নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান এসেছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে। সেই বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকার, মার্ক ওয়াহ, হার্শেল গিবস, ব্রায়ান লারা ও সাঈদ আনোয়ারের মতো ব্যাটসম্যানরা ছিলেন স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল। কিন্তু ব্যাটিংয়ের এসব মহারথীকে ছাপিয়ে ’৯৯-এর বিশ্বকাপে বোলারদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনার। কিছুতেই আউট করা যাচ্ছিল না তাঁকে। বিশ্বকাপের প্রথম ছয়টি ম্যাচের পাঁচটিতে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে করেছিলেন ১৬৪ রান। তাঁর কোনো গড় হিসাব করা যাচ্ছিল না। কারণ, ক্লুজনার যে এই পাঁচটি ম্যাচে আউটই হননি!
কেবল তাই নয়, তিনি শেষবারের মতো আউট হয়েছিলেন বিশ্বকাপ শুরু হওয়ারও দুই-আড়াই মাস আগে। সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে আউট না হওয়ার এক অনন্য রেকর্ডই করে বসেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচসহ টানা ১১টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে ৩৯৩ রান করে তিনি ভেঙেছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটিং কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদের রেকর্ড।
নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপটা পুরোটাই ছিল ক্লুজনারের বীরত্ব গাঁথা। পুরো বিশ্বকাপেই দারুণ আলোচিত ছিল তাঁর মারকুটে ব্যাটিং। সুপার সিক্সে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে দলের পরাজয় মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও অবিচল ছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। শোয়েব আকতারের এক ওভারে ১৭ রান নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে যান বিজয়ের বন্দরে। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্র্যাজিক বিদায়েও তিনি ছিলেন ট্র্যাজিক হিরো। দলকে ফাইনালে প্রায় নিয়েই গিয়েছিলেন। অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে সেই ভুল-বোঝাবুঝিটা না হলে হয়তো বিশ্বকাপের ইতিহাসই অন্যভাবে লিখতে হতো। অনেক ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও অসাধারণ দৃঢ়তায় তিনি দলকে বিজয়ী করেছেন। ’৯৯-এর বিশ্বকাপে তাঁর নাম তাই হয়ে গিয়েছিল ‘ক্রাইসিস ম্যান’।
ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্ভবত ল্যান্স ক্লুজনারের আউট হওয়া না-হওয়া নিয়েই ধরা হয়েছে একমাত্র বাজি। ’৯৯-এর বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ ম্যাচ পরে তিনি আউট হয়েছিলেন। সেই ম্যাচে তিনি আউট হবেন কি হবেন না, তা নিয়ে বাজির দর বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। শেষ পর্যন্ত ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নেমে গ্যাভিন লারসেনের বলে তিনি আউট হন। অনেকে এই বলেও বিতর্ক ছড়িয়েছিলেন যে প্রোটিয়া অধিনায়ক হ্যানসি ক্রোনিয়ে যদি তাঁকে সেই ম্যাচে ওয়ান ডাউনে না নামাতেন, তাহলে এই ম্যাচেও নাকি তিনি অপরাজিত থাকতেন।
ল্যান্স ক্লুজনার ’৯৯-এর বিশ্বকাপে সবই পেয়েছেন, কেবল পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফাইনালে তুলতে। চরম নাটকীয় ও শ্বাসরুদ্ধকর সেমিফাইনালে ১৬ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত থাকলেও মুহূর্তের ভুলে তিনিই ছিলেন সেই ম্যাচের ট্র্যাজেডির নায়ক। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, বল হাতেও ১৭ উইকেট শিকার করে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে ক্লুজনারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল ’৯৯-এর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেই। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটিও অবধারিতভাবে উঠেছিল এই ‘স্প্রিংবকে’র হাতেই।