| 25 এপ্রিল 2024
Categories
প্রবন্ধ রান্নাঘর সাহিত্য

রসিক কাজীসাহেবের খাওন টা  । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়  

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

বাঙালির জীবনের চেতনায় রবীন্দ্রভাবনার মতোই নজরুল ইসলামও তাঁর কবিতা আর গানের মধ্যে দিয়ে সেই ছোটো থেকেই আমাদের সঙ্গে জড়িয়ে। তিনি তাঁর লেখনীর সারল্যে, জীবনযাপনের একান্ত মুহূর্ত গুলিতে জড়িয়ে নেন আমাদেরও। নজরুল যে শিশু মন কে ছুঁতে পেরেছিলেন তা বলাই বাহুল্য।  শিশুসুলভ সারল্যে ছড়া কবিতায় খাদ্যানুষঙ্গও তাই বোধহয় উঠে এসেছে একাধিকবার।

শিশুর প্রতি ভালোবাসায় ভরপুর ছিলেন কাজীসাহেব । শিশুদের প্রতি যেন ছিল অনাবিল আস্থা। ভরদুপুরে খোলা মাঠে ছোটাছুটি, রোদ্দুরে ডাংগুলি খেলা, দুষ্টু মনোভাবে পাখির বাসায় ঢিল ছোড়া, গাছ বেয়ে পাখির ছানা চুরি করে খেলা, এর গাছের আম, ওর গাছের লিচু সাবাড় করা, কাঠবেরালির পেয়ারা খাওয়া… তাঁর নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল। রোমান্টিক কবির মন-মৌমাছি ঘাসের ওপারে মটরশুঁটির ক্ষেতে চোখ রাখত অথবা সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ঝিঙেফুলের ঢলঢল রূপ কালি আর কলমে প্রকাশ করত একাত্ম হয়ে কিন্তু তার মধ্যেও ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ত এক অপরিমিত রসবোধ।

সেসময় ছোটদের জন্য পাঠ্যবই লিখতেন আলী আকবর সাহেব। একদিন নজরুল ইসলামকে একটি পাণ্ডুলিপি দেখিয়ে মতামত চাইলে পুরো পাণ্ডুলিপিটি পড়ে নজরুল বললেন, আপনার পাণ্ডুলিপির ছড়াগুলো ছোটদের উপযোগী নয়। যদি বলেন তো আমি একটা ছড়া লিখে দিতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে আলী আকবর সাহেব অনুরোধ করলেন নজরুলকে একটি ছড়া লিখে দেওয়ার জন্য। নজরুল ইসলামও দু’খিলি পান মুখে পুরে লিখে ফেললেন সেই বিখ্যাত ‘লিচু চোর’।
‘বাবুদের তালপুকুরে/ হাবুদের ডালকুকুরে/ সেকি ব্যস করল তাড়া/ বলি, থাম-একটু দাঁড়া,
পুকুরের ঐ কাছে না, লিচুর এক গাছ আছে না…

আবার একদিন নজরুল বারান্দায় বসে আছেন। হঠাত্ তার চোখ পড়লো পুতুলের মতো ফুটফুটে এক সুন্দর মেয়ে অঞ্জলির ওপর। নজরুল দেখলেন, একটা পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ-ঠোঁট উল্টিয়ে, হাত-পা নেড়ে অঞ্জলি যেনো কার সঙ্গে কথা বলছে। সেই কথা আর শেষই হতে চায় না। নজরুল ভাবলেন, নিশ্চয়ই কেউ পেয়ারা গাছে উঠেছে। তার কাছে কাকুতি-মিনতি করে অঞ্জলি পেয়ারা চাইছে, কিন্তু গাছের ওপর যে, সে পেয়ারা দিচ্ছে না। নজরুল তো ছোটদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি ভাবলেন, অঞ্জলির হয়ে পেয়ারা চাইবেন। ছেলেটা দেয় তো ভালো। না দিলে নিজে গিয়েই নাহয় পেয়ারা পেড়ে দেবেন অঞ্জলিকে । মজার ব্যাপার হলো, অঞ্জলির সামনে গিয়ে কবি গাছের ওপর কাউকেই দেখতে পেলেন না। তবে অঞ্জলি কথা বলছিলো কার সঙ্গে?
নজরুল তখন অঞ্জলিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার সঙ্গে  কথা বলছিলে? অঞ্জলি বললো, কাকাবাবু! ওই দেখো দুষ্টু কাঠবেড়ালী। রোজ রোজ দুষ্টুটা পেয়ারা খেয়ে পালিয়ে যায়। আমাকে একটাও দেয় না। কাঠবেড়ালীর সঙ্গে অঞ্জলির এই মান অভিমানের ঘটনাটি নজরুলকে এতোটাই চমত্কৃত করলো যে, এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য লিখলেন ‘খুকী ও কাঠবেড়ালী’ নামের সেই কবিতা। ‘কাঠবেড়ালী! কাঠবেড়ালী! পেয়ারা তুমি খাও?/ গুড়-মুড়ি খাও! দুধ-ভাত খাও? বাতাবি লেবু? লাউ?…’ তাই বুঝি আজও শিশু-কিশোরদের হৃদয়পটে চিরভাস্মর কবি কাজী নজরুল।

সৃষ্টিশীল প্রিয় কবিও কিন্তু আপাতভাবে খুব সাদামাটা ছিলেন তাঁর খাওয়াদাওয়ায়। নামেই ভোজনবিলাসী, খ্যাঁটন পরিমিত।
একবার নজরুল গেছেন সিরাজগঞ্জে, আসাদ উদ্দৌলা সিরাজীর বাসায়। খাওয়াদাওয়ার পর সবাইকে দই খেতে দেওয়া হলো। কিন্তু সে দই আবার টকে গিয়েছিল। আর তা খেয়ে নজরুল আসাদ উদ্দৌলার দিকে তাকিয়ে চোখেমুখে অদ্ভুত ভঙ্গি করে বললেন, ‘তুমি কি এই দই তেঁতুল গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এলে নাকি?’ আর তা শুনে উপস্থিত সবাই তো হেসেই খুন!

তবে নজরুল ছিলেন আদ্যোপান্ত চা প্রেমী। মানে যাকে বলে চা খোর। শৈলেন নামে এক বন্ধুর কাছ থেকে কেবল চা খেতেন। আর প্রতিদিন শৈলেনের কাছ থেকে চা খাওয়ার জন্য নিত্যনতুন ফন্দি আঁটতেন। একদিন আর কোনো ফন্দি-ফিকির না পেয়ে শৈলেনের কাছে গিয়ে বললেন, ‘তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসেব করে রেখো, আপাতত দু পেয়ালা চা দাও।’ শৈলেন তো অবাক! এ আবার কেমন কথা! অনেক টাকা পাওয়ার সঙ্গে দু পেয়ালা, মানে দুই কাপ চায়ের কী সম্পর্ক? তিনি চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দু পেয়ালা কেন?’
কবি বললেন, ‘আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে টাকা হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনো দু পেয়ালা বাকি আছে।’ এমন কথার পর কোনো বন্ধু চা না খাইয়ে থাকতে পারে!
 তাঁর প্রবল আকর্ষণ ছিল পান-জর্দা আর চায়ের প্রতি। এই জর্দা প্রীতির প্রবলতা নিয়ে এক তথ্য দিলেন নজরুলগীতির বিশিষ্ট গায়িকা শ্রীমতী কৃষ্ণা মজুমদার।
সঙ্গীতাচার্য, নজরুলের গানের একনিষ্ঠ সাধক, শিষ্য এবং বহুদিনের সহকারী শ্রী সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কন্যা কৃষ্ণা দি জানালেন কাজীসাহেবের প্রিয় জর্দা রাসবিহারীর মোড়ের বিখ্যাত ছেদিলালের দোকান থেকে তিনিই কিনে আনতেন তাঁর গুরুর জন্য।
তাঁকে খাতা-কলম আর অফুরন্ত চা এবং পান-জর্দা দিয়ে বন্ধ ঘরে বসিয়ে দিলেই রচনা হত একের পর এক গান, কবিতা। খাবার নিয়ে তাঁর কোনোদিনই বাড়াবাড়ি ছিল না।
অসুস্থ হওয়ার পরে শরীর ঠিক রাখার জন্য তাঁকে খাওয়ানো হতো খুব সহজপাচ্য খাবার, নরম ভাত, সবজি ইত্যাদি। নজরুল গবেষক আসাদুল হকের কথায় অসুস্থ হওয়ার পর তিনি খুব খুঁটিয়ে দেখে খেতেন। আলু, কুমড়ো, পেঁপে যা-ই থাকুক না কেন কাটা সবজির আকার নিখুঁত না হলে তিনি ঠেলে খাবারের থালা সরিয়ে দিতেন। তবে যাই খাবার থাকুক সঙ্গে চাইই জর্দা, পান আর চা। নাশতায় তাঁর প্রিয় ছিল পরোটা ও ডিমের ওমলেট। বন্ধুবান্ধবের দাওয়াত বা কোনো অনুষ্ঠানে তাঁর জন্য পোলাও, কোর্মা, বিরিয়ানির ব্যবস্থা থাকলেও তাঁর পছন্দের খাবার ছিল মুগ ডাল, মুসুর ডাল, শুক্তো, পোস্ত এইসব। পালিতা কন্যা শান্তিলতা দেবীর স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায় যে কবি ঝিঙে আর শুক্তোর একটা রান্না খুব পছন্দ করতেন। আর পোস্ত দিয়ে রান্না বড় কই মাছও ছিল তাঁর প্রিয়। বাড়িতে মুরগি এবং খাসির মাংস এলেও আগ্রহ করে খেতেন। কিন্তু গরুর মাংস পছন্দের তালিকায় কোনোদিনই  ছিল না। তাঁর স্বাদ কোরক হাতড়ে বেড়াতো খাদ্যসুখ নয় নতুন নতুন সৃষ্টি সুখ।
নজরুল ইসলামের জীবনের আর্থিক টানাপোড়েন হয় একসময়। কিন্তু তাঁর দরাজ মন আর দিলদরিয়া স্বভাব আত্মীয় বন্ধুস্বজনের আপ্যায়নে খামতি রাখত না।
একদিন তাঁর ঘরে দানাপানি নেই। কোথাও থেকে একশো টাকা জোগাড় হয়েছে সারাদিনে। সেকালে একশো টাকা অনেক। মাথায় ভূত চাপলো অমনি। এলাহি ভাবে মাছমাংস, দই মিষ্টি কিনে কেটে কিছু বন্ধুবান্ধব কে নেমন্তন্ন করে সোজা ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরলেন।


আরো পড়ুন: রবির গ্যাস্ট্রোনমিক ফুর্তি


এবার নজরুলের মাছের শাড়ি আর হরিণ-মাছের প্রতিযোগিতার গল্প বলি।

প্রতিভা বসুর জীবনের জলছবি তে পাই নজরুলের কথা।
ঢাকায় সেবার ১৯২৮ সাল। কলকাতার গড়ের মাঠে ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানের খেলা দেখে শিয়ালদা রেলস্টেশনে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা মেইল ট্রেনটা দাঁড়িয়ে আছে দেখে নজরুলের মনে হল ঢাকা থেকে একটু ঘুরে আসতে। ব্যস! আগুপিছু না ভেবে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে সোজা উঠে পড়লেন ট্রেনে। ঢাকায় আছেন বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেন যিনি থাকেন বর্ধমান হাউসে। নজরুল সোজা এসে উঠলেন তাঁর বাড়িতে।

সেখানে তখন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন চলছে। অতএব রথ দেখা ও কলা বেচা হবে। যোগ দিলেন কাজীসাহেব  ।
উজ্জ্বল কমলা রঙের মোটা পাঞ্জাবি, ম্যাচ করে কাছা দেওয়া ধুতি, কাঁধে চাদর, মাথায় গান্ধি টুপিতে দশ দিক কাঁপিয়ে তাঁর অট্টহাসিতে মাতিয়ে তুললেন।বর্ধমান হাউসের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেগে নিচে নামছেন তিনি, কণ্ঠে গান। নিজের ‘নারী’ কবিতা আর তাঁর সবচেয়ে প্রিয় রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ আবৃত্তি করে শুরু করতেন তাঁর গান।

তা এই মাছের শাড়ি আর হরিণ-মাছের প্রতিযোগিতার কথা নজরুল শুনেছিলেন মোতাহার হোসেনের বাড়িতেই।বড় টেবিলে সেদিন খেতে বসেছেন নজরুল আর মোতাহার হোসেন। তাঁর বড় মেয়ে যোবায়দা মির্যা তখন ছোট। মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারে না। বাড়ির ভেতর থেকে কাঁটা বাছিয়ে সেও দিব্যি খেতে বসেছে টেবিলে। প্লেটে ছোট ছোট করে মাছের ভাগ। এক এক গ্রাসের সঙ্গে এক এক ভাগ খেতে হবে। ছোট্ট যোবায়দা খায় আর বাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘বাবা, তোমার প্লেট থেকে মাছের শাড়ি আর হরিণের মাংস দাও।’
নজরুল অবাক হলেন! এর মধ্যে মাছের শাড়ি আর হরিণের মাংস এল কোত্থেকে? মাছের তেলতেলে পিচ্ছিল ছাল যে মাছের শাড়ি, সে কথা জেনে খুবই উল্লসিত হলেন। আর হরিণ ও মাছের প্রতিযোগিতায় হেরে হরিণ মাছকে তার একটু মাংস নাকি কেটে দিয়েছিল, সেটাই যে বাদামী রঙের হয়ে মাছের গায়ে আজন্মকাল সেঁটে গেছে, সে কথাও নজরুল সেখানেই প্রথম শুনলেন। এর ফলে ছোট্ট যোবায়দার ভাগ্যে সেদিন নজরুলের প্লেট আর তার বাবার পাতের মাছের শাড়ি আর হরিণের মাংস এল ।

নজরুল চমৎকার রান্না করতে পারতেন। এমনকি জেলখানায় থাকাকালীন কবিতা লেখা আর সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি তিনি যখন রান্না করতেন সকলে খাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকত।
“নতুন খাবার”  কবিতায় তাঁর আজগুবি সব খাওয়াদাওয়া পড়লে মনে হয় তিনি ভোজনরসিক নিশ্চয়ই ছিলেন। তবে বাহুল্য ছিলনা।

কম্বলের অম্বল কেরোসিনের চাটনি,
চামচের আমচুর খাইছ নি নাৎনি ?
আমড়া- দামড়ার কান দিয়ে ঘষে নাও,
চামড়ার বাটিতে চটকিয়ে কষে খাও!
শেয়ালের ন্যাজ গোটা দুই প্যাঁজ
বেশ করে ভিজিয়ে, ঘুট্ করে খেয়ে ফেল!

কিম্বা

দাদার গায়ে কাদা সাথে ছেঁচা আদা
খুব কষে মাখিয়ে, বেরালীর নাকে
কিংবা কারু টাকে-
খেয়ো দেখি নেচি করে পাকিয়ে!

মজার মানুষের জীবনের বেশীরভাগ ঘটনাই মজার হয়। আম খাওয়া নিয়ে এমন এক মজার গল্প অনেকেরই হয়ত জানা।
এক নিদাঘ গ্রীষ্মের দুপুরে নজরুল সপরিবারে গরুরগাড়িতে করে যাচ্ছেন অনেক দূরের পথ। বেজায় গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা সবার। পথে এক বিশাল আমবাগান দেখে সবাই থামলেন সেখানে বিশ্রাম নিতে। বাগানে আমগুলোয় তখন সবে রং ধরছে। নজরুলের খুব লোভ হলো। এ আম তাঁকে খেতেই হবে।
বাগানের পাহারাদার এক মহিলার সঙ্গে নজরুল জুড়ে দিলেন তুমুল গল্প। কথায় কথায় জেনেও নিলেন যে তাঁর স্বামী বাগানের মালিকের বাড়িতে পাকা আম পৌঁছে দিতে গেছেন। নজরুল অবাক ভাব করে বললেন, ‘মাসি, আমরা তো সেই বাড়ি থেকেই আসছি। কিন্তু সেখানে তো ও রকম কাউকে দেখলাম না! আমি ওবাড়ির বড় মিয়াঁর ছোট জামাইয়ের ভাই। আজ আমরা চলে যাচ্ছি। বড়মিয়াঁ বললেন, বাগানের পাশ দিয়ে গেলে একটু আম নিয়ে যেতে। তাই তো থামলাম। আচ্ছা মাসি, কোন গাছের আম মিষ্টি বলো তো!’
নজরুলের আর কিছু করতে হলো না। অতঃপর সেই মাসিই সব ব্যবস্থা করে দিলেন।এমনি ছিল তাঁর প্রত্যুৎপন্নমতি। আমের সঙ্গে কোনোকিছুর কম্প্রোমাইজ নয়।
ফল খেতে খুব ভালোবাসতেন বলেই কী চৈতী হাওয়ার দোলা দেখে একফালি দ্বিতীয়ার চাঁদের ইহুদি দুল পরা মানস প্রেমিকা কে নিয়ে লিখে ফেলেছিলেন এমন কবিতা?  

“বউল ঝরে ফলেছে আজ থোলো থোলো আম,
রসের পীড়ায় টসটসে বুক, ঝরছে গোলাপজাম ।
কামরাঙারা রাঙল্ ফের
পীড়ন পেতে ঐ মুখের,
স্মরণ করে চিবুক তোমার, বুকের তোমার ঠাম
জামরুলে রস ফেটে পড়ে, হায় কে দেবে দাম!”

আমের মত এমন মজার আরেকটি গল্প রয়েছে তাঁর ইলিশ খাওয়া নিয়ে।

বর্তমান বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে একবার নিখিলবঙ্গ মুসলিম সম্মেলনে নজরুল আমন্ত্রিত। কবির সম্মানে দুপুরে এক বাংলোতে ভোজের আয়োজনে প্রথমে কবির পাতে এক টুকরা ইলিশ দেওয়া হলো। পদ্মার ইলিশ খেয়ে কবি খুব প্রশংসা করলেন। ইলিশের ব্যাপক প্রশংসা শুনে খাবার পরিবেশনকারী ছেলেটি তাঁকে আরেক টুকরা ইলিশ দিলেন। সেটিও কবি খেলেন তৃপ্তিসহকারে। তৃতীয় টুকরা ইলিশ দিতে ছেলেটি কাছে আসতেই কবি এবার বলে উঠলেন, ‘আরে, করছ কী? এত মাছ খেলে শেষকালে আমাকে বিড়ালে কামড়াবে যে!’

নজরুল খুব পান খেতেন। আর গানও গাইতেন খুব ভালো। সারা রাত নজরুল গান গেয়ে চলেছেন, মুগ্ধ হয়ে শুনছেন শ্রোতারা, একসময় এ ছিল চেনা দৃশ্য। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলত পান খাওয়া।

একদিন এক গানের আসরে চা-মুড়ি খেয়ে নজরুল মুখে পান পুরতে যাবেন, এই সময় একটি ছোট্ট মেয়ে মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করে বসল, ‘তুমি এত পান খাও কেন?’

প্রশ্ন শুনে নজরুল হো হো করে হাসতে হাসতেই মেয়েটিকে মিষ্টি স্বরে উত্তর দিলেন, ‘গান গাই যে!’

তথ্যসূত্র

আব্বাসউদ্দীন আহমদের দিনলিপি ও আমার শিল্পীজীবনের কথা
‘নজরুলের রসিকতা’ / তাপস রায়  (প্রথম আলো, ২২ মে ২০১৭)
বিভিন্ন সংবাদপত্র
সঞ্চিতা / নজরুল ইসলাম
নজরুল গবেষক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের বিভিন্ন লেখা
বিশেষ কৃতজ্ঞতা- নজরুলগীতি শিল্পী শ্রীমতী কৃষ্ণা মজুমদার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত