Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Manindra Gupta

মণীন্দ্র গুপ্তকে নিয়ে শংকর লাহিড়ীর ছবি: অফুরন্ত মালবেরি

Reading Time: 2 minutes


কবি মণীন্দ্র গুপ্তর শৈশব কেটেছিল অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশাল জেলায়। স্কুলের শিক্ষা তিনি সমাপ্ত করেন অসমের শিলচরে এবং কলকাতায়। শিক্ষাশেষে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেশ কিছু কাজ করেন তিনি। পরে কলকাতা ফিরে মেশিন ডিজাইনের কাজে যোগদান করেন।

অনেকেই মনে করেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলা কবিতার জগতে মণীন্দ্র গুপ্তর প্রভাব অপরিসীম। তাঁর দীর্ঘ রচনাগুচ্ছর মধ্যে বিশেষ ভাবে আদৃত হয়েছিল চাঁদের ওপিঠ, অক্ষয় মালবেরী প্রভৃতি।

২০০৫ সালে ‘টুং টাং শব্দ নিঃশব্দ’-র জন্য পেয়েছিলেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ২০১০ সালে তিনি বাংলা আকাদেমির সম্মানে ভূষিত হন।

মণীন্দ্র গুপ্ত, ‘অক্ষয় মালবেরি’ নামে যে জীবনী গ্রন্থটি লিখেছিলেন তাকে সচরাচর লিখিত জীবনী গ্রন্থের নিয়মিত ছাঁচে ফেলার উপায় তিনি রাখেন নি। এই আকরগ্রন্থটি আক্ষরিকই আকর। ম্যাজিকের তুকতাকের মতো বিশেষ কিছু। এর গাম্ভীর্যে, এর অঙ্গসৌষ্ঠবে কোনো ভারিক্কি ভাব নেই রয়েছে পীতচন্দনের মতো শোভা, যেটি বড়োই মনোহর।

এক.

শরীর কি বস্তু, সেই যৌবনে টের পেয়েছিলাম, আর এখন বার্ধক্যে টের পাই- নদীকে মাঝিরা যেমন টের পায় জোয়ার আর ভাটায়।
মৃত্যুর পরে শ্মশানে বসে হয়তো দেখব শরীর ফিরছে তার অঙ্গারে, জলে, ধাতুতে, লবণে। আর তার সূক্ষ্ম বিদেহ আভা চলে যাচ্ছে আকাশে- অালো মেঘ আর শান্তির দেশে। শরীর তো যা পেয়েছিলাম তাই ছিল, কিন্তু অস্তিত্বের ঐ বিদেহ আভা আমিই দিনে দিনে তৈরি করেছিলাম বই পড়ে, ছবি দেখে, গান শুনে।

দুই.

মানুষী স্মৃতিই মানুষ। স্মৃতিই জটিলতা। মরণের পরে আমাদের যে নির্বাণ হয় না সে কেবল স্মৃতি আছে বলেই না। পুনর্জন্ম সবচেয়ে বড় ম্যাজিক- ধুয়ে মুছে সব পরিষ্কার করে দেয়। জাতিস্মর হলে জন্মক্ষণের দু:খ আর জানার ভার বইতে হত। অল্প লইয়া থাকি, তাই বেঁচে থাকি। কিন্তু অনেকদিন বেঁচে থাকার ফলে আমার মধ্যে জাতিস্মরতা এসে যাচ্ছে। পুরনো রঙ্গমঞ্চে রঙ্গ নিজে-নিজেই আবার গাঢ় হয়ে উঠেছে।

তিন.

সেই বয়সে, এসব আমি স্পষ্ট করে বুঝি না, শুধু বোধের গোধূলিতে দ্বিতীয়বার চাঁদের ধূসর সোনার অবছামতো রেখায় কত লেখা পড়ে। মন সুখ আর বিষাদে দু ভাগ হয়ে চিরে যায়। অনুভূতির চাপে আমি জলের মধ্যে মাছের মতো স্থির হয়ে ডুবতে থাকি, আবার কখনো আঁকুপাঁকু করে উঠি- মহামৎস্যের মতো ঘাই মারতে চাই অনন্তে।

চার.

কালপ্রবাহ এক অদ্ভুত জোড়া শব্দ। কোনোদিন এই নশ্বর তেতলার বারান্দায় বসে দূরের সান্ধ্য লাল মেঘ দেখতে দেখতে সাময়িক বোধিলাভ হয়। ভাবি, কাল বলে কিছু নেই, আছে শুধু প্রবাহ। সর্বপ্রকার অস্তিত্ব নিজধর্মেই রূপান্তর পায়। এই তো চোখের সামনে দেখছি, সবাই, সবাইকে পালটে দেয়-সূর্যডোবা আলো মেঘকে পালটে দিয়েছে, লাল মেঘ বিকেলকে পালটে দিল, বিকেলে ব্রহ্মাণ্ড আমাকে পালটে দিচ্ছে। সবাই সবাইকে পালটে দিচ্ছে-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার মতো, সবাই মিলে উৎসবে মাতবার মতো।

পাঁচ.

বাতাসের করতালি, মাতলামো, উচ্ছ্বাস এসব ভাসমান সস্তা শব্দে কি করে বোঝানো যাবে সেই অনিবর্চণীয় গভীরকে। এইসব আচম্বিত শব্দ আর পলকদৃশ্য হঠাৎ হঠাৎ জানিয়ে দেয়, এই পৃথিবী কিসের মর্মর।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>