Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,kobi-bangla-kobita-kanakjyoti-roy

চারটি কবিতা । কনকজ্যোতি রায়

Reading Time: 2 minutes
কম্পাস

দিগভ্রান্ত নাবিকের হঠাত্‍ আবিষ্কার করা কম্পাসের মতো
 খুঁজে পেলাম একদিন তোমাকে।
সেদিন  বুঝিনি মরচে ধরা কম্পাসটি ছিল অচল ।
তাই পথ ভুলেছি বারবার ।

উচ্ছ্বল আশা দুচোখে নিয়ে পাড়ি দিয়েছি উদ্বেলিত পারাবার।
প্রাণচঞ্চলতার কল্পনায় নোঙর ফেলেছি যে দ্বীপের তীরে
বুঝিনি তা ছিল শুষ্ক নির্জীব। 
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে চেয়ে গেয়েছি বসন্তের গান ।
বিশুদ্ধ বাতাসের কামনায় ছুটেছি যে ডাঙার পানে ,
 বুঝিনি তা ছিল ক্ষণস্থায়ী মরীচিকা।
অনেক ডুবজল সাঁতরে পাড়ে উঠে বিস্ময়ে দেখি, 
ভিজে বালুচরে  পড়ে আছে ভাঙা
কম্পাসটির এক তীক্ষ্ম  শলাকা। 

ফ্রেম

মন জুড়ে তারাহীন আকাশ
  হৃদয়ে অলীক কল্পনার অনুরনন
চোখের পাতায় ভেসে যাওয়া টুকরো টুকরো মেঘ।

অনেকদিন বৃষ্টি হয় নি,
সিঞ্চনের আশায় পাতাগুলি হলুদ
শুষ্ক ধানের শিষে ফলে না মমতার ফসল,
ক্ষয়িষ্ণু শিকড় উৎপাটনের অপেক্ষায়,
ধুমকেতুর মতো হঠাৎ এসেই মিলিয়ে যায়
লাল নীল আর সবুজ স্বপ্নগুলো,
ভালবাসার মোড়কে নকল সোনা
বাজারদর তারই সবচেয়ে বেশী
অলিতে গলিতে হীরের টুকরোর ছড়াছড়ি।

প্রজাপতিটা আসেনি অনেকদিন
ওটা শুধুই রং ভুল করে
ধরতে পারলে  বাঁধিয়ে রাখতাম
সুদৃশ্য ফ্রেমে,
নিরাভরন নয়, মালা দিয়ে।

 প্রবহমান 

  একদিন
         চরাচরের নিস্তব্ধতায় মুখোমুখি
      রুদ্ধগতি মহাকাল, বিপুলা বৈশাখী,
        বনানীর মর্মর, হৃদয়ে কলতান
     নীল স্বপ্ন চোখে,  ভ্রমরের আহবান।

অতঃপর
      ঢাকা পড়ল নক্ষত্র, ভেঙে গেল বাঁধ
       আবিস্কৃত হল বেঁচে থাকার আহ্লাদ,
     ছায়া যেন কায়া, জগৎ তখন মায়া
   বুকের মাঝে আগুন, দৃষ্টিতে আলেয়া,
   স্বত্তার ইতি,  সংযমের বলিদান
   দুমড়ানো  পাঁপড়ি, তছনছ বাগান।

অবশেষে
   থেমে গেল তুফান, ঝরে পড়ল পাতা
   ঝর্না তখন নদী,  বালুচরে শূন্যতা,
   বসন্ত ইতিহাস,  গ্রীষ্মের হাতছানি
   অলক্ষে বাজল প্রলয়ের পদদ্ধনি

স্বপ্নবৃষ্টি

ঘাসের মত  হলে পদানত হয়েই থাকতে হবে,

তার চেয়ে কাঁটাঝোপ হওয়া ভাল

অন্তত প্রতিবাদের অক্ষমতার আফসোস থাকে না।

মাটীর মত হলে জড়বৎ হয়েই থাকতে হবে, 

তার চেয়ে নুড়িপাথর হওয়া ভাল

অন্তত পথিকের পায়ের সাথে কম্পিত হওয়া যায়।

ঢেউ এর মত হলে তীরে এসে ভেঙে পড়তেই হবে,

তার চেয়ে হিমশৈল হওয়া ভাল

অন্তত ক্ষণস্থায়ী  অস্তিত্বের দুঃখ থাকে না।

নক্ষত্রের মত হলে অবিরাম জ্বলতেই হবে,

তার চেয়ে চাঁদ হওয়া ভাল

অন্তত রাতের অন্ধকারে স্নিগ্ধ আলো বিতরণের গর্ব থাকে।

রাত্রির মত হলে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই মিলিয়ে যেতে হবে,

তার চেয়ে  প্রত্যুষ হওয়া ভাল

অন্তত অল্প আলোর আভাসের মধ্যে উজ্জ্বলতার প্রকাশ থাকে।

মেঘের মত হলে পরনিয়ন্ত্রিত হয়েই উড়ে যেতে হবে,

তার চেয়ে আকাশ হওয়া ভাল

অন্তত অসীম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করা যায়।

বাতাসের মত হলে স্বেচ্ছাহীন বয়ে যেতেই হবে,

তার চেয়ে দখিণাবায়ু হওয়া ভাল

অন্তত শুষ্ক হৃদয়ে আনা যায় শীতলতার স্পর্শ। 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>