অন্ধকার পৈঙ্গল
একটা মোমবাতি আত্মনিমগ্ন হয়ে জলের ভেতর জ্বলে যাচ্ছে
সে যতটুকু পারে ততটুকু অন্ধকার শুষে নিচ্ছে।
অন্ধকার শুষে নিলে আলোর জন্ম হয়।
যেভাবে মাতৃগর্ভের শিশু মায়ের নিঃশ্বাস শুষে নিয়ে-
বড় হয়ে ওঠে।
আমার একটা অন্ধকার মোমবাতি আছে
মোমবাতিটি আলোর মাঝে জ্বেলে দিলে-
অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
অনেকেই আমার মোমবাতির নাম দিয়েছে ধর্ম
কেউ দিয়েছে কবিতা
আবার কেউ বলেছে, ‘দূর হ হতছাড়া”।
জন্মপদ্ম
একদিন প্রকাশ্যে নগ্ন হবো
ঠিক একদিন নগ্ন হয়ে ঘুম দিবো-নিরবধিকাল।
যে ঘুম শিখেছিলাম মাতৃগর্ভ থেকে-
সেই ঘুম দিবো মাটির গর্ভে।
মা ও মাটির গর্ভ এত মমতাময়ী কেন!
কেন এত নির্জন স্তব্ধ! যেন আঁধারের মতো শীতল…
জননীর জন্মপদ্মে প্রণতি রেখে বলছি-
মানুষ জন্মগত অজ্ঞাতবাসী, ভুলত কবি
মূলত কখনো জানে না নদীর স্বরলিপি।
তবুও জীবনের মহাতীর্থে আমি ও তুমি-
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ভুলের মধ্যে বসবাস করি
আর বড় হতে হতে একটি ভুলকে আরেকটি ভুল দিয়ে প্রমাণ করি সত্য।
বাবা। তুমি ট্রেনে তুলে দিয়ে নেমে গেছো
গন্তব্যহীন ট্রেন চলছে-চলেই যাচ্ছে জলে
জলের মাঝে জননী, তার মাঝে জন্মপদ্ম।
অদৃশ্য
কিছু কথা আছে-পাখির মতো উড়ে যায়
কেউ শুনতে পায় না, শুধু তারে দেখা যায়।
কিছু কথা-শুধু বধির মানুষ শুনতে পায়।
কিছু গন্ধ দেখা যায় হৃদয় দিয়ে-
অনুভূতির দুয়ারে দাঁড়িয়ে তারা নাচে।
এক জন্মান্ধ মেয়ের কাছে শুনেছি-বাতাস দেখতে কেমন?
সে বলেছিল-আমার চোখের জলের মতো!
অন্ধকারের মতো গন্ধহীন আর আলোর মতো বধির!
তাই আমার কথাগুলো ব্যথা হয়ে বেজে ওঠে বাতাসের আড়ালে।
জন্মান্ধ কলম
একটি অন্ধকারের কবিতা লিখবো বলে
জন্মের পূর্বে ও মৃত্যুর পর থেকে বসে আছি।
যখনই সাদা খাতায় কালো কালিতে অন্ধকারের কবিতা লিখতে যাই-
তখনই সাদা খাতাজুড়ে আঁধার নেমে আসে
পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
আমি কেমন করে-অন্ধকার খাতায়
কালো কালিতে রোপণ করব কবিতা!
আলো জন্মের বহু আগে থেকেই আমি অন্ধ
তবুও তোমরা কেউ কি আমায় একটি জন্মান্ধ আয়না দিবে?
আমি একটি অন্ধকারের কবিতা লিখবো।
মা
শহরের বাড়িগুলো খুব পাশাপাশি
অথচ-ভেতরের মানুষগুলো অনেক দূরে দূরে বসবাস করে।
তাই আমার মা কোনোদিন শহরের অধিবাসী হতে পারেনি।
সে এখন গ্রামে বসে-প্রতিভোরে গোবর দিয়ে উঠান পবিত্র করেন;
পূজায় বসেন
পূজা শেষ করে খোঁজ নেন-হাঁসমুরগিগুলো কোথায় কেমন আছে।
লাউয়ের ডগা আর কতো বড় হলে-মাচাটা কতোটুকু করতে হবে।
আমি শত শত পথ দূরে থেকেও মায়ের এসব কাজ দেখতে পাই
আর শুনতে পাই-মা আমাকে কখন কী বলছেন।
যেমন করে শত শব্দের ভিড়েও বাসের ড্রাইভার-
হেলপারের কথা শুনতে পায়।
জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯৮৭, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। শিক্ষা: হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর। পেশা: সাংবাদিকতা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘ক্ষুধার্ত ধানের নামতা-২০১৬’, ‘মা আদিপর্ব-২০১৭’ , ‘ডোম-২০১৮’ ও ‘মেডিটেশনগুচ্ছ-২০২০’। সম্পাদনা: ‘বৈঠকখানায় নির্মলেন্দু গুণ-২০২০’। প্রধান সম্পাদক: www.poemvein.com। সংগঠন: ‘গীতাঞ্জলি সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’ ও ‘বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক’।
E-mail:[email protected]
https://www.facebook.com/girish.bangali.9
01723920014