খেলোয়াড়দের প্রেম ও পরকীয়া । মেজবাহ্-উল-হক
‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’— বিখ্যাত গানের কথাটি সবার বেলায় প্রযোজ্য নয়। পৃথিবীতে অনেক মানুষই আছেন, যারা বার বার প্রেমে পড়েছেন। তবে প্রেমের ব্যাপারে ক্রীড়াবিদরা যেন সিদ্ধহস্ত। তারকাখ্যাতি ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে খুব দ্রুতই তারা ‘অফার’ পান এবং প্রেমে পড়ে যান। ঘরে স্ত্রী থাকার পরও অনেক ক্রীড়াবিদ বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে উদ্দাম জীবন কাটিয়েছেন। কেউ কেউ আবার প্রেমের কারণে কক্ষচ্যুতও হয়েছেন। প্রেম ও পরকীয়া যেন ক্রীড়াবিদদের কাছে ‘ডালভাত’! বিশ্বনন্দিত ক্রীড়াবিদদের বহুল আলোচিত প্রেম ও পরকীয়া নিয়েই এ আয়োজন।
প্রেমের জগতে অনন্য
দিয়েগো ম্যারাডোনা [ ফুটবলার, আর্জেন্টিনা ]
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা শুধু ফুটবল বিশ্বেই নয়, প্রেমের জগতেও সুপারস্টার! জাদুকরী ফুটবলশৈলী উপহার দিয়ে তিনি যেমন দুনিয়া মাত করে দিয়েছেন, তেমনি প্রেমের ময়দানেও কারিকুরি কম দেখাননি। ঘরে স্ত্রী থাকতেও বান্ধবী নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন দ্বিধাহীনভাবেই। আর্জেন্টিনা কিংবদন্তির প্রেম-উপাখ্যান জানতে হলে ফিরে যেতে হবে অনেক পেছনে। সেই আশির দশকে চোখ রাখতে হবে। ম্যারাডোনা ফুটবল বিশ্বে তারকা খ্যাতি পাওয়ার আগে থেকেই ক্লদিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক। দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ৭ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে। যদিও বিয়েতে খুব একটা বিশ্বাসী ছিলেন না ম্যারাডোনা। তারপরও দীর্ঘদিনের বান্ধবীর আবদার মেটাতে গিয়েই গাঁটছড়া বাঁধেন। ম্যারাডোনা ও ক্লদিয়ার ঘর আলো করে আসে দুই মেয়ে— দালমা ও জিয়ান্নিনা। ধীরে ধীরে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে ম্যারাডোনার। কিন্তু দুই মেয়ের কথা চিন্তা করেই তারা সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখছিলেন বছরের পর বছর। তবে ২০০৪ সালে চূড়ান্তভাবে ক্লদিয়া ও ম্যারাডোনা আলাদা হয়ে যান। তবে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও দুই মেয়ের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ম্যারাডোনার। এরপর ইতালিয়ান এক তরুণীর প্রেমে পড়েন ম্যারাডোনা। নেপোলিতে খেলার সময় অনেক রাত এক ছাদের নিচেই কাটিয়েছেন ওই ইতালিয়ান বান্ধবীর সঙ্গে। সে সম্পর্কও টুটে যায়। তবে ইতালিয়ান তরুণীর দিয়েগো সিনাগ্রা নামে একটি সন্তান ছিল। সেটি ম্যারাডোনার সন্তান বলে অনেক দিন পর দাবি করেছিলেন। যদিও ম্যারাডোনা প্রথমে স্বীকার করেননি। তবে আদালতের রায়ের পর মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৯৩ সালে আদালত ঘোষণা দেন, সিনাগ্রা ম্যারাডোনারই সন্তান। ক্লদিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ম্যারাডোনার জীবনে অনেক নারী এসেছে। কখনো শোনা গেছে, আর্জেন্টাইন মডেল মারিয়া বেলেন ফ্রান্সিসের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন ছিয়াশির মহানায়ক। আবার কখনো সিলভিনা লুনা ও ওয়ান্দা নারার নামও শোনা গেছে। ২০১০ সালে ম্যারাডোনা যেন অনেকটা ঘোষণা দিয়ে ভেরোনিকার সঙ্গে প্রেমে মজে যান। ভেরোনিকার সঙ্গে সম্পর্ক চুকে যেতে না যেতেই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির হূদয়ে স্থান করেন নেন রোসিও অলিভা। এই অলিভাই ছিলেন দুবাইয়ে ম্যারাডোনার ছায়াসঙ্গী। কোচিংয়ের বাইরে পুরো সময় তিনি অলিভাকে নিয়েই মেতে থাকতেন। হঠাৎ একদিন দুবাইয়ের বাড়ি থেকে তার কিছু মূল্যবান জিনিস চুরি করে পালিয়ে যান ২৪ বছর বয়সীয় ম্যারাডোনার এই প্রেমিকা! সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, ইভা আমোদেও নামে সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ডেটিং করছেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে তাদের গভীর রাতে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গেছে। যদিও বিষয়টি এখনো স্বীকার করেননি ম্যারাডোনা।
অশ্লীল মেসেজ
শেন ওয়ার্ন [ ক্রিকেটার, অস্ট্রেলিয়া ]
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ক্রিকেট দুনিয়ায় এক বিস্ময় বোলার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঘূর্ণির জাদুতে ২২ গজে একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন। ১৪৯ টেস্টে নিয়েছেন ৭০৮টি উইকেট। ক্যারিয়ারে ৩৭ বার ইনিংসে ৫টি কিংবা তার বেশি উইকেট শিকার করেছেন। অন্তত ১০টি টেস্টে ১০টি করে উইকেট নেওয়ার বিরল রেকর্ড আছে তার। টেস্টে তিন হাজারের বেশি রান (৩,১৫৪ রান) করে নিজেকে পারফেক্ট অলরাউন্ডার হিসেবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। ক্রিকেট মাঠে যেমন রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন, পাশাপাশি দুষ্টমিরও শিরোমণি ছিলেন ওয়ার্ন। এ কারণে ‘ব্যাডবয় অব ক্রিকেট’ নামে তার ব্যাপক পরিচিতিও আছে। চুক্তিভঙ্গ করে ধূমপান, ফিক্সিং কেলেঙ্কারি, মাদকদ্রব্য গ্রহণ— এসব করা ছিল ওয়ার্নের কাছে ডালভাত। তবে অসি লেগ স্পিন কিংবদন্তি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন পরকীয়ায় জড়িত হয়ে। অনেকবার তিনি মিডিয়ার শিরোনামে পরিণত হয়েছেন নারী কেলেঙ্কারির জন্য। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ওয়ার্নের নামের পাশে ‘কেলেঙ্কারি’ শব্দটি জুড়ে যায়। প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এক প্রোটিয়া নারী অভিযোগ করেন শেন ওয়ার্নের বিরুদ্ধে। ভদ্রমহিলার অভিযোগ, ওয়ার্ন তাকে বেশকিছু অশ্লীল মেসেজ পাঠিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্নও তাকে ‘প্রতারক’ হিসেবে মিডিয়ায় প্রচার করে দেন। সে যাত্রায় পার পেয়ে যান ওয়ার্ন। সবাই ভেবেছিলেন হয়তো ওয়ার্নকে ফাঁদে ফেলতেই ওই নারী ফন্দি করেছেন। কিন্তু অসি কিংবদন্তি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান ২০০০ সালে আবার। সেবার এক ব্রিটিশ নার্সকে একই ধরনের অশ্লীল মেসেজ পাঠান। ধরে পড়ে যাওয়ায় শাস্তিও পেতে হয় তাকে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া শাস্তি হিসেবে ‘সহ-অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয় ওয়ার্নের কাছ থেকে। তবুও শিক্ষা হয়নি ওয়ার্নের। তিনি যেন আরও বেপরোয়া হয়ে যান। ২০০৫ সালে নারী কেলেঙ্কারির জন্য ফের সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে যান ওয়ার্ন। মিডিয়ায় আসে, ইংল্যান্ড সফরের সময় ওয়ার্ন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। হাতেনাতে ধরাও পড়েন ওয়ার্ন। এবার সংসার ভেঙে যায় অসি কিংবদন্তির। পত্রিকায় আরও নানা খবর বের হতে থাকে একের পর এক। তারপরও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্ত্রী সিমিওন কালাহান আরেকবার চেষ্টা করেন সংসার বাঁচানোর। ২০০৭ সালের এপ্রিলে দুজন একসঙ্গে আবার বসবাস শুরু করেন। কিন্তু নিজের চরিত্র বদলাতে পারেননি ওয়ার্ন। তাই তাদের চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটে যায়। স্ত্রী সিমিওনে কালাহানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ওয়ার্ন যেন মুক্ত হয়ে যান। সপ্তাহ পার হতে না হতেই হলিউড অভিনেত্রী এলিজাবেথ হার্লির রোমান্সে মশগুল হয়ে যান। সেখানেও কিছুদিন পড় বিচ্ছেদ ঘটে। কারণ, লিজের সঙ্গে প্রেমের সময় মেলবোর্নের ব্যবসায়ী অ্যাডেলে অ্যাঙ্গেলেরিকে অশ্লীল মেসেজ পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়েন ওয়ার্ন।
যে কারণে সংসার ভাঙল
টাইগার উডস [ মার্কিন গলফার ]
সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদদের একজন গলফার টাইগার উডস। নিজের সেরা সময়ে বছরের পর বছর বিশ্বের শীর্ষ ধনী ক্রীড়াবিদ ছিলেন। একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে গলফের র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর অবস্থানে ছিলেন। গলফে সবচেয়ে বেশি মেজর ওপেন জয়ের রেকর্ডও তার দখলে। ক্রীড়াঙ্গনের সফলতার পাশাপাশি টাইগার সংসার জীবনেও ছিলেন সুখী। তার সুখের সংসারে ছিল— স্ত্রী এলিন নর্ডিগ্রেন, ৮ বছরের সন্তান স্যাম ও ৬ বছরের চার্লি। শুধু সেরা ক্রীড়াবিদই নন, টাইগার মানুষ হিসেবেও ছিলেন ভীষণ অমায়িক ও ভদ্র। ২০০৯ সালের শেষের দিকে হঠাৎ বেরিয়ে আসে টাইগারের অন্ধকার জগৎ। নাইটক্লাবের ম্যানেজার র্যাকেল উচিটেল নামে এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রয়েছে তার। বিয়ে না করেও বছরের বছরের পর বছর তারা সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। সে কথা মিডিয়াও জানতে পারেনি। জানার কথাও নয়, টাইগারের বিরুদ্ধে সন্দেহ করার মতো কোনো আচরণই খুঁজে পায়নি কেউ। কিন্তু ২০০৯ সালের শেষের দিকে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বেরিয়ে আসে একের পর এক রহস্য। সংবাদকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতে প্রেমিকা সেই নাইটক্লাবের ম্যানেজারকে নিয়ে পালাতে গিয়ে তার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। তারপর জানাজানি হয়ে যায় সবকিছু। বিভিন্ন পত্রিকায় খবর বের হতে থাকে, শুধু ওই মহিলার সঙ্গেই নয়, গৃহপরিচারিকা থেকে শুরু করে অ্যাথলেটসহ বহুজনের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখে চলেছেন টাইগার। তারপর স্ত্রী নর্ডিগেনও তাকে ত্যাগ করে চলে গেলেন। গলফেও ফর্ম হারালেন টাইগার উডস। তবে গোটা দুনিয়া টাইগারের নারী কেলেঙ্কারির খবর জানলেও তার দুই সন্তান স্যাম ও চার্লি কিছুই জানতে পারেনি তার বাবা সম্পর্কে। সন্তানরা শুধু হঠাৎ দেখল তাদের বাবা-মা আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন।
প্রেমিক বদল
মারিয়া শারাপোভা [ রাশিয়ান টেনিস খেলোয়াড় ]
রাশিয়ান টেনিসকন্যা মারিয়া শারাপোভা। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই গ্র্যান্ডস্লাম জিতে আলোচনায় আসেন। তবে কোর্টের পারফরম্যান্সের চেয়ে তার রূপের কারণে হু হু করে বাড়তে থাকে ভক্ত-অনুরাগীর সংখ্যা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু রূপের কারণে সেরেনা উইলিয়ামসের মতো টেনিস তারকাকে ছাপিয়ে নারী টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় তার। রূপ, গুণ, অর্থ ছাড়াও মারিয়া শারাপোভা ‘প্রেম’ করার ক্ষেত্রেও অনন্য। যেন পরিধেয় বস্ত্রের মতোই ঘন ঘন প্রেমিক বদলে ফেলেন তিনি। গায়ক, প্রযোজক থেকে শুরু করে সতীর্থ টেনিস খেলোয়াড়ও আছে তার দীর্ঘ প্রেমিকের তালিকায়। সব শেষ নামটি হচ্ছে— গ্রিগর দিমিত্রোভ। যার সঙ্গে কিছু দিন আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। দুই বছর একই ছাদের নিচে কাটানোর পর তারা আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন। ২০০৪ সালে উইম্বলডনের শিরোপা জেতার পরই প্রকাশ্যে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন শারাপোভা। প্রথম প্রেমিকের নাম— অ্যাডাম লেভিন। শারাপোভার চেয়ে আট বছরের বড় লেভিন ছিলেন গায়ক। ‘মারন ফাইভ’ নামে তার একটি জনপ্রিয় রক ব্যান্ড দল ছিল। তবে সম্পর্কের শুরু থেকেই দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে বিচ্ছেদও হয়ে যায়। ২০০৫ সালে টেনিস তারকা অ্যান্ডি রডিকের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছু দিন পরই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন শারাপোভা। এরপর নতুন করে সম্পর্কে জড়ালেন আমেরিকার চলচ্চিত্র প্রয়োজক চার্লি এবেরসোলের সঙ্গে। এখানেও সেই পুরনো রোগ! সম্পর্কও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এরপর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এক বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সঙ্গে। ২০০৯ সালে সাশা ভুয়াচিচের সঙ্গে মারিয়ার সম্পর্ককে অনেকে স্থায়ী বলেই ধরে নিয়েছিলেন। একসঙ্গে খোলামেলাভাবেই ঘুরে বেড়াতেন। ভক্তরা ভেবেছিলেন এবার স্লোভেনিয়ার এই পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সঙ্গেই হয়তো বিয়ের কাজটাও সম্পন্ন করে ফেলবেন শারাপোভা। সত্যি সত্যি ২০১০ সালে সবাইকে অবাক করে তারা বাগদানও সম্পন্ন করে ফেলেন। হঠাৎ সংবাদমাধ্যমে খবর হয়, শারাপোভা সন্তানসম্ভবা।
সংসারে ঝড়
ওয়েইন রুনি [ ইংলিশ ফুটবলার ]
ইংলিশ সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ গোটাবিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে ২০১০ সালে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের স্পট ফিক্সিংয়ের খবর প্রকাশ করে। যে সপ্তাহে পাকিস্তানি তিন ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমির, সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফের ফিক্সিংয়ের খবর ছাপানো হয়েছিল ওই একই সংখ্যায় একটা ঘোষণা ছিল— ‘পরের সপ্তাহে থাকবে বিস্ময়কর আরেকটি খবর।’ পুরো একটা সপ্তাহ যেন পাঠকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল পত্রিকাটি। সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ঠিকই পরের সপ্তাহে বোমা ফাটায় পত্রিকাটি— ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় ফুটবলার ওয়েইন রুনির যৌন কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ করে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ত্রী কলিন অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময় যৌনকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা ফুটবলার ওয়েইন রুনি! জেনি থমসন নামের ২১ বছর বয়সী এক যৌনকর্মী পত্রিকাটির কাছে রুনির সঙ্গে সম্পর্কের কথা অকপটে স্বীকারও করেন। টানা বেশ কয়েক মাস একটি পাঁচতারকা হোটেলে তাদের সম্পর্ক চলেছে। জেনির দাবি, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা থাকার পরও রুনি তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে কোনো রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব্বে ভোগেননি। এমনকি ম্যানইউ তারকার মধ্যে কোনো অপরাধ বোধও নাকি কাজ করেনি। রুনির সঙ্গে ইংল্যান্ড দলের পার্টিতেও অংশ নিয়েছেন তিনি। দলের কয়েকজন ফুটবলারও নাকি তাদের মেলামেশা সম্পর্কে জানতেন। নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডকে জেনি বলেছিলেন, ‘ক্যাসিনোতে আমাদের প্রথম দেখা। তারপর মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান হয়। রুনি আমার সঙ্গে একান্তে কথা বলার প্রস্তাব দেন। রাত ৩টার দিকে আমি ও আমার বান্ধবীরা ক্যাসিনো ছেড়ে আসার সময় রুনির একটি এসএমএস পাই। এসএমএসে তিনি আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ার প্রস্তাব দেন।
প্রেমিকা বদলের ওস্তাদ
সিআর-সেভেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো [ পর্তুগিজ ফুটবলার ]
ঘন ঘন প্রেমিকা বদলানোয় ওস্তাদ পর্তুগিজ তারকা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এক সম্পর্ক ভাঙার পর আরেক সম্পর্কে জড়াতে সময় লাগে না রিয়াল মাদ্রিদ তারকার। রাশিয়ান সুন্দরী ইরিনা শায়াকের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার কয়েক দিন পরই শোনা যায়, সিআর-সেভেন স্প্যানিশ টিভি সাংবাদিক লুসিয়া ভিয়ালনের সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়া সেরে ফেলেছেন। এখন শোনা যাচ্ছে, দুই সন্তানের জননী এক ব্রাজিলিয়ান নারীর সঙ্গে রোনালদোর প্রেম তুঙ্গে। যদিও ওই নারী রোনালদোর চেয়ে চার বছরের বড়। সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলার সময়ই তার নারী আসক্তি দেখা গেছে। তবে কোনো সম্পর্কই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কখনো বেশি দিন নিঃসঙ্গও থাকতে হয়নি রোনালদোকে। এবার ব্রাজিলের সুন্দরী মডেল আলেজান্দ্রা অ্যামব্রোসিওর সঙ্গে সময় কাটিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে থাকার সময়ের ছবি ও ভিডিও টুইটারে পোস্ট করেছেন রোনালদো। তবে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি এখনো। তবে টুইটারে রোনালদো ও অ্যামব্রোসিওর স্ট্যাটাসে সন্দেহের অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়। যেদিন তারা একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন একই দিন টুইটারে ভিডিও পোস্ট করে রোনালদো বলেন, ‘হায়! আমরা এইমাত্র ফটোশুট শেষ করলাম। আলেজান্দ্রার সঙ্গে দারুণ সময় কাটালাম। সে অসাধারণ। সে দারুণ একটা কাজ করেছে। তবে কী কাজ করেছে তা এখনই প্রকাশ করছি না। কারণ, সেটা গোপন প্রকল্প। আশা করছি প্রকাশ হওয়ার পর আপনারা পছন্দ করবেন।’ অন্যদিকে ব্রাজিলের ৩৪ বছর বয়সী এ মডেলও টুইটারে একটি ভিডিও প্রকাশ করে গোপন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন। ভক্তদের ধারণা, গোপন প্রকল্পটি ‘প্রেম’ ছাড়া আর কিছু নয়। তাই বলে শেষ পর্যন্ত দুই সন্তানের জননীর সঙ্গে প্রেম! অনেক ভক্তই রোনালদোর ফ্যানপেজে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন।
নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত
কেভিন পিটারসেন [ ইংলিশ ক্রিকেটার ]
ইংল্যান্ড দল থেকে ‘বিতাড়িত’ হওয়ার পর কেভিন পিটারসেন যেন মানসিকভাবে কিছুটা অবসন্ন হয়ে পড়েন। দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতে থাকেন। এ সময় ভ্যানিসা নিমো নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় কেপির। নিমো নানাভাবে পিটারসেনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। কেপি যাতে ‘বিতাড়িত’ হওয়ার যন্ত্রণায় না ভোগেন এ জন্য বিভিন্ন গল্প-গুজব করতেন। কিন্তু এক মাস সম্পর্কের পর পিটারসেন ওই নারীর সঙ্গে হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে ওই নারী অভিযোগ করেন, কেপি তাকে না জানিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তাদের মধ্যে এক মাস ঘনিষ্ঠ মেলামেশা হয়েছে। তবে কেপি তাকে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য জোর করলেও তিনি তা এড়িয়ে গেছেন। শুধু পিটারসেন নন, ক্রিকেটাঙ্গনে প্রেম ও পরকীয়ার ঘটনা রয়েছে অহরহ। ২০০০ সালে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম, সাকলাইন মুস্তাক ও শহীদ আফ্রিদিরা নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। ২০০০ সালে করাচির এক হোটেলে অনেক তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায় আফ্রিদিকে। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন হাসান রাজা ও আতিক উল জামান। যদিও পরে আফ্রিদির বক্তব্য ছিল যে, করাচির হোটেলে মেয়েরা মূলত অটোগ্রাফ নিতেই তার কাছে গিয়েছিলেন। নব্বই দশকে একবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে সেখানকার বিখ্যাত স্ট্রিপ ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করেন ওয়াসিম আকরাম ও সাকলাইন মুস্তাক। পাকিস্তানের মিডিয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল।
রুবেল-হ্যাপীর প্রেম-কাহিনী
রুবেল হোসেন [ বাংলাদেশের ক্রিকেটার ]
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ২০১৫ সালের স্মরণীয় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্রিকেটার রুবেল হোসেন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপীর প্রেম-কাহিনী। হ্যাপী থানায় অভিযোগ করার পরই বিষয়টি গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তারপর বুড়িগঙ্গায় অনেক ‘পচা’ প্রবাহিত হয়েছে। রুবেলকে তিন দিন কারাগারেও থাকতে হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর মিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন ৯/১ ধারায় রুবেলের নামে মামলা করেন হ্যাপী। তার অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুবেল তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। বিষয়টি ছিল বেশ স্পর্শকাতর। একদিকে রুবেল দলের নিয়মিত ক্রিকেটার, অন্যদিকে মামলাটি নারী নির্যাতনমূলক! মামলাটি নিয়ে যেন বেশ বেকায়দায় পড়ে পুলিশ। এদিকে ভক্তরাও বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তবে মামলা করার তিন দিন পরই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় দুজনের ফোনালাপ (অডিও)। রুবেল-হ্যাপীর ফোনালাপ প্রচার করে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল। এরপর হ্যাপী রুবেলকে শর্ত দেন, বিয়ে করলে মামলা তুলে নেবেন। এরপর রুবেলও ঘোষণা দেন, তিনি হ্যাপীকে বিয়ে করবেন না। রুবেল-হ্যাপী দুজনের বাড়ি বাগেরহাটে হলেও ফেসবুকে পরিচয়। প্রেমের সম্পর্কের পর দুজনে প্রায়ই একসঙ্গে গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতেন। প্রেমের মাঝে কখনো অভিমান কখনো রাগ চলতে থাকে। চলে দুষ্টমিও। ঢাকায় থাকার কারণে প্রতিদিন দুজনের দেখা হতো। রুবেলকে নিয়ে হ্যাপীর ভাষ্য, ‘আমরা দুজনে অলিখিত স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকতাম। ও (রুবেল) আমাকে বউ বলে ডাকত। আমি নিজেকেও তার স্ত্রী ভাবতাম।’ অবশ্য রুবেল জনসম্মুখে কখনো স্বীকার করেননি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে তিন দিন কারাগারেও থাকতে হয় রুবেলকে।
বিশ্বের সর্বশেষ খবর, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, সাক্ষাৎকার, ভিডিও, অডিও এবং ফিচারের জন্যে ইরাবতী নিউজ ডেস্ক। খেলাধুলা, বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সহ নানা বিষয়ে ফিচার ও বিশ্লেষণ।