| 21 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
শিশু-কিশোর কলধ্বনি

মামার গাড়ী

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

“হ্যালো, শিবু সারভিস সেন্টার, বলুন কি করতে পারি?”
-“আমি ডাঃ রায় বলছি। আমার গাড়িটার একটু সার্ভিসিং করাতে চাই।”
-“বেশ। আর কোন প্রবলেম?”
-“আরে কি বলব বলুন তো, যেই না স্টার্ট দিচ্ছি ওমনি কিরকম একটা পচা গন্ধ আসছে। বারবার চেষ্টা করার পরেও স্টার্ট হচ্ছে না। তারপর হঠাৎ দেখি নিজে নিজেই স্টার্ট হয়ে গেল। এটা ঠিক না হলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরোতেও ভরসা পাচ্ছি না।”
-“কোন মডেল?”
-“জ্যাগুয়ার, WB ২A.০৯০৬”।
-“আচ্ছা, কাল আসবেন। যদি গাড়ি না চলে তাহলে আমার লোককে পাঠিয়ে দেব। আপনার ফোন নাম্বার এটাই তো?”
-“হ্যাঁ ৯৪৩২২…”
বিহান নম্বর টুকছিল, মাঝপথে কথা থেমে গেল দেখে বলে উঠল, “যাহ, লাইন কেটে গেল! আচ্ছা আমি বরং কল লগ থেকে নম্বরটা লিখে নিই।” তারপর সে রিসিভড কল রেজিস্টার থেকে নম্বরটা টুকে নিল। কে জানে, নেটওয়ার্ক প্রবলেম নাকি অন্য কোন সমস্যা। কিন্তু নোটবুকটা পকেটে রাখতে গিয়ে একটা খটকা লাগল। নম্বরটা কেমন চেনা চেনা লাগছে। “স্যার, আপনার বাড়ি থেকে ফোন এসেছে” বিহানের কর্মচারী পিন্টু এসে বলল। 
-“যাচ্ছি, দাঁড়া। আর সোহমকে বল যে ওই ডিজায়ার গাড়িটার পিছনের ডানদিকের চাকাটাতে একটা ফুটো দেখলাম, ওটাও যেন সারিয়ে দেয়।” ঘর থেকে বিহান বেরিয়ে দেখল পিন্টু ফোন হাতে দাঁড়িয়ে। বিহানকে দেখে সে বলল, “এই নিন”।
ফোনটা নিয়ে বিহান বলল, “আচ্ছা, তুই এখন যা।” পিন্টু “ঠিক আছে” বলে চলে গেল। বিহান ফোন কানে নিয়ে বলল, “হ্যালো, কে?” 
-“আমি নিমেষ বলছি, তোর মামার ছেলে। চিনতে পারছিস নিশ্চয়!” বিহান একটু অবাক হল। সে মনে মনে ভাবল আমার আবার মামাতো ভাই কোথা থেকে এল! মা’রা তিন বোন এক ভাই বটে। কিন্তু মামা তো বিয়ে করেনি। অথচ এই গলাটাও বেশ চেনা লাগল। কে ইনি?
-“ইয়ে মানে, আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না তো”।
-“তাহলে একবার পিছন ফিরে দেখ”, কথাটায় বেশ অসন্তুষ্ট হল বিহান। কারণ অপরিচিত কেউ ‘তুই’ বলে ডাকলে তার মোটেই ভাল লাগে না। কিন্তু পিছনে ফিরতে কেন বললেন? বিহান কোন কিছুতেই কখনো ভয় পায় না। তাই নির্ভয়ে পিছন ফিরল।
কিন্তু পিছন ফিরতেই করিডোরটা অন্ধকার হয়ে গেল।
“বিহু, এই বিহু, ওঠ”।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসল বিহান। হতচকিত হয়ে চারিদিকে তাকাল। ডানদিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠল সে।
-“ম-মামা!” কোনরকমে বলে উঠল বিহান।
-“তোর মামার বয়স হলেও এখনও চারজনকে শুইয়ে দিতে পারে। ওই দেখ‌” মামা বাঁদিকে ইশারা করল। বিহান সেদিকে তাকাতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। সেখানে পড়ে আছে পাঁচটা ক্ষতবিক্ষত শরীর। তার মধ্যে একজন স্যুট-বুট পরা লম্বা চওড়া ভদ্রলোক। বিহান বলল, “মামা, তুমি এখানে কি করে… এরা কি মারা গেছে?”
-“না। এরা আমাকে মারতে এসেছিল, এখন বাঁদরগুলোকে সঠিক ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া দরকার। ইন্সপেক্টর!” পুলিশ এসে লোকগুলোকে নিয়ে গেল। বিহানের মামা তখন বলে চলেছেন, “তোকে কি কাল কোন ডাঃ নিমেষ রায় ফোন করেছিল?”
-“হ্যাঁ, ডাঃ রায়, গাড়ি সারাবার কথা বলছিলেন”।
-“তার কাছে কোন গাড়ি নেই। সে তোকে ফোন করেছিল শুধু ওই নম্বরটা তোর কিনা সেটাই জানার জন্য। ওর উদ্দেশ্য ছিল গাড়ীচোর বলে তোর ব্যবসাটা নষ্ট করা। ওর বাবা বিমল রায় আমার ছোটবেলাকার বন্ধু। সে ছিল হোন্ডা গাড়ী কোম্পানীর রিজিওনাল হেড। পয়সাওলা হলে কী হবে, মানুষকে মানুষ জ্ঞান করত না। দেখতে গেলে নিমেষ তোকে আমার ছেলে বলে সত্যি কথাই বলেছে”।
-“আমি তো জানি তুমি বিয়েই করোনি”
“ঠিক। নিমেষ যখন দশ বছরের, বিমলের স্ট্রোক হয়। ডাক্তার বলেন যে ও বেশি দিন বাঁচবে না। তখন বিমল নিমেষকে আমার হাতে সঁপে দেয়। সেই থেকে ও আমার কাছেই মানুষ”।
বিহান জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিল, “কিন্তু আমরা তো ওকে কোনদিনই দেখিনি”। তার আগেই মামা বলে উঠলেন, “চল, বেরুনো যাক”। বিহান আর কথা না বাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, চলো”।
বেরনোর সময় বিহান স্তম্ভিত হয়ে গেল। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি জ্যাগুয়ার, যার নাম্বারপ্লেটে লেখা WB ২A ০৯০৬।
মামাকে গাড়ীটার কথা বলার জন্য পাশে তাকাতেই দেখল একটা ধোঁয়ার কুন্ডলী পাক খেতে খেতে আকাশের দিকে মিশে যাচ্ছে। আর মামাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
ইন্সপেক্টর এসে বিহানকে জানাল, “আপনার মামার লাশটা আমরা এই গাড়ির ডিকি থেকেই পেয়েছি। আপনাকে একবার থানায় আসতে হবে”।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত