অভাব
শক্ত-নরম মাটির গর্ভ চিরে চিরে
জীবন বীজ টেনে আনতো
হলধরের শানিত হল-ফলা।
সেই জীবন বীজ দেহ ইঞ্জিনে দেয়
জ্বলন্ত কয়লার তাপ,
শরীর ছুটে চলে তারই শক্তিতে।
পেনটা কাগজের ওপর দৌড়াতে দৌড়াতে
কখন যে এসে দাঁড়ালো লাঙ্গলের সামনে!
তৈরি হয়নি শক্তি ঘর, কিছুর একটা অভাবে
এবার মাটির গর্ভেই হারিয়েছে বীজের প্রকাশ।
ছেঁড়া পালক
নীল আকাশের গায়ে
ঘোরাঘুরি করত সাদা পায়রাটা;
মাঠের বুক থেকে জীবন ভাগ করে নিত,
আর জল-হাওয়া থেকে প্রানের ঘ্রাণ।
ডানার পালক দিয়ে চিহ্নিত করত
শান্তির খোপগুলোকে।
এবারের জমি পারেনি জীবন দিতে,
হাওয়া শুধু চেষ্টা করেছিল ফুঁ দিয়ে প্রান ভরার।
জীবন বাঁচেনি।
ছেঁড়া পালক ছড়িয়ে পড়েছে এদিক ওদিকে।
প্রশ্ন
সূর্যের দিকে পিঠ করে
মাঠের কঠিন মাটির গন্ধ মেখে
ঘাম লেপা শরীরটাকে টানতে টানতে
ঘরে ফিরে ভাতের গন্ধে সারিয়ে নাও।
অথবা ঠান্ডা ঘরে ঘড়ির খচ্ খচ্ শব্দে কান রেখে
একটু বিরতির টিফিন টাইমে
চলে যখন একঘেয়ে বিরক্তির ফার্স্টফুড
তখন ভাতের কথা মনে করে মায়ের গন্ধ পাও।
চামচ হোক বা শক্ত হাতখানা…
প্রশ্ন করে বসে “আঃ এত শান্তি আর কোথায়?”
বৃষ্টিতে
অ্যালজেব্রা শিখেছে, জানে স্ট্যাটিস্টিক্সও
শখ বিদেশি গাড়ি ও বিদেশি ফোন…
অর্ধেকটা মনে আবার প্রেমিকারও আঁচড়।
ফেসবুক ও টিভির চোখে চোখ রেখে দেখছে
রাস্তায় বসে থাকা জীবনজ্যোতিদের।
তাদের গা বেয়ে ঝরে বৃষ্টির তরল রূপ।
তা দেখে শিরাতে ছুটে রক্তের মেট্রো,
পেশির সুতোতে টান;ডান হাতে কঠিন মুঠো,
শক্ত বামে ধরা দৃঢ় লাঙ্গল। উঠানে দাঁড়িয়ে
বৃষ্টিতে ভিজছে সেই প্রহ্লাদ চাষার ছেলেটাও।
শিকারি পাখির চঞ্চু
পাখির চঞ্চু থেকে ফসলের শীষ রক্ষায়
তারা ক্ষেতে দাঁড়িয়েছে কাকতাড়ুয়া হয়েও।
সে পাখিরা খেয়েছে ছড়িয়েছে অনেক,
ক্ষেতের থেকে হয়নি কোনো শীষের অভাব।
তাদের ডানা ক্ষেতের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
চঞ্চলতায় ভেসেছে নীল সোনালী আদিগন্তে।
আবালবৃদ্ধবনিতা ভেজা ভেজা মুখে
আজ সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে রাজপথে…
কাকতাড়ুয়া হয়ে; এক শিকারী চঞ্চু
ছায়া ফেলেছে ফসলের আগায়।
আগামীতে
যে দিন নাবালকেরা ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদবে,
নিরুপায় মায়েরা মুখে গুঁজবে-
তাড়া তাড়া নোট বা খিদে মেটার ক্যাপস্যুল।
আঙুল ছুটবে সুইচের উঁচু-নীচু রাস্তায়
চোখ ভাসবে স্ক্রিনে -পা কংক্রিটের মাথায়।
ক্লীব শরীরটা ফাটা ফাটা হবে জরার চাবুকে,
জন্মের চক্রে চক্রে নামবে কালির মেঘ
ঝরবে অ্যাসিড নাকে- চোখে- মুখে।
সেদিন প্রতিটি ক্ষুধার আগুন চায়বে
শুকনো রুটির তন্তু,গরম ভাতের গন্ধ।
বিবর্তন
কাদা-মাটির স্তরে ঢাকা শরীরে চাষা বাপ-
শ্রমের লিপিতে লেখে তার সন্তানের ভবিষ্যৎ,
যাতে কাটে ঠাণ্ডা ঘরে-স্পঞ্জের গদিতে বসে।
ঘামের বিনিময়ে ভালো খাবার, ভালো বইয়ের
চাকচিক্যে গ্রথন করে তার সন্তানের।
হ্যাঁ সত্য সত্যই,সে বসেছে ঠান্ডা ঘরে-
চেয়ারটাও নরম,বহু কর্মচারী এধারে ওধারে
তার ঘরটা ঠিক মেঘের পায়ের নীচে।
যেখানে সে বসে-কত মোটা মোটা বই;
সেখানেই সে লেখে কৃষকাধীকার উচ্ছেদ আইন।
তাঁদের শপথ
সেই সকালে বেরিয়েছিল
সন্ধেতে নিয়ে এসেছে এগ্রিকালচারের ডিগ্রি।
গর্ভিণী ফসল ধুঁকছে অপুষ্টে
কৃষকেরা ট্রাকের নীচে অপেক্ষায়,
পুষ্টি আদায়ে এসেছেন তাঁরা।
বিদেশি ডিগ্রিধারি খুঁজেই চলে
শস্যের অপুষ্টতার কারন।
তখন হাতল ছাড়া লাঙ্গল —
আর জোর ছাড়া মই নিয়েছে শপথ,
তাদের সন্তানেরা থাকবে দুধে -ভাতে।
আগুন
বুদ্ধিজীবিরা তাদের বুদ্ধি বিক্রি করেছে
চড়া দামে,থামিয়ে রেখেছে ঝড় —-
তাদের হাত মাথা দিয়ে।
তবে হাওয়া এখনো বয়েই চলেছে সামনে।
উড়ে চলেছে অধীকারের শুকনো পাতা,
রাজপথ গতি হীন,ট্রাক্টর নিঃশব্দে তার বুকে
নিথর পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
পালন করছে একাধিক পরিবার।
উঁচু উষ্ণীষের কাপড় ভিজছে ঘামে
অসহায় চোখে ঢালা অধীকারের আগুন।
আশা পথে
‘দূরের ঝাপসা আকাশে
যবে মিশে যাবে কর্কশ কিছু ডানা…’
সোঁদা মাটির গন্ধ, সবুজে ভেজা বর্ন
সেদিন জীবনটাকে ঠেলে দেবে
সবুজ থেকে সোনার রঙে।
মাঠের পর মাঠে ছড়িয়ে থাকবে
প্রানের আকর প্রানবন্ত হয়ে।
সেদিন শ্যামলী সে প্রানের কণা
ছড়িয়ে নেবে সারা গায়ে,দুই বাহু মেলে।
শান্তি মাখা কপোত উড্ডীন তোরনে
লাগাবে নব জীবন-ছটা।
সেদিন নবোদয়ের জাফরানে—
ভিজবে মাটির বুক খানি।
ঢালু ঢালু ক্ষেত বেয়ে
গড়িয়ে যাবে বাতাস আপন মনে।
এ প্রজন্মে দাঁড়াবে তবে
নব সভ্যতার সুস্থ শিশু।
ভরা পেটের সবল হাতে আবার
তুলবে লাঙ্গল, মুঠোয় ধরবে হাল,
মাটি মাতৃক জীবন সেদিন হাঁসবে শাঁখের রঙে।
জন্ম ১১ই ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে,পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে।লেখালেখির আঙিনায় পা রেখেছেন ২০১৭ সালে।মূলত কবিতায় লিখেন।প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘পমুর্ত‘ পত্রিকায়।লেখালেখি ছাড়াও ছবি আঁকেন।