কুমার দীপের তিনটি কবিতা
কালান্ধ নূপুরের ধ্বনি
গতকাল রাতে
চাঁদ বাঁধা পড়েছিল জালে;
আর আমি-
সারারাত দৌড়ে বেড়িয়েছি
একটি সোনালি হরিণের পিছু
ধরতে পারিনি
এলোমেলো দৌড়াতে… দৌড়াতে…
কোথায় যে গেছি ! কোথায় যে গড়িয়েছি জল…!
কিছুই জানি না
কোথা থেকে যে শুরু করেছিলাম
কোথা গিয়েই যে শেষ…
কিছুই পড়ে না মনে, হে রামানুজ !
শুধু মনে পড়ে- একটি আহ্বান
সোনার হরিণীর মতো মোহময় নূপুরের ধ্বনি !
আমি তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি
কেবলই আটকে গিয়েছি বেরসিক তপোবন
আর বিশ্রস্ত পঞ্চবটির জটে
কখনও-বা ঝরেছি- রক্ত
কাঁটাতারে বিদ্ধ ফেলানি
তবু, ক্ষীণস্বরে ভেসে আসে- সেই কালান্ধ নূপুর
সোনার হরিণীর মতো একটি শব্দ; কবিতায়
কতো-যেন কাছে আছে; অধরেই বেজে যায়
তবুও অধরা জানি; মনে হয়- কতো যে সুদূর !
বাড়ি ও পথের বিরহ
কতো মানুষকে পথে নামিয়েছেÑ বাড়ি !
কতো মানুষকে-যে বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেÑ পথ !
পথ ও বাড়ির
মিলনে
জন্ম নিয়েছে-
রাত
বিরহে-
কবিতা।
অথচ-
এক-একটা রাত
বসে থাকে নীরবে
বুকের আঁধারে
ডুবে থাকে চাঁদ
সে তবে কার জন্যে-
হে কবিতা !
কার জন্যে ?
কার ?
উত্তর নেই তার !
ভুল আলোর পিছে
ভুল আলোর পিছনে দৌড়াচ্ছে– কাজল
একই পাড়ার জিন্দা হুজুর কিংবা ওপাড়ার নরেন সাধু
আশ্চর্য যাদুতে ভরে রেখেছিল শৈশব-কৈশোর;
ধর্মের চাঁদটাকে হাতের তালুতে ঘষতে থাকা
মা-বোনদের শ্রদ্ধার সরোবর– সিদ্ধ পুরুষেরা
একদিন গোপন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দিলো হৃদয়ে
সমসের, একই মাছের
এপিঠ-ওপিঠ ভাগাভাগি যার সাথে
বন্ধুত্বশূন্য সময়গুলো যার কাছে
লাইফ সাপোর্টে থাকা ক্লিনিকবাসের মতো ছিলো
আঁখিকে ছিনিয়ে নিতে গিয়ে
সে-ই তো গুণ্ডা লেলিয়ে দিলো !
প্রতিবেশী রমজান চাচা,
জীবন ঝুলিয়ে রাখা একাত্তর যার
পাথুরে ব্যানার;
তাঁর যুদ্ধদিনের গল্পেরা
অপরূপ স্মৃতির ফোয়ারা;
বুকের এ্যাকুইরিয়ামে রাখা গর্বের বুদবুদ;
যে অস্ত্রটি হাতে নিয়ে আলো বিলোতে চেয়েছিলেন
সেই অস্ত্রটি, এখন ‘ক্ষমতা’র অন্ধকারে ঢাকা !
ভার্সিটি জীবনে
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা মনে হতো- নয়ন স্যারকে;
সংস্কৃতি আর বিজ্ঞানের অপূর্ব সমন্বয় যার করতলে,
মানবতা আর নৈতিকতা যার মুখে
ফুল হয়ে ফোটে
তিনিই একদিন সুজাতাকে একলা ঘরে নিয়ে…
শুনেছি, এর আগেও, কোনো কোনো সুজাতাকে পেয়ে
ওভাবেই দান করেছেন-‘ফার্স্ট ক্লাস’ !
কাছে যেতে পারেনি, তথাপি কথা শুনে, লেখা পড়ে
দু-চারজন মানুষকে মনে হতো জ্ঞানের সিন্ধু
জাতির বিবেক; মাঝে-মধ্যে তাদেরই থলে থেকে
বের হয়ে আসে
কুচকুচে কালো বেড়ালেরা
ভুল আলোর পিছেই দৌড়াচ্ছে- কাজল
ভুল আলোর পিছনেই দৌড়ায়- বোকা কাজলেরা
হয়তো, দৌড়বে চিরকাল
কোনোদিন তবে- আলোয় হবে না ফেরা !