| 28 মার্চ 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

ইরাবতী এইদিনে: একগুচ্ছ কবিতা । চন্দনকৃষ্ণ পাল

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

আজ ১ মে কবি,ছড়াকার ও কথাসাহিত্যিক চন্দনকৃষ্ণ পালের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভ কামনা।


 

শৈশবকে কাছ থেকে দেখার স্বপ্ন


ও রকম বিষন্নতা নিয়েই রাত্রি দিন
বা দিন রাত্রির পথচলা
নিজের শৈশবকে কাছ থেকে দেখার সাধ আরো একবার-
কিন্তু কই,কোন জটাধারীই তো
স্বাভাবিক চোখে তাকালো না একবারও
তা হলে? কিভাবে আমি নিশ্চিত হই
কিভাবে নিজেকে বলি শান্ত হও প্রিয়
তোমার শৈশব দেখার সাধ
প্রস্ফুটিত হচ্ছে দল মেলে
ঘ্রাণ ছড়িয়ে আমোদিত করার ইচ্ছায়
রঙ ছড়াচ্ছে পাপড়িবৃন্দ!

না,জটাধারী প্রত্যেকেই চমকে ওঠেন
ধ্যান ভেঙে অসহায় চাউনিতে নিজেকে প্রকাশ করেন
আর আমি ক্রমাগত বিষাদিত হই…..।

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা আজকাল বড় নির্মম আর নিস্পৃহ!

 
 
 
 

আজকাল যা করছি আর কি!



পরিশ্রম একটু হয়ই আজকাল
অভিধান ঘাটাঘাটি করি-
অপ্রচলিত শব্দ খুঁজে খুুঁজে ছেড়ে দেই
কাগজের ওপর
তারা হাঁটে না
স্থির দাঁড়িযে থাকে
থেমে থাকা রেলগাড়ি
জটিল শব্দ,অর্থহীন বাক্য।
পাঠক, কবি পড়েন আর চোখ গোল করেন!
এটাই আনন্দ আমার।
আধুনিক কবি কি না!
হা…হা…হা……

বড়ই আনন্দে আছি।
অভিধান ঘাটি।
শব্দ তুলে তুলে সাদা কাগজে বসাই….
দিব্যি আধুনিক কবিতা
নাম যশ সাতে নগদ নারায়ণ….
 
 

 

 

মুখোশ


এখানেও মুখোশ লাগানো মানুষ!

কাছ থেকে দেখতে দেখতে আজ দীর্ঘ দুই যুগ
স্রোতস্বতীরা আজ ম্রিয়মান,
শরীরে দীর্ঘ মাঠ, সবুজের দীর্ঘ আচ্ছাদন আর
আমি বিশ্বাসের ডালপালা ছড়িয়ে রেখেছি
                 বুঝি এই দেখবো বলে?

এই মুখোশ এর আড়ালে ঘৃণ্য অবয়ব!

রিমঝিম বলেছিলো-‘এই ঘৃণ্য মুখ আর
ফুটো আকাশ দেখতে ইচ্ছে করেনা বলে
ছাদ থেকে লাফানোর ইচ্ছেরা মনের ভেতরে
খুব শিকড় গেড়েছে।’

মিথ্যে নয় বুঝি আজ,
মুখোশটা খুলে ফেলে
বাঁচিয়ে দিলে প্রিয় নাদুস-নাদুস!
 
 

 

অন্তর্গত অনুভব


মুখ থেকে সব হাসি মুছে গেলে
কিযে এক ধূসরতা মেঘের আদল নিয়ে
স্তম্ভিত দাঁড়ায় একাকী, আমি হই বোধ শক্তিহীন-
কোন করুণ বাক্য রচিত হয় না ক্রান্তিকালে
অসহায় ঠোঁট জোড়া নিশ্চুপ থেকে যায় অনন্তকাল…

অনন্তকাল কি ধরে রাখে বনানীর বিষন্ন মুখ?
এ প্রশ্ন রাখার আগেই
সব কিছু মুছে যায় সময়ের  স্রোতে…।

 

 

 

বিকেল


বিকেলগুলো এমন ছিলো কমলা রঙের আবীর মাখা
সেই বিকেলে শ্বেতপরি এক সবুজ ছুঁয়ে মেলতো পাখা
অবাক আমি পরি দেখে
সেই পরিটা কাব্য লেখে
মুদ্রায় আছো লাবণ্যে আছো পূর্ণ করা প্রাণ
মেঘ ভাসা নীল রঙের আকাশ গাইেেতা মধুর গান
সে সুরেতে মন আনচান
মুছে যেতো মান অভিমান
বিকেল তখন হাসতো তার প্রসাধিত রূপে
সন্ধ্যা হতো শংখ ঘন্টা আর পবিত্র ধূপে
হাতে হাত রেখে বাড়ির পথে
উড়তাম ঠিক স্বপ্নের রথে
মন আলো করা বিকেলগুলো স্মৃতিতে নাড়ে কড়া
ফেলে আসা সেই সোনালী দিন যে স্বপ্নে স্বপ্নে গড়া।
 
 
 
 
খন্ড কবিতা
 

আবর্ত সৃষ্টি করে জলস্রোত
দিক পাল্টায় নৌকোর শরীর
মাঝি বৈঠা তুলে নিসর্গ দ্যাখে।
 
 
তোমার তাবৎ ইচ্ছে জলস্রোত হয়ে
আবর্ত সৃষ্টি করে,
আমার ইচ্ছে নিয়ে চমৎকার লুফালুফি
খেলো তুমি,
আমি নির্বাক থাকি, রাগ ক্ষোভ সব কিছু ভুলে।
 
 
নরখাই নদী কোন দিন নর খেলেও
ইদানিং বালিরাশি তাকেই গিলেছে
‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’
এ সত্যি তুমি মানবে কিনা একান্তই
তোমার ব্যাপার।
 
 
ইট সাজালে কাঠ সাজালে
আরো কত কিছু, ভাবসাব এই বুঝি
বিশাল দালান উঠছে আকাশ ফুড়ে
রাত কয়েক গত হতে না হতেই
ফুস মন্তরে সব হাওয়া,
খোলা মাঠের শরীরে বাতাসেরা
গোল্লাছুট খেলতে খেলতে
ক্লান্ত হলে এখানে এসে শান্ত হয়ে যায়।
 
 
তুলি কলম কাস্তে
সব কিছু তেমনি দিব্যি আছে
দেয়ালে রঙ্গিন লিখন আরোও স্পষ্ট
তারপরও বিপ্লব ধানমন্ডি গুলশানে হাওয়া
খেতে যায়।
 
 
বিপ্লব কি সারা জীবন শুধুই হাওয়া খাবে?
 
 
 
 
 
 
 
নারী-৩
 
 
হাত বাড়িয়ে বলো এসো,
তাবৎ পতঙ্গ আসে আগুনের দিকে
নির্দ্বিধায় ঝাপ দেয়, পুড়ে।
 
 
দূরত্বে দাঁড়িয়ে তুমি হাসো
নারী, লকলকে আগুন হয়ে
কতো দিন পুড়াবে তুমি পতঙ্গের
কোমল শরীর?
 
 
 
 
 

নারী-৪

 
 
কটাক্ষ হানো, নাচো নানান ছন্দে
বৃষ্টি অর্পণ করে নিজস্ব জলকণা
ফুল অর্পণ করে সমস্ত সৌরভ
প্রকৃতি অর্পণ করে তাবৎ সৌন্দর্য্য।
 
 
সমস্ত অর্পিত সম্পদ নিয়ে
কেটে পড়ো নারী, প্রতারিত বৃষ্টি
ফুল প্রকৃতিতে মরুভূমির হাওয়া
তান্ডব তুলে, অন্ধকার ঝাঁপিয়ে পড়ে
আলোকে পরাস্ত করে।
 
 
নিঃস্ব সময় শুধু শুধু শিস কেটে ফিরে।
 
 

 

 

তিতাস পাড়ের ছেলে



তিতাস পাড়ের ছেলে রোদ জ্বলা চুল নিয়ে
ফিরে আসে তিতাসের পাড়ে।

হেঁটে হেঁটে গিয়েছে সে সমুদ্রের কাছে,
বিশাল ঢেউ এসে প্রতিরোধ জানিয়েছে
ফিরে যাও বালক তুমি
সবার স্থান নয় সমুদ্র সৈকত।

পদরেখা ফিরে গেছে পাহাড়ে কাছে,
উচ্চ শৃঙ্গ থেকে গায়েবী আওয়াজ বলে
এখানে এসেছো কেন তুমি
ভীষণ বন্ধুর পথ হে প্রিয় বালক
সংগ্রাম তোমার জন্য নয়,
ফিরে যাও সমতলে
সবুজ শস্য দেবে তোমায় আদর।

বিস্তীর্ণ অরণ্যের কাছে রাখে তার নম্র আহ্বান,
অরন্য দেবতার গম্ভীর কণ্ঠ —
শ্বাপদ সংকুল এই অরন্য প্রদেশ
কি করে শূন্য হাতে যুদ্ধে যাবে নওল কিশোর?
এর চেয়ে ফিরে যাও মাটির কাছেই,
মায়ের কাছেই, নিজেকে গড়ে তোল
প্রাচীর সমান, তারপর তাবৎ শক্তির কাছে
ছুড়ে দাও তোমার চ্যালেঞ্জ।

তারপর,
তিতাস পাড়ের ছেলে রোদে জ্বলা চুল
নিয়ে ফিরে আসে তিতাসের পারে,
অরণ্যের মন্ত্র জপে, সূর্যের কাছ থেকে
প্রাণ শক্তি ধার নেয় স্বপ্ন দেখে
তীব্র সংগ্রামের।
 
 
 

একটা গান



একটা গান মাঝে মাঝেই বুকের ভেতরটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।

কার সুর, কার বাণী, কার কণ্ঠ
কিছুই জানা হলো না,
রাতের গহন প্রহরে কেবা কার জন্য
বাজায় কিংবা গায় গলা ছেড়ে,
জানা হলোনা কিছুই।

অনেকেরই কিছু চাপা দুঃখ থেকে যায় বুকের গভীরে
ছোঁয়া কিংবা ধরা যায় না,
দেখানো যায়না তার স্বরূপ
শুধু অবলীলায় এক অজানা অনুভূতি
তার প্রচন্ড শক্তিতে নিংড়ে নেয় বুকের ভেতর।

রাতটা যখন তার নিজের মতো হয়ে যায়,
টহলদারের বাঁশী যখন থেমে আসে
পাহারাদার কুকুর যখন ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়ে
রাত চরা পাখিদের কণ্ঠও যখন মিলিয়ে যায়
ঠিক তখনই একটা গান বেজে ওঠে,
কণ্ঠে নাকি রেকর্ডে বাজে, বুঝিনা-

শুধু বুঝি গানটা ছুঁয়ে যাচ্ছে বুকের গভীর প্রদেশ
একজন মানুষের অজান্তেই দুচোখের কোণে
জমে দুই ফোটা জলে।
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত