Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

তীর্থের কাক এবং কাকের তীর্থ

Reading Time: 3 minutes

 

 

কবি জিললুর রহমানের কাছে একটি 
ছোট্ট পত্র
প্রিয় জিললুর রহমান,
আপনাকে ধন্যবাদ। বিগত ৫ মে ২০২০ তারিখে আমার লেখা ‘তীর্থ’ কবিতা বিষয়ে আপনার বাস্তব জীবন স্পর্শ করা কবিতাটি আমাকে সত্যের জীবন চক্রে স্পর্শ করেছিলো। সুন্দর কবিতাটির জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই; এবং একান্ত কিছু কথা যা শুধু আনন্দের জন্যই লেখা। এখানে আপনার এবং আমার কবিতা দুটো পরপর তুলে দিচ্ছি বুঝার সুবিধার জন্যে।
আপাতত মন আমার একাগ্র নিবেদিত তীর্থযাত্রী
পথে পথে হাঁটি পথের উদ্দেশ্যে
গোপনে খবর পাই পথ নাকি লুকোচুরি খেলে তীর্থে
চিনি না কোথায় তীর্থ আছে তীর্থ
দেখি শুধু পথে পথে তীর্থ কাক অতীর্থের ডাক
ইচ্ছা করে ফিরে যাই পথ ছেড়ে ধূলিকণা খুঁজি
মন বলে ওরে বোকা তাই কর
ধূলিতেই পেয়ে যাবি নক্ষত্রের চোখে সমুদ্র দর্শন
নিজের বুকের ভেতর হঠাৎ এক তীর্থ জেগে ওঠে
বলে মূর্খ–গাধা
কোথা ও যাবি না এ সংসার ছেড়ে
পড়ে থাক তুই ধূলি হয়ে একা নিজেরই বুকে
ভুবন ছাঁকিয়া দেখ প্রতিদিন ভুবন চোখের জালে
তীর্থে আর তীর্থে ঘুরিতেছে যারা সব শালা মর্কটবৈরাগী ।
[তীর্থ ॥ফাউজুল কবির॥ ০৫.০৫.২০২০॥বিশেষ–৩০ ]
তীর ছুঁড়ে ছুঁড়ে তীর্থের কাকগুলো
তাড়াবার কতো আয়োজন করা হলো
তবু পথ জুড়ে বসে হাড় হাভাতেরা
বসে থাকে যতো করুন না ধরে জেরা
ওদের দুহাত কেবল পসরা আজ
একটি মুদ্রা চায় তারা ভেঙে লাজ
তাই দিতে কতো প্রসব বেদনা ভাই
যদিও পঠিত দানে ধন বেড়ে যায়
মন তো মানে না যদি কিছু ঘটে যায়
প্রলয় নামলে নিয়তির তাড়নায়
[তীর্থের কাক॥ জিললুর রহমান॥ পূর্বাহ্ন ১২:১৬; ৫ মে ২০২০]
কবি জিললুর রহমান, তীর্থ বানাতে হলে কাক লাগবেই আর কাকবন্ধ্যা শব্দটির গুরুত্ব মানুষ যদি বুঝতো পৃথিবী অপরিকল্পিত মানবের আবর্জনা তৈরি করতো না। কাকল শব্দের ‘কাউয়া’ আর মানুষ শব্দের ‘ কাউয়া’ না থাকলে তীর্থেরই জন্ম হতো না। ধর্ম গ্রন্থে বা পুরাণে পৃথিবীর প্রাচীনতম বুদ্ধিমান প্রজাতির মধ্যে প্রথম প্রজাতি মানুষ আর অন্যটি পাখি প্রজাতি। আদমের ২য় সন্তান আবেলকে [হাবিল] হত্যা করেছিলো প্রথম সন্তান কেইন [কাবিল]। পৃথিবীর প্রথম রক্তপাত প্রথম হত্যকাণ্ড। হত্যার পর তাঁর মাথায় এ বুদ্ধি গজালো না হাবিলের লাশটা লুকাবে কোথায়। বুদ্ধিটা দেখিয়ে দিলো একটা কাক। যে আরেকটা মৃত কাককে মাটিতে কীভাবে লুকাতে হয় সে অবস্থা দেখিয়ে দিয়ে। ফলে মানুষের সাথে কাকের একটা চিরস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তীর্থের আগেও মানুষ ছিলো এবং কাক ও ছিলো। আর ভুষুণ্ডির কাকের কথা ভুলবেন কেমন করে? যে পুরাণ প্রসিদ্ধ তত্ত্বজ্ঞানী অমর কাকটির কথা। সেখানেও আবার মহাজ্ঞানী ঋষি মানুষকে পাবেন ব্রাহ্মণ লোমশ মুনির অভিশাপে ভূষুণ্ডি কাক হয়ে যায়। চিরজীবী হয়ে যায়। যার কোনো মৃত্যু নেই। সেই থেকে দীর্ঘজীবি বুড়ো মানুষকেও কদর্থে ভুষুণ্ডি ডাকা হয়। আর ভুষুণ্ডিতো বেঁচে থাকে রক্ত খেয়ে সে কারণেই বারবার কুরুক্ষেত্রের প্রয়োজন পড়ে। মুনি লোমশ রামভক্ত ছিলেন এবং তাঁর লিখিত রামায়ণের নাম হয় “ভুষুণ্ডিরামায়ণ”। আবার
ভুষুণ্ডিকে গৌণার্থে বহুদর্শী দীর্ঘজীবী মানুষ ও কল্পনা করা হয়েছে। এ তো গেলো ভুষুণ্ডি কাকের কথা। কিন্তু আরেকটা দীর্ঘজীবী কাক আছে যাকে আমি বহুবছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার আগে মহাত্মা রাম তীর ধনুক নিয়ে দীর্ঘসময় খুঁজেছে। রাম ও লক্ষ্মণ তখন বাইরে গেছেন কাজ উপলক্ষে। সময়টা দুপুরবেলা, ক্লান্ত সীতা ঘরের বাইরে একাকী ঘুমে বিভোর। এমন্ অবস্থায় ঘুমন্ত সীতাকে দেখতে পেল একটা কাক। ঘুমন্ত সীতার বিম্বফলের [তেলাকুচা লতার ফলের মতো টূকটুকে লাল] মতো স্তন দেখে সে লোভাতুর হয়ে উঠলো। দ্রুত উড়ে গিয়ে ঠোকর মারলো সীতার স্তনে। আক্রান্ত সীতা চীৎকার করে উঠলেন এবং রামকে ডেকে ভয়াবহ ঘটনার কথা জানালেন। বিক্ষুব্ধ রাম প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষে তীর ধনুক নিয়ে কাকের পেছনে ছুটলেন। বহু কষ্টে বহু সময় ব্যয় করে অবশেষে রাম বজ্জাত কাকটির একটি চোখ [সম্ভবত বাম চোখ] বিদ্ধ করতে পারলেন কিন্তু কাকটি পালিয়ে গেলো। পলাতক কাকটি এখনো দিব্যি বেঁচে আছে তাঁর একটি চোখ নিয়ে। আমার কাব্যগ্রন্থ ‘’জেগে ওঠো পাখির প্রমায়‘’ সঞ্চয়ের ধুলোবালি নামক একটি কবিতায় ঐ কাকটিকে নিয়ে [৯ নম্বর কবিতা] একটি কবিতা লিখেছি। কবিতাটি এরকম:
খোঁজো সেই কাকটিকে
যে কাকটি ঠোকর দিয়েছিলো ঘুমন্ত সীতার স্তনে
তার কথা মনে পড়ে? মনে পড়ে তার কথা?
তাকে খোঁজো-খোঁজো তাকে আকাশ পাতাল
তুমি তাকে চেন ? তাকে তুমি চেন?
খুঁজে বের করো তাকে যেখানেই সে থাকুক ।
সেই কাকটিই জানে আকাঙ্ক্ষা কাকে বলে
আকাঙ্ক্ষা মানে পাওয়ার চেতনা
আপাদমস্তক তৃষ্ণা
তৃষ্ণা আর তৃষ্ণা শরীরে মনের চরাচরে
রহস্যের অন্যতম রহস্যের সীতা
আশ্চর্য! আশ্চর্য! জীবনের অনন্তের চাবিকাঠি।
[ফাউজুল কবির॥ পৃষ্ঠা—৩৮ জেগে ওঠো পাখির প্রমায়]
এ তো গেল কবিতার কথা। কিন্তু কাকের শরীরটা কালো হলো কীভাবে? সে আরেক বিশাল ঘটনা। বড় দুঃখের বড় বেদনার কথা।আপনারা জানেন যমুনা নদীর একপারে মথুরা আর অপর পারে বৃন্দাবন। অক্রুর এসে কৃষ্ণকে মুথুরায় নিয়ে গেলেন। এদিকে কৃষ্ণের অভাবে রাধা বিরহে কাঁদছেন আর বেদনা যাপন করছেন। কতদিন এভাবে চলা যায় বিরহ অনলে। শ্যামের কোনো সংবাদ নেই। অস্থির চঞ্চল রাধা পাগল্প্রায়। কেউ সংবাদ এনে দেয়ার নেই অভাগী রাধাকে। দিনরাত রাধা কাঁদেন আর চোখ মোছেন। চোখের জল আর কাজল দিয়ে বিরহে পুড়তে পুড়তে রাধা তৈরি করলেন একটি কাক। অশ্রুভেজা কাকের রঙ হয়ে গেলো কালো। সেই কালো কাক মথুরায় গিয়ে কৃষ্ণের সংবাদ নিয়ে এলো। রাধার বিরহবেদনায় জগতের সব কাক নিজেরাই রাধাকে ভালোবেসে কালো হয়ে গেলো। কাককে যতই তাড়াতে তীর্থের মানুষেরা অথবা দেশের মানুষ কাকছাড়া মানুষের তীর্থ জমবে না কখনো। কাকের তীর্থ ও জমবে না সেটা তো বুঝতেই পারি রাগ ভৈরবীতে আলম পিয়ার খেয়াল শুনে: ‘’যা যারে কাগওয়া পিয়াকে পাস/কহিও খবরিয়া চৈন নাহি নাহি ঘড়ি পল উন বিন/আলম পিয়া পরদেশ রহিলবা/লিখ লিখ হার গ্যঁই ক্যাকরুঁ সজন।।
কবি জিললুর রহমান, কবি, তীর্থের কাক তাড়ানোর ব্যবস্থা করা গেলেও আমাদের মনের কাক কে তাড়াবে এবং তাড়াবো কোথায়…?
শুভেচ্ছান্তে
ফাউজুল কবির 
১২-০৮-২০২০ 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>