Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Juan Ramon Jimenez

হুয়ান রামোন হিমেনেথ [ Juan Ramon Jimenez ] : ফিরবো না আমি

Reading Time: 4 minutes

অনুবাদ: কামাল রাহমান


হুয়ান রামোন হিমেনেথ [ Juan Ramon Jimenez ] স্প্যানিশ এই কবির জন্ম ২৫ ডিসেম্বর, ১৮৮১ ও মৃত্যু ২৯ মে, ১৯৫৮ সনে। ১৯৫৬ সনে কবিতার জন্য নোবেল পুরস্কার পান তিনি। তাঁর কবিতার অনেক অনুবাদ বাংলায় হয়েছে। অরূপ গীতিময়তার জন্য তাঁর কবিতা অনেক উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখনো কতটা আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক ঐসব কবিতা! ফ্রান্সের ‘খাঁটি কবিতা’ মতবাদের পক্ষে নিরলস কাজ করেছেন তিনি।  একগুচ্ছ   কবিতা অনুবাদ করা হল এখানে। আশা করা যায় পাঠক নতুনভাবে পাবেন হিমেনেথকে।

ফিরবো না আমি

ফিরবো না আমি। এবং রাত, কিছুটা উষ্ণ, প্রশান্ত ও নীরব, ঘুম পাড়াবে পৃথিবীকে, এটার নিঃসঙ্গ চাঁদের কিরণে।
ওখানে থাকবে না আমার শরীর, এবং বিস্তীর্ণ খোলা জানালার ভেতর দিয়ে, একটা প্রশান্তিমাখা বাতাস আসবে আমার আত্মার খোঁজে।
জানিনে আমি, যদি কেউ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকে আমার দ্বিগুণ অনুপস্থিতির, অথবা কে চুমো দেবে আমার স্মৃতি, অশ্র“ ও শুশ্রƒষার ভেতর।
কিন্তু, নক্ষত্র ও ফুলেরা থাকবে, দীর্ঘশ্বাস ও প্রত্যাশা থাকবে, এবং ভালোবাসা, গলিগুলোয় এবং গাছের ছায়ায়। পিয়ানোয় বাজানো হবে সুর, যেন নির্ঝঞ্ঝাট রাতের, এবং শোনার জন্য থাকবে না কেউ, বিষাদ-নিমগ্ন আমার জানালার কার্ণিশে।

পূর্ণিমা

খোলা জানালা,
ঝিঁ ঝিঁ পোকারা গাইছে গান।
তুমি কি প্রায় নগ্ন হতে
যাচ্ছো মাঠে?

অমরণশীল এক জলের মতো
যে-কোনোকিছুর ভেতর যা ঢোকে ও বেরোয়।
তুমি কি প্রায় নগ্ন হতে
যাচ্ছো বাতাসে?

ঘুমঘোরে নয় যে, সুগন্ধি লতাগুল্ম,
পিঁপড়েরা ব্যস্ত।
তুমি কি প্রায় নগ্ন হতে যাচ্ছো
ঘরের ভেতর?


আরো পড়ুন: The Great Steppe: কাজাখ তৃণভূমির সুরভি ও কবিতা

পূর্ণ চেতনা

বয়ে নিয়ে যাচ্ছো তুমি আমাকে, পূর্ণ চেতনা,
ঈশ্বর যে আছে ঐ প্রত্যাশাগুলোয়,
বিশ্বের সবকিছুর ভেতর।
এখানে, এই তৃতীয় সমুদ্রে,
তোমার স্বর প্রায় শুনি আমি: তোমার স্বর, বাতাস,
সব নড়াচড়া  তোমার, অনুভব করি পরিপূর্ণরূপে;
সনাতন রং ও সনাতনী আলো,
সমুদ্র রং ও সমুদ্র আলো।

তোমার স্বরের সাদা আগুন
জলের ঐ ডাঙ্গার ভেতর, জাহাজ, আকাশ,
পথনির্দেশ করে এক পরমানন্দের সঙ্গে,
আমার সুদৃঢ় কক্ষপথে: এটার কেন্দ্রে
উজ্জ্বল এক আলোয় আমার জন্য খোদাই করে
উজ্জ্বল হীরে সহ কালো একটা শরীর।

আমি নই আমি
আমি নই আমি।
আমি ঐ জন
যে হাঁটে আমার পাশাপাশি,
অথচ ওকে দেখি না আমি।   
কখনো কখনো যাই ওর কাছে,
এবং ভুলে থাকি অন্য সময়ে;
চুপ করে থাকে সে
যখন কথা বলি আমি,
সে বেরোয় হাঁটতে যখন ঘরে থাকি আমি, ঐজন
যে দাঁড়িয়ে থাকবে তখনও
যখন মরে যাবো আমি।
কে জানে কী হতে চলেছে
কে জানে কী হতে চলেছে প্রতিটা ঘণ্টার অন্য দিকে?

কতবার এসেছিল সূর্যোদয়
ওখানে, ঐ পর্বতের পেছনে!

কতবার উজ্জ্বল ঐ মেঘ জমেছিল দূর আকাশে
সোনালি এক শরীর যেখানে পরিপূর্ণ
বজ্রে, ইতোমধ্যে!

ঐ গোলাপটি ছিল বিষ।

ঐ তরবারি দিয়েছিল জীবন।

ভাবছি, পথের শেষে রয়েছে ফুলফোটা এক তৃণপ্রান্তর
অতপর নিজেকে খুঁজে পেয়েছি এক খোলসের ভেতর।

ভেবেছি ঐ মহত্বের কথা যা নিতান্তই মানবিক
অবশেষে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি
দেবসুলভ পবিত্রতায়।

সূর্যাস্ত
আহা, কী শব্দ ঐ সোনালি প্রস্থানের,
সনাতনে যায় সোনাটি এখন; ঐ বিষাদ-মুখরতায়
পূর্ণ হয়ে আছে আমাদের সনাতন কানের ফুটো দুটো,
নেমে যাচ্ছে ঐ সোনা, চিরন্তনে
থেকে যাবে নিঃশব্দ, ঐ সোনাটি ছাড়া
যা চলে যাচ্ছে সনাতনে!
গোলাপকুঞ্জ
এটা এক সমুদ্র, এই পৃথিবীতে।
দক্ষিণের রং, শীতের সূর্যের ভেতর,
স্থানান্তরের গোলমেলে শব্দ ধরে আছে ওটা
সমুদ্রের, ও উপকূলের…
আগামীকাল সমুদ্রে!- আমি বলি, বরং, পৃথিবীতে
যা নড়ে, এখন, ঐ সমুদ্রে!
সমুদ্রের গোলাপ
সমুদ্রকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাদা চাঁদ,
সমুদ্র হতে, আবার ফিরিয়ে দেয় ওটা, সমুদ্রকে। সুন্দর,
আবিষ্কার করে খাঁটি ও প্রশান্তি হতে,
সত্যটির, নিজেকে বিভ্রান্ত করতে বাধ্য করে চাঁদ
এভাবে পূর্ণতায়, সত্য, সনাতন, নিঃশব্দ,
যদিও তেমন নয় ওটা।
হ্যাঁ।
স্বর্গীয় ও একতলীয়,
ফুটো কর তুমি পরিণত নিশ্চয়তা, তুমি রাখো
এক নতুন আত্মা, যেখানে সবকিছু খাঁটি
অকল্পনীয় গোলাপ!
সরিয়ে নিয়েছো তুমি গোলাপ,
গোলাপ হতে, এবং তুমি পারতে ফিরিয়ে দিতে গোলাপ,
গোলাপের কাছে।
কাদিজের নগরপ্রাচীরে
সমুদ্রটা বিশাল,
যেমন অন্য সবকিছু-
তবুও মনে হয় এখনো যেনো রয়েছি তোমার সঙ্গে…
শীঘ্র পৃথক করবে আমাদের জল, কেবলি জল,
জল, অবিশ্রাম,  চির-বিচরণশীল,
জল, কেবলি জল!
সমুদ্র
এমন মনে হয়েছে যে আমার নৌকো,
ধাক্কা খেয়েছে ওখানে, ঐ গভীরে,
বড় একটা কিছুর বিপরীতে।
এবং কিছুই
ঘটেনি! কিছু না… নীরবতা… ঢেউয়ের দল…
কিছুই ঘটেনি? অথবা ঘটেছিল সবকিছুই,
এবং এখন কি দাঁড়িয়ে আছি আমরা, শান্তভাবে, নতুন জীবনে?
নাবিকের আদর্শ
অবশ্যই, কাউকে খুঁজে পেতে হবে তোমার সমাধি,
খুঁজো অন্তরীক্ষে।
Ñতোমার মৃত্যু, বৃষ্টি হয়ে ঝরে এক নক্ষত্র হতে।
একটা সমাধিফলক কখনোই নামিয়ে আনতে পারে না তোমাকে, নিচে, এটা এক স্বপ্নের
মহাবিশ্ব-।
বিস্মৃতিপ্রবণ তুমি
সবকিছুর প্রতি- পৃথিবীতে এবং সমুদ্রে এবং আকাশে, মৃত।   
অর্ণবপোত, কঠিন ও কালো
অর্ণবপোত, কঠিন ও কালো,
প্রবেশ করে  বিশাল পোতাশ্রয়ে,
আরো ঝকঝকে ও পরিচ্ছন্ন কালোতে।
শান্ত ও শীতল।
Ñঅপেক্ষা করে একদল মানুষ
ঘুমের ঘোরে ওরা তখনো, স্বপ্ন দেখে,
অনুভব করে উষ্ণতা, অনেক দূরে, এবং তখনো দীর্ঘায়িত করে
ঐ স্বপ্ন, সম্ভবত . . .

এই সন্দেহ-স্বপ্নের পাশে কতই না প্রকৃত আমাদের ঘড়ি,
অথচ যা ছিল অন্যদের! আমাদের নিয়ে
ওদের সমস্যাসঙ্কুল স্বপ্নের তুলনায় কত নিশ্চিত ওটা!
শান্ত। নীরব।
যা ভাঙ্গবে ভোরের নীরবতা
বলবে অন্যভাবে।

(রবার্ট ব্লাইয়ের ইংরেজি অনুবাদ থেকে)   

পথ
ওরা সবাই ঘুমের ঘোরে, নিচে।
উপরে, জেগে থাকা, দুজনে,
কাণ্ডারি ও আমি।

সে, লক্ষ্য করছে কম্পাসের কাঁটা, প্রভু-
শরীরের, ওদের চাবিগুলো ঘুরিয়ে
তালার ভেতর। আমি, আমার চোখ দিয়ে
নিঃসীমের দিকে পথ দেখিয়ে নেয়া
আত্মার খোলা রত্নভাণ্ডারে
থাকি তাকিয়ে।

(রবার্ট ব্লাইয়ের ইংরেজি অনুবাদ থেকে)   

মুহূর্তের জন্য ফেরা
কেমন ছিল ওটা, খনির প্রভু, কেমন ছিল ওটা?
Ñআহা অবিশ্বাসী ঐ হৃদয়ের, অসিদ্ধান্তিত বুদ্ধিমত্তায়!
বাতাসের চলে যাওয়ার মতো ছিল কি ওটা?
যেমন উধাও হয়ে যায় বসন্ত?
চপল চরণের মতো, বদলে যাওয়ার মতো, ওজনহীনতার মতো
গ্রীষ্মের দুধঘাসের বিচির মতো . . . হ্যাঁ! অনিশ্চিত
মৃদুহাস্যের মতো, যা চিরতরে হারিয়ে গেছে হাসির ভেতর . . .
ঔদ্ধত্য নিয়ে বাতাসে পতপত এক পতাকার মতো!

পতাকা, মৃদুহাসি, দুধঘাসের শীষ, দ্রুত
জুনের বসন্ত, পরিষ্কার বাতাস! . . .
তোমার উদযাপন ছিল এত বুনো, এত বিষাদমাখা!

সব পরিবর্তন তোমার শেষ হয় শূন্যতায়
স্মৃতিময়, এক অন্ধ মৌমাছি, তিতকুটে বিষয় নিয়ে!
আমি জানিনে কেমন ছিলে তুমি, কিন্তু ছিলে তুমি!

(রবার্ট ব্লাইয়ের ইংরেজি অনুবাদ থেকে)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>