| 10 নভেম্বর 2024
Categories
গীতরঙ্গ

গীতরঙ্গ: মহি ভাই : মঙ্গল মঙ্গল । জিললুর রহমান

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট


না, আমি সঙ্গীত জগতের লোক তো নই-ই, গানের গ-ও আমার বুঝ-বুদ্ধির মধ্যে নেই কেবল ভাল লাগা কিংবা মুগ্ধতা ছাড়া। ভাল না লাগাও থাকে বইকি। সে কেবল শ্রোতার পরিমাপে। তাই, এই লেখাটি কবি হাফিজ রশিদ খানের উপর্যুপরি তাগাদা সত্বেও যতবার কিছু লিখতে বসেছি, ততবার ক্ষান্ত হয়েছি ভেবে যে- এ আমার কম্ম নয়। কিন্তু মহিভাইয়ের উপর একটা কাজ হচ্ছে, আর দীর্ঘ পরিচয়ের পরও দু’ছত্র না লেখা সমীচীন হয়তো হবে না ভেবে আবার লিখতে বসেছি। বার বার থেমে থেমে মাথায় যে ক’টা পংক্তি এসেছে, সে কেবল নিজের অনুধাবনের প্রকাশ, সঙ্গীত বোদ্ধার কোনো লেখনী নয়। তাই, যারা এই লেখায় সঙ্গীত বোদ্ধার কোনো মত্তামত দেখতে চান, তাদের কাছে মার্জনা চেয়ে অনুরোধ জানাবো যে, দয়া করে আর এগুবেন না- আর পড়ে সময় নষ্ট করবেন না। তবে, যারা আমার মতো মহিউদিন আল ভাণ্ডারীর স্নেহধন্য হয়েছে, তারা হয়তো নিজের অভিজ্ঞতার সাথে আমার উপলব্ধিকে মিলিয়ে নেবার আগ্রহে কিছু সময় ব্যয় করতেই পারেন। 

গীতিকবি সৈয়দ মহিউদ্দিন কিংবা মহিউদ্দিন আল ভাণ্ডারী কিংবা মহি আল ভাণ্ডারী যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এই নাম শুনলেই প্রথম যে চিত্রটি আমার চোখে ভেসে ওঠে তা হচ্ছে, ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসা ঝাঁকরা বাবরি চুলের সদা হাস্যরত মুখ, হাতে চুন লাগানো পানের বোঁটা আর মুখভরা রসে টইটুম্বুর জর্দাময় পান। প্রথম যেদিন আলাপ হয়েছিল, সেদিনও যেমন, আজও তেমনি। কেবল চুলের রঙ ফিকে হয়ে এসেছে। তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় সবুজ হোটেলের আড্ডায়। আজ ঠিক মনে নেই, সম্ভবত কবি সোহেল রাববিই আমাকে তাঁর সাথে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। সে হবে ১৯৮৮/৮৯ সালের কথা। আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অ জেডা ফইরার বাপ’ গানটি আমি শুনেছি কিনা। আমি বললাম, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান আমি খুব কমই শুনেছি, তবে এই গানটি আমার শোনা আছে। বেশ জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচারিত। সেসব দিনে বেতারের গান আমাদের শোনা হতো। শুনতে হতো। আজকের মতো তো আর চ্যানেলসর্বস্ব ভূবন ছিল না। আমাকে জানানো হলো যে, এই ফইরার বাপ গানটির রচয়িতা এই সৈয়দ মহিউদ্দিন। সেদিন আমার বয়স মাত্র ২২ বছর। সবে সবুজ হোটেলে আড্ডা দিয়ে দিয়ে একজন নিভৃতচারী মানুষ থেকে ধীরে ধীরে এক প্রবল আড্ডারু হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। এমন একজন সফল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের সামনে কেমন যেন নিজেকে ম্লান মনে হতে লাগলো। কিন্তু একটু পরেই ভ্রান্তিবিলাস ভাঙলে বুঝলাম এক অতি আটপৌরে সাধারণ বন্ধুবৎসল এক ব্যক্তির সাথে আজ হাত মেলালাম। আমার অনুসন্ধিৎসায় প্রগলভ হয়ে তিনি সেই ফইরার বাপ জ্যাঠার বাস্তব গল্পগাথা এবং এই গান লেখার ঘটনা বিশদ বললেন। আমি মুগ্ধ হয়ে সেদিন শুনেছিলাম কি অবলীলায় একটি বাস্তব চরিত্র এক চিরন্তন সঙ্গীতচরিত্রে রূপ লাভ করলো, এবং তা কতো সাবলীল ভাষায়। তারপর থেকে তাঁর সাথে ঘনিষ্টতা। প্রায়ই তিনি সবুজের আড্ডায় এলে সদ্য রচিত গানের কথাগুলি আমাদের সাথে আলাপ করতেন। কেন লিখেছেন তা-ও বলতেন। তাঁর সাথে পথে-ঘাটে দেখা হলেই দুইকর জোড় করে সম্বোধন করতেন “মঙ্গল মঙ্গল” বলে। তিনি বলতেন সালাম, নমষ্কার, প্রণাম ইত্যাদি বাদ দিয়ে চলেন সবাই সার্বজনীন শব্দ “মঙ্গল” ব্যবহার করি। এখনো পথে কোথাও দেখা হলেই মহিভাই ডাক দিয়ে বলেন “মঙ্গল মঙ্গল”।  একদিন এক অসাধারণ গান শুনলাম তাঁর মুখে “মেজ্জান দিয়ে মেজ্জান দিয়ে উইতারত”। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবারের আয়োজন উৎসবের খাবার, মেজ্জান। কাউ কেউ শুদ্ধ করে উচ্চারণ করেন- মেজবান, মূল অর্থ দাওয়াত। এই গানটির মর্মবাণী এতো আকর্ষণ করে আমাকে! ওদের বাড়িতে মেজ্জানের দাওয়াত, সবাই যাচ্ছেন সেই উৎসবমুখরতায় চট্টগ্রাম যেন এক অপূর্বভাবে ধরা দেয় এই গানটিতে। 

ভাষা সংস্কৃতি এবং ভৌগলিক অবস্থান সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহন করে আসে সুদীর্ঘকাল থেকে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা বলা তো দূরের কথা বুঝে ওঠাওতো বেজায় কঠিন মনে হয় অন্য যে কোনো বাংলাভাষীর জন্যে। তবে এই চট্টগ্রাম সেই প্রাচীন কাল থেকে সাহিত্য সংস্কৃতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা সেই পুরনো আঞ্চলিক গানের মধ্যে শুনতে পাই “নাতিন বড়ই খা বড়ই খা, হাতে লইয়া নুন” কিংবা বিভিন্ন অনন্যসাধারণ সাম্পানওয়ালার গান। আবার কখনো রেঙ্গুন শহরে ‘ডামিস’ (নিখোঁজ) হয়ে যাওয়া স্বামীর ফিরে না আসার আকুতি। কখনওবা সদ্যবিবাহিত স্বামীর রেঙ্গুনযাত্রা উপলক্ষে স্ত্রীর আকুলতা। এর পাশাপাশি সাগরে যাওয়া ছেলে বা স্বামীর জন্যে ক্রন্দন বা আকুলতা নিয়েও অনেক গান রচিত হয়েছিল। কিন্তু সত্তুর আশির দশকে চাঁটগাঁইয়া গানের ভাষা কিছুটা অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়। সৈয়দ মহিউদ্দিনই সেই গানকে জীবনমুখী করে তোলেন, এবং অবক্ষয়ের সর্বনাশ থেকে উদ্ধার করেন। একটা সময় চট্টগ্রাম বেতার থেকে শেফালী ঘোষ আর শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব এর যুগলবন্দী গান শ্রোতাদের মন ভরিয়ে রাখতো। তারাও কথা বা বাণীর কারণে অনেক অবক্ষয়ী গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন বৈ কি। মহিভাই যখন আঞ্চলিক গান লিখতে শুরু করলেন, চাঁটগাঁইয়া আঞ্চলিক গান যেন নতুন প্রাণ পেল। মহিভাইয়ের সাথে কিংবা তাঁর সাথে দেখা করার জন্যে মাঝে মাঝে সবুজেও আসতেন শ্যামসুন্দর দা। তিনি প্রবেশ করতেন বেশ নাটকীয়ভাবে। একটা লম্ফযোগে ঢুকেই হড়বড় করে অনেক কথা বলে যেতেন। মহিভাইয়ের কল্যাণে আঞ্চলিক গানের এই সম্রাটের সাথেও পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছিলাম। পেয়েছিলাম সান্নিধ্য। শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব যদি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাট হয়ে থাকে, তবে সৈয়দ মহিউদ্দিন হচ্ছেন চাণক্য। আঞ্চলিক গানের এই বিশাল ভাণ্ডারে মহিভাইয়ের যেমন বিশাল কালজয়ী অবদান আছে, তেমনি চট্টগ্রামের সঙ্গীত জগতের আরেকটি ধারা হচ্ছে মাইজভাণ্ডারী গান। মারফতী গান। যতটুকু শুনেছিলাম, মনে পড়ে, এই মাইজভাণ্ডারী গানের সূত্রেই মহিভাইয়ের গান রচনার সূচনা। তাই প্রথম দিকে আমরা তাঁকে মহিআল ভাণ্ডারী হিসেবে জানতাম, বা তিনি সে নামেই পরিচয় দিতেন। যারা চট্টগ্রাম সম্পর্কে জানেন, তাদের কাছে এটা অবিদীত নয় যে, মাইজভাণ্ডার শরীফকে ঘিরে মারফতী ভক্তদের এক বিশাল বিস্তীর্ণ জগতের দেখা আপনি পাবেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি/নাজিরহাট অঞ্চলে। সারা পৃথিবী থেকে হাজার-লক্ষ ভক্ত মুরিদগণ ওরস-মাহফিলগুলোতে এসে জমায়েত হন। বিশেষত সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডার পীরে কেবলার ওরসে ভাণ্ডারী গানের আয়োজন হয়। হয়তো তেমন একটি আয়োজনে ভক্ত মহি লিখেন—

“আমার সকল ব্যবসা গুনাগারী যায়

এইবার আমি দোকান দেব

মাইজভাণ্ডারের কিনারায়।।

দোকানের মাল রাখব আমি 

লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ

সাইনবোর্ডেতে থাকবে লিখা 

হাইয়া-আ-লাল-ফালা

সেথায় ইহ পর কালের বেচা 

কেনা হবে একপাল্লায়।।

এমন নিবেদনের পরে আমরা আরেক গানে দেখি তিনি সকলকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে মাইজভাণ্ডারের এই মারফতি ফজিলত কিছুতেই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। পার্থিব বিদ্যালয়ের সনদ গাউছুল আজমের দরবারে চলে না। স্মরণ করিয়ে দেন যে বাবা গোলামুর রহমান সাহেব কখনো জ্ঞানের বড়াই করেননি। 

“পুঁথি বিদ্যার এলমে দেমাগ মাইজভাণ্ডারে হয় বিফল

ধরা বিদ্যালয়ের সনদ গাউছে দরবারে অচল।।

টুল টেবিল পার নকল শিক্ষা বস্তা পুরাই লইয়াছ 

বল দেখি আসতাগফের দিনে কয়বার কইয়াছ

দুর্গন্ধ মুখ বে-কুলিতে অষুধ খাইলে পায় কুফল

আমার বাবা রহমানে জ্ঞানের বড়াই করেননি

ত্রাণের চাবি হাতে লইয়া পীরের লেভাস পড়েননি” 

তিনি শুধু এইটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি। তিনি পুঁথিগত বিদ্যাধরদের উদ্দেশ্যে বলছেন “জান বেশি বুঝ কম”—এবং তাদের একথাও বলছেন যে, ভাণ্ডারী না হলে এসব বুঝা সম্ভব না। তাই, সবাইকে আহবান জানাচ্ছেন প্রমাণ নিতে মাইজভাণ্ডারে যেতে। 

তিনি দেখেছেন সুখশান্তির আকাংক্ষায় মানুষ কত স্থানে কত জনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে যখন মাইজভাণ্ডারে আসেন, তখন তার দূর্গতির অবসান ঘটতে শুরু হয়।  

“সাত ঘাটের জল খাইয়া দাইয়া 

আইলি মাইজভাণ্ডারে-তে

তগদিরে তোর হইল শুরু 

দূর্গতি জট খুলিতে”

এই মাইজভাণ্ডারে এলে অমাবস্যার পরে যেন নতুন চাঁদের উদয় ঘটে, বাবার প্রেমে মগ্ন হলে আমল শক্তি জন্ম নেয় এবং শান্তি নেমে আসে মনে। 

আমরা জানি, মাইজভাণ্ডার শরীফের পত্তন হয় প্রথম হযরত আহম্মদুল্লা (রহঃ)-এর মাধ্যমে। তাঁর পরে এই মাইজভাণ্ডারের রোশনাই বাড়িয়ে আবির্ভূত হন হযরত গোলামুর রহমান (রহঃ)। এই দুইজনই মাইজভাণ্ডারের অবিচ্ছেদ্য প্রাণপুরুষ। নানান ভক্ত-মুরিদের মধ্যে কখনো সখনো এদের মধ্যে তুলনা বা পার্থক্য করতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের স্মরণ করিয়ে মহি-ভাণ্ডারী বলেন যে, আহম্মদের ‘আ’ আর রহমানের ‘র’ নিয়ে জিন্দা প্রেমের ‘জি’ মিশায়ে ‘আরজি’ করলে তবেই সে আশা পূর্ণ হবে। 

“আহম্মদের আ লইয়া 

রহমানের র লাগাওয়া

জিন্দা প্রেমের জি মিশাইয়া 

আরজি করিলে ইনশাআল্লাহ 

কবুল হবে তিলে তিলে 

হযরত কেবলা বাবা

বাবাজান ভাণ্ডারী বাবা

খোদার সত্য গাউছিয়াতে 

আছেন দুই মিলে

অর্থ কড়ি যশ উপাধি 

শাহানশাহী যা ইত্যাদি 

ফরিয়াদি সহজে পায় 

একটু চাহিলে 

মাইজ ভাণ্ডারে সর্বসত্ত্ব 

দুই মাওলানার আনুগত্য 

মহি তোমার কপাল ভাল 

বুঝিয়া ছিলে’” 

এমন সহজ ভাষায় ভক্তি নিবেদনের এই সাংগীতিক আয়োজন ভক্তদের হৃদয়কে খুব সহজেই জয় করে। মহি ভাই কিন্তু মারফতের রহস্য সন্ধানেই কেবল নিজেকে ব্যাপৃত রাখেননি। সাথে সাথে মানুষের আত্মশুদ্ধির পরামর্শও তুলে ধরেন গানে গানে। তাই তিনি ‘অপ-কামাই’-এর ধন-দৌলতের থেকে দান-খয়রাতি করার দুনিয়াবি ঢং-তামাশা যে প্রকৃতার্থে খোদার সেবা নয় তা সরল বাক্যে স্মরণ করিয়ে দেন সকল শ্রোতাকে। 

“মক্কা ঘুরে হাজি’র যোগ্য

লাখেতে কয় জনের ভাগ্য 

ভাগ্য লিষ্টি খোদার হাতে 

হাজি আর বা পাজি কে’বা

অপ-কামাই ধন দৌলতী 

সে ধনে যার দান খয়রাতি 

দুনিয়াবী ঢং-তামাশা 

আসলে নয় খোদার সেবা

সত্য মন্ত্রে গোসল করি 

তারপরেতে প্রেমে পড়ি 

প্রেমের ঘটক বা’জান কেবলা 

মহি’কে দেয় বুদ্ধি যে’বা” 

সৈয়দ মহিউদ্দিন খুব সহজ ভাষায় আমাদের বুঝিয়ে দেন প্রকৃত ঈশ্বর প্রেম ছাড়া ছল চাতুরী করে অর্থ উপার্জন ও লোক দেখানো দান খয়রাত করে খোদার সন্তুষ্টি লাভ হবে না। আর এই প্রেমের ঘটক হচ্ছেন বাবাজান কেবলা। এই মাইজভাণ্ডার কেবলা গরীব দুঃখীদের আশ্রয়স্থল। অনেক বিশ্বাসী ভক্ত হৃদয়ের পাপের কলুষ মুক্ত হবার আশায় মক্কা মদিনা বাগদাদ আজমির শরীফে যায়। কিন্তু সকলের তো সে সামর্থ থাকে না। মহি বলেন, ধন সম্পত্তি কমতি হ’লে তারা যেন পেরেশান না হয়ে মাইজভাণ্ডারে আসেন। এর ভেতরে আবার জাতীয়তাবাদী চেতনাও প্রবেশ করিয়ে দেন মানূষের মধ্যে এই বলে যে নিয়ত গুনে ঘরে বসেই পূণ্য অর্জন করা সম্ভব এবং ঝামেলা মুক্তি চাইলে যেন স্বদেশী মুরশিদ ধরেন।

“মক্কা মদীনা যাও বাগদাদ আজমিরে যাও 

যাওরে যাও পাপের বোঝা ধুইতে যাও 

সামর্থ না হয় যদি মাইজভাণ্ডারে আয় 

গরীবের দুঃখ বুঝে মাওলানায়।।

ধন শক্তি কমতি হইলে হইসনে পেরেশান 

মনশক্তির ওজনভারে খুশি মেহেরবান

নিয়ত গুনে সওয়াব হাসিল ঘরে বসে করা যায় 

সদয় হইলে আমার বাবা গাউছে ভাণ্ডারী 

স্বপ্নে তোরে দিবেন ডেকে গমনের গাড়ি 

খরচ বিনে তীর্থে যাবি কেরামতির ইশারায়।। 

ভিসা কাষ্টম ইমিগ্রেশন মারায় চোখের নিদ 

ঝামেলা মুক্তি চাইলে ধর স্বদেশী মুরশিদ

হাতের কাছে খোদার অফিস মহি থাকে নিঃচিন্তায়।।”

এই ভাবে মাইজভাণ্ডারের সাধারণ একজন ভক্ত মহিউদ্দিন ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সকল ভক্তের কণ্ঠস্বর – মানব মুক্তির মারফতী কন্ঠ। আজীবন নির্বিবাদী এই লোক সমানভাবে চর্চা করে গিয়েছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান এবং মারফতি মাইজভাণ্ডারী গান। চট্টগ্রামের ভাষায় প্রথম মাইজভাণ্ডারী গানও সৈয়দ মহিউদ্দিনের হাতেই রচিত হয়। তিনি যখন যে গানই রচনা করেছেন, তা সে মাইজভাণ্ডারী গান-ই হোক কিংবা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান-ই হোক! সর্বত্র তিনি প্রকৃত-প্রস্তাবে মানুষের এবং মনুষ্যত্বের জয়গান গেয়েছেন, মানুষের মঙ্গল কামনা করেছেন। এখনো কাতালগঞ্জের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে আমার কান খাড়া হয়ে থাকে কখন কোনদিক থেকে মহি ভাই ডেকে উঠবেন – “মঙ্গল মঙ্গল”। 

আমিও মহি ভাইয়ের কন্ঠ মিলিয়ে মানবজাতির শত-কোটি বর্ষের অগ্রযাত্রার শান্তিকামী প্রতিটি মানুষকে বলতে চাই – “মঙ্গল মঙ্গল’। মহি ভাই আপনাকেও হাত জোড় করে বলছি, “মঙ্গল মঙ্গল”।  

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত