copy righted by irabotee.com,louise-elisabeth-gluck

ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-৩১) । মুম রহমান

Reading Time: 3 minutes

লুইজ গ্ল্যুক [louise-elisabeth-gluck]

louise-elisabeth-gluck

লুইজ এলিজাবেথ গ্ল্যুক [louise-elisabeth-gluck] (১৯৪৩-) বহু পুরস্কারে ভ‚ষিত সমকালের অন্যতম মার্কিন কবি। তিনি ১৯৯৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘দি ওয়াইল্ড আইরিস’-এর জন্য। ২০০৩-২০০৪ সালে আমেরিকার ‘পোয়েট লোরিয়েট’ হয়েছেন। ১৯৯২ সালে ‘ওয়াইল্ড আইরিশ’ ১৯৯৯ সালে ‘ভিটা নোভা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বিংহাম পোয়েট্রি প্রাইজ এবং দ্য নিউইয়ার্ক বুকস এওয়ার্ড, ২০০৪ সালে ‘ফেইথফুল এন্ড ভার্চয়াস নাইট’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ন্যাশনাল বুক এওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। তাকে ২০২০ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে, ‘তার সন্দেহাতীত কাব্যিক কণ্ঠের জন্যে যার তীব্র সৌন্দর্য ব্যক্তির অস্তিত্বকে সার্বজনীন করে তোলে।’ ব্যক্তিগত বিষাদ, সূক্ষ্ম মনোজাগতিক বিশ্লেষণ, পুরাণ- উপকথা-প্রবচন ইত্যাদি মিলিয়ে তার কবিতা এক ভিন্ন গভীরতা তৈরি করে। তবে এইসব উপকরণের ব্যবহারের পাশাপাশি তিনি ভাষার ক্ষেত্রে সরল এবং প্রাণবন্ত। ফলে তিনি সাবলীল আর স্বচ্ছন্দ শব্দ ব্যবহারে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক বিশ্বকে তুলে ধরেন একান্ত দক্ষতায়।


সর্সি’র ক্ষমতা

আমি তো কখনোই কাউকে শূকর বানাইনি
কিছু মানুষই শূকর; আমি কেবল তাদের
শূকরের মতো দেখতে করেছি।

আমি তোমাদের এই দুনিয়া নিয়ে অসুস্থ
এখানে বাইরের ছদ্মবেশ ভেতরকে ঢেকে রাখে। তোমাদের পুরুষেরা
আদতে খারাপ ছিলো না :
উচ্ছৃঙ্খল জীবন
তাদেরকে এমন করেছে। শূকরের মতো,

আমার যত্নে
এবং আমার নারীদের যত্নে, তারা
মধুর হয়ে উঠেছিলো।

তারপর আমি জাদুমন্ত্র উল্টে দিয়েছি, তোমাকে দেখিয়েছি আমার ভালোত্ব
ঠিক যেমন দেখিয়েছি ক্ষমতা। আমি দেখেছিলাম

আমরা এখানে সুখি হতে পারতাম,
যেমন নারী পুরুষরা হয় আর কি
যখন তাদের চাহিদাগুলো সরল। এক নিঃশ্বাসে,

আমি আগেই দেখেছি তোমার প্রস্থান,
তোমার লোকেরা আমার সহযোগিতায় নির্ভয়ে গিয়েছে
ক্রন্দনরত আর ক্রুব্ধ সমুদ্রে। তুমি মনে করো

সামান্য কান্না আমাকে মর্মাহত করে? বন্ধু আমার,

প্রত্যেক জাদুকরই
হৃদয়ে বাস্তববাদী; কেউ দেখতে পায় না নির্যাস যে কিনা
সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়। আমি যদি নেহাত তোমাকে ধরে রাখতে চাইতাম

আমি তোমাকে বন্দী করে রাখতে পারতাম।

 

অনুবাদকের টীকা : সর্সি হোমারের ‘অডেসি’ মহাকাব্যের ছোট্ট একটি চরিত্র। অডিসিয়াস তার অভিযান কালে আয়েয়া দ্বীপে যায়, এই দ্বীপেই তার বসবাস। ট্রোজান যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে অডেসিয়াস এখানে এলে সর্সি তার জাদুবলে অডেসিয়াসের লোকদের শূকরে পরিণত করে। উল্লেখ দেবতা হেলিয়াস ও দেবী হেকাটের কন্যা সর্সি হলেন গ্রীক পুরাণে জাদুমন্ত্রের দেবী। তিনি মানুষকে নানা পশু বানিয়ে ফেলতেন। নানা রকম বিষ, সুরা তৈরি করতে পারতেন, তার ছিলো যাদুর কাঠি। যাহোক অডেসিয়াস একবছর সর্সি’র সঙ্গে থাকেন, তাদের একটি সন্তান হয় এবং শেষ পর্যন্ত সর্সিকে অনুরোধ করে তার বাহিনীকে শূকর থেকে মানুষের রূপান্তর করাতে রাজী করতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সুন্দরী, ক্ষমতাবান এই নারী অডেসিয়াসের প্রেমমুগ্ধ ছিলেন। গ্রীক এমনকি রোমান পুরাণে সর্সি জাদুকরী, কামোত্তেজক, ঈর্ষাপরায়ণ এবং ক্ষমতাবান এক নারী। ওভিদের মেটামরফোসিসেও এই নারীর কথা আছে। লুইজ গ্ল্যুকের একাধিক কবিতায় এই নারীকে পাওয়া যায়।

 

 

বুনো আইরিশ

আমার যন্ত্রণার ওপারে
ছিলো তো একটা দরজা।

শোনো আমার কথা : যাকে তুমি মৃত্যু বলেছো
আমার মনে আছে।

মাথার উপরে, নিনাদ, পাইনের শাখারা নড়ে।
তারপর, কিচ্ছু না। দূর্বল সূর্য
পিটপিট করে শুকনা জমিনের উপরে।

টিকে থাকা বড় ভয়ঙ্কর
কেননা সচেতনতাকে
কবর দেয়া হয়েছে মাটির গহীনে অন্ধকারে।

তারপর এটা সমাপ্ত : যা ছিলো তোমার ভয়, হয়ে ওঠা
একটা আত্মা আর অক্ষমতা
কথা বলতে না-পারার, আকস্মিক সমাপ্তি, শক্ত মাটি
খানিকটা ঝুঁকে আসে। আর যতোটুকু আমি নিতে পারি
পাখিরা অস্থির নড়ছে নিচু ঝোঁপঝাড়ে।

তোমরা যারা মনে রাখবে না
অন্য পৃথিবীর থেকে উত্তরণ
আমি আবার বলছি তোমাদের আমি আবার বলতে পারি : যা কিছু
ফিরে আসে বিস্মরণের সীমা থেকে ফিরে আসে
একটা কণ্ঠস্বরের সন্ধানে :
আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু থেকে এসেছিলো
এক বিশাল ঝর্ণাধারা, গাঢ় নীল
ছায়া মেঘহীন নীল সমুদ্র জলের কাছে।

 


আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-৩০)

 

প্রভাত প্রার্থনা

তুমি জানতে চাও কেমন করে আমার সময় কাটে?
আমি সামনের আঙিনায় হাঁটি, ভাব করি
যেন আগাছা নিঙরাচ্ছি। তোমার জানা উচিত
আমি কখনোই আগাছা নিঙরাই না, আমি হাটু গেড়ে, তুলি
ত্রিপত্র গাছ গুচ্ছে গুচ্ছে ফুল গাছের সারি থেকে: আদতে
আমি একটু মনোবল খুঁজছি, কোন একটা লক্ষ্মণ
যা আমার জীবন বদলে দেবে, যদিও
চিরকাল পার হয়ে যাবে, খুঁজতে খুজতে
প্রত্যেকটা পত্রগুচ্ছের প্রতীকি
পাতাসমূহ, আর সহসা গ্রীস্ম কাল ফুরিয়ে যাবে, ইতোমধ্যেই
পাতারা বদলে যাচ্ছে, সদাই অসুস্থ গাছগুলো
আগে যায়, মৃতেরা ক্রমশ বদলায়
উজ্জ্বল হলুদে, যখন কিছু কৃষ্ণ পাখি জারি রাখে
তাদের সুরের কারফিউ। তুমি আমার হাত দেখতে চাও?
প্রথম নোটের মতোই একদম শূন্য।
কিংবা মূল বিষয়খানি সদাই
চলছিলো কোন চিহ্ন ছাড়াই?

ইংরেজিতে যাকে clover বলে তা আসলে একটা ছোট্ট গুল্ম জাতীয় গাছ, যার তিনটি পাতা, এই তিনপাতাঅলা ছোট্ট গুল্ম এক ধরণের সৌভাগ্যের প্রতীক। কেউ যদি এই ক্লোভারের চারপাতাঅলা গাছ পায় তবে সেটা বিশেষ সৌভাগ্য বয়ে আনে।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>