| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

লাঞ্চ ডেট 

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

আজ ওরা বালোসএর সমুদ্রতটে বসে লাঞ্চ করেছে। রৌনক আর দিঠি। রৌনক ব্যস্ত কর্পোরেট, সারা বছর কাজের সূত্রে ঘুরতে হয় পৃথিবীর নানা প্রান্তে। দিঠি এন আরবরএর একটা মন্টেসরি স্কুলে পড়ায়। অবসর সময়ে ছবি আঁকে আর হালে ক্রিয়েটিভ রাইটিং নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।

এমনভাবে একসঙ্গে বসে ওদের সচরাচর খাওয়া হয় না। মাঝে সাঝে উইকেন্ড কিংবা হলিডে করতে বেরোলে তবেই। রৌনক যখন শহরে থাকেও, তখনও বিজনেস ডিনার লেগেই আছে। আর লাঞ্চ তো অধিকাংশ দিনই ঘাসপাতা চিবুনো — দিঠি স্কুলে, আর রৌনক অফিসের ক্যাফেটেরিয়াতে। 

আজ ওরা অনেকটা সময় নিয়ে দুজনে মুখোমুখি বসেছে। রৌনক ছোটবেলা থেকেই মাছের ভক্ত। প্লেট জুড়ে একটা মরিচ দিয়ে ঝলসানো মাছ আর পাশে মোটা মোটা চাকায় কাটা আলুভাজা। দিঠি আজ নিজের জন্য নিয়েছে চিয়াবাতা রুটির মধ্যে আভোকাডো, টম্যাটো, আর ফেটা চীজের স্যান্ডউইচ, সঙ্গে সরু গোল্ডেন রিমের স্বচ্ছ গ্লাসে রোসে ওয়াইন। 

গ্রীসের এই সমুদ্রতট পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর সমুদ্রতটগুলির তালিকায় নিঃসন্দেহে প্রথম পাঁচটার মধ্যে। সামনে মেডিটেরানিয়ানের অদ্ভুত নীল, আর ওদের পেছনে সমুদ্র সবুজ পাহাড়ী উপত্যকায় ঢুকে গিয়ে তৈরী করেছে নোনা জলের হ্রদ। এখানকার বালি গোলাপী। সূর্যের আদরে চিকচিক করছে গোলাপী বালিঠিক যেন গোল্ড রিমের ওয়াইন গ্লাসে রোসে ওয়াইন।

ব্ল্যাকেন্ড ফিস কামড় দিতে দিতে টুকটাক গল্প  হচ্ছে। বহুদিন বাদে এতখানি সময় পাওয়াতে বইপড়ার পুরোনো অভ্যেসটা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে রৌনক। একাধারে পড়ছে রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, মুরাকামি, মার্গারেট এটউড, খালেদ হোসেইনি, কামিংসযা পাচ্ছে কিন্ডলএ। আর দিঠি চুটিয়ে সিনেমা দেখছে নেটফ্লিক্সএ। মাস্ট ওয়াচ ফিল্মসএর একটা লিস্ট বানিয়েছে, এর মধ্যেই দেখে ফেলেছে তার থেকে গোটা কুড়ি।তোমার মনে আছে রৌনক আমাদের প্রথম আলাপ কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালে পানাহি ছবি দেখতে গিয়ে?”  “ইনক্রেডিবল! একটা ট্যাক্সি মধ্যে গোটা একখানা ছবি বানিয়ে ফেললেন ভদ্রলোক, ভাবা যায়?” আলুভাজায় কামড় দিতে দিতে প্রায় স্বগতোক্তির মতো বলে রৌনক। 

একসময় রবীন্দ্রনাথ, মুরাকামি, আলুভাজা, পানাহি, ফেটা চীজ, সব ফুরিয়ে যায়| থাকে শুধু আদিগন্ত ভূমধ্যসাগরের নীল আর দিঠির কালো জলে নোনা সমুদ্র।চিয়ার আপ দিঠি, কাল আমরা কোথায় যাচ্ছি লাঞ্চ করতে? অরোরা বোরিয়ালিস নাকি আমাজনের বুকে?” অন্যমনস্ক হয়ে দিঠি রোসে ওয়াইনএর গ্লাস ঠেকায় গালে।  “লক্ষীটি, তুমি জানো ট্র্যাভেল ব্যানটা উঠলেই আমি প্রথম ফ্লাইটে ফিরে আসবো মিশিগানে। প্লিজ দিঠি, এভাবে প্যান্ডেমিক হয়ে দেশের বাইরে আটকে যাবো এতদিন, কে জানতো ! I am missing you too!” আস্তে আস্তে চোখ তোলে দিঠি — “কতদিন তোমাকে ছুঁইনি, রৌনক!” হাত বাড়িয়ে জুম্এর পর্দায় হাত রাখে, ছুঁয়ে দেয় রৌনকএর ঠোঁট, কাঁধ, আর বুকের জায়গাগুলোতে। জুম্এর কাস্টম ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন বালোসএর নীল সমুদ্র আর গোলাপি বালি চিকচিক করছে অন্যরকম আলোয়। 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত