প্রিমর্টেম
অন্যের সর্বনাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
দৃশ্যভর্তি হাহাকার নিয়ে একদিন তুমি চোখ হারাবে।
রুপোর বাটিতে করে যাকে জ্যোৎস্নামাখা মধু খাইয়েছিলে
সে-ই তোমার ছায়ার পেছনে লেলিয়ে দেবে বিষাক্ত কথাসাপ!
—মানুষকে আমি এভাবেই জেনেছি।
আর এভাবে জেনেছি বলেই,
জিভ ও ব্লেডের দূরত্বে বাজিয়ে দিয়েছি কলিংবেল…
মৃত্যু
পৃথিবীকে টানতে টানতে
আমি তোমার দিকে নিয়ে গেলাম।
তুমি মানে কবর—নিষিদ্ধ বোতামবাগান!
ভুল ল্যান্ডস্কেপে একবার দণ্ড, আরেকবার দক্ষিণা।
রক্তের মেটাফরে ভেসে ওঠা ‘তুমি’—ঘোরের এস্রাজ।
তুমি মানে ঘুম তাড়িয়ে দেওয়া চোখ
অথবা চোখ ডুবিয়ে দেওয়া ঘুম—
নিভৃতে পুড়ে যাওয়া হাওয়াই সিগারেট; বনসাই পাহাড়।
তাসের রানওয়ে ছেড়ে ‘তুমি’—শ্বাসকাটা ঘর
পৃথিবীকে টানতে টানতে
আমি তোমার দিকে নিয়ে গেলাম…
এ আয়ু নৈর্ব্যক্তিক-০৩
অন্ধের দেশে, ঘুম ও জঙ্গল পেরিয়ে আমি সেই জন্মান্ধ ফানুস—আয়ু কুড়াই, কুড়াই টান আর বিপরীতে কারা যেন ফুঁয়ে ফুঁয়ে নিভিয়ে দেয় মোম! বেজীর স্বভাব আমার—সাপের লেজ পুড়িয়ে ধোঁয়াতে রটাচ্ছি ম্যাজিক। ঘুরতে ঘুরতে যেভাবে নর্তকী তার ফণা থেকে খুলে রাখে বিষ, ঠিক সেভাবেই লুকিয়ে ফেলছি হিস্ ও হিংসা!
আমাকে দেখাই না আমি আমার চোখ
আমাকে শেখাই না আমি আমার শোক
আমার উৎসব আমি খুলে রেখেছি শরীর থেকে
আমার জখম আমি পুড়িয়ে নিয়েছি মনফুলে
আমার অভাবে আমি ছিটিয়ে রেখেছি বিষ।
থাকি পৃথক। যেন ভুলে গেলে ঝনঝন গড়িয়ে পড়ে ভুল! আয়ু কুড়াতে এসে, সর্বাঙ্গে ধরেছি চুপ। শব্দের রা-টুকু কেড়ে নিয়ে একাই মেলেছি ছাতা; খুলেছি পথ যার যার। বৃষ্টি নেই, অথচ ভিজে গেছে ভাত ও শরীর…
জেরিন
কোনো এক তারল্য সংকটে
বেহেশত ও দোজখের মাঝ বরাবর—
কাঁটা ফেরত লাশের পরিদৃশ্যে
আমরা আপনাকে হারিয়ে ফেলবো, জেরিন—
যেভাবে হারিয়ে ফেলেছি রক্তের ফ্ল্যাপ, শোকের লকেট
কিংবা পাতামুহুরির ঘাটে চুরি যাওয়া এক টাকার হরিণ!
সুডাকু মেলাতে মেলাতে যে পুরুষ শিখে ফেলে প্রেমের আয়ুর্বেদ,
তার হাতের রেখায় ডুবে যাবেন, জেরিন;
ক্রমশ তলিয়ে যাবেন—টেরও পাবেন না…
হরিণ
সমস্ত ঘোর নিয়ে
ঘিরে আছি তোমায়
এবং তৃষ্ণার ঘটে
আজন্ম লাট খাবে আমার হরিণ।
খুব রাগ পেয়ে গেলে,
তোমার ত্রিবেণি ছুঁয়ে
বয়ে যাবে যৌথ ঝিলাম—
যেমন আমি, তোমার অসুখ!
আর হরবোলা খুঁজতে খুঁজতে
অভ্র ও মুঠোর শূন্যে
সারাটা সন্ধ্যা তুমি
আমারই চোখ, আমারই ঠোঁট।
আমার হরিণ আমি ছেড়ে দেবো,
আমার হরিণ হবে হরবোলা,
আমার হরিণ সে-ও আমি—
যেমন তুমি, আমার অসুখ!