| 13 নভেম্বর 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প

অনুবাদ গল্প: চিতাবাঘ শিকার । কমলা দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

সমকালীন ভারতীয় প্রথিতযশা নারী লেখকদের মধ্যে কমলা দাস অন্যতম । তিনি একাধারে একজন কথাসাহিত্যিক, কবি এবং কলাম লেখক । তাঁর ছদ্মনাম নাম ছিল মাধবীকুট্টি । তিনি রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে ১৯৩৪ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন । তিনি মালয়ালাম ও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন । তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সামার ইন ক্যালকাটা’ ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় । ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর ছোটগল্প সংকলনগুলো হলো ‘এ ডল ফর দ্য চাইল্ড প্রস্টিটিউট’, ‘পদ্মাবতী: দ্য হার্লট অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’, ‘দ্য স্যান্ডাল ট্রিজ অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ এবং ‘দ্য কেপ্ট ও্যম্যান অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’। ‘মাই স্টোরী’ তাঁর আত্ম-জীবনী গ্রন্থ । তিনি অল্প সংখ্যক উপন্যাস রচনা করেন । সাহিত্য কর্মের স্বীকৃতি হিসাবে তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন । তিনি পঁচাত্তর বছর বয়সে (৩১ মে ২০০৯) মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে মৃত্যুবরণ করেন ।
গল্পসূত্র: ‘চিতাবাঘ শিকার’ গল্পটি কমলা দাসের ইংরেজিতে ‘প্যান্থার হান্ট’ গল্পের অনুবাদ । মালয়ালাম ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ভি সি হ্যারিছ এবং সি কে মোহামেদ উমর । গল্পটি লেখিকার ‘দ্য স্যান্ডাল ট্রিজ অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ ছোটগল্প সংকলনে অন্তর্ভুক্ত এবং সেখান থেকে নেয়া হয়েছে ।


মূল: কমলা দাস
অনুবাদ: ফজল হাসান

দস্তার পাত দিয়ে তৈরি ছোট্ট কুটির ঘরে আঠারো বছর বয়সী রুকমাবাঈ প্রদীপ জ্বালিয়েছে এবং ভাইয়ের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছে । মেঝের উপর টিনের একটা পাত্রের মধ্যে কয়েকটি ভূট্টার আটা দিয়ে তৈরি রুটি এবং অন্য আরেকটি পাত্রে কাঁচা মরিচ ও কাঁটা পিঁয়াজ রয়েছে । অকস্মাৎ যখন টুপি পড়া তিনজন লোক দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ঘরে প্রবেশ করে, তখন রুকমাবাঈ দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছিল এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল ।
‘এটা চিতাবাঘের গুহা?’ লোকগুলোর মধ্যে একজন রুকমাবাঈকে জিজ্ঞাসা করে । অন্য আরেকজন তার কাঁধ চেপে ধরে এবং তাকে টানাহেঁচড়া করে । তার পায়ে যে ব্যথার কাঁপুনি শুরু হয়েছে, তা অল্প সময়ের মধ্যে গলায় পৌঁছে এবং কন্ঠনালীতে আটকে যায় । সে চিৎকারও করতে পারেনি ।


আরো পড়ুন: কমলা দাসের বাংলা অনুবাদ গল্প : ও সিন্ধু, পরম রমণীয়


‘বন্ধুরাম, তুমি কী ওকে চাও না? প্রথম দেখাতেই মনে হবে সে অতিশয় কৃশ এবং হাড্ডিসার । কিন্তু ওকে স্পর্শ করো এবং দেখবে যে, সত্যি সে স্থূলকায় এবং কোমল ।’
তাদের মধ্যে একজন আঙুল দিয়ে রুকমাবাঈয়ের দেহের নরম জায়গায় ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে । বন্ধুরাম নামের লোকটি নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি খাটিয়ার উপর বসে আছে । সে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুকমাবাঈয়ের মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত দেখছিল ।
‘কোথায় চিতাবাঘ?’ বন্ধুরাম হুঙ্কার করে । ‘আমাকে বল, বাজে মেয়ে, চিতাবাঘ কোথায়?’
‘চিতাবাঘ?’ রুকমাবাঈ জিজ্ঞাসা করে । সে অনুভব করে যে, লোকগুলো মোটেও ভদ্র নয় ।
‘তোর ভাই টুক্কারাম । আমরা ওকেই চাচ্ছি,’ খাঁটিয়ায় বসা লোকটি বললো । ‘এই অসভ্য জন্তুটা সম্রাট শিবাজিকে অপমান করার সাহস দেখিয়েছে । কোথায় লুকিয়ে আছে, সেই যে কবি? ওর কল্লা কেটে আমরা চলে যাবো ।’
লোকগুলোর মধ্যে একজন পাত্র থেকে রুটি তুলে জানালার কার্নিশে ছুড়ে মারে ।
‘নোংরা মেথর,’ লোকটি বিড়বিড় করে । ‘তোদের গোত্রের সবাইকে মেরে ফেলা উচিত । পায়খানা সাফ করার লোক কবিতা লেখে?’
রুকমাবাঈ কান্নায় ভেঙে পড়ে ।
‘ভাই ছাড়া আমার আর কেউ নেই,’ কান্না জড়িত গলায় রুকমাবাঈ বললো । ‘দয়া করে আমাকে এতিম বানাবেন না ।’
‘তোর জন্য কী আমরা নেই?’ আলতো ভাবে রুকমাবাঈের উরোজে উষ্ণ হাত রেখে একজন জিজ্ঞাসা করে । রুকমাবাঈ পালানোর জন্য ঘুরে দাঁড়ায় । কিন্তু পেছনের দরজা বন্ধ । খাঁটিয়ায় বসা লোকটি ছাড়া বাকি দু’জন জোরে শব্দ করে হেসে উঠে ।
‘বন্ধুরাম, তুমি কী ওকে চাও না?’
‘আমার ভাই আপনাদের কী ক্ষতি করেছে?’ রুকমাবাঈ কঠিন গলায় জিজ্ঞাসা করে । ‘আমরা গরীব মানুষ । আমরা কোন অন্যায় করিনি । তা সত্ত্বেও আপনারা কেন আমার ভাইকে হত্যা করার কথা ভাবছেন?’
‘টুক্কারাম – সে কী তোর ভাই না? যে কি না কবিতা লেখে?’
‘সে কবিতা লেখে এবং গান গায় । তা কী অন্যায়?’
খাটিয়ায় যে পুলিশটি বসে আরাম করছিল, সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ।
‘তুই একটা কচি দুষ্ট! কিভাবে তর্ক করতে হয়, তুই তা-ও জানিস?’ লোকটি বললো । ‘বেশ্যার কাজ ছাড়াও তুই আইনজীবীর কাজ করিস, তাই না? আমার কাছে আয় ।’
অন্যরা জোর করে রুকমাবাঈকে লোকটির হাতে তুলে দেয় । রুকমাবাঈ চিৎকার করে কাঁদতে থাকে । লোকটি রুকমাবাঈকে জড়িয়ে ধরার সময় যে পুলিশটি চিৎকার শুনে ত্রস্তব্যস্ত হয়ে ছুটে আসে, সে উচ্চ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে, ‘কিসের হৈচৈ? এই বদ মেয়েটি রাতের বেলা ভদ্রলোকদের ঘুমাতে দেবে না?’
যে দু’জন পুলিশ দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল, তারা আগত পুলিশটির কানে ফিসফিস করে । তারপর একসঙ্গে সবাই হো হো করে হেসে উঠে ।
যেই মুহূর্তে ক্লান্ত রুকমাবাঈ নিচে পড়ে যায়, ঠিক সেই সময় তার ভাই কুটিরে প্রবেশ করে । তার হাতে কয়েকটা বই ।
‘আপনারা কী করেছেন?’ রাগী গলায় যুবকটি জিজ্ঞাসা করে । ‘আপনারা আমার নিরীহ বোনকে কী করেছেন?’
রুকমাবাঈ গভীর আর্তনাদ করে । তার পড়নের শাড়ি গুছিয়ে দিতে দিতে টুক্কারাম বললো, ‘রুকমা, আমার রুকমা, চোখ মেলে তাকাও ।’
‘তুই কী কবি টুক্কারাম?’ বন্ধুরাম নামের পুলিশটি জিজ্ঞাসা করে ।
যুবকটি মাথা নাড়ে ।
‘তোকে খতম করার জন্য আমরা এখানে এসেছি,’ টুপি পড়া লোকটি বললো ।
‘আজ থেকে আমরা চিতাবাঘ শিকার শুরু করছি,’ বললো বন্ধুরাম ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত