| 25 এপ্রিল 2024
Categories
চলচ্চিত্র বিনোদন

মন জয় করতে পারল না তানাজি

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

অভিনেতা: অজয় দেবগণ, সইফ আলি খান, কাজল, শরদ কেলকার, নেহা সিং

পরিচালক: ওম রাউত

ছবিটি চোখে ভালো লাগলেও, মনে অতটা দাগ বসাতে পারল না। ‘‌তানাজি: দ্য আনসাঙ্গ ওয়ারিয়র’‌। মুখ্য চরিত্রে অজয় দেবগণ। সাম্রাজ্য নিয়ে মারাঠা ও মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সংঘাতকেই থ্রিডিতে দেখানো হয়েছে। ছবিতে বীর মারাঠা যোদ্ধা তানাজির গল্প বর্নিত আছে যিনি ছিলেন ছত্রপতি শিবাজীর একজন সেনাবাহিনী প্রধান। কিন্তু এই ছবিটি সেভাবে দর্শকদের মন জয় করতে পারলো না। তার একটা কারণ হলো একইদিনে মুক্তি পেয়েছে দীপিকার ‘‌ছপক’‌, যার দিকে দর্শকদের আকর্ষণ বেশি, আর একটি হলো ঐতিহাসিক ছবিকে বড্ড অতি রঞ্জিত করে ফেলেছে ছবির নির্মাতারা। ছবিতে মুখ্য দুই অভিনেতা অজয় দেবগণ ও সইফ আলি খান। সইফ এখানে হিংস্র রাজপুত দুর্গ–রক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যাঁকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন ঔরঙ্গজেব। তানাজি ও মোঘল খলনায়কের যুদ্ধই এই ছবির মূল উপাদান। যদিও যোদ্ধাদের ভূমিকায় দুই অভিনেতাই যথাযথ ছিলেন। ছবিতে তানাজির স্ত্রী সাবিত্রী বাইয়ের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে কাজলকে।

ঐতিহাসিক গল্পের প্রেক্ষাপট

এই ছবিতে না নায়ক তানাজি মালুসারে, যিনি মারাঠা সেনা এবং ছত্রপতি উপাধি পাওয়ার আগে যিনি শিবাজির সেবা করেছিলেন আর না হিংস্র মুঘল যোদ্ধা উদয়ভান সিং (‌সইফ আলি খান)‌। বরং বলা যেতে পারে ছবিটি সতত ও বীরত্বের উপমাকে বহন করে। এক ব্যক্তি এতটাই নির্ভয় যে তিনি কোন্ধানার পাহাড়ি দুর্গে আক্রমণ চালানোতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ছেলের বিয়ে দেন। পরেরটি হল শয়তানের আর্বিভাব, একজন নির্মম শাসক যিনি মহিমান্বিতভাবে ঘোষণা করেন যে তাঁর দরবার ক্ষমা করার কোনও জায়গা নেই, শুধু রয়েছে শাস্তি। ছবির গল্পে বলা হয়েছে, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব কৌশলগতভাবে পাহাড়ি দুর্গ কোন্ধানাকে দক্ষিণ ভারতের মুঘল ঘাঁটি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। যেখানে থেকে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যকে দক্ষিণ ভারতে প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। যাইহোক, মারাঠা সম্রাট ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ তাঁর সেনা প্রধান তানাজি মালুসারকে মুঘল আগ্রাসন থেকে দক্ষিণ ভারতকে রক্ষার জন্য যে কোন মূল্যে কোন্ধানা দখল করার নির্দেশ দেন এবং মুঘল সম্রাট তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি উদয় ভানকে দুর্গ রক্ষার জন্য প্রেরণ করেছিলেন, ফলে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দুর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনর যুদ্ধটি সিংহগাদের যুদ্ধ হিসাবে পরিচিত যা দক্ষিণ ভারতের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল।

 

ছবির গল্প

এই ছবিতে সপ্তদশ শতকের গল্প বর্ণিত হয়েছে। অল্প বয়স থেকেই তানাজিকে তরোয়াল বিদ্যায় পারদর্শী ও যোদ্ধা হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তানাজির বাবা কোনওভাবেই ছেলের বীরত্বে খুশি নন। বৃদ্ধ বাবা এরপর যুদ্ধে মারা যান। ছেলের জন্য রেখে যান তাঁর মূল্যবান তরোয়াল। এরপরই ১৬৬৪ সালে চলে যায় পরিচালক। যেখানে পুরানদার চুক্তির আওতায় শিবাজি তাঁর ২৩ টি দুর্গ মুঘলদের কাছে সমর্পণ করেছিলেন। শাসকের মা জিজাবাই (‌পদ্মাবতী রাও)‌ মানত করেন যে কোন্ধানা দুর্গ ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি খালি পায়ে হাঁটবেন। চার বছর পরে, শিবাজি দুর্গ আক্রমণ করার পরিকল্পনা করলেও তা তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী তানাজির কাছ তথ্য গোপন করেছিলেন। কারণ সেই সময় তাঁর কিশোর ছেলের বিয়ের জন্য গ্রামে প্রস্তুতি চলছিল। যদিও এটা বাল্য বিবাহ, তবে যেহেতু ১৬৬০ এর দশক, সুতরাং যে কোনও বিষয়ে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। এরপরই তানাজি দুর্গ আক্রমণের বিষয়টি জানতে পারেন এবং শিবাজিকে অনুরোধ করেন এই আক্রমণের নেতৃত্ব তাঁকে দেওয়ার জন্য। তানাজি জানান যে দুর্গ জয়ের পরই তিনি তাঁর ছেলের বিয়ে দেবেন। ঔরঙ্গজেবের প্রাক্তন প্রধান দেহরক্ষী উদয়ভান সিং সেই সময় এক দুর্গম দুর্গের দায়িত্বে ছিলেন যা একটি খাড়া পাথুরে পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানে তিনি একটি অল্প বয়সী বিধবা কমলা (নেহা শর্মা)-কে বন্দী করে রেখেছেন। তাঁকে তার মৃত স্বামীর চিতা থেকে টেনে নিয়ে আসার পর উদয়ভান নিজের কাছেই তাঁকে রেখে দিয়েছেন। তবে তিনি কোনওভাবেই তাঁর ওপর কোনও জোর খাটান না। বরং উদয়ভান বলেছিলেন যে কমলার ‘‌না’‌, ‘‌হ্যাঁ’‌ এ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন। এখানে উদয়ভানের দু’‌টি চরিত্রকে ফুটিয়েছে পরিচালক। একদিকে তিনি একজন হিংস্র বীর যোদ্ধা, অন্যদিকে মহিলাদের প্রতি তাঁর সম্মান অপরিসীম। তিনি কেবল রাজপুত মহিলাকে সতীদাহ করতে বাধা দেন না, তিনি এই সতীদাহকে উঠিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন।

 

পরিচালকের ব্যর্থতা

হিন্দি ভাষায় পরিচালক ওম রাউত এই প্রথমবার ছবি করলেন। তাও আবার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। তবে সিনেমাটিক দিকটি এই ছবির একেবারেই দুর্বল দিক। জাপানের থ্রিডি সিনেমাটোগ্রাফি ও সিজিআই প্রযুক্তি শুধুমাত্র ছবিটিকে আকর্ষণীয় করেছে। কিন্তু ছবিতে বাস্তবের তুলনায় অবাস্তব কিছু উপাদান এবং শেষের আধঘণ্টা শুধু জয় শিবাজি মহারাজ, জয় ভবানি স্লোগানে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। ছবিতে ভিলেনের যে ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত রূঢ়। যিনি হাতির দাঁত কেটে দেন, ছোটখাটো বিষয়ে সেনাদের ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং শত্রুদের চোখের পলক না ফেলে হত্যা করেন। যদিও এই চরিত্রটির সঙ্গে দর্শক রণবীর সিং অভিনীত আলাউদ্দিন খিলজির মিল পাবেন। তাই সইফ আলি খানের চরিত্রটি সেভাবেও আকর্ষণ করতে পারেনি। তবে অজয় দেবগণ ও কাজলের অভিনয় যথাযথ ছিল। তানাজির চিত্রনাট্য লিখেছেন দীর্ঘসময়ের সঞ্জয় লীলা বনশালির সহযোগী প্রকাশ কাপাড়িয়া। ছবির ভয়েস ওভার অত্যন্ত বাজে, যেখানে দর্শকদের ইতিহাস বলা হচ্ছে। ছবির গানও সেভাবে দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারেনি। তবে ছবির বাড়তি পাওনা হিসাবে কাজল ও অজয় দেবগণকে বহুদিন পর জুটিতে দেখা গিয়েছে।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত