আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
আবারও কি দেবে হানা?
অভিমান ভুলে গেছি, ঘুচিয়ে দিয়েছি সব
ভালো-মন্দ ভেদ।
অলস মস্তিষ্ক নিয়ে ঘরে বসে আছি,
‘শুভ’ বলে ভাবছি যা
হয়তো তা একেবারে আকাশ-কুসুম।
বিশল্যকরণীবিদ্যা শিখেছিলো যারা
তারাই দিচ্ছে আজ শ্রম ঘাম স্বেদ।
মানুষ শিখেছে ঈর্ষা সেই কোন সুদূর অতীতে—
সঞ্চয়ে আনার পর বুনো পশুপাল,
নিজেও হয়েছে পশু
অতঃপর
বাঘাম্বর পরে দেয় সিংহতুল্য হাঁক।
বন্য কোনো পশু নয়; ভয় হয় নিজেকেই
এই ভেবে- এখন নিজেকে লাগে যতখানি
‘মানুষ’ ‘মানুষ’ এটাও কি মুছে যাবে ফের;
আবারও কি মিশে যাব গড্ডলের পালে;
আবারও কি দেবে হানা ‘স্বার্থ’ নামে পোষমানা
কোষাশ্রিত বিভীষণ দৈত্য-বিশেষ,
আবারও কি কাকমাংস ছিঁড়ে খাবে
ভিন্ন কোনো ঈর্ষাতুর কৃষ্ণবর্ণ কাক-
কেটে গেলে একে একে
ভিনদেশ থেকে আসা এই দুর্বিপাক?
জীবনানন্দ এসে ডাকে মাঝে মাঝে
মধ্যাহ্নে একা পেলে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে বটের ছায়াও
‘না’ ‘না’ বলে মাথা নাড়ে, শর্ত দিতে চায়
জন্মকালে নিয়ে আসা কর্মফলও
পালনে অক্ষম যেন বৃক্ষ ও প্রকৃতি,
পুঁজিবাদ নিয়ে গেছে সবকিছু নিজের দখলে
ছায়া গেছে, ঝরাপাতা, বসার মতন কটা অশ্বত্থ-শেকড়ও,
পথের দু’পাশও গেছে- শান বাঁধা বেদী গেছে
লাল-নীল ছাতার দখলে।
আমাদের ভিটে গেছে গ্রামিণের সুদে, হাটবারে
মাঝে দুটি ইলিশ খেয়েছি শুধু দারা-সুত নিয়ে:
এইটুকু সুখস্মৃতি কাঁটা হয়ে বিঁধে আজকাল।
ক্ষেতজুড়ে শাকপাতা ম্রিয়মান হয়ে গেলে তাপে
মাছেরা আশ্রয় নিলে নদীর তলায়
বেতসের নীলছায়া ঘন হয়ে ওঠে
ঘুঘুদের ভালোবাসাকাল বোঝে ফাঁদশিকারীরা-
এই ফাঁকে সেরে নেয় নিজেদের মধ্যাহ্নের ভোজ।
আমাদের অহ্ন নেই; অহ্ণ মেনে হয় না গ্রহণ আর
অন্ন বা আনাজের-হুররা, যাবাগু বা অন্যকিছু
সবকিছু হারানো পর, পৃথিবীতে পড়ে আছি
বিনা-প্রয়োজনে, রাতের স্বজন শুধু
আকাশের নীল থেকে চোখ মেলে চায়,
জীবনানন্দ এসে ডাকে মাঝে মাঝে- রেলের ওপাড় থেকে
হাতছানি দিয়ে যেন বলে- “আয়! আয়!”
থাকছি না কেউ আমরা
আর মাত্র কিছুদিন পর- জীবিত আমরা কেউ থাকছি না
পৃথিবীতে আর
এ’জগত আজ বড় মনুষ্যত্বহীন।
মানুষের মাঝে আর ভালোবাসা নেই
এখানে প্রেমের নামে আজকাল চলে প্রতারণা;
ভালোবাসা আছে বটে–শরীর প্রধান।
সময় ফুরিয়ে যাবে এতোসব কথায় কথায়
কবর-ই বলবে কথা হাজার বছর পরে আমাদের হয়ে-
যে রীতিতে কথা হয় অতীতের সাথে
এখনও তা হচ্ছে না হয়। আমাদের কবরেতো এতোসব
কথাবলা হাড় থাকছে না;
আমাদের কবরতো সংরক্ষিত নয় আর মিশর খোটান বা
তুরফানের মতো। চাষের অনেক বেশি জমি চাই বলে-
আমরা সবাই
ঢুকে পড়ছি বারে বারে একই কবরে। এতোসব দেখেশুনে
নিশ্চিত বলা যায়- থাকছি না কেউ আমরা
ভবিষ্যতে মাটি খুঁড়ে তুলে আনা প্রজন্মের নৃতত্ত্ব-সংবাদে।
কবি ও প্রাবন্ধিক