Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,kids story Cloud seller Tanmay Deb

ইরাবতী শিশুতোষ গল্প: মেঘ-বিক্রেতা । তন্ময় দেব

Reading Time: 6 minutes

 

৭ই জুন, ২০০৩

 

শনিবার করে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায় টুবুলের। ও শহরের একটি দামী বেসরকারি মর্নিং স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। বাকি পাঁচদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর তিনটে অবধি ক্লাস হলেও শনিবার সাড়ে বারোটায় ছুটি।

স্কুলের গাড়ি করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে একটা বেজে যায়, তারপর ঠাম্মা স্নান করিয়ে ভাত খাইয়ে নিজে স্নান করতে যায়। টুবুল এই অবসরে কখনও টিভি দেখে, কখনও কমিক্স পড়ে, কখনও বা রঙপেনসিলে খাতায় আঁকিবুঁকি কাটে। টুবুলের ঘরটা দোতালায়। রুমের পাশেই ব্যালকনি। বড় রাস্তা থেকে পাড়ায় ঢোকার পথটা সহজেই চোখে পড়ে। টুবুলের মা-বাবা দুজনেই উকিল। এই একটা দিন ওরাও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন। টুবুল তাই ওদের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকে উদাসী চোখে।

                                             

টুবুল খেয়াল করে দেখেছে দুপুরের সময়টায় পাড়া একদম শুনশান থাকে। পুজার ঘর থেকে ভেসে আসে ঠাম্মার ঘণ্টা বাজানোর শব্দ। পাড়ার ছেলেগুলো সাইকেলে খুব জোরে বেল বাজিয়ে চলে যায়। আইসক্রিম বিক্রেতার কর্কশ মাইকের আওয়াজে ঘেউঘেউ করে ওঠে কুকুরগুলো।

আজকের দিনটাও অন্যদিনের চেয়ে আলাদা কিছু ছিল না। টুবুল রবিবারে আঁকার ক্লাসের হোমওয়ার্ক সেরে রাখছিল। হঠাৎ অদ্ভুত একটা কথা কানে এসে লাগল ওর। স্বর বিকৃতি করে হকাররা যেভাবে লোকজনের কান আকৃষ্ট করে এই গলা তেমনই কিন্তু বিক্রির জিনিসটা বড় অদ্ভুত। টুবুল ভাবল ও হয়তো ভুল শুনছে, তাই কান খাঁড়া করে আবার শোনার চেষ্টা করলো। নাহ! ঠিকই শুনেছে ও।

হকারটা বলছে, ‘মেঘ নেবে কেউ? মেঘ! এক বোতল কুড়ি টাকা। দুটো নিলে তিরিশ’

টুবুল আঁকার খাতা ফেলে আজব বিক্রেতাটিকে দেখার জন্য ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।

রাস্তা যথারীতি শুনশান। পাড়ার কুকুরগুলো এই সময় বন্ধ দোকানের ছায়ায় শুয়ে থাকে, আজ ওগুলোও নেই। টুবুল দেখল লোকটা হাঁক পাড়তে পাড়তে দুলকি চালে হেঁটে আসছে। মাথায় একটা রামধনু রঙের ছাতা। হাতে একটা ধূসর রঙের থলে। তাতেই হয়ত মেঘগুলো রাখা আছে!

‘মেঘ কি কেউ ধরতে পারে?’- টুবুল মনে মনে ভাবল। গতমাসে জিওগ্রাফির ক্লাসটেস্টে ছবিসহ মেঘের উৎপত্তির ওপর পাঁচ নাম্বারের টীকা লিখে এসেছে। ও জানে এভাবে মেঘ বিক্রি সম্ভব নয়। ইনি নিশ্চয়ই কোন ঠগবাজ। টুবুল একবার ভাবল ঠাম্মা অথবা পাশের বাড়ির সুবলকাকুকে ডাক দেবার কথা। পরক্ষনেই ভাবল যদি লোকটা সত্যি  মেঘ ধরে নিয়ে আসে, তখন তো সবার সামনে হেনস্থা হতে হবে টুবুলকে। বুদ্ধিমান আর মেধাবী ছেলে হিসেবে নামডাক আছে পাড়ায় টুবুলের। স্কুলে ফার্স্ট হয় প্রতিবার। সামান্য এই ব্যাপার নিজেই সামলে নিতে পারবে।

এতকিছু ভাবনার ফাঁকে লোকটা টুবুলের ব্যালকনির নীচে এসে দাঁড়িয়েছে। সাতরঙা ছাতাটা বুজিয়ে সে হাঁক দিল, ‘হ্যালো! অন্তরীক্ষ সমাদ্দার, এক বোতল মেঘ কিনবে নাকি?’

অচেনা কারোর মুখে নিজের পোশাকি নাম শুনলে আশ্চর্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। টুবুলের ক্ষেত্রেও তাই ঘটল। ওর কৌতূহলী চোখে হঠাৎ করেই বিস্ময়ের আগমন লোকটা হয়তো ধরতে পেরেছে নীচে দাঁড়িয়ে। টুবুল কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলল, ‘দাঁড়াও, আমিও ব্যালকনিতে আসছি!’

তারপর টুবুলের বিস্ময়কে আরেকটু উসকে দিয়ে লোকটা ছাতা খুলে ডিজনির সিনেমায় দেখা মেরি পপিন্স চরিত্রটির মতো অবলীলায় শূন্যে ভেসে পড়ল এবং টুবুলের সামনে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। টুবুলের মুখে একটা কথাও নেই। বড় হাঁ করে লোকটার আজব কাণ্ডকারখানা দেখে চলেছে।

অদ্ভুত ছাতাটা বন্ধ করে লোকটা বলল, ‘সবটাই বিজ্ঞানের খেলা। এতদিন সিনেমায় দেখে এসেছ। আমি বানিয়ে নিয়েছি’

টুবুল ততক্ষণে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে উঠেছে। ভালো করে লক্ষ্য করলো লোকটাকে। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। মুখভরতি সাদা দাঁড়ি, চুলগুলো কাশফুলের মতো, যেন ভারতীয় সান্তাক্লজ। পরনে ধূসর প্যান্ট-শার্ট। দু’চোখে বুদ্ধির ঝিলিক।

টুবুল বলল, ‘আপনি কি সত্যিসত্যি মেঘ ধরে এনেছেন?’

‘এনেছি। দেখবে?’ –বলে লোকটা থলে থেকে অদ্ভুত জ্যামিতিক আকারের বোতল বার করল। টুবুল হাতে নিয়ে দেখল বোতলটা কাঁচের নয় কিন্তু কাঁচের চেয়েও বহুগুন স্বচ্ছ। ভেতরে কি ঘটছে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

লোকটা বলল, ‘কি হচ্ছে ওখানে বলো তো?’

টুবুল খানিকক্ষণ বোতলের গায়ে চোখ ঠেকিয়ে বসে রইল। যা দেখল তাতে ওর চক্ষু ছানাবড়া। বোতলের ভেতর টুকরো টুকরো মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। তারপর আচমকা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে। সেই জল আবার বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করছে। ঠিক যেমন প্রকৃতিতে হয়। বাস্তবেই বোতলবন্দি মেঘ!

টুবুল আজব এই ঘটনার ঘোর কোনোক্রমে কাটিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘সূর্যের আলো ছাড়া জল বাষ্পে পরিনত হচ্ছে কিভাবে? মেঘ সৃষ্টির জন্য ধূলিকণারও প্রয়োজন। বোতলের ভেতরে সেসব কিছু নেই’

মুচকি হাসলেন বৃদ্ধ। টুবুলের হাত আঁকড়ে বললেন- ‘সে জন্যেই তোমার কাছে আসা। তুমি যা দেখলে তা প্রোটোটাইপ মাত্র। আমার বয়স হয়েছে। বড় করে গবেষণা করার মতো শক্তি আর সামর্থ্য কোনটাই এখন আর নেই। তাছাড়া আমার পেছনে অন্তত দশখানা বিদেশী কোম্পানি পড়ে আছে এর ফর্মুলা হাতানোর জন্য। সারাজীবন ছুটেই বেড়ালাম তাই। আমি চাই যখন তুমি বড় হবে এগিয়ে নিয়ে যাবে আমার গবেষণা’

টুবুল কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সবটাই ধাঁধা মন হচ্ছে ওর। বৃদ্ধ যেন কমিক্সের কোন চরিত্র।

বৃদ্ধ আবার বললেন, ‘আরেকটা কথা তোমাকে বলে যাওয়া খুব দরকার। জানিনা এখন বুঝবে কিনা কিন্তু মনে রেখো আমি যা যা বলে যাচ্ছি তোমাকে। ২০৪১ সালে সারা পৃথিবী জুড়ে ভয়ঙ্কর খরা দেখা দেবে। জলের অভাবে মারা পড়বে গাছপালা, মানুষ, পশুপাখি সব। বোতলটা তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি। হয়তো এর থেকে খরা রোধের পথ পেয়ে যেতে পারো। আমার আশীর্বাদ রইল। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তোমার হাতে টুবুল’

‘আপনি আমার ডাকনামও জানেন?’ – টুবুলের ঘোর কাটছে না।

‘জানবো না আবার। তুমি আমার উত্তরাধিকারী! বোতলটা যত্নে রেখো। ঠাম্মাকে এই চিঠিটা দিও…আসি!’ – বলে টুবুলের হাতে একখানা চিঠি গুঁজে দিলেন বৃদ্ধ। খামের ওপরে লেখা ‘কমলিনীকে, জলধর’

টুবুল দেখল রঙিন ছাতায় ভর করে আজব মানুষটি মেঘের আড়ালে মিলিয়ে গেলেন!

ডিসেম্বর ১০, ২০৪৩

 

‘আজ বিশ্বশান্তিতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে বিশিষ্ট আবহাওয়া বিজ্ঞানী অন্তরীক্ষ সমাদ্দার ও তার ‘জলধর কর্পোরেশনকে’। রীতি মেনে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে সেই উপলক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রথম সারির রাষ্ট্রনেতারা একত্রিত হয়েছেন। নতুন দশকের শুরুতে যে মারণগ্রাসী খরার আবির্ভাব ঘটেছিল ধরিত্রীর বুকে তা একা হাতে সামলেছেন বিজ্ঞানী অন্তরীক্ষ ও তার সংস্থা। বিনিময়ে কোন দেশের থেকে কোন মূল্য নেয়নি জলধর কর্পোরেশন। কৃত্রিম মেঘ আবিষ্কার বহুদিন আগে হলেও তার সহজলভ্যতা ও মানব কল্যাণে ব্যবহারের জন্য গত দশকে বিজ্ঞানী অন্তরীক্ষকে কেমিস্ট্রিতে আগেই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। পুরস্কার মূল্য দিয়ে তিনি স্থাপন করেন ‘জলধর কর্পোরেশন’। জলধর একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ মেঘ বা ক্লাউড। আমার মঞ্চে ডেকে নিচ্ছি বিজ্ঞানী অন্তরীক্ষ সমাদ্দারকে’ – ইংরেজিতে একটানা বলে থামলেন ঘোষক।

পোর্টেবল ডিজিটাল স্ক্রিনে বিভিন্ন স্লাইডে দেখানো হচ্ছে কর্পোরেশনের বিভিন্ন কার্যকলাপ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে অজস্র মানুষের শুভেচ্ছাবার্তার ভিডিও। কোনওটা এসেছে আফ্রিকার এক গরিব কফিচাষির কাছ থেকে, কোনওটা পাঠিয়েছেন ব্রাজিলের বিখ্যাত রাবার কোম্পানির চেয়ারম্যান। সর্বস্তরের মানুষ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সবাই একবাক্যে মেনে নিয়েছে আকস্মিক খরা রোধে অন্তরীক্ষের আবিষ্কার করা সুলভ কৃত্রিম মেঘ জীবনদায়ী ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ বিদেশনীতি, জল দখলের লড়াই থেকে আসন্ন বিশ্বযুদ্ধের জল্পনা রোধ করা– একসাথে বহু কাজ করেছেন অন্তরীক্ষ। সুরক্ষিত করেছেন আগামীর ভবিষ্যৎ।

শান্তিতে নোবেল প্রাপক হিসেবে নাম ঘোষণার পর একের পর এক সাক্ষাৎকার, কনফারেন্স ইত্যাদিতে হাফিয়ে উঠেছিল অন্তরীক্ষ। পুরস্কার গ্রহণ করে ভারতে আজই ফিরেছে। এয়ারপোর্টেও একপ্রস্থ সম্বর্ধনা পর্ব চলল। খ্যাতির বিড়ম্বনা এমনই।

‘এর চেয়ে গবেষণাগারে সময় কাটানো ভালো, অফিসের মিটিংগুলো ভালো, পৃথিবীতে ‘জলধর’ ছড়িয়ে খরা রোধের মাস্টার প্ল্যান বানানো ভালো’ – স্ত্রী কুহেলীকে বলল অন্তরীক্ষ। জলধর বলতেই অন্তরীক্ষের মনে পড়ল চিঠিটা খুলতে হবে।

সেদিন ঠাম্মা চিঠিটা পড়ে টুবুলের হাতে দিয়ে বলেছিল যেদিন বড় মানুষ হবি সেদিন পড়িস। তারপর বিকেলবেলায় অদ্ভুতভাবে ঠাম্মা বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ টানা একমাস খোঁজাখুঁজির পর হদিশ না পেয়ে শেষে হাল ছেড়ে দেয়। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষ কিভাবে হারিয়ে যায় তার কারণ কেউ খুঁজে পায়নি। কিন্তু সেদিন ছোট টুবুল মনে মনে একটা কারণ সাজিয়ে নিয়েছিল, আজ অন্তরীক্ষকে বড় হয়ে সেই কারণের সত্যতা যাচাই করতে হবে।

কাবার্ড খুলে চিঠির খামটা বার করলো অন্তরীক্ষ। কুহেলী পাশে এসে বসেছে। অন্তরীক্ষ ওর ছেলে মেঘাঞ্জনকে ডাকল, – ‘এই গ্যাজেটের যুগে চিঠি কি জিনিস তা তো জানিস না। দ্যাখ প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো একটা চিঠি। আমি জানিনা কি লেখা আছে এতে। কি রহস্য লুকিয়ে আছে’

এরপর অন্তরীক্ষ পড়তে শুরু করলঃ

“প্রিয় কমলিনী। দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর তোমাদের থেকে দূরে আছি। আমাদের আকাশের ছেলে এখন ক্লাস সেভেন পড়ে। না আকাশকে বড় করতে পারলাম না ওর ছেলের বেড়ে ওঠা দেখতে পেলাম। তোমাদের বাঁচাতে তোমাদের থেকে দূরে যাওয়া ছাড়া আমার হাতে আর কোন উপায়ও ছিল না। খরার প্রকোপে আমার কৃষিজীবী বাবা আত্মহত্যা করলেন, তাই ছোট থেকেই পণ করেছিলাম প্রকৃতির নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেই বৃষ্টি বানাবো। আমার বিজ্ঞান সাধনার কারনই এটা।

দেশে সেরকম পরিকাঠামো নেই উপরন্তু কৃত্রিম মেঘের কথা শুনে আমার সহকর্মীরা আমায় উপহাস করলো। বিদেশের বেশ কয়েকখানা রিসার্চ ল্যাবের সঙ্গে কথাবার্তা হল। ইরানের এক রিসার্চ ল্যাব আমার প্রস্তাব লুফে নিলো। আমি ইরান পাড়ি দিলাম আর ফিরলাম না। এটুকু অবধি আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে তুমি জানো।

যা জানো না আজ তা বলব। আমি আবিষ্কার করেছিলাম কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কিন্তু কোম্পানি ফর্মুলা হাতিয়ে আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করলো। সেই থেকে আমার পালিয়ে বেড়ানো শুরু। দীর্ঘ কুড়ি বছর পালিয়েই বেরালাম।

পাড়ি জমালাম পোল্যান্ডের এক গ্রামে। শেষ পনেরো বছর ওখানেই আছি। যার কাছে আছি তিনিও একজন বিজ্ঞানী, বয়সে ছোট কিন্তু খুব বুদ্ধিমান। সে প্রতিনিয়ত তোমাদের সব খোঁজ এনে দিত আমাকে। ইত্যবসরে আমার ইচ্ছে হল সময়কে জয় করার। শুরু করলাম গবেষণা। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা কিন্তু আমার সে গবেষণাও সম্পূর্ণ হয়েছে গতমাসে। আকাশের তো বিজ্ঞানের প্রতি তেমন আগ্রহ কোনোদিন ছিল না কিন্তু অন্তরীক্ষ, তোমার প্রিয় টুবুলের আছে। ভবিষ্যতে পাড়ি দিয়ে দেখেছি আগামীতে পৃথিবী কঠিন এক খরার সম্মুখীন হতে চলেছে। মানুষের বিবেচনাহীন কার্যকলাপের ফল। টুবুল চাইলে আগামীর ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে। আমার কৃত্রিম মেঘের গবেষণার ফলাফল ওর হাতে দিয়ে যাচ্ছি, যাতে ও মানবকল্যানে ব্যবহার করতে পারে।

তোমার এখন পিছুটান নেই। ভরা সংসার। আমার সঙ্গে যাবে? এই জীবনে যা দিতে পারিনি তোমায় সব উপভোগ করবো দুজন। কি করবে জানিও। ইতি ভালবাসাসহ জলধর’

দুফোঁটা চোখের জলে হলদে হয়ে যাওয়া পুরাতন স্মৃতিমাখা কাগজটা ভিজে উঠল। মেঘাঞ্জন বা কুহেলী কোনোদিন অন্তরীক্ষকে কাঁদতে দেখেনি। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, লক্ষ্যে অবিচল অন্তরীক্ষ নয়, আজ ওরা টুবুলকে কাঁদতে দেখল যে সব আঁচ করতে পেরেও চুপ ছিল। যে মনে মনে খুশি হয়েছিল ঠাম্মার নিরুদ্দেশ হওয়াতে, যে বয়সে ছোট হলেও মনস্থির করেছিল সাহায্য করবে সেই আজব বৃদ্ধের, অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে প্রতিটি কথা।

আজ সারা বিশ্বের কাছে হিরোর তকমা পাওয়া বিজ্ঞানী অন্তরীক্ষ সমাদ্দারের অস্তিত্বই থাকত না যদি ওই বৃদ্ধ না থাকতেন। সেইসব কথা রাখতে পারার আনন্দেই চোখে জল এসে পড়েছে।

চোখ মুছে অন্তরীক্ষ দেখল তার সারাজীবনের সঙ্গী স্বচ্ছ বোতলটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মেঘাঞ্জন। খানিকক্ষণ দেখার পর বলল, ‘ড্যাড! এটা কাঁচ নয় তবুও এত স্বচ্ছ। আর এর গায়ে কিসব ফর্মুলা লেখা রয়েছে। এটা গ্রেট গ্র্যান্ডফাদারের টাইম-ট্র্যাভেলের ফর্মুলা নয় তো?’

কুহেলী ছেলের কথা শুনে অন্তরীক্ষের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।

অন্তরীক্ষ বলল, ‘আমি জানিনা। তুই খুঁজে বার কর তবে। আমি শুধু একজন মেঘ-বিক্রেতা হিসেবে আমার উত্তরাধিকারীকে খানিকটা মেঘ তুলে দিলাম। বাকিটা তোর দায়িত্ব। আমি আর তোর মা এখন শুধুই বিশ্রাম নেবো…’

 

 

 

 

 

0 thoughts on “ইরাবতী শিশুতোষ গল্প: মেঘ-বিক্রেতা । তন্ময় দেব

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>