| 29 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস

রবী, নেতাজি ও জীবনানন্দ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ‘তাসের দেশ’ সুভাষচন্দ্র বোসকে উৎসর্গ করেন তখন তা আমার কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়।কিন্তু এই প্রিয় সুভাষের সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথ একবার খুব বাজে রকমের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এবং সেই বিতর্কের বলি হয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশের মতো কেউ কেউ।

১৯২৮। সিটি কলেজে সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্ম ও হিন্দুদের মধ্যে কলহে এই দুই ব্যক্তি সেচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক নিরপেক্ষ থাকতে পারেন নি।রবীন্দ্রনাথ ‘প্রবাসী’ ও ‘The Modern Review’-তে হিন্দু ছাত্রদের বিরুদ্ধে দুটো প্রবন্ধ লিখে ক্ষান্ত হলেন না। প্রবাসীতে জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৫-এ চিঠিতে লিখলেন, ‘যাঁরা ভারতে রাষ্ট্রিক ঐক্য ও মুক্তির সাধনাকে তাঁদের সমস্ত চেষ্টার একমাত্র লক্ষ্যরূপে গ্রহণ করেছেন, তাঁরও যখন প্রকাশ্যে এই ধর্মবিরোধকে পক্ষপাত দ্বারা উৎসাহই দিচ্ছেন, তাঁরাও যখন ছাত্রদের এই স্বরাজনীতিগর্হিত আচরণে লেশমাত্র আপত্তি প্রকাশ করতে কুন্ঠিত, তখন স্পষ্টই দেখছি, আমাদের দেশের পলিটিকস্-সাধানার পদ্ধতি নিজের ভীরুতায়, দুর্বলতায় নিজেকে ব্যর্থ করবার পথেই দাঁড়িয়েছে।’

কাকে উদ্দেশ্য করে এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ? সুভাষচন্দ্র বসুকে উদ্দেশ্য করে এই বাক্যবাণ! কিছুদিন আগে ২ মার্চ ১৯২৮-এ সুভাষচন্দ্র বোস সিটি কলেজের ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ সভায় বলেছিলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে সাধারণত একটি অভিযোগ আনা হয়। আমরাই নাকি সাধারণত দেশের যুবকদের প্ররোচিত করি। …অভিযোগটি অবান্তর। হিন্দু ছাত্রদের কোমল ধর্মীয় অনুভূতিকে পদদলিত করে সিটি কলেজ কতৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণের ফলে সিটি কলেজের ছাত্ররা বর্তমানে যে আন্দোলন শুরু করেছে তার প্রতি আমার সাগ্রহ ও অবাধ সমর্থন আছে।…আলোকপ্রাপ্ত এবং অগ্রসর ব্রাহ্মভদ্রলোকেরা হিন্দু ছাত্রদের উপর নিজেদের ধর্মবিশ্বাস চাপিয়ে দেবার জন্য এত নীচে কী করে নামলেন আমি তা অনুধাবন করতে অক্ষম।’

সুভাষচন্দ্র বোসের এই ‘ব্রাহ্মভদ্রলোক’ তুলে খোঁচাটা কি রবীন্দ্রনাথের গায়ে লাগবার কথা নয়!সংবাদপত্রও এই রবীন্দ্রনাথ-সুভাষ বিতর্কে সরগরম হয়। মিটমাট করবার জন্য ২৩ মে ১৯২৭-এ একটি ‘নিবেদন পত্র’ প্রকাশিত হয়। তাতে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি সাক্ষর করেন। তবু কী সবটা মিটমাট হয়েছিল? জাতীয়তাবোধ দুজনেরই ছিল। কিন্তু লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। ‘প্রতিমা পূজা করিবার জন্য জিদ’ রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেন নি আর সুভাষচন্দ্র প্রতিমা পূজার পক্ষে সওয়াল করে ছাত্রদের জাতীয়তাবোধকে উদ্দীপনার বিষয় করতে চাইলেন।

ফলত দলে দলে হিন্দু ছাত্র সিটি কলেজ ছেড়ে দিতে লাগল। কলেজের অর্থনীতিতে টান পড়ল। এবং সর্ব কনিষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে জীবনানন্দ দাশের সিটি কলেজের টিউটর পদের চাকরিটা গেল।

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত