ধারাবাহিক: কৃষ্ণকথা চতুর্থ তরঙ্গ । দিলীপ মজুমদার
[আমাদের পুরাণগুলিতে, মহাভারতে, কৃষ্ণকথা আছে। রাধাকথা এসেছে আরও অনেক পরে। তবে কী কৃষ্ণ নিছক পৌরাণিক চরিত্র ? সম্পূর্ণ কাল্পনিক? আমার তা মনে হয় না। রামায়ণের উপর কাজ করতে গিয়ে আমার সে কথা মনে হয়েছে। ময়মনসিংহের গৌরব, ‘সৌরভ’ পত্রিকা সম্পাদক কেদারনাথ মজুমদারের ‘রামায়ণের সমাজ’ বইটি সম্পাদনা করতে গিয়ে সে দিকে আমার দৃষ্টি পড়ে। কলকাতার এডুকেশন ফোরাম আমার সে বই প্রকাশ করেছেন। কেদারনাথই বলেছেন, তিন/চার হাজার বছর আগে মানুষের মৌলিক কল্পনাশক্তি এত প্রখর ছিল না, যাতে পূর্ণাঙ্গ রামকাহিনি লেখা যায়। অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক শ্লীম্যান প্রমাণ করেছেন যে হোমারের লেখা মহাকাব্যের বস্তুভিত্তি আছে, যখন ট্রয়ের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল। নিরপেক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা হলে রামকথা ও কৃষ্ণকথারও বস্তুভিত্তি পাওয়া যেত বলে আমাদের ধারণা। দুঃখের বিষয়, আমাদের গবেষণাক্ষেত্রেও ঢুকে গেল রাজনীতি; বাল্মীকির ‘পুরুষোত্তম রাম’ হয়ে গেলেন বিষ্ণুর অবতার, তারপর তিনি হয়ে গেলেন হিন্দুত্ব প্রচারের হাতিয়ার। কৃষ্ণকথাও একদিন রাজনীতির হাতিয়ার হবে। আমরা শুনেছি সমুদ্রগর্ভ থেকে দ্বারাবতীর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। তারপরের কাজ আর এগোয় নি। যাঁরা রামচন্দ্রকে মানুষ হিসেবে দেখতে দেবেন না, তাঁরাই এরপরে কৃষ্ণকে নিয়ে পড়বেন, তাঁর মানবত্বকে আড়াল করে দেবত্ব প্রচার করবেন।
আমাদের এই কৃষ্ণকথায় আমরা মানুষ কৃষ্ণকে খোঁজার চেষ্টা করেছি। তাই পরে পরে গড়ে ওঠা নানা অলোকিক প্রসঙ্গের লৌকিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো। ‘ইরাবতী’র পাঠকরা লেখাটি পড়ে মতামত দিলে খুব ভালো লাগবে। নিন্দা বা প্রশংসা নয়, আমি সমালোচনার ভক্ত বরাবর। ]
শুরু হল অর্জুনের ভারত পরিক্রমা।
উত্তরাভিমুখে যাত্রা করে তিনি উপনীত হলেন গঙ্গাদ্বারে (হরিদ্বার)। স্থানটি পর্বতবেষ্টিত। বড় মনোরম। এখানকার অধিবাসীদের ভাষা ও রীতিনীতি পৃথক। এরা নাগবংশীয়। অর্জুনের মনে পড়ে গেল চন্দ্রচূড় ও তাঁর সেই পলাতকা কিশোরী কন্যার কথা। তাঁর হাতেই নিহত হয়েছিলেন চন্দ্রচূড়। তাঁর অসহায়া কন্যাকে আশ্রয় দেওয়া তাঁর কর্তব্য। সে কর্তব্য এখনও সম্পন্ন করতে পারেন নি তিনি।
ঘটনাচক্রে এখানে আর এক নাগকন্যার সঙ্গে পরিচয় হল অর্জুনের। তাঁর নাম উলুপী। পরিচয় রূপান্তরিত হল প্রণয়ে, প্রণয় বিবাহে। যথাসময়ে উলুপী সন্তানবতী হলেন। নাগরাজ তাঁর নাম দিলেন ইরাবান। স্ত্রী-পুত্রকে রেখে অর্জুন আবার বেরিয়ে পড়লেন পরিক্রমায়।
এবার পূর্বাভিমুখে অগ্রসর হবে তিনি এলেন প্রয়াগতীর্থে (এলাহবাদ)। তারপর অযোধ্যা, কোশল, বিদেহ, মিথিলা পরিক্রমা শেষ হল। পরিক্রমা করতে করতে তিনি বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক রীতিনীতি অভিনিবেশ সহকারে লক্ষ্য করেন। অরণ্য পর্বত অতিক্রম করে অর্জুন আসেন মণিপুর রাজ্যে। পুরুষবেশী রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে আপাপ হল। তাঁর বীরত্বে অভিভূত হলেন অর্জুন। চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। মণিপুর থেকে অর্জুন এলেন দক্ষিণাবর্ত্ম বা তামিল দেশে। দেখলেন দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রের শোভা। তারপর সহ্যাদ্রির পশ্চিম দিকের পশ্চিম সাগরের উপকূল দিয়ে তাপ্তী ও নর্মদার মোহানা অতিক্রম করে প্রবেশ করলেন সৌরাষ্ট্রে। সেখান থেকে এলেন প্রভাসতীর্থে। এর মধ্যে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হয়েছে। পথশ্রমের ক্লান্তি অপনোদনের জন্য কিছুদিন বিশ্রাম গ্রহণ করলেন প্রভাসে।
কৃষ্ণ তখন দ্বারাবতীতে ছিলেন। তিনি যখন শুনলেন অর্জুন প্রভাসে এসেছেন, তখন তিনি চলে গেলেন প্রভাসে। অর্জুনকে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়লেন রৈবতকের দিকে। রৈবতকের পূর্ব দিকে পর্বতের সানুদেশে ব্যাসদেবের আশ্রম। বড় মনোরম সে জায়গা। মানুষ ও পশু সেখানে একত্র বাস করে। ব্যাসদেবের কাছে অর্জুন তাঁর মনস্তাপের কথা বললেন। নাগরাজ চন্দ্রচূড়কে তিনি হত্যা করেছেন, তাঁর কিশোরী কন্যাকে অসহায়তার পথে ঠেলে দিয়েছেন। তাই তাঁর মনস্তাপ। ব্যাসদেব তাঁকে শান্ত হতে বলে জানালেন মানুষকে নিয়তিনির্দিষ্ট পথেই চলতে হয়। মানুষ তার ইচ্ছা অনুযায়ী কর্ম করে, কিন্তু কর্মের সফলতা তার আয়ত্তে নেই। যা দৃষ্ট হয় তা ক্ষুদ্র, আর যা দৃষ্ট হয় না তা অনন্ত। সেই অনন্তের রহস্য মানুষের জ্ঞানের বাহিরে। ব্রাহ্মণের মঙ্গলের জন্য অর্জুন যে কর্ম করেছেন, তার ফলে তাঁকে মনস্তাপ ভোগ করতে হয়েছে। আবার যে চন্দ্রচূড়কন্যার মঙ্গলের কথা তিনি ভাবছেন, এবং তা যদি তিনি করতে পারেন, তাহলে তার ফল যে শুভ হবেই তা বলা যায় না।
ব্যাসদেবের কথা শুনে অর্জুনের মন অনেকটা প্রশমিত হল। ব্যাসদেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কৃষ্ণ আর অর্জুন প্রবেশ করলেন রৈবতকে। সেখানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছিল। দ্বারাবতী থেকে আনয়ন করা হয়েছিল মহারাজ উগ্রসেন, বসুদেব, নন্দ, বিদূর, অক্রূর ও অন্যান্য যাদবদের। এরকম সমাদরে অর্জুন অভিভূত। নিত্য নতুন আনন্দানুষ্ঠানে অতিবাহিত হতে লাগল সময়। একদিন অর্জুন দেখলেন যাদব নারীরা চলেছেন মন্দিরের দিকে। সেই নারীদের মধ্যে বিশেষ এক নারীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হল অর্জুনের। কে এই যুবতী! কৃষ্ণ সকৌতুকে লক্ষ্য করছিলেন অর্জুনের মুগ্ধতা। তিনি অর্জুনকে জানালেন যুবতীটি দাদা বলরামের সহোদরা সুভদ্রা। শুনে চুপ করে রইলেন অর্জুন।
একদিন এক উদ্বেগজনক সংবাদ পেলেন কৃষ্ণ। তাঁর গুপ্তচরেরাই সে সংবাদ দিল। চেদিরাজ শিশুপালসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন নৃপতি সমবেত হয়েছেন মগধে। জরাসন্ধের অহ্বানে। সেই বিশাল বাহিনী নিয়ে দ্বারাবতী আক্রমণ করবেন জরাসন্ধ। ব্যাসদেব ও অর্জুনকেও সে কথা জানালেন কৃষ্ণ। ভারাক্রান্ত হল তাঁর মন। নতুন ভারত নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। বিকৃতিতে ভরে উঠেছে ভারতভূমি। বৈদিক ধর্ম মানবকল্যাণহীন নিছক যাগ-যজ্ঞে পর্যবসিত হয়েছে, চারদিকে গড়ে উঠেছে জাতিভেদের প্রাচীর, মনুষ্যত্ব ভুলতে বসেছে মানুষ। এসব বিকৃতি দূর করে তিনি গড়ে তুলতে চান নতুন ভারত। কিন্তু যুদ্ধে লিপ্ত হতে হলে সে পরিকল্পনা কী ভাবে সফল করবেন তিনি?
কুমারীব্রতের দিন রৈবতকে একটা সংঘর্ষ ঘটল।
যাদবকুমারীরা যখন নারায়ণ মন্দিরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন একদল দস্যু আক্রমণ করল তাঁদের। রক্ষীদের সঙ্গে দস্যুদের যুদ্ধ শুরু হল। অর্জুনের পার্বত্য-ভৃত্য কিশোর শৈল দস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে লাগল অপূর্ব রণকৌশলে। সুভদ্রা, সুলোচনা এবং অর্জুনকেও সে রক্ষা করল।
এই শৈল আসরে কিশোরী নয়, কিশোর। সে চন্দ্রচূড় নাগের কন্যা। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য সে কিশোরের ছদ্মবেশ ধারণ করে অর্জুনের পরিচারক হয়েছিল। এসব কথা জানতেন না অর্জুন। অর্জুনের সান্নিধ্যে এসে শৈল বুঝতে পারে নাগজাতির প্রতি ঘৃণাবশত অর্জুন তার পিতাকে হত্যা করেন নি। এই ঘটনার পর থেকে তিনি মনস্তাপে দগ্ধ হচ্ছেন। অর্জুনের উদার মানবিকতাও শৈল প্রত্যক্ষ করেছে।
যেদিন প্রভাতে শিকারে যাবার নাম করে অর্জুন সুভদ্রা হরণ করবেন, সেদিনই তিনি শৈলর প্রকৃত পরিচয় পেলেন। জানতে পারলেন কী ভাবে শৈল দুঃখদীর্ণ এগারোটি বছর অতিক্রম করেছে। পিতার মৃত্যুর পর পর মৃত্যু হয়েছে মাতার, পিতৃব্যপুত্র বাসুকীর গৃহে সে আশ্রয় লাভ করেছে, পিতৃহত্যার জন্য নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে, সুভদ্রার প্রতি অনুরক্ত বাসুকীর আদেশে অর্জুনের পরিচারকের কাজ গ্রহণ করেছে।
শৈলজার দুঃখের কাহিনী সুনে অর্জুন তাকে কন্যার মর্যাদা দিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শৈলজার আর কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। সে যেন মিলিয়ে গেল হাওয়ায়।
কৃষ্ণের পরামর্শে সুভদ্রাকে হরণ করেন অর্জুন। সহজ ছিল না সে কাজ। প্রথমত, বলরামের মত ছিল না। তিনি রাজচক্রবর্তী দুর্যোধনকেই সুভদ্রার পতি হিসাবে নির্বাচন করে রেখেছিলেন। দ্বিতীয়ত, সুভদ্রাহরণের সংবাদ পে্য়ে দুর্যোধন আক্রমণ করেন অর্জুনকে। সাত্যকির শরে অর্জুন আহত হলে সুভদ্রা নিজেই যুদ্ধ পরিচালনা করেন। রৈবতকে সুভদ্রার সঙ্গে অর্জুনের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
প্রায় এক যুগ পরে কৃষ্ণ-বলরাম ইন্দ্রপ্রস্থে প্রত্যাবর্তন করলেন।
যুধিষ্ঠিরের রাজসভা নির্মাণের কাজে হাত লাগালেন তিনি। তাঁর নিজের রাজ্য দ্বারাবতীর রাজসভা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন বিশ্বকর্মা। যুধিষ্ঠিরের রাজসভা নির্মাণের জন্য তিনি নির্বাচন করলেন আর এক স্থপতিকে। তিনি নমুচির সহোদর ময়দানব। ময়দানব আত্মগোপন করেছিলেন খাণ্ডববনে । একদিন শিকারে উদ্দেশ্যে কৃষ্ণ ও অর্জুন প্রবেশ করেন সেই বনে। সেখানে একটি শিলাখণ্ডের উপর অস্ত্রের নকশা দেখে তাঁদের মনে হয় শিলার তলায় কোন গুহা আছে। তাঁরা যখন শিলাখণ্ড সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিলেন, সে সময়ে সৃষ্টি হয় দাবানল। তাঁরা যখন বনের বাহিরে আসছিলেন, সেই সময় বনের ভেতর থেকে ছুটে এলেন এক অপরিচিত মানুষ। ইনিই ময়দানব।
ময়দানব তাঁদের জানালেন শিলাখণ্ডের তলায় গচ্ছিত আছে কিছু অস্ত্র-শস্ত্র। সেখান থেকে পাওয়া গেল গণ্ডারের শিরদাঁড়া দিয়ে তৈরি গাণ্ডীব নামক এক দুর্জয় ধনুক, এক লৌহ মুদগর এবং মণিমুক্তাখচিত কৌমদকী গদা।
দীর্ঘ চার বৎসরের কঠিন পরিশ্রমে ময়দানব ইন্দ্রপ্রস্থে এক সুরম্য রাজসভা নির্মাণ করলেন। কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করে কৃষ্ণ বিদায় নিলেন ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে। দেশকে সংহত ও ঐক্যবদ্ধ করার কাজ বাকি আছে এখনও। তাঁর কানে নিরন্তর বাজে : এক জাতি এক প্রাণ একতা। মথুরার যদুরাজ উগ্রসেনকে সামনে রেখে নব ভারত নির্মাণ করতে হবে। আয়োজন করতে হবে রাজসূয় যজ্ঞের। কৃষ্ণ ঠিক করে রেখেছেন পশ্চিম সাগরতীরে পিণ্ডারক নামক স্থানে হবে সেই যজ্ঞ।
খুব সহজ হবে না সে কাজ। বাধা আসবে। উত্তর ভারতের কেকয়, কোশল, মদ্র, হস্তিনাপুর, অবন্তী এবং পূর্ব ভারতের মগধ থেকে বাধা আসবে। বাধা দিলে বাধবে লড়াই। কৃষ্ণকে তাই যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আভীর গোপজনতাকে নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন দুর্ধর্ষ নারায়ণী সেনা। যার অধিনায়কত্বে থাকবেন প্রদ্যুম্ন ও অনিরুদ্ধ।
কৃষ্ণের নারায়ণী সেনা পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের রাজ্য জয় করে উত্তরাভিমুখে অগ্রসর হয়। হস্তিনাপুরে বাধার সম্মুখীন হলেও, সে বাধা দূর হয় কৃষ্ণের কৌশলে। মদ্র, কেকয়, কাশ্মীর, গান্ধার জয় করার পর নারায়ণী সেনা হিমালয় অতিক্রম করে একে একে জম্বুদ্বীপ, কিমপুরুষবর্ষ, হিরন্ময়বর্ষ, রম্যকবর্ষ, ভদ্রাশ্ববর্ষ, ইলাবৃতবর্ষ জয় করে। এসব দেশের রাজারা উগ্রসেনকে সম্মানকর দিতে স্বীকৃত হন।
সফল হয় উগ্রসেনের যজ্ঞ।
উগ্রসেনের যজ্ঞ দেখে যুধিষ্ঠিরেরও রাজসূয় যজ্ঞের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁকে জানান যে রাজসূয় যজ্ঞ করতে হলে তাঁকে ভারতের সম্রাট হতে হবে। ভারতের সম্রাট হতে গেলে বর্তমান ভারত সম্রাট জরাসন্ধকে পরাস্ত করতে হবে। আবার জরাসন্ধের সঙ্গে যুদ্ধ হবে বিপুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সেকথা শুনে যুধিষ্ঠির অসম্মত হন। তখন কৃষ্ণ বলেন যে কৌশল অবলম্বন করলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিহার করা সম্ভব।
কৌশলটা কী?
কৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন জরাসন্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাঁকে অনুরোধ করবেন যে ছিয়াশি জন নৃপতিকে তিনি বন্দি করে রেখেছেন এবং পশুপতিপূজায় বলি দেবেন বলে ঠিক করেছেন, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। জরাসন্ধ সম্মত না হলে তাঁকে দ্বৈরথ সমরে আহ্বান করবেন।
জরাসন্ধ এঁদের প্রস্তাবে সম্মত হলেন না যথারীতি।
তাই শুরু হল ভীম ও জরাসন্ধের মল্লযুদ্ধ। চতুর্দশ দিবসে ভীমের হাতে নিহত হলেন জরাসন্ধ। কৃষ্ণ ছিয়াশি জন নৃপতিকে মুক্ত করলেন। তাঁরা বশ্যতা স্বীকার করে যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে সম্মানকর দিতে স্বীকৃত হলেন।
স্বৈরাচারী জরাসন্ধ একটা জোট গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ফলে সে জোট ভেঙে গেল। যে নতুন রাজনৈতিক শক্তি কৃষ্ণের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল, তাকে স্বাগত জানাল সকলে। গণতান্ত্র্রিক রীতির উপর ভিত্তি করে সে শক্তি স্থাপিত। ভারতভূমিতে এক ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবার পথ প্রস্তুত হল।
পথ প্রস্তুত হল যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের। কৃষ্ণ তাঁকে বলে দিলেন তাঁর চার ভ্রাতাকে চারদিকে প্রেরণ করতে। দিগ্বিজয় যাত্রায়।
[ক্রমশ]

গবেষক