| 19 মার্চ 2024
Categories
জীবন যাপন দেহ স্বাস্থ্য

নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস ও মুখের  স্বাস্থ্য

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট



আপনি কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত? অথবা আপনার বাবা মা বা প্রিয় জন? আপনি কি জানেন (WHO) বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থা এর মতে, বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ২২০ মিলিয়ন মানুষ বা ২.৮% জনগণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ভয়াবহ আকার ধারন করতে যাচ্ছে।

বর্তমানে ডায়াবেটিস একটি নীরব মহামারী যা সারা বিশ্বের বহু সংখ্যক লোককে প্রভাবিত করে এবং রোগীদের মুখগহব্বরের স্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি নগরায়ন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের প্রবণতা অনুসরণ করে।[১]

ডায়াবেটিস মেলিটাস কী?

ইনসুলিন হরমোন (যা অগ্ন্যাশয় দ্বারা তৈরি হয় এবং রক্তের গ্লুকোজ হ্রাস করে) অপর্যাপ্ত উৎপাদনজনিত কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ  অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার  সাথে যুক্ত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ।

ডায়াবেটিস লক্ষণগুলো কি কি?

১. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

২.খুব বেশি পিপাসা লাগা

৩. অতিরিক্ত ক্ষুধা

৪. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন হ্রাস

৫. অবসাদগ্রস্ত,ক্লান্তি ও দূর্বলতা বোধ করা

৬.ঝাপসা দৃষ্টি

৭.বিরক্ত বা রোষপ্রবণতা

৮. ঘন ঘন সংক্রমণ যেমন মাড়ি বা ত্বকের সংক্রমণ এবং যোনি সংক্রমণ।

৯. ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া

১০.খোশ-পাঁচড়া,ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া

টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস মেলিটাস:

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস যে কোনও বয়সে বিকাশ লাভ করতে পারে, যদিও এটি প্রায়শ শৈশব বা কৈশোরে দেখা যায়।

টাইপ টু ডায়াবেটিস সবচেয়ে সাধারণ টাইপটি যে কোনও বয়সে বিকাশ লাভ করতে পারে যদিও এটি ৪০ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

ডায়াবেটিস মেলিটাসের ঝুঁকিতে কারা?

১) অতিরিক্ত ওজন।

২)যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম এর কোন কাজ করেন না

৩.পারিবারিক বা বংশগত ইতিহাস

৪)জাতি ও বর্নভেদ

৫.বহুদিন কর্টিসোল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে

৬. উচ্চ রক্তচাপ

৭.পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম  ইত্যাদি ..

মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে সম্পর্ক:

ডায়াবেটিস মৌখিক গহ্বরে মাড়ি ফোলা (Gingival Hyperplasia) এবং পিরিয়ডোনটাইটিস (পাইওরিয়া) এর মতো  সমস্যার কারণ হতে পারে।  অন্যান্য ডায়াবেটিসজনিত মৌখিক অবস্থার মধ্যে দাঁতের ক্ষয়, ক্যানডায়াসিস এবং জিহ্বায় জ্বলন্ত ব্যথা, ঘা(আলসার)  অন্তর্ভুক্ত।  এছাড়া  (অ্যাসিটোন) গন্ধযুক্ত শ্বাস এবং জেরোস্টোমিয়া (শুষ্ক মুখ) ও দেখা যায় ।[২,৩]

     Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com               

কীভাবে ওরাল স্বাস্থ্য ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত?

রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার সাথে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লালা এবং খুব শুষ্ক মুখে আরও গ্লুকোজ থাকতে পারে।  এর ফলে দাঁতগুলির উপরে প্লাক নামক একটি স্তর তৈরি হয় যা দাঁতের ক্ষয় এবং গহ্বরের(cavity) দিকে পরিচালিত করে।তাছাড়া ডায়াবেটিস হলে শরীরের ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যেকারণে খুব  সহজেই রোগ সংক্রমনকারী জীবাণু আক্রমন করে বসে।এছাড়াও মুখ শুকিয়ে যাওয়ার কারণে মুখে বসবাসকারী উপকারী প্রতিরক্ষাকারী ব্যাকটেরিয়া তাদের কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হয়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধের নির্দেশিকা:

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ৫ টি নিয়ম মানতেই হবে

১. খাদ্য ব্যবস্থা
আপনার ডায়েট থেকে চিনি- মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দেয়া,ফ্যাট এবং ক্যালোরি কম খাওয়া

২.অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করুন।  পরিমিত ওজন হ্রাস  ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে।প্রচুর পরিমাণে ফাইবারজাতীয় খাদ্য,ফলমুল যেমনঃ আপেল,আভোক্যাডো,কলা,বেরি ইত্যাদি  গ্রহণ করুন।

৩.ব্যায়াম এবং নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন হাঁটাচলা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়াম, ওজন তোলা ইত্যাদি কম

৪.ঔষধঃ
টাইপ টু ডায়াবেটিস পরিচালনার জন্য মেটফর্মিন প্রথম লাইনের ওষুধ হওয়া উচিত।

ইনসুলিন এবং সালফনিলুরিয়া দ্বিতীয় লাইন হওয়া উচিত এবং গ্লিটাজোনগুলি তৃতীয় লাইনের জন্য বিপরীত হওয়া উচিত।  মেটফর্মিন হ’ল টাইপ টু ডায়াবেটিসের একমাত্র ওষুধ যা ওজন বাড়ায় না।

৫. শৃংখলাঃ
নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ, দৈহিক পরিশ্রম,ডাক্তারের পরামর্শ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব সহকারে মেনে চলা।
                                                      দাঁত ও মাড়ির যত্ন

১.নিয়মিত সকালে নাস্তার পর ও রাতে ঘুমাবার আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।

২.দাঁত ব্রাশের পর অন্তত ১ মিনিট আঙুলের সাহায্যে মাড়ি মালিশ,তাতে মাড়িতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে,মাড়ি শক্ত আর মজবুত হয়।

৩. পান,সুপারি,জর্দা, চুন ও ধুমপান থেকে বিরত থাকার কোনো বিকল্প নেই।

৪.দাঁতে গর্ত বা কালো দাগ দেখা দিলে এবং মাড়ি থেকে সামান্য আঘাতে রক্ত বের হলে যত তাড়াতাড়ি  ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে।

মনে রাখবেন স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল।ডায়াবেটিস নিরাময়ে তদুপরি সুস্থ থাকার জন্য সচেতনতা এবং সঠিক নিয়মকানুন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।

 

 

 

 

 

★তথ্যসূত্র
১)Wild S, Roglic G, Green A. Global prevalence of diabetes: Estimates for 2000 and projections for 2030. Diabetes Care. 2004;27:1047–53. [PubMed] [Google Scholar]
২)Chi AC, Neville BW, Kraver JW, Gonsalves WC. Oral manifestations of systemic disease. Am Fam Physician. 2010;82:1381–8. [PubMed] [Google Scholar]
৩)Hatch CL. Glossodynia as an oral manifestation of diabetes mellitus. Ear Nose Throat J. 1989;68:782-5. [PubMed] [Google Scholar]

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত