| 29 মার্চ 2024
Categories
গদ্য সাহিত্য

সময় কখনো বলে না সময় হয়েছে

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

সময় কখনো বলে না সময় হয়েছে

………………………………………………………….

জটিল না। খুব নোংরা ছিল সময়টা। এই নোংরামোর দায়ভার বেশীরভাগ বা পুরোটাই আমার। স্বস্তি ছিল না জীবনে। তাই ঘুম ভালো আসত। অভাব ছিল। তাই ছন্দময়তা ছিল। ঘুমের ভেতর কান্না ছিল ছন্দময়। আবার কান্নার ভেতরে ছন্দ ছিল ঘুমময়। সব মিলিয়ে একটা উৎকট উৎসব। যা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। পীত আলোর কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়া সময় ছিল সেটা। আলোর মত শহর। অজস্র যুক্তাক্ষর। তাদের ভাংতে গিয়ে দেখি শেকড় বহুদূর বিস্তৃত। অথচ আকাশ ততোধিক নীচু (সাবমিসিভ)। তখন থেকেই আমাদের দেয়াল বেয়ে ওঠার প্রাসংগিক উপলব্ধি। দেয়ালে দেয়ালে মেলানকোলিক ছাপ। যে বিষাদ পুরাতন কফের মত বুকে চাপ হয়ে রয়েছে, তাকে ত্যাগ করতে গিয়েও গিলে নি। ভাবি…কি আসে যায়! অথচ খুব অদ্ভুতভাবে এইসব গিলে নেওয়া জিভে কোনও তারতম্য আনে না। বাড়িগুলো আকাশে মিশে যেতে চায় আর আকাশগুলো বাড়িতে… গাছ বলে কিছু নেই। সালোকসংশ্লেষ – আসলে বিভাজিত বাংলারই ডাকনাম। বিভাজন রেখাটুকুই শুধু চিহ্নিত করা গেল না। নিজের প্রায়শ্চিত্ত যজ্ঞের প্রাক্কালে তোমাদের জানালায় এসে দাঁড়াই। দেখি, তুমি, তোমরা – অন্যলোক হয়ে গিয়েছ। “সময়” -কখনো বলে না, “সময় হয়েছে”, বলে, কোনও হোটেল বা অ্যাসাইলামের ভারপ্রাপ্ত দারোয়ান। “চলে যেও না” তো বলা যায় না,বলি, “এসো”।

চষম খোর

……………………….

অরুণাচলী হিমালয়ের ওদিকটায় সেভাবে কখনো যাওয়া হয় নি বলে, তিনি নিয়মিত অ্যারিস এর কাছে যান! অ্যারিস, নাগাল্যাণ্ডের লোথা আদিবাসীদের মেয়ে। আদিবাসী এবং চ্যাপ্টা নাক হলেও গায়ের চামড়া মসৃণ এবং শুধুমাত্র ফর্সা বললে ভুল না; পাপ হবে। নিটোল জাপানি কায়দায় গড়া এক তুলতুলে পুতুল যেন। ক্রমে ক্রমে দ:পূ: এশিয়ার এক-একটি মাইলস্টোন, যা কিনা শুধুমাত্র জলপাই একটি বাইকে অতিক্রম করার কথা ছিল… নিয়মিত অ্যারিসে গিয়ে থেমেছে আজকাল! আপেলের কোয়ার মত এক-একটি নাগা শব্দ বাঙালি কানে বৌদ্ধমঠের নির্জনতাসম ডুরে ওঠে। দোজুখু ভ্যালির নগ্ন নৈসর্গ পিঠে চড়িয়ে আলতো আলতো অলিভের লালা গড়িয়ে পড়ে লোমশ বিভাজিকায়। নিয়মিত হিমালয়ে যাওয়া হয় না, অথচ সেই নাগারমণীর ঘাতে ঘাত অপূর্ব শৈলী ঠিক সমস্ত যন্ত্রণা নিরাময়ে সুপারগ। যে টুকটুকে ভাঙা শব্দগুলিতে মিশে আছে ভুত জোলাকিয়ার নারকীয় ঝাল, ঠোঁটে ঠোঁট চুবিয়ে চিবিয়ে রক্ষে নেই, পাপের লাভায় দলে যেতে হয়। মধ্যবিত্ত বাঙালি কিশোর মন, ভুগোল বইয়ের পৃষ্ঠা ছাড়া নাগাল্যাণ্ড এখনো যার নিরাপদ হৃদয়ে কোনও ওজন রাখতে পারেনি, দিমাপুরের ঐশ্বরিক আলো মাখতে মাখতে সে ভ্যাবাচ্যাকা তো খাবেই! ইচ্ছে হয় খাবলে ধরে বুক, ঘাড় ধরে ফেলে দেয় বৈকালিক শয্যায়! নাগাল্যাণ্ডের সুপেয় ঝর্ণার মেটে স্বাদ ফুটিফাটা করে মেখে নেয় চষমখোর চোখেমুখে… কিন্তু ঐযে, বাঙালি; ভীতু এবং ভেতো, কুকুরের মাংস শুনলেই যার ভুজনোর ভাত উঠে আসে, সে আর রক্ত মাংস এবং মশলার গুণাগুণের ফারাক কিই বা বুঝবে! কিই বা বুঝবে রেশমিপোকার লার্ভা দিয়ে কষা গালহো-র মাহাত্ম্য! যার সাথে দুপেগ বন্য ঝুঠো-র মেলবন্ধন বহুপ্রাচীন অভিযানে নিয়ে যায়। অ্যারিস, অ্যারিসের টিপিক্যাল এশিয়ান খাদে খাদে ঝুম চাষ আর দেখা হল না আজোও। কোহিমায় গিয়ে নাগামাদলের তালে তালে নাচা হল না হর্নবিল ফেস্টিভ্যালেও… অরুণাচলী হিমালয়ের ওদিকটায় সেভাবে কখনো যাওয়া হয় নি বলে, এই গোধূলির প্রত্নতাত্ত্বিক ছটায় মৃদুমন্দ হিমেল আস্কারা পেতে তিনি একটু একটু করে অ্যারিসের কাছে যান। দৈনিক ভদ্র খদ্দেরের মত আকাশকুসুম রংবেরঙ চাপিয়ে একাই শখের ছবি আঁকেন। মাঝে সাঝে টিপস দেবার সময় নাগাতন্বী যখন বুকের ভাঁজে উপরি কামাই গুঁজে নেয়, তার কপালের খোঁচা খোঁচা চুল সরিয়ে একটা ক্ষণস্থায়ী চুম্বন ফেলে আসেন নি:শব্দ ভেতো বাঙালি অ্যারিসের অভিব্যক্তি তিনি কখনো ফিরে দেখেন না, জলপাই বাইকটিতে স্টার্ট দেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত