Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

ম্যামথ : রোমশ হাতি

Reading Time: 3 minutes

ম্যামথ (বৈজ্ঞানিক নাম : Genus Mammuthus), প্রায় দশ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া হাতির একটি প্রজাতি, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা বাদে পৃথিবীর সব মহাদেশে এদের দাপুটে বিচরণ ছিল। দশ হাজার বছর আগে সর্বশেষ বরফ যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এদেরও বিলুপ্তি ঘটে। সাইবেরিয়ার চির বরফ আচ্ছাদিত ভূমিতে প্রাপ্ত ফসিল এদের গঠন এবং আয়তন সম্পর্কে আমাদের বিশদ ধারণা দিয়েছে। ম্যামথের দাঁত যা স্বর্ণের চেয়ে দামি, মধ্যযুগে প্রচুর পরিমাণ সাইবেরিয়ার ফসিলগুলো থেকে সংগ্রহ করে চীন এবং ইউরোপে পাচার করা হতো। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ম্যামথদের একটি ছোট গোষ্ঠী ১০৫০০ থেকে ৭৬০০ বছর আগে পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় টিকে ছিল। এই যুক্তির পক্ষে অনেক দৃষ্টান্তও আছে।


পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পাহাড়ের গুহায় আদিম মানুষদের যেসব চিত্রাঙ্কন পাওয়া যায়, তাতে ম্যামথদের সম্পর্কে জানা যায়। অনেক সময় ম্যামথরা বরফের খাঁজে আটকা পড়তো এবং বরফের নিচে চাপা পড়ে যেত। হিমশীতল বরফের নিচে তাদের দেহ প্রায় ত্রিশ হাজার বছর পর্যন্ত ভালভাবে সংরক্ষিত থাকত। প্রমাণ পাওয়া যায়, মধ্যযুগে স্লেড কুকুরদের অনেক সময় হিমায়িত ম্যামথদের মাংস খাওয়ানো হতো।

ম্যামথদের অনেকগুলো প্রজাতি ছিল। বেশিরভাগ ম্যামথরাই ছিল আধুনিক হাতিদের সমান বড় দেহ বিশিষ্ট। উত্তর আমেরিকার ম্যামথরা উচ্চতায় প্রায় ১৪ ফুট পর্যন্ত হতো। সব ম্যামথদের লম্বা লম্বা লোম না থাকলেও এদের কিছু প্রজাতির দেহ ১ থেকে ২০ ইঞ্চি পুরু হলুদাভ খয়েরি রঙের লোম দারা আচ্ছাদিত থাকত। মারাত্মকভাবে পুরু ত্বকের নিচে এদের ৩ ইঞ্চি পুরুত্ব বিশিষ্ট চর্বির আবরণ ছিল যা তাদেরকে বরফ যুগের হিমশীতল ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতো। আধুনিক হাতিদের সাথে এদের সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা হলো, এদের কান বর্তমান হাতিদের তুলনায় অনেকটাই ছোট ছিল। বরফ যুগের হিমশীতল ঠান্ডায় ছোট কান থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, বড় কান মানেই বেশি পরিমাণ চামড়া বাতাসের সংস্পর্শে আসা এবং বেশি পরিমাণ তাপ বাতাসে চলে যাওয়া।

যদি আপনি “10000 BC” সিনেমাটি দেখে থাকেন তাহলে আপনি অন্ততঃ পর্দায় হলেও এদের দেখেছেন। আর এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে আদিম মানুষেরা খাদ্য এবং চামড়ার জন্য ম্যামথদের শিকার করতো। তবে, শিকার করার ফলে যে এদের বিলুপ্তি ঘটেনি তা এখন বিজ্ঞানীদের কাছে পরিষ্কার। দশ হাজার বছর আগে বরফ যুগের যখন হঠাৎ সমাপ্তি ঘটে, হিমশীতল পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত অধিকাংশ প্রাণীই তখন চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবী থেকে।

সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা রোমশ ম্যামথদের ফসিল থেকে প্রাপ্ত DNA -এর সাথে এশিয়ান হাতির DNA-এর মিশ্রণে সফলতা অর্জন করেছেন। এশিয়ান হাতিরা বর্তমানে টিকে থাকা হাতিদের মধ্যে ম্যামথদের সবচেয়ে নিকটতম প্রজাতি। তারা আশা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এই আইকনিক প্রাণীটিতে পৃথিবীতে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। যদিও বিষয়টিতে তে অনেক দিক থেকেই নৈতিক বাধা আছে। অনেকে বলছেন, এদের যদি পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়, তবে সাইবেরিয়ার পরিবেশে এদের টিকে থাকার আশা করা যায়, যা সাইবেরিয়ার বাস্তুসংস্থান এর জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে।


কিন্তু, যেখানে আমরা আমাদের বিদ্যমান প্রাণীদের সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে এতো অর্থ ব্যয় করে এদের ফিরিয়ে আনার কোন যৌক্তিকতা আছে কী? তার চেয়ে বরং এসব অর্থ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের রক্ষায় ব্যয় করা হোক।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>