| 25 এপ্রিল 2024
Categories
শিশু-কিশোর কলধ্বনি

খেলার ওপারে

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

বয়স ১২
ষষ্ঠ শ্রেণি


আজ স্কুলের গেটেই রামাইয়া আর জেসির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রামাইয়া বলল, “আজকে ব্যাকরণ ক্লাস আছে আর ব্যাকরণ ম্যাম দারুণ রাগী।”

জেসি বলল, “এলেই খালি রিডিং পড়তে বলবেন। বুঝতে তো কিছুই পারি না।”

আমি বললাম, “বুঝব কী করে এত শক্ত শক্ত শব্দ।”

স্কুলে ঘন্টা পড়ল। প্রথম পিরিয়ড ব্যাকরণ। অন্যদিন যেমন ক্লাসে গিয়ে সবাই চেঁচামেচি করি আজকে কিন্তু আমরা সবাই ভয়ে চুপ করে আছি। অনেকক্ষণ হল, ম্যাম আসছেন না। সবাই একটু আধটু ফিসফাস করে কথা বলছে।

আমি বললাম, “আমার ভিডিওগেম খেলতে একটুও ভালো লাগে না।”

জেসি বলল, “আমারো ভালো লাগে না। তবে এখন আমি ভাই এর সঙ্গে খেলতে শুরু করেছি।”

হঠাৎ ক্লাসে এক অন্য ম্যাম ঢোকামাত্র সবাই অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ালো। ম্যাম বললেন, “এবার থেকে আমি তোমাদের বাংলা পড়াবো। আজ তো তোমাদের বাংলা ব্যাকরণ? বই খোলো।” ম্যাম পড়াতে শুরু করলেন, “আজকের অধ্যায় ক্রিয়ার কাল। ক্রিয়ার কাল তিন প্রকার। প্রথম, অতীতকাল। অতীত মানে আগে যেটা ঘটে গেছে।  তোমরাই একটা উদাহরণ দাও।”

রামাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আগে মোবাইল বা কম্পিউটার ছিল না তাই ছোটোরা গেমও খেলতে পারতো না।”

ম্যাম বললেন, “ঠিক বলেছো। এবার বর্তমান কাল। মানে এখন যা ঘটছে। উদাহরণ দাও।”

আমি বললাম, “যেমন এখন আমরা স্কুলে বসে পড়াশুনো করছি।”

ম্যাম বললেন, “এবার ভবিষ্যৎ কাল। মানে পরে যেটা ঘটবে। কেউ একজন উদাহরণ দাও।”

জেসি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “যেমন ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন গেম আসবে,  থ্রিডি সিনেমা আরো অনেক কিছু উন্নত হবে।” তখন ঘন্টা পড়ল আর ম্যাম তাড়াতাড়ি করে বললেন, “তোমরা ঠিকই বুঝেছ। এগুলো সম্পর্কে তোমরা আরো লাইব্রেরিতে জানতে পারবে। আমি পরের দিন এসে বুঝিয়ে দেবো।”

টিফিনে আমি, রামাইয়া আর জেসি ছুটে লাইব্রেরিতে গেলাম। সেখানে রামাইয়া পুরোনো দিনের খেলা, জামাকাপড়, বাড়িঘর কীরকম ছিল এইসবের বই ঘাঁটছিল। আমি, পৃথিবীতে এখন কী হচ্ছে, কী নতুন জিনিস উৎপাদন হচ্ছে, এইসব কারেন্ট এফেয়ার্সের বইগুলো পড়ছি আর জেসি ভিডিওগেম ভবিষ্যতে কেমন হবে এই সব নিয়ে লেখা বইগুলো ঘাঁটছিল। এর মাঝে মাঝে বিভিন্ন কথাবার্তা আর তর্ক শুরু হচ্ছিল।  এমন সময় আমার মাথার ওপর তাক থেকে ধপ্‌ করে একটা বই পড়ল। হাতে নিয়ে দেখি প্লাস্টিকে র‍্যাপার করা নতুন একটা বই। জেসি আমার হাত থেকে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে র‍্যাপার ছিঁড়তেই দেখলাম,  বইটাতে নতুন নতুন গেমস্‌ অ্যাপস্‌-এর কথা লেখা আছে। হঠাৎ একটা পাতা খুলতেই জেসি চেঁচিয়ে উঠল,  “টাইম নামে একটা নতুন থ্রিডি গেম।”

লেখা আছে ‘এই গেমের দ্বারা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের আনন্দ উপভোগ করা যাবে’। তার সঙ্গে একটা সিডি।  সিডিটা কম্পিউটারে পুট করলে গেমটা খেলা যাবে। জেসি আর রামাইয়া আনন্দে চিৎকার করে উঠল।  ঠিক হল কালকে জেসির বাড়ি গিয়ে গেমটা খেলব। সেদিন রাতে ঘুম আসছিল না। গেমটা খেলব কিনা এই ভেবে। অনেক ভেবে ঠিক করলাম, একবার খেলেই দেখব।  তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দিনটা যেন কীরকম অন্য রকম লাগছিল। আমি জেসির বাড়ি গেলাম।  সবাই থ্রিডি চশমা পড়ে নিলাম। গেমটা শুরু হবার আগেই আমি চোখ থেকে থ্রিডি চশমাটা খুলে নিলাম।  

রামাইয়া জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”

আমি বললাম,  “কী হবে ভবিষ্যতে গিয়ে অ্যাডভান্স খেলা খেলে? কী হবে অতীতে ফিরে গিয়ে পুরোনো খেলা খেলে?” বলেই সেখান থেকে চলে গেলাম। রামাইয়া আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু জেসি বলল, “ছাড়তো ও এখানেই থেমে থাক।”

আমি চলে আসার পর অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম ওরা ওখানে কত আনন্দ করছে! শেষে আবার জেসির বাড়ি ফিরে গেলাম। যেতে যেতে ভাবলাম ওদের ওখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।  গিয়ে দেখলাম রামাইয়া খেলতে খেলতে অনেক পিছনের লেভেলে চলে গেছে।  আর জেসি আরো অনেক সামনের লেভেলে এগিয়ে গেছে।  

আমি পিছনের লেভেলগুলো খেলতে শুরু করলাম।  অনেক কষ্টে খেলার মাঝে রামাইয়ার সঙ্গে দেখা হল এক মুহূর্তের জন্য। তখন সে একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। আমি ওকে বললাম, পিছোতে পিছোতে আর কত পিছনে যাবি?  একদিন তো সব শেষ হয়ে যাবে তখন কী করবি? ফিরে আয়।” কে জানে ও আমার কথা শুনতে পেল কিনা!

এবার আমি সামনের লেভেলগুলো দ্রুত খেলতে লাগলাম।  এত লেভেলের পর লেভেল মাঝে মাঝে গুলিয়ে যায়।  তখন কালো চশমা-পরা একটা লোক এসে বলে যায়, এরপর কোন লেভেলের খেলা। লেভেল চেঞ্জের সময়ও লোকটা এসে বলে যায়, এখন কোন লেভেলের খেলা হবে। খেলতে খেলতে এবার আমার জেসির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমি ওকেও বললাম,  “আর কত ভবিষ্যতে এগোবি? এবার বর্তমানে ফিরে আয়।”

এরপর আমি গেম থেকে বেরিয়ে এলাম। জানিনা ওরা আমার কথা শুনবে কিনা! আমি বেরিয়ে আসার পর বুঝলাম এগোনো বা পিছোনো যতটা শক্ত ছিল বেরিয়ে আসাটা ততটা নয়। একটুখানি অপেক্ষার পর কম্পিউটার স্ক্রিনে লেখা ফুটে উঠল, ‘প্লেয়ার রামাইয়া অ্যান্ড জেসি আর কামিং’।তখন হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল।    

তারমানে সবটাই স্বপ্ন ছিল! আজকেই গেমটা খেলার কথা। স্কুলে গিয়ে রামাইয়া আর জেসির সঙ্গে কথা হল,  আশ্চর্য ওরাও নাকি একই স্বপ্ন দেখেছে! স্কুলের ঘন্টা পড়ল। গেমের সেই কালো চশমা-পরা লোকটা ক্লাসে ঢুকে বলল,  “তোমরা সবাই এখন বর্তমানে লেভেল ওয়ান খেলছো।”

তার মানে? এটাও কি স্বপ্ন? নাকি আমরা এখনো গেমের মধ্যেই আছি!

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত