এ বছরের গোড়ার দিকে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল যখন কোভিড পরিস্থিতিতে বাতিল হল, মন সত্যিই খারাপ হয়েছিল। আদতে সিনেমা দেখতে আর অনুভব করতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের পক্ষে ওটা ছিল যথার্থই এক কালপক্ষ। তারপর অনেকদিন কোনও কথা নেই, বইমেলাও হয়ে গেল হৈ হৈ করে, এর মধ্যেই হঠাৎ শুনলাম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের দিনঘোষণা হয়েছে। অবশেষে কাল এই উৎসব হল শুরু আর আজ থেকে আমার ছবি উদযাপন হল আরম্ভ।
আজ যে দুটো ছবি দেখলাম তার মধ্যে প্রথমটি আমাদেরই এক পরিচিত ডিরেক্টর বন্ধু সৌরীশ দের বাঘ। এই ছবিটি এখানে আসার আগে অলরেডি দেশের আরও নানা ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়ে গেছে, যার মধ্যে কেরালা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি প্রথম দশটি ছবির মধ্যে আছেও। ছবিটি মূলত বাঘ প্রজাতির বিলুপ্তি, তার নানা কারণ আর মানুষের সাথে এই বাঘের অস্তিত্বগত টানাপোড়েনের ওপর নির্ভর হলেও সূক্ষ্ণ অর্থে তা আমাদের মানবসমাজের জাতিগত, কৃষ্টিগত ও আর্থসামাজিক বিচ্যুতিগুলির গল্পই বলে। এখন তথাকথিত অর্থে আর্ট ফিল্ম বা ফেস্টিভ্যাল ফিল্মের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং ধরন থাকে। এইসব ছবির দর্শকও হয় তাই একটু ভিন্ন। বাঘ সিনেমাটিও স্বাভাবিক নিয়মেই সেই ধারা মেনে হয়ে উঠেছে খানিকটা সেইসব অ্যাবস্ট্রাক্ট মর্ডান আর্টের মতো যা বেশ খানিকটা সময় নিয়ে মন দিয়ে দেখতে হয়, এবং অনুভব করতে হয়, এবং বিভিন্ন মানুষ তখন সেই একই ছবির সাথে ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু খুব ব্যাক্তিগতভাবে কানেক্ট করেন, আর এখানেই একটি ফেস্টিভ্যাল মুভির সার্থকতা, আবার তার লিমিটেশনও। তবে এখানে এসবের ছাড়িয়েও আর যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি করে মনে দাগ ফেলে, তা হল এই ছবির প্রত্যেকটি অভিনেতার অনন্য অভিনয়। থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড যে কিভাবে ধীরে ধীরে বাংলা সিনেমার নতুন সব অসাধারণ অভিনেতাদের একটা আঁতুরঘর হয়ে উঠছে, সাম্প্রতিককালের কিছু ব্যতিক্রমী ছবি দেখলেই তা খুব ভাল ভাবে বোঝা যায়( যেমন, হীরালাল, বিনয় বাদল দীনেশ 8×12, The একেন কি এই বাঘ…The Tiger), আর এটা সত্যিই একজন সিনেপ্রেমী দর্শকের জন্য বিশাল প্রাপ্তি। তাছাড়া সাউন্ড স্কোর আর মিউজিকও খুব যথাযথ। তবে এসবের ঊর্ধ্বে উঠেও শেষ কথা একটিই, ছবিটি মন ছুঁলো কিনা?
“আমি তো অ্যাকচুয়ালি পল সায়েন্সের ছাত্রী ছিলাম, তাই এই মেটাফরিক সিনেমাটা প্রথম প্রথম ধরতে একটু অসুবিধা হলেও শেষ অবধি আর কোনও কনফিউশন ছিল না আমার। সো, আই অ্যাম টোটালি স্যাটিসফায়েড।“
প্রথম বক্তা আজ আমারই এক পরিচিত সহদর্শক বন্ধু এবং দ্বিতীয় বক্তা বাংলা ছবির মহীরুহ সত্যজিৎ রায়। অ্যাবস্ট্রাক্ট মর্ডান আর্টের রসগ্রাহী হলেও ছবির ব্যাপারে আমার বক্তব্যও কিন্তু সত্যজিৎ ঘরানাকেই সমর্থন করে এসেছে সবসময়। একটা ছবি যা ভেবেই বানানো হোক না কেন ছবিটির মূল উদ্দেশ্য শেষ অবধি মনোরঞ্জনই এবং এই ভাবটি কিন্তু কখনোই ক্ষুন্ন হলে চলবে না, তাহলে গোটাটাই মাটি।
গল্পকার ও চলচ্চিত্র সমালোচক। জন্ম ৭ ফেব্রুয়ারি, গঙ্গাতীরবর্তী শ্রীরামপুর শহরে, কিন্তু স্কুলজীবন কেটেছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। কিশোরীবেলা থেকেই লেখালেখিতে আগ্রহ এবং জেলা ও রাজ্যস্তরে বিভিন্ন সাহিত্য প্রতিযোগিতার পরিচিত নাম। পরবর্তীতে লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা, শ্রীরামপুর শহরের কিছু সাহিত্য সভার সদস্য এবং বিভিন্ন পত্রিকা এবং ই পত্রিকার নিয়মিত লেখিকা। বর্তমানে সাহিত্য চর্চা ও চলচ্চিত্র সমালোচনার কাজে যুক্ত।