| 29 মার্চ 2024
Categories
শিশুতোষ

শিশুতোষ রহস্য গল্প: নিখোঁজ ব্যবসায়ীর খোঁজে । শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য

আনুমানিক পঠনকাল: 8 মিনিট

সেলিম সরকারের কথা

শনিবার রাত নয়টা।
সেলিম সরকার এখন চলেছেন কস্তুরি রেস্টুরেন্টের দিকে। রংপুর আর এ এম সি শপিং কমপ্লেক্সে তাঁর একটা দোকান আছে। দোকান বন্ধ করার পর তিনি তাঁর বন্ধুদের সাথে কস্তুরি রেস্টুরেন্টে বসে ঘন্টা দুয়েক আড্ডা দেন। তারপর বাড়ি ফিরে যান। রাস্তা পার হবার সময় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে তাঁর সামনে দাঁড়ালো। তারপর আর কিছু মনে নেই।

সোমবার সকাল। শফি ছাত্রাবাস।

রুপম এখন প্রথম আলো পত্রিকাটি খুলে একটা রহস্যের খবর পড়ছে। খবরটা মোটামুটি এরকম-গত শনিবার থেকে রংপুরের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী সেলিম সরকার নিখোঁজ গত শনিবার বিকাল পাঁচটায় সেলিম সরকার তার নিউ সেনপাড়ার বাড়ি থেকে তার রংপুর আর এ এম সি শপিং কমপ্লেক্সের দোকানে সে যায়। তার দোকানের কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা যায় সে দোকান থেকে বেরিয়েছিলো। কিন্ত তারপর আর বাড়িতে ফেরেনি।সেলিম সরকারের যমজ ভাই আলীম সরকার এজন্য থানায় জিডি করেছেন।
– এখন রুপমের নতুন নেশা হলো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পত্রিকার সব রহস্যের খবর কেটে তা একটা খাতায় সেঁটে রাখা। বেশিরভাগই অনলাইনে পড়ে। রুপমদের মেসের কেয়ারটেকার আশিকের একটা কম্পিউটারের দোকান আছে। অনলাইন পেপারে কোনো রোমাঞ্চকর খবর পেলে রুপম মোবাইলে স্ক্রিনশট তুলে আশিকের দোকান থেকে প্রিন্ট করিয়ে নেয়। তারপর সেগুলো খাতায় সেঁটে রাখে। গোয়েন্দাগিরির ব্যাপারে এখন গণেশ হলো রুপমের স্থায়ী সহকারি। গণেশ এখন রুপমের পাশে বসে একটা চুইং গাম চাবাচ্ছে। রুপম গণেশকে পত্রিকাটা দিয়ে বললো ‘খবরটা পড়ে দেখ। কেসটা সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নেওয়া যেতে পারে।’ গণেশ খবরটা পড়ার পর বললো ‘মনে তো হচ্ছে কিডন্যাপড। পেপারে যে ছবিটা বেরিয়েছে সেটা কেটে রাখা দরকার।’ রুপম বললো ‘ কাটতে হবে না। পেপার থেকে আমি আমার মোবাইলে ছবিটার একটা ছবি তুলে রেখেছি।

রুপম আর গণেশ এখন সেলিম সরকারের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছে। কিছুক্ষণ পর রংপুর কোতয়ালী থানার দারোগা রেজাউল করিম বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। রুপমকে দেখে তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। করমর্দনের পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন ‘গন্ধে গন্ধে হাজির?’ রুপম তার উত্তরে বললো ‘প্রথমআলো-তে দেখলাম খবরটা , ভাবলাম একটু ঢুঁ মেরে আসি।’ রেজাউল সাহেব বললেন ‘সকলেই চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। এসো আমার সাথে’। তিনজনে ভিতরে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকে দেখলো হুবহু সেলিম সরকারের মতো দেখতে একজন এলেন। রুপম বুঝলো ইনিই হলেন আলীম সরকার। রুপমদের দেখে তিনি দারোগাকে প্রশ্ন করলেন ‘রেজাউল ভাই এই ছেলে দুটো কারা?’ দারোগা তার উত্তরে বললেন ‘এ হলো গোয়েন্দা রুপম রায় এবং পাশের জন রুপমের সহকারী গণেশ মোহন্ত’। আলীম সরকার বললেন ‘বাবা গোয়েন্দা, একটু চেষ্টা করে দেখো ভাইজানকে উদ্ধার করতে পারো কি না। বাড়ির সবাই এ নিয়ে খুব চিন্তিত।’ রুপম বললো ‘দেখি চেষ্টা করে। আপাতত আপনাদের বাড়ির সকলের সাথে আমি কথা বলতে চাই। আপনাদের বাড়িতে আপনারা কজন আছেন?’ আলীম সাহেব বললেন ‘আমি, আমার স্ত্রী, ভাইজান, ভাবি এবং আমাদের ভাতিজা তাজ।’ রুপম বললো ‘তাজকে লাগবে না। আপনার সাথে আগে কথা বলি।’
রুপম- আপনার ভাই সেলিম সরকার কতদিন যাবৎ নিখোঁজ?
আলীম- গত শনিবার থেকে।
রুপম-তার আগে বিগত কয়েকদিন যাবৎ ওনার মনের অবস্থা কেমন ছিলো?
আলীম-কয়েকদিন যাবৎ একটু ডিপ্রেসড ছিলেন। ভাইজানের ইচ্ছা ছিলো আমাদের এলাকায় একটা দাতব্য চিকিৎসালয় খোলার কিন্তু তাতে কয়েকজন বাগড়া দিচ্ছে। তাই উনি একটু চিন্তিত ছিলেন।
রুপম- ওনার সাথে কী কারও শত্রæতা আছে?
আলীম- এমনিতে উনি নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে। তাছাড়া কয়েকদিন যাবৎ তাকে হুমকির মেসেজ পাঠানো হচ্ছে।
রুপম-মেসেজগুলো আপনাকে দেখাননি?
আলীম- একটা দেখেছিলাম। লেখা ছিলো ‘৭ দিন সময়। এর মধ্যে হয় নিজের ভুল স্বীকার করো নয়তো মরো’।
রুপম- এটা আপনাকে কবে দেখিয়েছিলেন?
আলীম- যেদিন উনি নিখোঁজ হন তার আগের রাতে। রুপম, ভাইজানকে ওরা মেরে ফেললে তো লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রুপম- ঠিক আছে। এবার আপনার ভাবি এবং আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলি।
আলীম-ঠিক আছে।

রুপম এবং গণেশ এখন এসেছে রংপুর আর এ এম সি শপিং কমপ্লেক্সে। সেলিম সরকারের স্ত্রী এবং আলীম সরকারের স্ত্রীর সাথে কথা বলে কিছু জানা যায় নি তবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেছে বাড়ির সহকারী রহিমার কাছ থেকে।
সেলিম সরকারের দোকান আর এ এম সি শপিং কমপ্লেক্সে এবং রুপমের মামা বিকাশ রায়ের দোকানও এখানেই। রুপম আজ দুপুরে মামাকে ফোন করেছিলো। মামার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে সেলিম সরকার ওনার পূর্ব-পরিচিত এবং বেশ ঘনিষ্ট তাছাড়া সেলিম সম্পর্কিত অনেক তথ্য ওনার কাছে আছে। কাজেই রুপমের এখানে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মামার সাথে দেখা করা এবং অজানা তথ্যসমূহ জানা। মামার দোকানে যাবার পর রুপম সরাসরি জেরা শুরু করলো-
রুপম- মামা, সেলিম সরকার কিরকম লোক?
মামা-সেলিম সরকার ভালো কিন্তু আলীম সরকার খারাপ।
রুপম- কেনো?
মামা- লোকটা তলে তলে অনেক কারবার করে।
রুপম- কীরকম কারবার?
মামা- লোকটাকে আমি চিনি ২০১৭ সাল থেকে। যখন প্রথম পরিচয় হয় তখন আমি ব্যবসায় আসি নি। আমি তখন একটা এনজিও-তে চাকরি করতাম। সেলিম সরকার একবার সেই এনজিও থেকে কিছু টাকা ধার নেয় এবং সেটা আমার কাছ থেকেই। ধার শোধ করার সময় ছিলো দুই বছর। সময়কাল পার হবার পর এ ব্যাপারে তদন্ত শুবু হয়। তখন জানা যায় যে টাকাটা ধার নিয়েছিলো আলীম সরকার কিন্তু পরিচয় দিয়েছিলো সেলিম সরকার নামে। এসব কথা আমরা সেলিম সরকারের কাছথেকে জানতে পারি। আলীম সরকার তখন পলাতক ছিলো। পরে তার কিছু টাকা জরিমানা হয়।
রুপম- সেলিম সরকারের কোনো গোলমাল নেই তো?
মামা- আমার কানে কিছু আসে নি।

রুপম আর গণেশ মেসে ফিরে এসেছে। রুপম এখন বিছানায় শুয়ে ফ্যানের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। একটু পর রুপম আপন মনেই বললো ‘তুখোড় বুদ্ধি,তুখোড় বুদ্ধি…..’। গণেশ জিজ্ঞাসা করলো ‘কার?’ রুপম বললো ‘আমাদের মক্কেল আলীম সরকারের।’ গণেশ বিস্মিত বদনে প্রশ্ন করলো ‘কেনো?’ রুপম বললো ‘আমার বিশ্বাস যে সেলিম সরকারকে তার ভাই আলীম সরকারই কিডন্যাপ করেছে। সেলিম সরকারের গ্রামের বাড়ি কাউনিয়ায়। কাল সকালে একবার আমি কাউনিয়া যাব। আশা করি কাল রাতে যবনিকা পতন হবে।’ গণেশ রুপমকে প্রশ্ন করলো ‘রহিমার কাছ থেকে কী জানা গেলো?, তুই তো তখন আমাকে বাড়িটা পরীক্ষা করতে পাঠালি।’ রূপম বললো ‘রহিমার কাছ থেকে যা জানা গিয়েছে তা ক্রমশ প্রকাশ্য। তোর দায়িত্ব হলো তুই কাল সারাদিন আলীম সরকার কোথায় যাচ্ছে,কী করছে,কার সাথে কথা বলছে সব নজর রাখবি। আমি তোকে একটা গাড়ি ভাড়া করে দেবো। আর আমার কিছু কাজ আছে তাই আমি তোর সাথে থাকতে পারবো না। আশিক ভাইয়ের বাইকটা আমি ধার নেবো।’


আরো পড়ুন: শিশুতোষ গল্প: রুপম ও এক মিথ্যাবাদী । শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য


পরদিন সকালে গণেশের জন্য একটা সাদা টয়োটা নোয়া চলে এসেছে। মধ্যবয়সি ড্রাইভার। ড্রাইভারের নাম শরিফ। সকাল আটটায় গণেশ বেরিয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর রুপমও বের হলো। গণেশের গন্তব্য আলীম সরকারের বাড়ি। ড্রাইভারটি বেশ বুদ্ধিমান। সে গণেশকে প্রশ্ন করলো ‘আমরা কী কাউকে ফলো করবো?’ গণেশ বললো ‘হ্যাঁ’।
ওদিকে রুপম বাইক ছুটিয়ে কাউনিয়ার পথে চলছে। সেলিম সরকারের বাড়ি কাউনিয়ায়। সেখানে এক পানের দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে সেলিম সরকারের বাড়ি চিনে নিতে অসুবিধা হলো না রুপমের। বাড়িতে কিছু লোকজন আছে। সেলিম সরকারের বাড়ির পাশের বাড়ির সামনে গিয়ে রুপম দরজার কড়া নাড়লো। একজন লোক এসে দরজা খুলে দিলো। রুপম ভেতরে ঢুকলো।
গণেশ এখন সেলিম সরকারের বাড়ির সামনে। সকাল সাড়ে দশটায় বাড়ির ভেতর থেকে একটা কালো রঙের মারুতি সিয়াজ গাড়ি বেরিয়ে এলো। গাড়ির ভেতরে আলীম সরকার বসে আছে। গাড়ি সোজা চললো। গণেশের সাদা গাড়িও চললো কালো গাড়ির পিছনে। সমাজ কল্যাণ স্কুলের মোড়ে এসে গাড়িটা বাঁ দিকে রংপুর কোতয়ালী থানার রাস্তায় চললো। গণেশ এবার ড্রাইভারকে বললো ‘এমনভাবে গাড়ি চালান যেনো গাড়ির ভেতরের লোক বুঝতে না পারে যে তাকে ফলো করা হবে’। ড্রাইভারটি বেশ বুঝমান। সে বললো যে ‘আমি বুঝতে পেরেছি। আমার মতে একটু দূরত্ব রেখে চলা উচিৎ’। গণেশ বললো ‘দূরত্ব নিন কিন্তু আমাদের চোখ থেকে যেনো হারিয়ে না যায় সেটা খেয়াল রাখবেন’। থানা পার হয়ে গাড়িটা পালপাড়ার রাসÍা ধরলো। অবশেষে গাড়িটা রংপুর কমিউনিটি সেন্টার পার হয়ে নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ায় ঢুকলো। পানি ট্যাঙ্কির মোড় থেকে ডান দিকে কিছুদূর এগিয়ে গাড়িটা একটা ঝুপড়ি মতো বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। গণেশ পানি ট্যাঙ্কির মোড়ে গাড়ি রেখে হেঁটে বাড়িটার সামনে এসে পোঁছালো। আলীম সরকার বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে। গণেশ দেখলো একদিকে জানালা খোলা। গণেশ জানালার তলায় গিয়ে বসলো। জানালার ও প্রান্ত থেকে কথা শোনা যাচ্ছে ‘কী রে,মাল টা কী অবস্থায় আছে ?’ আলীম সরকারের গলা। অন্য একজন বললো ‘সকালে একটা পোড়া রুটি খেতে দিয়েছিলাম। খেয়ে এখন ঘুমোচ্ছে।’ আলীম সরকার বললো ‘ভেরি গুড। একটা নম্বর পাঠাবো, ফোন করে বলবি আগামীকালের মধ্যে যদি দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া না হয় তাহলে সেলিম সরকারের লাশও পাওয়া যাবে না। আমি রাতে আবার আসবো। সাবধানে থাকিস। আর শোন, একটা ছোঁড়া ডিটেকটিভ লেগেছে মালটাকে খুঁজে বের করার জন্য। আমি ছবি পাঠাবো। আশপাশে দেখলে গুম করে দিবি। আমি এখন যাই।’ গণেশ সব কথা মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়েছে। রাস্তায় এসে গণেশ দেখলো তার গাড়িটা এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। গণেশ গাড়িতে ওঠার পর ড্রাইভার বললো ‘গাড়িটা ঘুরিয়ে মূল রাস্তার দিকে চলে গেছে। আমরা এখন গেলে ধরতে পারবো’। গণেশ বললো ‘তা ই চলুন’। গণেশ কিছুদূর এগিয়ে এসে দেখলো গাড়িটা একটা ফুলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ আর কিছুই না টায়ার পাংচার। গণেশের ফোন বেজে উঠলো। রুপমের ফোন। ওপ্রান্ত থেকে রুপম বললো ‘কিরে কী খবর?’ গণেশ বললো ‘পার্টি নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার একটা ঝুপড়ি মতো বাড়িতে ঢুকেছিলো। সেখান থেকে বের হয়ে এখন গাড়ির টায়ার পাংচার হওয়ার কারণে নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার ফুলের দোকানের সামনে বসে আছে’। রুপম বললো ‘কাজ হয়ে গেছে। আমি থানায় আছি। তুই থানায় চলে আয়। গাড়িটা ছাড়িস না। আজ রাতেও গাড়িটার দরকার হবে’।

রুপম ও গণেশ এখন থানায় বসে আছে। গণেশ ওদের কথাবার্তার রেকর্ডটা রুপমকে দিয়েছে। রুপম সেটা দারোগাকেও শুনিয়েছে। রুপম হঠাৎ বলে উঠলো ‘বাদুর বলে ওরে ও ভাই সজারু, আজকে রাতে দেখবি একটা মজারু’। দারোগা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো ‘বাবা তোমার মতলবটা কী বল তো?’ রুপম বললো ‘আমরা আজ রাতে সেলিম সরকারকে উদ্ধার করবো। আপনি আলীম সরকারকে অ্যারেস্ট করবেন। কাল সকাল দশটায় সেলিম সরকারের বাড়িতে সবাইকে উপস্থিত করবেন। সেখানেই রহস্য উন্মোচিত হবে।’ এরপর দুজনে থানা থেকে বেরিয়ে এলো। গণেশ রুপমকে প্রশ্ন করলো ‘এই যে গাড়িটা তুই সারাদিনের জন্য রেখেছিস, গাড়িটার ভাড়া কে দেবে?’ রুপম বললো ‘গাড়িটা থানা থেকেআমাদের দিয়েছে।’

রাত বারোটা। রুপম ও গণেশ এখন শরিফের গাড়িতে চেপে নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার সেই বাড়ির সামনে চলে এসেছে। গাড়িটা কিছু দূরে রাখা হয়েছে। রুপম গলা নামিয়ে সকলকে বললো ‘পুলিশ আসছে। তার আগে কাজ সারতে হবে। আলীম সরকার এখনো এসে পৌঁছায়নি। আমরা সেলিম সরকারকে আগে উদ্ধার করবো। তারপর আলীম সরকারকে ধরবো। শরিফ ভাই, আপনি বাইরে থাকুন। এই হুইসেলটা রাখুন। সকালের গাড়িটাকে আসতে দেখলে আপনি হুইসেলটা বাজাবেন।’ দুজনে বাড়িটার ভেতরে ঢুকলো। দরজা খোলাই ছিলো। দরজা দিয়ে ঢুকে দেখলো গেটের কাছে একজন পাহারাদার ঘুমোচ্ছে এবং আরেকজন সিগারেট টানছে। ঘরের এক কোণে যে লোকটি ঘুমোচ্ছে সে সেলিম সরকার ছাড়া আর কেউ নয়। রুপম সাথে একটা পাইপ নিয়ে এসেছে। পাইপ দিলে সিগারেট টানা লোকটার মাথায় একবার মারতেই লোকটা ধরাশয়ী হয়ে গেলো। এখন দুজনকে বাঁধতে হবে। গণেশ বললো ‘এদের গায়ের জামাগুলো খুলেই এদের বাঁধা যাবে’। রুপম বললো ‘তুই এটাকে বাঁধ। আমি ওটার ব্যবস্থা করছি।’ এরপর রুপম অন্যটার মাথায় সজোরে পাইপ দিয়ে মারলো। গণেশ এটাকেও বেঁধে ফেললো। একজনের পকেট থেকে একটা রিভলভার এবং অন্যজনের পকেট থেকে একটা চাকু বেরুলো। রুপম রিভলভারটা রাখলো এবং চাকুটা গণেশকে দিলো। রুপম বললো ‘এগুলো আপাতত আমাদের কাছেই থাক। পরে পুলিশকে দেওয়া যাবে।’ একটা হঠাৎ বাইরে একটা গাড়ির আওয়াজ শোনা গেলো। তারপরই হুইসেলের আওয়াজ। রুপম গলা নামিয়ে বললো ‘আলীম সরকারকে বাইরেই ধরবো। পুলিশেরও চলে আসা উচিৎ।’ দুজনে জানালা গলে বাইরে এলো। আলীম সরকার গাড়ি থেকে নামছে। গাড়িতে ড্রাইভার নেই। নিজেই চালিয়ে এসেছে। গাড়ির দরজাটা লাগানোর সাথে সাথেই রুপম লাফ দিয়ে গিয়ে আলীম সরকারের কপালে রিভলভার ঠেকালো। তারপর জোরে চিৎকার করে বললো ‘ভবানন্দের চ্যালা,এবার সাঙ্গ আপনার ভবের খেলা’। সাথে সাথে ঝোপের ভেতর থেকে কিছু পুলিশ সহ বেরিয়ে এলেন রংপুর কোতয়ালী থানার ওসি। বোঝা গেলো এটা ছিলো পুলিশদের জন্য সংকেত। রুপম ওসিকে বললো ‘এই নিন, পালের গোদা। কুঁচো দুটো বাড়ির ভেতরে আছে। সেলিম সরকারও ভেতরেই আছে। আর এই রিভলভারটা ও চাকুটা রাখুন। এগুলো ওদের অস্ত্র। আমরা এবার আসি।

সকাল দশটা। সেলিম সরকারের বাড়ির বৈঠকখানা।
এখানে এখন আছে সেলিম সরকার, সেলিম সরকারের স্ত্রী আসমা বেগম, হাতকড়া পরিহিত আলীম সরকার, আলীম সরকারের স্ত্রী সালমা হক, রংপুর কোতয়ালী থানার ওসি রেজাউল করিম, রুপম ও গণেশ এবং ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সহকারী রহিমা। রুপম বললো ‘সকলের অনুমতি নিয়ে আমি শুরু করছি। আমরা জানি গত শনিবার রাত থেকে সেলিম আঙ্কেল নিখোঁজ হন। আমি রবিবার সকালে প্রথমআলোতে খবরটা দেখি। তারপর নিউ সেনপাড়ায় এসে সেলিম আঙ্কেলের বাড়ি খুঁজে বের করি। ভয়ে ভয়ে বাড়িটার সামনে এসে দেখি রেজাউল স্যার এখানে আছেন। রেজাউল স্যারের সাথে আমি বাড়িতে ঢুকি। এরপর বাড়ির সকলের সাথে আমি কথা বলি। দুটো গুরুত্বপুর্ণ তথ্য আমি জানতে পারি। প্রথমটা জানতে পারি আলীম আঙ্কেলের কাছ থেকে। সেটা হলো সেলিম আঙ্কেল তার এলাকায় একটা দাতব্য চিকিৎসালয় খোলার চিন্তা ভাবনা করছেন কিন্তু কযেকজন সেখানে বাগড়া দিচ্ছে। এই কয়েকজনের মধ্যে যে আলীম সরকারও আছে তা আমরা পরে জানতে পারি। আর দ্বিতীয় তথ্যটা জানতে পারি এই বাড়ির সহকারী রহিমার কাছ থেকে। সেলিম আঙ্কেল নিখোঁজ হবার পর থেকে কয়েকদিন যাবৎ আলীম সরকার রাত দেড়টা নাগাতবাইরে বের হন এবং এক দেড় ঘন্টা বাদে ফেরত আসেন। তখন থেকেই আমি আলীম সরকারকে সন্দেহ করতে শুরু করি। তারপর আলীম সরকার সম্পর্কে আরও একটা তথ্য আমি জানতে পারি আর এ এমসি শপিং কমপ্লেক্সের আরও একজন ব্যবসায়ী আমার মামা বিকাশ রায়ের কাছথেকে। ২০১৭ সালে আলীম সরকার একটা এনজিও থেকে বেশ কিছু টাকা ধার নেয় এবং নির্ধারিত সময় পার হবার পরও সে টাকা শোধ হয় না। টাকা ধার নেওয়ার সময় তিনি নিজের পরিচয় সেলিম সরকার নামে দেন। আমার মামা তখন ওই এনজিওতে কর্মরত ছিলেন। তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে দিব্যি সচ্ছল পরিবার, তবুও হঠাৎ এই টাকার দরকার হলো কেনো? তাই আমি এই ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য আলীম সরকারের বাড়ির এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে আমি জানতে পারি যে ওই এলাকায় আলীম সরকারের একটা ক্লিনিক আছে। সেখানে ভালো ভালো ডাক্তাররা আসে। তাই এলাকার সকলে সেই ক্লিনিকেই যায়। চড়া ভিজিটে সেখানে রোগী দেখা হয়। এই ক্লিনিকের কথা আমি সেলিম আঙ্কেলের গ্রামের বাড়ির পাশের বাড়ির গোবিন্দোবর্মনের কাছে শুনি। আমি সেই ক্লিনিকেও যাই। সেখানে আমার সাথে ডা. আব্দুস সালামের কথা হয়। তিনি আমাকে বলেন আটশো টাকা করে ভিজিট হলেও তাঁরা জনপ্রতি দুশো টাকা করে পান। ক্লিনিকের ম্যানেজার নিরঞ্জনবাবু আমাকে জানান যে ক্লিনিকটা ২০১৮ সালে তৈরি। তখন আমি বুঝতে পারি যে এই ক্লিনিক তৈরির জন্যই আলীম সরকার টাকাটা ধার নিয়েছিলো। যদি সেলিম আঙ্কেলের দাতব্য চিকিৎসালয় তৈরির ফলে আলীম সরকারের ক্লিনিকের রমরমা ব্যবসা নষ্ট হয় তাই সে সেলিম আঙ্কেলকে কিডন্যাপ করায়। এদিকে আমার সহকারী গণেশ আলীম সরকারকে ধাওয়া করে তার ঘাঁটি চিনে ফেলে। বাকিটা তো আপনাদের সবারই জানা।’ সেলিম সরকার এখন চেয়ার থেকে উঠে এসে রুপমকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন ‘তোমার কারণে আমার প্রাণ রক্ষা পেলো। আমি তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ।’ তারপর তিনি রুপমের হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন ‘তোমার পুরস্কার’।
বিকেলবেলা রুপম খামটা খুললো। পাশে গণেশ উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। খামের ভেতর থেকে পাঁচটা কড়কড়ে এক হাজার টাকার নোট বেরুলো। রুপম বললো ‘গোয়েন্দাগিরি করে প্রথম ইনকাম।’ গণেশ বললো ‘এখন থেকে তোর পারিশ্রমিক হবে পাঁচ হাজার টাকা।’

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত