ইউ.এফ.ও
বয়স: ০৯ বৎসর
শ্রেণী: পঞ্চম
বিদ্যালয়: ডি.এ.ভি পাবলিক স্কুল
ইউ.এফ.ও. অর্থাৎ আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট -এর সম্বন্ধে হয়তো তোমরা সবাই জানো। আমি তাও এর সম্বন্ধে একটু বুঝিয়ে বলছি। কিছু বৈজ্ঞানিকদের ধারণা যে এই ধরণের যন্ত্রের দ্বারা অন্য কোন গ্ৰহের প্রাণিরা মাঝেমাঝে পৃথিবীতে ঢুকে পড়ে, তারপর আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এ জিনিসের সত্যতা কিন্তু এখনো প্রমানিত হয়নি। আর পৃথিবীর বাইরের কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব ও এখনো প্রমানিত হয় নি। এই ইউ.এফ.ও. কে ঘিরেই এই গল্প।
ড.শশাঙ্ক ভট্টাচার্য্য থাকেন পার্ক স্ট্রীটে। তিনি একজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক। ছোটবেলায় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল এবং কলেজে তিনি পড়েছেন। এখন তিনি সেখানকার অধ্যাপক। বয়স, পঞ্চান্ন বছর। বছর খানেক হলো, তিনি ইউ.এফ.ও. নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর এক বন্ধু, ড. পেড্রো সিলভা ব্রাজিলে থাকেন। তিনিও কিছুদিন হলো এই আশ্চর্য যন্ত্র নিয়ে গবেষনা করছেন। ড. ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর বিশেষ যোগাযোগ আছে। ড. ভট্টাচার্য্য – এর প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্ৰহে কি আদৌ কোনো প্রাণি আছে? আর তারা কি সত্যিই মাঝেমাঝে আমাদের পৃথিবীতে ঢুকে পড়ে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর যে তিনি এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন, তা কি তিনি জানতেন? আর এই জিনিস নিয়ে যে তাঁর জীবনে একটা বড় ঘটনা ঘটবে, তা হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেননি!
হঠাৎ একদিন, একজন পোস্টম্যান একটা চিঠি নিয়ে হাজির হলো। ড. ভট্টাচার্য্য তখন যথারীতি, তাঁর ল্যাব -এ কাজ করছেন। চাকর, গোপাল দরজা খুলে তাঁকে খবর দিল। তিনি কাগজে সই করে, চিঠিটি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। সেটি এসেছে ব্রাজিল থেকে। ওখানকার এক বিজ্ঞান সংস্থা, একটা কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। সেখানে ওনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি সেখানে দর্শকদের জন্য একটি বক্তৃতা দেবেন এবং তাঁর আবিষ্কারগুলি সেখানকার একটি প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত করা হবে। ড. ভট্টাচার্য্য উল্টে চিঠি লিখলেন, যে তিনি যাচ্ছেন। পরে, তিনি জানতে পারলেন যে, তাঁর বন্ধু, ড. পেড্রো সিলভাও সেখানে আমন্ত্রিত। কথামতো, ড. ভট্টাচার্য্য দুদিন পর, তাঁর আবিষ্কাগুলি নিয়ে ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি সঙ্গে নিলেন তাঁর পোষা কুকুর, গুড্ডু এবং তাঁর অন্যতম আবিষ্কার, রোবো নামের একটি রোবটকে। ব্রাজিল পৌঁছতে লাগলো আঠেরো থেকে উনিশ ঘন্টা। প্লেন থেকে নেমে তিনি দেখলেন যে, ড. পেড্রো তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ গল্প করে দুই বন্ধু মিলে তাঁদের লজের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। লজটি ছিল এয়ারপোর্টের খুব কাছে। সেখানে পৌঁছে ঠিক হলো যে ড. সিলভা আর ড. ভট্টাচার্য্য পাশাপাশি ঘরে থাকবেন। তিন দিনের কনফারেন্স, বেশ ভালো ভাবেই কাটল। ড. ভট্টাচার্যের বক্তৃতা শুনে, সবাই তাঁর প্রশংসা করলেন। তাঁর আবিষ্কারগুলির প্রদর্শনীও বেশ জমে উঠল। এবার বেড়ানোর পালা। ঠিক হলো যে, ড. ভট্টাচার্য আর ড. সিলভা একসাথে বেড়াতে যাবেন। গাইডকে বলাই ছিল যে, সবাই ( ড. ভট্টাচার্য্য, ড. সিলভা, ড. ভট্টাচার্যের পোষা কুকুর, গুড্ডু এবং তাঁর আবিষ্কৃত রোবোট, রোবো) অ্যামাজন জঙ্গলে বেড়াতে যাবেন। তাই হলো। মোটরবোটে চেপে তাঁরা অ্যামাজন জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেখানে দেখা গেল নানারকম পশুপাখি। যেমন, হর্নবিল, জায়েন্ট স্কুইরেল ইত্যাদি। এতো কাছে এসেও অ্যানাকোন্ডার দেখা না পেয়ে সবার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু, এই জঙ্গলেই একটা দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটল। হঠাৎ, ড. ভট্টাচার্যের চোখে পরল একটা উজ্জ্বল আলো। তাঁর একটু কৌতুহল হলো। তিনি গাইডকে মোটরবোট আলোটির দিকে ঘোরাতে বললেন। ড. সিলভারও আলোটির বিষয় বিশেষ কৌতুহল হলো। মোটরবোট ঘুরিয়ে, তাঁরা সবাই ডাঙ্গায় নামলেন। তারপর কিছুটা হেঁটে, আলোটির কাছে গিয়ে তাঁরা যা দেখলেন, তা বিশ্বাস করার মতো নয়। কিন্তু, অবিশ্বাস করেও লাভ নেই। কারণ, তাঁরা সবাই নিজেদের গায়ে চিমটি কেটে বুঝেছেন যে সেটি কোন স্বপ্ন নয়, সত্যি। তাঁদের সামনে পড়ে আছে একটা বিরাট যন্ত্র। ইউ.এফ.ও.! যন্ত্রটি দেখতে ঠিক একটি উল্টানো মালসার মতো। সবাই অবাক। তাঁরা সবাই এই আশ্চর্য যন্ত্রটির দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকলেন। ভেতরে আছে পরপর তিনটি ঘর। একটি ঘর বোধহয় কন্ট্রোল রুম। তাঁরা যে ঘরে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে কিছু মেশিন ছাড়া আর কিছুই নেই। অন্য ঘরটায় বোধহয় এই ইউ.এফ.ও যাত্রীর জিনিসপত্র আছে। কিন্তু, সে কে? হঠাৎ, কন্ট্রোল রুমটি থেকে শোনা গেল একটি আওয়াজ। তারপরেই, একটি কথা, “প্লিঁজ ড্রঁপ ইঁয়োঁর ওঁয়েঁপঁনস্।“ ইতিমধ্যে, ড. ভট্টাচার্য্য তাঁর মিনিমাইজ গান আর ড. সিলভা তাঁর পিস্তলটি বের করেছিলেন। কিন্তু, এখন দুজনেই বক্তার আদেশ অনুযায়ী, ভয়ে থর্ থর্ করে কাঁপতে কাঁপতে নিজেদের অস্ত্র মাটিতে ফেলে দিলেন। হঠাৎ, তাঁদের পিছনের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে, কন্ট্রোল রুমটি থেকে বেরিয়ে এল একটি জন্তু! এ এক আশ্চর্য জন্তু! এর চারটি চোখ, হাতে তিনটি এবং পায়েল চারটি করে আঙুল। এর সারা গা সবুজ লোমে ঢাকা। কি আশ্চর্য এ প্রাণী! হঠাৎ, গুড্ডু ঘেউঘেউ করতে করতে জন্তুটির পায়ে কামড়ে দিল। সে কি চিৎকার! সবার রক্ত জল করে দেওয়ার মতো। সবার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সবাই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। যখন তাঁদের জ্ঞান ফিরল তখন তাঁরা ড. ভট্টাচার্যের ঘরে। কি আশ্চর্য! পরে জানা গেল যে অ্যামাজন জঙ্গলে নাকি সেরকম কিছুই নেই। তাহলে কি সেটা স্বপ্ন ছিল? না, সেটা সত্যি ঘটনা ছিল।
আস্তে আস্তে ফেরার সময় হয়ে গেল। ড.ভট্টাচার্য্য বিদায় নিয়ে ভারতে ফিরলেন। কিন্তু, এই অভিজ্ঞতা ভোলবার নয়। এ কথা ভাবলেই যেন গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। কি আশ্চর্য এই ঘটনা!
লেখাটা এইমাত্র পড়লাম। খুব ভালো লেখা হয়েছে দাদুভাই। তুমি লিখতে থাকো। ভবিষ্যতে তোমার লেখা আরো উন্নত হবে এবং বহু পাঠক পাঠিকাদের মন জয় করবে। আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও অফুরন্ত ভালবাসা জানাই তোমাকে।