনো প্রাচীন মুদ্রা? ) আগ্রহে মদ গিলি গোগ্রাসে
আর নারী ধর্ষণের পরিকল্পনা করি।
—এবার রাত্রির অপেক্ষা
ধর্ষণ কীভাবে করে অপর নারীকে?— অসফল আলোচনা শেষে
ভাগ্য কয়েন ছুঁড়ে দেই মাটিতে কেউ জেতে না
—এবার রাত্রির প্রতীক্ষা
সুন্দরী এক বসে আছেন একা
সান্ধ্য আজানের বিষণ্ণতা নিয়ে। রোমাঞ্চকর জুজু যাচ্ছে দ্যাখা
যাক
কতদূরে যাবে?
অই তো শ্মশানঘাট— দেহ পুড়ে গেলে তাঁরে কাছের জলে খুঁজে পাওয়া যাবে।
নরকের পশ্চিম দিকে কোনো সরাইখনা নেই— একটা পৃথিবী আছে
আওকিগাহারা
প্রত্যাখানের বেদনা নিয়ে ভাবি না
ভাবি— নবান্নের মৌসুম শেষ হলে (শেষ, যেহেতু হয়)
তোমার যদি গভীর অনুতাপ হয়
আর ততদিনে তুমিও গিয়েছো ভুলে ঠিকানা
আমার
আর
আমিও দিয়েছি উড়িয়ে আওকিগাহারা‘র দিকে ডানা
অরণ্য-বরফের গল্প শোনাবে কাকে?
কাকে বলবে;—”এই শরীর দিলাম তোমাকে”
ভেবে, ব্যথা পাই তবু প্রত্যাখানের বেদনা নিয়ে আর ভাবি না
প্রেমিকা, কেন অপরের হয়?
অপরের প্রেমিকার বুকের দিকে চেয়ে দিন কাটে যে লোকের,
তাঁর জন্য আমার বড় দুঃখ হয়। প্রেমিকা কেন যে অপরের
হয়? এই প্রশ্ন চা’য়ের কাপে রেখে ডান হাতে তুলে ধরি পেয়ালা বিষের—
বিষে মৃত্যু থাকে না, থাকে প্রেমিকার প্রথম বিয়ের নিমন্ত্রণে;
প্রশ্নটা উড়ে ঘুরে অহংকারী মাছি রূপে গোপনে
বসে গিয়ে লোকটার রাতের খাবারে— মনে
পড়ে— সুফিয়া, পাশা ঘরামীর ছোট মেয়ে আজও প্রতি সন্ধ্যায় একই
আয়াত তিলওয়াত করে ভুল উচ্চারণে মা’য়ের কবরে, লুকিয়ে দেখি
ক্রমেই সে রমণী ক্রমেই সে উজ্জ্বল ক্রমেই সে কী
এক অপার রহস্যে বসে থাকে নুয়ে, চালতা ফুল ঝরে;
কার ছায়া! এ কোন যুবক? মেয়েটার পাশে কী করে
সে? কেন সে জল ফ্যালে লুকিয়ে, আমার কবরে!
শূণ্য
তোমার মুখে সিগারেট আমার মুখে ধোয়া
এবার বন্ধ করো মার্গারেট অপর-সঙ্গে শোয়া
অপর জানে ভালো? তোমার প্রিয়, গোলাপ!
নিভিয়ে দাও আলো; বন্ধ করো প্রলাপ।
বসন রাখো খুলে; দ্যাখো আকাশজুড়ে তারা;
যাও সকল ভুলে; সকলই জেনো শূন্য, এই মুহূর্ত ছাড়া
সঙ্গমদৃশ্য
মায়ের সঙ্গে নিজ প্রেমিকের সঙ্গমদৃশ্য দেখে
যে যুবতী আত্মহত্যা করেছে বিবাহের পূর্ব রাতে;
তার কবর হ‘তে এক মুঠো মাটি এনে লাগিয়েছি কবিতা গাছ
শুনেছি শ্মশানমাটিতে ফসল ভালো হয়
রাজনীতি
শান্তির অর্থ হলো
যার বন্দুক আছে
যার নেই
তার মাথায় আপেল রেখে স্থির দাঁড় করিয়ে প্র্যাকটিস করানো
(কারণ যুদ্ধ আসণ্ণ এটা যেন কেউ ভুলে না যায়)
কারা মরবে কারা মারবে
কারা ফসলের জমিগুলো দখল কোরে ঘাসের চারা রোপন করবে
কারা মার্ক্স কারা ফ্রয়েড
কারা রক্ত দিয়ে রাজকুয়ো ভর্তি কোরবে
কারা সেই জল বেঁচে জীবিকা নির্বাহ কোরবে
কারা ধর্ষণ শেষে মেয়েকে ধর্ম শিক্ষা দিতে নিয়ে যাবে লুকিয়ে
কারা একটি রুটিকে তিন ভাগ কোরে চারজন শরণার্থীকে খেতে দিয়ে
জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যাবার প্রস্তাবে ঘোড়াকে গাধা ভেবে পেটে চড়ে বসে পরস্ত্রী‘র স্নানের জলের দিকে লক্ষ্য রেখে নাউজুবিল্লাহসহ
নবনির্মিত গীর্জার দিকে তাকিয়ে স্বস্তি পাবে
কারা নো ম্যানস ল্যাণ্ডে হাওয়ার চাষ কোরবে
কারা সংবিধান রচনা কোরতে গিয়ে মানচিত্রের উপর হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়বে
কারা সরকারী পুলিশ কারা বেসরকারী খুনি
কারা জমি মাপতে গিয়ে ভাঙা কবরে পড়ে মরে যাবে
কারা শুলে চড়ার অভিনয়ে দক্ষ জোকারটিকে ইহুদীর মাংশ খেতে দেবে
কারা চিতা কারা কবর
কারা বিবিসি কারা খবর
কারা ব্রোথেলের মাইকে স্বাধীনতা-ঘোষণা পাঠ শেষে পুনরায় শুরু কোরবে
কারা মাঠে কারা হাসপাতালে
কারা গুলিতে কারা ফাঁসিতে
কারা সন্ধ্যায় কারা সূর্যাস্তে
কারা পুঁজিবাদ কারা ধীরে কারা আস্তে
কারা অস্ত্র কারা ক্রেতা
কারা আপেলটিকে সঠিক মাথাটিতে বসাবার দায়িত্ব পালন করবে
ক্রমানুসারে লিখে লাল চিহ্ন দিয়ে রাখা
সৃষ্টিতত্ত্ব
তুমি যার সাথে রাত কাটাও
ভোরে তাঁকে দেখে মায়া হয় আমার
তাঁর চোখ তাঁর গ্রীবা তাঁর হাঁটার
সফল ভঙ্গীতে যুদ্ধজয়ী একিলিসের শিশু হত্যার অনুশোচনা, পাপ
তুমি যার সাথে দিন কাটাও
বিকেলে তাঁকে দেখে করুণা হয়। তাঁর
মুখ তাঁর দীর্ঘ কপাল তাঁর চা‘য়ে ঠোঁট রাখার
প্রশ্নবোধক নিষ্ফল চিহ্নে রাত্রির হাহাকার— মানুষ জন্মের অনুতাপ
দিনের লোকটির সঙ্গে রাতের লোকটির
দ্যাখা হয় সন্ধ্যার পানশালায়; অনেক ভিড়
ঠেলে তাঁরা মেয়েটিকে খোঁজে— “কোথায় সে এই গভীর সন্ধ্যায়?”
চিন্তার ভেতরে “গণতন্ত্র মুক্তি পাক” চিয়ার্সে একে অপরের মদ ক্রমে ঢেলে খায়
আমি তখন তোমাকে নিয়ে পৃথিবীর প্রথম শ্মশানে
ক্রমেই খুলে ফেলে বাহুল্য
পোশাকের অহং (যা মূলত কফিন কিংবা কাফনের তুল্য)
তিনঘণ্টা চুমুর প্রস্তুতি নেই— সৃষ্টিতত্ত্ব প্রমাণে
প্রেম ও মদ বিষয়ক গদ্য
আলোর গভীর
গুহায় মুখ রেখে দেখি মৃত্যুর ভয়াল শরীর
শুয়ে আছে; তার মুখ অন্ধকার দেবশিশু;–
প্রেম প্রসঙ্গে ডিসকাস করছেন সক্রেটিস-যিশুঃ
প্রেমে শান্তি আছে, শুনেছি;
(ধর্মগ্রন্থে যদিও লেখা নেই)
আর কিছু হেঁটে গেলে তার বাড়ি– জেনেছি;
অনেক ঘুরে অনেক শুয়ে পৌছেঁ দেখি সে নেই
দরজা বন্ধ। ফলকে লেখাঃ “ভালোবাসা মৃত্যুর সৎ বোন,
বাচঁতেও দেবে না, মরতেও দেবে না”
পাশের জানালায় কার মুখ, চেনা! যেন শাশ্বত আপন;
বস্তুত প্রেম এক ভয়ানক মিথ;– নেই তবু হাত ছাড়ে না
প্রেমিকার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। প্রেমিক গ্রামে পালায় সিফিলিস সঙ্গে
নিয়ে। প্রেম এসব কিছুই বোঝে না। এক শহর আক্রান্ত হলে অন্য শহরে যায়।
এবং প্লেগ, বসন্ত, HIV নিয়ে মানুষ যখন মৃত্যুর ভয়াবহতা প্রসঙ্গে
বক্তৃতা দেয়, সে হাসে, নর্তকীর পা‘য়ে নাচে আর মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে গোরখোদকের প্রিয় গান গায়।
প্রেম একটা সাপের বাচ্চা ( দুধ খায় করুণ মুখে)
রাত অন্ধকার হলে তোমাকেই কামড় দেবে;
যতই মেনে নাও যতই ক্ষমা করো জড়িয়ে রাখো বুকে
চোখ আঙুল চুল খাওয়া শেষে পরম স্নেহে ফুসফুস ছিড়ে খাবে
মদে দুঃখ আছে
যথার্থ বেদনা পাবেন কবিতার কাছে
(ধর্মগ্রন্থে যদিও লেখা নেই)
শান্তি তবু সমাধান তবু আছে সেখানেই
আমি কথা বলতে চাই
মসজিদে পড়ছে বোমা, মন্দিরেও পড়ুক;
যীশু আছেন ক্রুশে, কিছু শোক বুদ্ধদেবও করুক।
শান্তি আসবে কথা দিয়ে যা তোমার
রক্ত ঝরায়— জনশ্রুতিঃ যুদ্ধ নাম তার
আগুন জ্বালায় কারাখানা, ঝুলছে তালা আহারে!
সরকার গ্যাছে আনতে চাবি; মালিক গ্যাছে পাহাড়ে
মিছিল নেই আঁধার নেই ধ্বংস নেই, ধর্ম আর উন্নয়নে সত্য জ্বলে;
তোমার সাথে রাত কাটানোর ইচ্ছে আমি, লুকিয়ে রাখি অল্প জলে
মুখ সরিয়ে নিও না— যখন কেউ চুমু খেতে চায়;
চুমুতে পাপ থাকে না, পাপ থাকে অপ্রেমে— মিথ্যে ও ঘৃণায়।
সুন্দরবন নেই। আছে বৈদ্যুতিক বাঘ। সভ্যতার চমৎকার উম্মেষ!
বন্যা এলো! কোথায়? সোনালী জল। উন্নয়নে, যাচ্ছে ভেসে দেশ।
পৃথিবীর প্রথম আবিষ্কার সময়
সোমবার সন্ধ্যা ছ‘টায় তাঁকে আবিষ্কার করা হয়
আমার ধর্ম সত্য বাকি সব ভুল অর্থহীন
এসেছে নতুন প্রভু তিনিই মহানুভব তাঁকে ভোট দিন
মানুষ কিনা যাচাই হবে— কোন গ্রন্থ সে মানে?
জল নাকি পানি?— নাচে সে কোন গানে?
রাতের বেলা হাঁটছে কারা? কোরছে কারা বাঘ শিকার?
বাঘ যখন হরিণী খায়, হরিণ চোষে রক্ত কার?
চাঁদ নাকি পুলিশ— কী প্রয়োজন মানুষের?
মানুষ কেন অস্ত্র বানায়? প্রতীক্ষা করে যুদ্ধের!
মানুষের নেই। পাখির আছে যদিও ব্যক্তিগত ডানা
পাখিরা তবু আবিষ্কার করে না গুলি; মানুষ শিকারের কথা তারা ভাবে না!
সীমান্তে কেন পাহারাদার! আকাশেরও ভাগ হয়?
বাজির ঘোড়া হচ্ছে বুড়ো? মানচিত্রে সংশয়?
আমেরিকা, সু-প্রভাত;
কোথায় কবর? ইরাক নাকি আফগানিস্তান?— মাটি সেই সারে তিন হাত
পুঁজিবাদ মারে, শ্রমিক মরে;— জেতে না কেউ, হারে দুর্বল;
দিন শেষে কুরুক্ষেত্র, একই আঁধার— প্রেয়সীর চোখে একই জল।
চোখের জলের হয় কি ভাষা? (আততায়ী চোখ দ্যাখে না?) ধর্ম বুঝি প্রাণের আগে!
মানুষ যখন লাশ হয়ে যায়, খুনির বুকেই রক্ত লাগে
রক্তে ভেজে মা’য়ের চিঠি, পিতার চুরুট হয় না কেনা
জুয়ার গ্লাসে উঠছে শ্লোগান— বাড়ছে ক্রমে অনেক দেনা
এবং রাষ্ট্র জানে রাজনীতি, মৃতের তো আর ভোট নাই
আমরাই তাই করছি মিছিল— দিনের বেলায়ও ঘুম নাই
বালিতে মাথা ডুবিয়ে আরো কিছু কাল কাটিয়ে দিন, মশাই;
বউ পালালে, পাওয়া যায়— কিন্তু জীবন? হায়! মাত্র একটাই
কিন্তু আমি কথা বলতে চাই।— রাষ্ট্রীয় অনুমোদন আছে?
সমুদ্র কি অনেক বড়? সময়ের চেয়ে রহস্যময়?— নাবিক তবু বাঁচে
ফিরে যাবার প্রত্যাশায়;— স্থলে তার প্রিয়তমা, অনিরাপদ ঘর;
মানুষেরা মরে যাবে; উড়বে পতাকা? হাসবে ধর্ম? বাঁচবেন ঈশ্বর?
এখানে মৃত্যু বিক্রি হয়
“এখানে মৃত্যু বিক্রি হয়”
ছেলেটা এই নামে একটি দোকান দিয়েছিলো
যেখানে বিক্রি হতো আত্মহত্যা বিষয়ক বই—
শহরের প্রতিটি ডাস্টবিন, পতিতালয়, অভ্যন্তরীণ দেয়াল
যৌন চিকিৎসালয়ের দরজা, ধর্মালয়ের প্রধানতম জানালাসমূহে
সে টানিয়ে দিয়েছিলো অভিনব বিজ্ঞাপনঃ
‘আত্মহ্যতার দশটি উপকারিতা…’
‘আপনি যদি তরুণ হন, এটাই উপযুক্ত সময়…’
‘নিজেকে হত্যা করুন, পাপ হ্রাস করুন…’
কোনো বৃদ্ধ যদি তাকে প্রশ্ন করতো—
‘হে খোকা তুমি কেনো আত্মহত্যা করছো না?’
ছেলেটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে হেসে বলতো—
‘আপনি কেনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?’
আর প্রকৃত কোনো রূপসী এলে বলতো—
‘এই বই তাঁদের জন্য প্রযোজ্য নয়, যাদের ভালোবাসার ক্ষমতা রয়েছে’
