Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

বিজয় দিবস: স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য । সমীর আহমেদ

Reading Time: 5 minutes

৫০ বছর আমরা স্বাধীন হয়েছি। মহাকালের হিসাবের খাতায় এটা তেমন কোনো সময়কালই নয়। কিন্তু নশ্বর মানুষের আয়ুষ্কাল হিসাবে পঞ্চাশ বছর কম গুরুত্বপূর্ণ সময় নয়। দশক হিসাবে চারটি দশক আমরা পার করে এসেছি। এ সময়কালে আমাদের যে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের সাহিত্যও পিছিয়ে নেই। প্রতিটি দশকে সংঘটিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপঞ্জি আমাদের সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছে বলা যায়।

বাঙালি জাতির যেমন রয়েছে দীর্ঘকাল রক্তক্ষয়ী এক সংগ্রামের ইতিহাস, তেমনি আমাদের সাহিত্যেরও বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে আন্দোলন-সংগ্রাম। বিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার সাহিত্যে স্বাধিকার আন্দোলন-সংগ্রাম স্থান করে নিয়েছে, এ ধারা লক্ষ্য করা যায় স্বাধীনতা-উত্তরকালের সাহিত্যেও।

শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সাহিত্যই অনেকাংশ মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামেরই বাস্তবচিত্র। এ সংগ্রাম শুধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনগণের নয়, সমাজে শাসকের বিরুদ্ধে শাসিতের, ক্ষমতাধরের বিরুদ্ধে দুর্বলের, শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের, সব রকম অবক্ষয়, অনাচার, অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যক্তির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এবং প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক বৈরী আচরণের বিরুদ্ধে মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম।

মুক্তিযুদ্ধ অব্যবহিত বা সত্তরের দশকের ঊষালগ্নে বাংলাদেশের সাহিত্য অন্য কোনো দিকে হয়তো টার্ন নিতে পারত। কারণ তখন বিশ্বের মানচিত্রে একটি সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ আমরা পেয়েছি। আমাদের জীবন, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা নবউদ্যমে বিনির্মাণের সুযোগ ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তরকালে মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান, দীর্ঘদিনের লালিত আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা মানুষকে নিয়ে যায় দুঃস্বপ্নের অতলগহ্বরে। সামাজিক অবক্ষয়, ব্যক্তি-মানুষের নৈতিক অধঃপতন, লোভ, রিরংসা, নব্য ধনিক শ্রেণির উদ্ভব, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ, পঁচাত্তরে মানবতাবিরোধী, নিকৃষ্ট দুষ্কৃতকারীদের ঘৃণ্য চক্রান্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর ঘন ঘন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, রাজাকারদের উত্থানসহ নানাবিধ বৈরী ঘটনাপুঞ্জে সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এ দেশের জনগণ। এসব বিষয় এ দেশের সাহিত্যে উঠে এসেছে বারবার। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ একটি বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছে আমাদের সাহিত্যে। বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহিত্যের একটি টার্নিং পয়েন্ট। এ নিয়ে অনেক উপন্যাস, গল্প, নাটক, কবিতা, ছড়া, গান রচিত হয়েছে। আজও হচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সমগ্রচেতনাকে ধারণ করে কোনো কালজয়ী উপন্যাস কী সৃষ্টি হয়েছে? কিংবা বঙ্গবন্ধুর জীবন-সংগ্রাম নিয়েই হতে পারে একটি অসাধারণ উপন্যাস কিংবা নাটক, তা কি আদৌ হয়েছে?

মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এর সঠিক ইতিহাস নিয়ে আমরা আজ দ্বিধাবিভক্ত। এর মূল কারণ স্বাধীনতা-উত্তর কলুষিত রাজনীতি বিশেষ করে পঁচাত্তর পটপরিবর্তনের ফলে যে কলুষতা, নোংরামি, ভন্ডামি, ক্ষমতার প্রতি তীব্র মোহ আমাদের যেভাবে আবিষ্ট করে রেখেছে, তা থেকে আজও বেরিয়ে আসতে না পারা। পঁচাত্তর পটপরিবর্তিত রাষ্ট্রনায়করা এবং তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বা সত্য ধামাচাপা দিয়ে নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করার জন্য জনগণের সামনে তুলে ধরেছে, মুক্তিযুদ্ধের অসত্য, বিকৃত তথ্য। ফলে আমরা দ্বিধান্বিত, বিভক্ত। প্রকৃত সত্যের নাগাল হাতের কাছে পেয়েও যেন পাচ্ছি না। দুটি বড় শক্তি আমাদের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। আমাদের সাহিত্যেও এ পক্ষদ্বয় প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। সবাই আমরা জানি, এ পক্ষদ্বয় হলো- মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি। প্রকৃত সত্য উদ্ধার না হওয়ায়, এ দুটি পক্ষে অবস্থানরত অনেকেরই প্রকৃত রূপ পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, ধোঁয়াচ্ছন্ন। এ ধোঁয়াচ্ছন্নতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছি আমরা। সর্বজন গ্রহণযোগ্য মীমাংসা সুদূর ভবিষ্যতেও সম্ভবপর বলে মনে হয় না। আমাদের নৈতিকতার অবক্ষয়, সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের যথেষ্ট অভাবই এর জন্য দায়ী।

স্বাধীনতার ঊষালগ্নে আমরা যদি যথেষ্ট দায়িত্ব সচেতন হয়ে উঠতে পারতাম এবং আমাদের রাজনীতি যদি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পথে এগোতে পারত, তাহলে আমাদের আজকের যে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা, তা অন্যদিকে টার্ন নিতে পারত। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে সামষ্টিক কল্যাণের কথাই অধিকতর বিবেচনা করতাম। সমাজে অস্থিরতার পরিবর্তে শান্তিই বিরাজ করত। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের সাহিত্যের গতিপথও অন্য কোনো দিকে বাঁক নিতে পারত। কিন্তু যে ফল তিক্ত তার বীজ থেকে মিষ্টি বা সুস্বাদু ফল লাভের চিন্তা দুরাশা। এ কারণে আশির দশকে আমরা আরেকটা দুঃসময়ের মুখোমুখি হই- স্বৈরাচারী শাসন বা দুঃশাসনের। তবে কোনো দুঃশাসনের কাছে চিরকাল মাথা নত করে রাখতে শিখেনি বাঙালি। তাই গণতন্ত্রের দাবিতে আশির দশকেই শুরু হয় তুমুল আন্দোলন-সংগ্রাম। আত্মত্যাগ ও আত্মাহুতি চলতেই থাকে। আমাদের শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই তিক্ত অভিজ্ঞতার। এ সময় পর্বকে বিচিত্ররূপে ধারণ করেছে। ভালো মানের কিছু ছড়া, কবিতা রচিত হয়েছে- যা সমকালে আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদের সময়পর্ব নিয়ে অসাধারণ কোনো গল্প, উপন্যাস, নাটক আমাদের নজরে পড়ে না। অথচ সেই সময়পর্বে আমাদের সাহিত্যিকদের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত হয়েছিল স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্বৈরশাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের উন্মেষ ঘটলে আমাদের মধ্যে আশা-আকাঙ্ক্ষার পুরানো সেই স্বপ্ন নতুন করে জেগে উঠেছিল। কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখতে যতখানি ভালোবাসি, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তারও চেয়ে ঢের পিছিয়ে থাকি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মোহের কাছে আমাদের গণতন্ত্র প্রথমেই হোঁচট খেয়েছে। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের একটি খোলস পরে আছে মাত্র। তার মধ্যেই আমরা হাঁটাচলা করছি। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত, কোথাও এর প্রকৃত চর্চা নেই। এ কারণেই আমরা অন্যকে মূল্য দিতে পারি না। নিজেকেই মূল্যায়ন করি আগে। পরস্পরের ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস নেই বললেই চলে। অন্যকে টপকে নিজেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা আমাদের। সামান্য প্রাপ্তিতেই আমাদের বিবেক ও নৈতিকতাকে বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত আমরা। এ কারণেই সমাজ অভ্যন্তরে অনিয়ম, অনাচার, অবিচার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বারবার আইন করেও কিছু ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার আমাদের মজ্জার ভেতর ঢুকে কেবল বিষ ছড়াচ্ছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে এই একবিংশ শতাব্দীতেও আমাদের ভাবনাচিন্তা, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়।

নব্বইয়ের দশকে আমাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সাম্রাজ্য

Literature of Independence-North Bangladesh

বাদী শক্তি, মুক্তবাজার অর্থনীতি নামক দানবের অপছায়া, ধীরে ধীরে গ্রাস করছে আমাদের। আমরা বুঝেও যেন বুঝতে পারছি না, কোথায় যাচ্ছি, কোন দিকে আমাদের যাওয়া উচিত। ঠেকিয়ে রাখতে পারছি না মুক্তবাজার নামক এই দানবকে। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় আমরা প্রবেশ করছি তার লালসার জগতে। তাই আমাদের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংগতি কম হওয়া সত্ত্বেও দুর্বার ভোগতৃষ্ণা আমাদের মধ্যে জেগে উঠেছে। এ তৃষ্ণাকে বিচিত্রভাবে প্রতিনিয়ত উসকে দিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানির চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন। ভোগাকাঙ্ক্ষা নিবৃত্তের জন্য আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি আরো অধিক সম্পদ লাভের জন্য। যখনই পেরে উঠছি না, তখনই আমাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে হতাশা, ক্ষোভ এবং নৈঃসঙ্গ্যবোধ। ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়ার দুঃসহ যন্ত্রণা আমাদের মধ্যে তীব্রভাবে বেজে উঠছে। এ কারণে সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ প্রশ্ন এখন অনেকের কাছে অবান্তর। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক জাঁতাকলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছি আমরা। ধনী-গরিবের ভেদরেখা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।

নব্বইয়ের দশক থেকে নগরায়ন-গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আজ নগরায়নের থাবা গ্রামকেও টেনে আনছে তার লালসার কাছে। কিংবা ছড়িয়ে দিচ্ছে তার লালসার লালা। ফলে নগর ও গ্রামের মানুষের মধ্যে আজ চাহিদার প্রভেদরেখা দ্রম্নতই সঙ্কুচিত হচ্ছে। গ্রামনির্ভর অর্থনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি ভেঙে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সমাজ-সংস্কৃতিতে রূপ নিচ্ছে। চারপাশের মানুষগুলো বদলে যাচ্ছে দ্রম্নত। মানুষের মনোজগৎ এখন জটিল, দ্বন্দ্ব সংঘাতময়, লোভ ও রিরংসাতাড়িত। এ কারণে নব্বই দশকের সাহিত্যে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট যতটা স্থান করে নিয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি জায়গা করে নিয়েছে ব্যক্তিক সংকট, অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, দ্বন্দ্বময় জটিল মনোজগৎ- যা কেবলই বিচ্ছিন্নতাবোধ ও নৈঃসঙ্গ্য যাতনায় ভারাক্রান্ত।

স্যাটেলাইট টিভি, মোবাইল, ইন্টারনেট ব্যবস্থার সঙ্গে নব্বইয়ের দশকেই আমাদের পরিচয় ঘটে। শূন্য দশকে এসে এগুলোর ব্যবহার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। বিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। নিজস্ব বৃত্ত ভেঙে এখন আমরা বিশ্বায়নের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। ব্যক্তি এখন নিজেকে বিশ্বায়নের আয়নায় পর্যবেক্ষণ করে, তার সমস্যা ও সংকট এবং সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। তবে বিশ্বায়ন যত বিস্তৃত হচ্ছে, ততই আমাদের কাছে যা কিছু এতদিন সত্য ও সুন্দর বলে মনে হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরস্পরের কাছে এসেও আমরা বিচ্ছিন্ন, আত্মকেন্দ্রিক। নিতান্ত অসহায় ও অসুখী মানুষ। এসব মানুষই আরো বিচিত্ররূপে উঠে এসেছে শূন্য দশকের সাহিত্যে।

বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শিল্পায়ন ও করপোরেট বাজারের আয়তনও সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আমাদের পরিবেশ। বিশ্বে আজ পরিবেশ রক্ষার জোর আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সাহিত্যেও পরিবেশবাদী চেতনা ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হচ্ছে।

নব্বইয়ের দশকে উত্তরাধুনিক চেতনা বাংলাদেশের সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও তা পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা। তারপরও এ ধারণাকে মাথায় রেখে অনেকে সাহিত্যচর্চা চালিয়েছেন। বাঁক বদল ঘটাতে চেয়েছেন নিজেদের সৃষ্টির গতিপথ। কতটা সফল হয়েছেন তারা, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সময় থেকে পিছিয়ে যে পড়েননি, সামনের দিকেই হেঁটেছেন, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে শূন্যের দশকে উত্তরাধুনিক আন্দোলন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে হয়।

যাহোক, সব সময় সমকালকে ধারণ করে আমাদের সাহিত্য এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। হয়তো বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টারও শেষ নেই আমাদের। তারপরও চলিস্নশ বছরে আমাদের যে অর্জন তা কি যথেষ্ট কিংবা তাতে কি সন্তুষ্ট হতে পেরেছি আমরা? এ পর্যন্ত কয়খানা গ্রন্থ অতীতের মতো আলোড়ন তুলতে পেরেছে? ছড়া, কবিতা, গান, নাটক, গল্প, উপন্যাস সাহিত্যের এসব শাখায় এ ধরনের গ্রন্থের সংখ্যা খুব বেশি নিশ্চয়ই নয়।

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আগের তুলনায় আমাদের সাহিত্যিকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতি বছরই নতুন লিখিয়েরা যুক্ত হচ্ছেন। নতুন-পুরানোদের মধ্যে অনেকে অবশ্য হারিয়েও যাচ্ছেন। তারপরও আমাদের সাহিত্যিকদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। প্রতিদিনই রচিত হচ্ছে সাহিত্য। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে আজ অব্দি প্রযুক্তিগত কারণে মুদ্রণ কাজ সহজতর হওয়ায় মিডিয়া ও প্রকাশনা শিল্প, এ দুটোই এ দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সপ্তাহান্তে দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীর পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে প্রচুর কবিতা ও গল্প। ঈদ সংখ্যায় অসংখ্য কবিতা, গল্প ও উপন্যাস। নাটক, প্রবন্ধ তো রয়েছেই। সারাদেশে অগুনতি ছোট কাগজে প্রকাশিত হচ্ছে আরো কত লেখা! প্রতি বছর বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে হাজার হাজার বই। বইয়ের কাটতির ব্যাপারে প্রকাশকরা যাই বলুন না কেন, কোনো না কোনো পাঠকের কাছে শেষ অব্দি যেভাবেই হোক পৌঁছে যাচ্ছে এসব বই। এত সব বইয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত কটি সৃজনশীল বই পাঠকের মন রঞ্জিত করতে পেরেছে, তার চেতনালোকে তুলতে পেরেছে তৃষ্ণার ঢেউ? যে তৃষ্ণা কালান্তরেও বোদ্ধা পাঠকের মিটবে না?

পাঁচ দশক নয়, তারও আগে থেকে, সেই বিভাগোত্তর কাল থেকেও যদি ধরা হয়, তাহলেও এ ধরনের গ্রন্থের সংখ্যা অল্পই বলা যায়। কেন অল্প, তা কি আমাদের একবার ভেবে দেখা উচিত নয়?

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>