আকাশ আংকেল
গতকাল হঠাৎ করে কাকে যেন দেখলাম। মুখটা পরিচিত। আর চিনতে দুই-তিন সেকেন্ড লাগলো মাত্র। আমার আবার কারো চেহারা মনে করতে আর চেহারার সঙ্গে নাম মেলাতে অনেক সময় লাগে। সেটা অবশ্য কারো সঙ্গে নিয়মিত দেখা ও কথা না হওয়ার ক্ষেত্রে খাটে।
এই ব্যক্তিকে বিশেষভাবে মনে আছে। তার নাম আকাশ। আকাশ আংকেলকে বিশেষভাবে মনে রাখার কারণ, তিনি আমাদের বাসায় গিয়ে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার আগে বলে নেওয়া ভালো, তিনি কর্মসূত্রে বাবার পরিচিত। একটু বেশি আজাইরা কথা বলেন, নিজেকে বিশেষ পন্ডিতসম ভাবেন এবং তিনি যে কারো বিরক্তির পাত্র সেটা বোঝেন না।
তো এবার বিশেষ ঘটনায় আসি। ভাবি বিয়ে করে আমাদের বাসায় এসেছে তখন বেশিদিন হয়নি হয়তো। ভাবির একটা বিদেশি রুমাল ছিল। সুন্দর। ভাবির ছোট খালা সম্ভবত উপহার দিয়েছিলেন। ভাবি কী মনে করে জানি একদিন রুমালটা সোফায় রেখেছে। সেদিন আকাশ আংকেল এসেছিলেন বাবার কাছে। তারা যাবতীয় বকবক শেষ করে খাবেন। আম্মু সব রেডি করে খাবার টেবিল সাজিয়েছে। খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুতে হয়, আমরা জানি। মীনা কার্টুনে দেখিয়েছে! তো আকাশ আংকেল বেসিনে গিয়ে শুধু হাত নয়, কুলিটুলি করে, গরগরা করে, মুখে একগাদা পানি ছিটা দিয়ে বেসিনের চারপাশে পানি ছিটিয়ে ফ্রেশ হলেন। আমি দৌড়ে তোয়ালে এনে দেখি উনি ইতিমধ্যেই ভাবির বিদেশি রুমালটা বাগিয়ে নিয়েছেন। এবং যথারীতি হাত-মুখ মুছে রুমালটাকে ঠেসে ঠেসে দুই নাকের ফুটোয় ঢুকিয়ে পরিস্কার করছেন। সেই সঙ্গে জোরে জোরে ফ্যাত ফ্যাত শব্দ করছেন। এইভাবে রুমালের দফারফা শেষ করে তিনি খেতে বসলেন। হায় ভাবির বিদেশি রুমাল! ভাবি যে স্ট্রোক করে নাই এটাই বেশি। বাসায় এই ঘটনা নিয়ে কতদিন বিস্তর আলোচনা, হাসাহাসি এবং ইয়াক ইয়াক করা চলে।
পরে আম্মু মৃত রুমালটাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য গরম পানিতে সিদ্ধ করে ধুয়েছে। তারপরেও ভাবি সেই রুমাল ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। সঙ্গে আমিও। অগত্যা আম্মু সেটাকে হাত মোছার জন্য বেসিনের পাশে ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু আমি আর সেটা ছুঁয়েও দেখি নাই। বেসিনের পাশে এখন নতুন রুমাল ঝুলছে।

লেখক