বইয়ের গল্প
কেমন আছো, বন্ধুরা?
লম্বা ছুটিতে নিশ্চয়ই অনেক অনেক বই পড়ছো বাসায়। এখনতো আর একাডেমিক বইয়ের নিচে লুকিয়ে কিংবা চুপিচুপি পড়তে হচ্ছে না গল্পের বই, তাই না? কী মজা!
অনেক অনেক বইয়ের গল্প নিশ্চয়ই জমা হয়ে আছে তোমাদের মনে। আমিও এসেছি কিছু বইয়ের গল্প নিয়ে। চল তবে শুরু করি বইয়ের গল্প।
১. দিলুর গল্পঃ
প্রথমেই যে বইটির কথা বলব, সে বইটির নাম ‘দিলুর গল্প’, লেখক, রাহাত খান।
দিলু তোমাদের মতই স্কুল পড়ুয়া, ছাত্র। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।
নতুন ভর্তি হয়েছে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে। নতুন ভর্তি হলে তো নতুন করে বন্ধুত্বও হয় অনেকের সাথে ,তাই না? দিলুর বন্ধুত্ব হয় গজা, সুনির্মল, প্রদীপ, আকবরদের সাথে। ওদের একটা আড্ডা আছে।
মানে, স্কুলে তোমাদের যেমন বন্ধুদের নানান গ্রুপ থাকে না? তেমন আরকি। ওরা ওটাকে আড্ডা বলে।
দলটা চালায় সাজাহান ভাই, দিলুদের চেয়ে বয়সে বড় কিন্তু বেশ মজার মানুষ। সাধারণের চেয়ে ভিন্ন হতে উনি কথাও বলেন ভিন্নভাবে। যেমন ধর, রেগে গেলে ধমক দেবেন ‘ইলিম্পু ডিলিম্পু য়েসকট টসকট’ বলে। ওনার শাস্তিগুলোও অদ্ভুত। যেমন একবার নাটকে অভিনয়ের সময় ভুল করার জন্য দিলুকে শাস্তি দেয়া হল – তিনঘন্টা একটানা উচ্চারণ করতে হবে ‘ ঔখাম্বাড্রাঠ্রাখ্রাঘ্রাষ্ঠেৎ’।
এরপর একবার হল কি, গ্রীষ্মের ছুটিতে গজা যাবে মামা বাড়ি । হঠাৎ জানা গেল, গজা নিখোঁজ ! ধারণা করা হল, গজা কিডন্যাপড্ হয়েছে। তাকে উদ্ধারের জন্য বন্ধুরা গঠন করল ‘দি গজা অনুসন্ধান কমিটি’।কমিটির সভাপতি দিলু ঘোষণা করল- কমিটির সদস্যরা গজাকে না পাওয়া পর্যন্ত মাথা ন্যাড়া করে রাখবে।
– এ্যাঁ? তারপর?
তারপর কী হল? গজাকে কী পাওয়া গেল?
সে উত্তর তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে বই থেকে ।
পড়তে গিয়ে আরও খোঁজ পাবে এলাকার গুণ্ডা বালক জুয়েল আর তার ’মিষ্টি অভিযানে’র । জানবে সাজাহান ভাইয়ের নাটক রিহার্সেলের বিচিত্র পদ্ধতি ,ফেল করার পর দিলুর অবস্থা আর সবশেষে গুণ্ডা জুয়েলের খপ্পরে পরে দিলুদের বনেভোজনের শেষ মেষ কি হল তার সবিশেষ ।
মজার এই বইটি তোমাদের স্কুলের মজার সব স্মৃতি মনে করিয়ে আগামী দিনগুলো বন্ধুদের সাথে আরও আনন্দময় করে কাটানোর প্রেরণা যোগাবে ।
.
২. বাড়ি থেকে পালিয়েঃ
আচ্ছা, তোমার কি হঠাৎ হঠাৎ বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে?
স্বাধীন হয়ে যেতে ইচ্ছে করে বড়দের মত?
তবে এ বইটি তোমার জন্য।
শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা যারা পড়েছ তারা তো জানো, তাঁর লেখায় কত হাস্যরস থাকে। আর যদি আগে না পড়া হয়ে থাকে, তবে এ বিখ্যাত কিশোরপাঠ্য বইটি দিয়ে শিবরামের হাস্যরসের সাথে আনন্দযাত্রা শুরু হোক তোমার।
‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ গল্পটি আবর্তিত হয়েছে তের-চৌদ্দ বছর বয়সী বাড়ি থেকে পালানো এক কিশোরকে নিয়ে।
নাম তার কাঞ্চন।
কাঞ্চন তার গাঁয়ের বন্ধু বিনোদের সাথে বিবাধে জড়িয়ে রাগী বাবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলতে চলতে এসে পড়ে রেলস্টেশনে। এক সময় উঠেও পড়ে ট্রেনে। চলে আসে বর্ধমান।
সেখান থেকে নানান ঘটনায় কোলকাতায়। সেখানে এক বিয়েবাড়িতে পরিচয় হয় ভোম্বল আর মিনি দি’র সাথে। সেখানেও আটকে থাকে না কাঞ্চন। ঘুরে বেড়াতে থাকে কোলকাতার পথে-ঘাটে, পার্কে-ময়দানে।
বইটি পড়তে পড়তে কাঞ্চনের সাথে তোমারও কোলকাতা বেড়ানো হয়ে যাবে, হবে নানা অভিজ্ঞতাও।
এক সময় কাকনের সাথে পরিচয় হয় কাঞ্চনের। কাকনের বাবা খুব ভালো। কাঞ্চনের ভাষায় যাকে বলে ‘মায়ের মত বাবা’! যেমনটা কাঞ্চনের ভাষায়, সাধারণত হয় না।
তারপর এক সময় কাঞ্চন আবার গাঁয়ে ফেরে। তবে খালি হতে নয়। মায়ের জন্য নতুন শাড়ি আর অনেক অনেক টাকা নিয়ে।
কোথায় পেল টাকা?
উত্তর খুঁজে নিও গল্পের ভাঁজে।
চমৎকার এ বইটি নতুন জায়গা আর নতুন নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে এগিয়ে চলার পথ দেখাবে পাঠকদের।
৩. উভচর মানুষঃ
তোমার যারা ফিকশন ধর্মী লেখা পছন্দ করো তারা আলেক্সান্দোর বেলায়েভের লেখা এ বইটি পড়ে আনন্দ পাবে। আদতে, যে কোন বয়সী যে কারোই ভালো লাগবে বইটি।
গল্পের প্রধান চরিত্র ইকথিয়ান্ডর জল-স্থল দু’জায়গাতেই বাস করতে পারে অর্থাৎ ‘উভচর মানুষ’ ।আর্জেন্টিনার যে এলাকায় তার বাস সেখানকার লোকেরা তাকে ডাকে ‘দরিয়ার দানো’। ইকথিয়ান্ডর কিন্তু মানুষের মতই দেখতে, কেবল মাছের মত কানকো আছে ! এই রূপান্তর প্রক্রিয়া যিনি ঘটিয়েছেন তিনি তার পিতা ডা. সালভাতর , যাকে স্থানীয় লোকেরা ভাবে ঈশ্বর! কারণ তিনি চিকিৎসা করে মৃতপ্রায় রোগীকেও সুস্থ করে তুলতে পারেন। ডা. আসলে এমন একজন গবেষক যিনি নানান প্রাণিতে নানা রকম গবেষণা চালান যুক্ত করেন নতুন বৈশিষ্ট্য। ডা. সালভাতরের সেই গবেষণার স্থান বিশেষভাবে সংরক্ষিত । চাইলেও কেউ সেখানে সহজে যেতে পারে না।
কিন্তু সেই গুপ্ত স্থানে একদিন কৌশলে ঢুকে পরে ক্রিস্টো। ডাক্তারের আস্তানায় চাকর হিসেবে থাকার ছলে চুরি করে কৌশলে বন্দি করতে চায় ইকথিয়ান্ডরকে, যাকে দিয়ে তার চক্র সাগর তলের বিপুল রত্নসম্ভার উত্তোলন করতে পারবে।
এদিকে উভচর মানুষ ইকথিয়ান্ডরের সাথে ঘটনাক্রমে পরিচয় হয় জুরিতার। তাকে ভালো লাগে মৎসকুমারের । জুরিতা গুত্তিয়েরের মেয়ে যারা ইকথিয়ান্ডরকে ডা. সালভাতরের কাছ থেকে চুরি করার পরিকল্পনা করছে। এ সময় ডা. সালভাতর হারিয়ে ফেলে পুত্র ইকথিয়ান্ডরকে।
-তারপর?
-তারপর কী ঘটে ইকথিয়ান্ডর-জুরিতার ভাগ্যে?
জানতে হলে নিজেই পড়ে নিও আলেক্সান্দোর বেলায়েভের বিখ্যাত এ বইটি। ননী ভৌমিকের অনুবাদে অসাধারণ এ বইটি তোমাকে ঋদ্ধ করবে।
লম্বা ছুটির সুযোগে আরও পরতে পার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘আমার বোকা শৈশব’, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ভ্রমণ কাহিনী ‘পালামৌ’, মেরী শেলীর ‘ফ্রাঙ্কেস্টাইন’,লিও টলস্টয়ের সেরা কিশোর গল্প, রবার্ট লুই স্টিভেনসনের ‘ড.জেকিল মি.হাইড’, জন স্টাইনবেকের ‘দ্য পার্ল’, হ্যারিয়েট বিচার স্টো’র ‘আঙ্কল টমস কেবিন’-সহ বাংলা এবং বিশ্ব সাহিত্যের অসাধারণ সব বই।
গতির জন্য স্থিতিও দরকার হয়। স্থিতির এ সময়ে নিজেকে ঋদ্ধ করে তোল জ্ঞানের আলোয়, যেন তোমার পরবর্তী গতিময় জীবন হয় সুন্দর আর ছন্দময়। সুস্থতা সহ শুভ কামনা সকলের জন্য ।

লেখক, পর্যটক, আলোকচিত্র শিল্পী।