| 19 মার্চ 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

শাহেদ কায়েসের কবিতাগুচ্ছ

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

আজ ১৬ সেপ্টেম্বর কবি শাহেদ কায়েসের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


প্রশ্নবোধক চৌরাস্তা

শহীদ মজনু পার্ক পেরোলেই বালিকা হাওয়া আর পশ্চিমের সূর্যাস্তের মন খারাপ আকাশ… পথের দুপাশে সবুজের রাহাজানি, ধুলোর সংসার এসো অতিথি ডানায় এসো, কুয়াশায় মাখামাখি কত পথ পাড়ি দিয়ে তবে তুমি মুগ্ধ পরিযায়ী ! চৌরাস্তায় নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায় একা একা – কুয়াশা ও চাঁদমারি ফেলে এসে কেন তুমি প্রতীক্ষায় ব্যক্তিগত স্টেশনে দাঁড়িয়ে শূন্যতার ট্রেন !

 

 

এখনিজম

হাজার হাজার পাখি… জলের নিচে তার প্রতিচ্ছায়া সূর্যাস্তের রঙে বিভোর পাখিদের উড়ন্ত উৎসব মুছে ফেলে দুঃখ বেদনা উড়ে উড়ে গান হয় পরিযায়ী মন না পেছনে, না সামনে- কোথাও নেই আমি আছি আমার প্রতি মুহূর্তের জীবন-যাপনে… গোয়ালদি । সোনারগাঁ

 

 

প্রতিধ্বনি

গভীরে খুরের আওয়াজ, হ্রেষাধ্বনি, তারপর শুধু গতি
আর গতি… দিগভ্রান্ত পথ, পায়ে পায়ে হাওয়ার রাজ্য
যেভাবে একটি জীবন নিভৃতে শাসিত, কুঠারে সবুজেরা…
‘বৃক্ষ বেজে ওঠে যার আঘাতে আঘাতে, সে কি প্রতিধ্বনি!’
প্রাচ্যের রহস্য নগরী, ইটের লবন বিলাস— দোল পূর্ণিমার রাত
জোড়বাংলা স্থাপত্যের পাশে তীব্র হাস্নাহেনা, সংস্কারে রেখেছ হাত

দুলে ওঠে তোমার প্রাচীন বন, মন্দিরে কি থাকে তখন
হ্রেষাধ্বনি, গতি, এক ঝলক হাওয়া— অজন্তা-ইলোরা, আহা!
নক্ষত্র-জোনাকপোকা-শস্যঢেউ, ফাল্গুনের মাতোয়ারা চাঁদ…

 

মায়াদ্বীপের পাঠশালা

জীবন মৃত্যুর এই আলোছায়াময় খেলা
আমাকে অতি কাছে টেনে নেয়,
যখন ভোরের আলো দিবসের শৈশব
অন্ধকার গুটিয়ে নেয় তার নির্জন ডানা
চর-বালাদের ঘোর কাটে, আগুনের লাল আঁচড় নির্ঘুম চোখে
এই ছুটন্ত মেঘনা তীরে রুপান্তরের মায়া, অর্ধসত্য জীবন

দুই দীর্ঘশ্বাসের মাঝ বরাবর হেঁটে যায়
‘স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মধ্যে সরু পথ দিয়ে’
সোনালী মেঘের বাড়ি, জলের সংসার—
আর সুপ্রভাতের শিশুরা জেগে উঠে দিকে দিকে…

 

কৌম সমাজের আলোহাওয়া

জলেই জীবন জলেই মরণ…
কাঠ পুতুলের নাচ, দুই সতিনের পালা
রঙ দিয়ে চোখ, রঙ দিয়ে মুখ আঁকা
শাড়ি ও পুতির মালা, হাতে ঘুঙুর বাঁধা
‘ভালো নাচবি কানন রসের বিনোদিনী…’
ও বেহুলা ও পদ্মাবতী—
লৌকিক জীবনের সুখ-দুঃখের সাথী…

আজ এখানে তো কাল ওখানে—
জীবিকার টানে কেবলি ছুটে বেড়ানো
হাজার বছরের যূথবদ্ধ প্রাচীন সংস্কৃতি…
ঘর নেই বাড়ি নেই—  ভাসমান জলজ জীবন
মায়াদ্বীপের উপকথা

পথ খুঁজি…
সেই শিশ বার বার জেগে ওঠে!

ঘরে-বাইরে কুয়াশা,
খোলা আছে সব দরজা জানালা
আগুনের পরশ লাগা জলদাস;
হাজার বছরের বঞ্চনার কাহিনী…

ধেই ধেই নেচে উঠে ক্ষুধা,
আর সব মিথ্যা, চারপাশের জগত সংসার…

হাজার হাজার পাখি, জলের নিচে তার প্রতিচ্ছায়া
জঙ্গলে সূর্যাস্তের রঙে বিভোর পাখিদের উড়ন্ত উৎসব…

 

 

নিঃসঙ্গতা

রঙকরা বিশ্বাসগুলো হুড়মুড় করে
ঢুকে যায় জোনাকি-সঙ্গমে
জেগে জেগে অবশিষ্ট রাত—
কিছুই করার থাকে না যখন
নিঃসঙ্গতার জাল বুনতে-বুনতে
ঘুমিয়ে পড়ি মাঘের বৃষ্টিতে…

ঋতুপাখি শীর্ষে, তখন মাইনাস ছয়
তীব্র লতিয়ে উঠে ভালোবাসার ভয়!

কৃষক ও কবির সেমিনার

তখন তো কৃষক জীবন
ঘুম ভাঙে খুব ভোরে, আজানের আগে
হেঁটে যাই আলপথে নীরবে
সঙ্গী ঘাস, শিশির, পাখপাখালি…

কৃষকের কাছে বউ আর ভূমিই তো সব
তাকে চাষ করতে হয় পরম আদরে
কত তার খুনসুটি! কত ছলাকলা!
কতই না প্রস্তুতি বীজ ছিটানোর আগে!

সেদিন কৃষক ও কবির সেমিনারে
শহরের শব্দচাষিরা আসেন
কবিরা কৃষকদের শোনান কবিতা
কৃষকরা তাদের শোনান প্রেম
বউ-মাটি-আদরের শিল্পকলা!

পরিব্রাজক

যৌনতাই প্রাণ, প্রাণই ঈশ্বর, প্রাণের ঐশ্বর্য মৃত্যু
ছোট ছোট ক্যানভাস, দুটি ঠোঁটের তুলি-স্পর্শ
জেগে উঠছে শরীর, চতুর্দিকে পাতার দেয়াল
অস্থির সানাই বেজে উঠলে দূরের স্নিগ্ধ গ্রামে
বিষাদের রঙে চিত্র আঁকে রঙঅন্ধ এক শিল্পী।

তীব্র রাঙতায় মোড়া সুখ, মাইনাস স্মৃতিভস্মে
লতাগুল্ম পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় আলোর খেলা
উতরাই ইচ্ছে, ঝর্ণার সঙ্গীত, রঙ-বেরঙের নুড়ি
আশ্চর্য পথ! শুরুতে কিছুটা সরু, এরপর প্রশস্ত

সে এক মুহূর্ত, হারিয়ে যাওয়া রহস্যের রহস্য
একই শরীরে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অজস্র জীবন!
এমন নিঃশব্দ যে স্পর্শটুকু পাখির পালক—
কামরাঙা নাভিতলে খেলা করে রঙিন মৎস্য…

সীমান্তের মেয়েটি শোন
ইন্দ্রাণী, তোমাকে

চারপাশে এত এত কাঁটাতার!  
জানি কোনোদিনই হবে না বলা আর

সীমান্তের মেয়েটি শোন—
আমরা সূর্যোদয়ের ভাইবোন, সূর্যাস্তের বন্ধু!

সংযোগ

বৃক্ষ আজ ব্যক্তিগত
বৃক্ষ আজ সামাজিক

বিযুক্তির শূন্যতা—  
বারবার সরিয়ে দেয় দূরে…
সরে যেতে যেতে অন্ধকারে
অহেতু খুঁজি বিযুক্তির সেতু

বৃক্ষ যদি পারে
মানুষ কেন পারে না!
তবে কী মানুষ—
যথেষ্ট সামাজিক নয়?

মানুষ যতটা ব্যক্তিগত
ততটাই সে আত্মকেন্দ্রিক!

সমুদ্রের স্বাদ

এই যে এখন—  
আমার শরীরে
সমুদ্র ঢুকে গেল
অন্তহীন ঢেউ…

শরীরে শরীর…
জাহাজ দুলছে!

বোধি

প্রতিটি জীবন একেকটি বৃত্ত
কখনো পূর্ণ, কখনো আংশিক

উন্মত্ত উত্তাপ, তরঙ্গের পর তরঙ্গ
পরিধিজুড়ে এত এত সংশয়!

দুই.
দৃষ্টি কেবলই কেন্দ্রে
কেন্দ্রের দিকে যেতে যেতে
পিছুটানে পরিধির মায়া…

ছুটতে ছুটতে বুঝে যাই—
যন্ত্রণাবিহীন বোধি নাই।

ঘাস

ঘাস কি ঘাসকে চুমু খায়!
তবে যে সেদিন দেখলাম—  
ঘাস ঘাসকে আলতো চুমু খাচ্ছে
ঘাসফড়িং তুমুল উস্কানি দিচ্ছে!

তখন আমি সবুজ ঘাস
দুলতে দুলতে দেখে ফেলি…

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত