| 18 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত গল্প গল্প সম্পাদকের পছন্দ সাহিত্য

সন্তান I সা’দত হাসান মান্টো

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমালোচিত ও পঠিত উর্দূ গল্পকার সা’দত হাসান মান্টো। জন্ম ১১ মে ১৯১২ লুধিয়ানা, পাঞ্জাবে। বসবাস করেছেন অমৃতসর, আলীগড়, দিল্লী, বোম্বে ও লাহোর। মূলত ছোট গল্পের কিংবদন্তীরূপেই বেঁচে আছেন উর্দূ সাহিত্যে। তার লেখা দেশভাগের গল্পগুলো এখনো তুমুল জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। মূলত আত্ম-জিজ্ঞাসা, দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও প্রশাসনের খামখেয়ালি এসব তাকে তাড়িত করেছে যথাযথভাবে। তাই তার অধিকাংশ গল্প, নিছকই কোন আনন্দের জন্য নয় বরং তা যেন প্রচ্ছন্ন সত্য প্রতিবাদ। তার বোধ ও চিন্তা থেকে বহুদূর পিছিয়ে থাকা সমাজ ও সে সমাজের বুদ্ধিজীবীরা তৎকালে যা প্রচার করেছিল ‘অশ্লীলতা’ ও নষ্ট সাহিত্য বলে। কালেকালে তাই এখন শ্লীল ও আমাদের যাপিত জীবনের প্রোথিত সত্য বলে উন্মোচিত হচ্ছে। আর ‘মান্টো’ হচ্ছেন সার্বজনীন।
‘সন্তান’ গল্পটি লেখকের মূল উর্দূ শ্রেষ্ঠ একশো গল্প সংকলন থেকে নেয়া হয়েছে। অনুবাদক: কাউসার মাহমুদ


 

যাবিদার যখন বিয়ে হয় তখন তার বয়স পঁচিশ। বাবা-মা তো চেয়েইছিলেন সতের বছর বয়সেই মেয়ের বিয়ে হোক। কিন্তু সবদিক মিলিয়ে উপযুক্ত কোন পাত্রই মিলতো না। সময়ে যদিও কোথাও কথাবার্তা হতো, পরে এমন এক সমস্যা তৈরী হতো যে, সম্বন্ধ আর সামনেই এগুতো না। সমস্ত আয়োজন ভজঘট হয়ে কোন না কোনভাবে ভেস্তে যাবে।

এই করে যাবিদার বয়স পঁচিশে পৌছলে তার বাবা এক বিপত্নীকের সঙ্গে তার সম্বন্ধ ঠিক করেন। সে লোকের বয়স পঁয়ত্রিশের আশেপাশে তো হবেই। তার চেয়ে কিছু বেশীও হতে পারে। রোজগেরে পুরুষ। মার্কেটে কাপড় ও বিছানাপত্তরের বড়সড় দোকান। প্রতি মাসে পাঁচ ছ’শো টাকা অনায়াসেই কামায়।

যাবিদা একান্ত অনুগত স্বভাবের মেয়ে। সে তার পিতামাতার পছন্দকে গ্রহণ করে। বিবাহ হয় এবং তার শ্বশুরালয়ে চলে যায়।

তার স্বামীর নাম ইলমুদ্দীন। নিপাট ভদ্রলোক ও অসম্ভব প্রেমিক গোছের মানুষ। যাবিদার সবরকম প্রয়োজনের দিকেই তার যথেষ্ট খেয়াল। কাপড়চোপড়ের কোন কমতি নেই যাবিদার। গয়নাগাটি ও তার যাবতীয় জিনিসে পড়শীদের কারো কারো হিংসেও হতো বটে। তাছাড়া নগদ চল্লিশ হাজার টাকা ও দুই ঘোড়ার বোঝা সমেত থানের পর থান কাপড় তার কাছে মজুদ।

প্রতি সপ্তাহে নিয়মকরে পিত্রালয়ে যায় যাবিদা। হঠাৎ একদিন বাড়িতে গিয়ে দেউড়িতে পা রাখতেই গোঙানির শব্দ শুনে। ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারে পিতার হৃদকম্পন বন্ধ হওয়ায় ইহকাল পারি দিয়েছেন তিনি।

এখন যাবিদার মা একদম একলা। সারা বাড়িতে নওকর ছাড়া একটি প্রাণীও নেই। তাই যাবিদা তার বিধবা মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে স্বামীর কাছে অনুমতি চায়।

ইলমুদ্দীন হেসে বলে, অনুমতি নেয়ার কি আছে! এটা তোমার ঘর। আর তোমার মা-তো আমারই মা। যাও উনাকে নিয়ে আসো। যেসব জিনিসপত্রের প্রয়োজন তা আনার ব্যবস্থা করছি আমি।

যাবিদা যারপরনাই খুশী। ঘর বেশ বড়। দু’তিনটে রুম সবসময়ই খালি পড়ে থাকে। দেরী না করে ওইদিনই সে টাঙায় করে মাকে নিয়ে আসে। ইলমুদ্দীন মায়ের দরকারী জিনিসপত্র উঠানোর ব্যবস্থা করে সেও পৌঁছে যায়। সব ঠিকঠাক করে যাবিদা মায়ের জন্য অনেক ভেবেচিন্তে একটি কামরা নির্দিষ্ট করে।

তিনি অনবরত কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন। এমনিতেই জামাইয়ের মিষ্টি ব্যবহারে সে অসম্ভব প্রভাবিত। তার মনে কয়েকবার এমন ভাবনাও এসেছে যে, নিজের কয়েকহাজার টাকার গয়নাগুলো জামাইকে দিয়ে দেবে। তা ব্যবসায় খাটালে বেশি কামাতে পারবে। কিন্তু ভাবনায় হবে কী! আদতে তিনি ছিলেন গোড়া কৃপণ।

একদিন তিনি তার মেয়েকে বলেন- ‘এখানে এসেছি তা দশ মাস তো হয়ে গেল। অথচ ঠোলা থেকে এক পয়সাও খরচ করলাম না। তোমার মরহুম পিতার রেখে যাওয়া দশ হাজার টাকা আমার কাছে আছে। আর গয়না তো আলাদাই।

যাবিদা আংটির খোলে পাথর ঘষে ঘষে পরিস্কার করতে করতে বলে, ‘মা তুমিও না কেমন কথা বলো!’
কি বলি না বলি তা জানি না বাপু।.. এসব টাকা আমি ইলমুদ্দীনকে দিয়ে দেব। কিন্তু আমি চাই তোমার একটা সন্তান হোক। তাহলে এসব তাকে উপহার হিসেবে দেয়া যাবে।

যাবিদার মা দিনমান খুব ভাবতো; এখন পর্যন্ত কেন যাবিদার বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে না! বিয়ে হয়েছে তা প্রায় দু’বছর হয়েই গেল। অথচ সন্তান হবার কোনও আলামতই দেখা যাচ্ছে না।

ইতোমধ্যে যাবিদাকে তিনি ক’জন হেকিমের কাছেও নিয়ে গেছেন। বেশ কিছু উত্তেজক,অপাংক্তেয় নানারকম গোটকাও খাইয়েছে। কিন্তু এতোকিছুতেও ফলাফল যেন শুন্যই। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

শেষমেশ তিনি পীর ফকিরের শরণার্থী হয়ে যাবিদার জন্য বিভিন্ন রকমের টোটকা গ্রহণ শুরু করেন। তাবিজা-তাগা নেন। তবুও কোন ফল আসে না। এতে একসময় হাঁপিয়ে উঠে যাবিদা। বিরক্ত হয়। একদিন সে অতিষ্ঠ হয়ে মা’কে বলেই বসে-মা! ছাড়ো তো এই কেসসা। বাচ্চা না হয় না হোক।

তার বুড়ো মাতা মুখ কালো করে বলে, মা! এ অনেক বড় বিষয়। তুমি বুঝতেই পারছো না কি হয়ে গেছে! তুমি এটাও জানোনা যে সন্তান-সন্ততি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর দ্বারা মানব জীবনের বাগান সুশোভিত হয়। পূর্ণ হয়।

যাবিদা আংটি রেখে বলে, ‘আমি কি করবো! বাচ্চা না হলে এখানে আমার কি দোষ।’

বৃদ্ধা বলেন, দোষ কারোই না মা। শুধু কেবল আল্লাহর কৃপা প্রার্থনা করো। যাবিদা হাজার কোটি’বার আল্লাহ মিয়ার কাছে কেঁদেকুটে প্রার্থনা করেন, তিনি যেন তার কোলটা ভরে দেন। কিন্তু তার এতশত প্রার্থনা-আর্জিতেও কিছুতেই কিছু হয় না। যখন তার মা রোজ সন্তান জন্মের ব্যাপারে কথা বলা শুরু করলো, তখন তার মনে হলো সে যেন শুষ্ক নিষ্ফলা অনুর্বর এক ভূমি। যেখানে কোন উদ্ভিদ বা তৃণ জন্মাতে পারে না।

এরপর থেকে রাতে সে অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। বিরাট বিরাট উষ্ট্রি মত করে একেকটি পুতুল তার স্বপ্নের ভেতর ঠায় বসে থাকে। কখনো আবার দেখতো সুবিশাল এক প্রান্তরে সঙ্গীহীন নির্লিপ্ত দাঁড়িয়ে আছে সে, আর তার কোলে নাদুসনুদুস গোল এক শিশু। হঠাৎ বাতাসে এমন তীব্র বেগে লাফিয়ে ছুঁটে যে, আসমানে অদৃশ্য হয়ে যায়।

কখনো আবার দেখতো, ছোটছোট কোমল শিশু বাচ্চাদের তাজা মাংস আর হাড্ডি-গুড্ডিতে তৈরি বিছানায় সটান শুয়ে আছে সে।

এমনসব স্বপ্ন দেখে দেখে ক্রমশ ভারসাম্যহীন হয়ে যায় যাবিদা। বসে থাকলে কানে লাগাতার শিশুদের কান্নার আওয়াজ আসে। তাই সে তার মাকে বলে, ‘দ্যাখো তো মা! কার বাচ্চাটা অমন কাঁদছে!

তার মা-ও গভীরভাবে সে অদৃশ্য কান্নার আওয়াজ শোনার চেষ্টা করতো। যখন কিছুই শুনতো না, তখন বলতো- কই না তো। কান্নার কোনও আওয়াজই নেই এখানে।

‘না, মা! কাঁদছে তো। কেঁদে কেঁদে কেমন ক্লান্ত হয়ে গেছে বেচারা।’
মা বলতেন, হয়তো আমি বধির হয়ে গেছি, নইলে তোমার কানে কিছু বাজছে। যাবিদা চুপ মেরে যায়। কিন্তু সেই অদৃশ্য কান্না ও হাঁপিয়ে ওঠার শব্দটি ক্রমাগত তার কানে বাজতেই থাকে। সেসাথে কয়েকবার এমনও মনে হয়েছে যে তার বুক থেকে দুধ গড়িয়ে পড়ছে। এ গোপন কথাটি সে তার মাকে বলেনি। এরপর যখনই সে ভেতরে তার রুমে একটু বিশ্রামে গিয়েছে, জামা উঠিয়ে দেখে তার বুকের স্তন দুটো উত্থিত।

শিশুর কান্নার আওয়াজ এখন তার কানে তপ্ত শিশার মত অনুভূত হতে থাকে। যেন সবকিছু স্তব্ধ করে পৃথিবীর সমস্ত বিস্বাদ, বিরক্তি ঢেলে দেয়া হচ্ছে তার কানে। তবে সে বুঝতে পারে, এ সবকিছু তার মৌন ধারণা মাত্র। বাস্তবতা হলো তার মন ও মগজে অনবরত একই হাতুরেপেটা হতে থাকে যে, তার সন্তান কেন হয় না! আর সেও বড় করুণ ও কঠিনভাবে এই অদৃশ্য কষ্টের খেলা অনুভব করতে থাকে। যা কোন বিবাহিত মেয়ের জীবনে না হওয়াই প্রার্থনা।

এখন সে একেবারেই উদাসীন হয়ে পড়েছে। পাড়ায় শিশুরা খেলাধুলা বা শোরগোল করলেই তার কানে সে আওয়াজ ফাটতে থাকে। ইচ্ছে করে বেরিয়ে সবগুলো বাচ্চার গলা টিপে ধরে। অথচ তার স্বামী ইলমুদ্দীনের বাচ্চাকাচ্চার কোন চিন্তাই নেই। সে তার ব্যবসাতেই মগ্ন। তার ধ্যানজ্ঞান ওখানেই। তেজারতে কাপড়ের আইটেম দিনকেদিন বেড়েই চলছে। তাছাড়া লোকও যেহেতু বেশ চৌকস তাই কাপড়ের বেশ ক’গাইড আগে থেকেই মজুদ করে রাখায়, এখন তার আমদানি মাসেমাসে তরতর করে দ্বিগুণ বেড়ে চলছে।

অথচ স্বামীর ব্যবসায় ওসব আমদানি আর বহুলাভে যাবিদার কোন আনন্দ নেই। যখন তার স্বামী নোটের বান্ডেল এনে তার কাছে দিত, নিজের ঝোলায় রেখে অনেকসময় ধরে তা নাড়াতো সে। তারপর উঠিয়ে আনমনে কোন এক পাত্রে ফেলে রাখতো।

ইলমুদ্দীন একদিন দেখে, যেসব নোটের গোছা স্ত্রীর কাছে সে এনে দিত, তার একটি দুধের পাত্রে পড়ে আছে। সে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়; এটা এখানে এলো কি করে?
সুতরাং যাবিদাকে সে জিজ্ঞেস করে, ‘দুধের পাত্রে টাকাগুলো ফেলেছে কে?’
যাবিদা বলে, ‘ছেলেটা খুব দুষ্ট! এ কাজ নিশ্চয় ওর’ই।’
ইলমুদ্দীন স্তম্ভিত হয়ে যায়-‘আরে এখানে বাচ্চা আসলো কোত্থেকে?’
যাবিদা ততোধিক আশ্চর্য হয়ে বলে, ‘কি বলেন! আমাদের এখানে কি বাচ্চা নেই?..আপনিও না কেমনসব কথা বলেন!..এখনই স্কুল থেকে আসবে ও। আসলে আচ্ছা করে ধরবো, কে করেছে এই কাজ!’

ইলমুদ্দীন বুঝে ফেলে তার স্ত্রীর বোধ ঠিক নেই। অদৃশ্য সন্তানের ভাবনায় ধীরেধীরে এমন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে সে। বহুকষ্টে এ কথা চেপে যায় ইলমুদ্দীন। শ্বাশুড়িকে বলে না। কারণ তিনি মানসিকভাবে খুবই দুর্বল।

মনে মনে যাবিদার এমন অবস্থায় গভীর আফসোস করে ইলমুদ্দীন। কিন্তু তার কোন সুচিকিৎসা সে পাচ্ছিলো না। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে এ নিয়ে পরামর্শ করলে কেউ কেউ তাকে পাগলাগারদে রেখে আসার পরামর্শ দেয়। অথচ এ কথা চিন্তা করলেই তার ভয় হয়।

এদিকে সে দোকানেও যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে আজকাল।
দিনভর ঘরে বসে যাবিদার দেখভাল করে। যেন একাকী ঘরে থেকে অহেতুক কোন গন্ডগোল বা ভুলচুক করে না বসে।

সমস্ত সময় পাশে পাশে থাকায় আগের চেয়ে যাবিদার অবস্থা কিছুটা ভালো হয়। তবে এরমাঝে তার এ চিন্তা ঠিকই ছিলো যে দোকান দেখছে কে? যাকে বসিয়ে রেখেছে সে না আবার সব লুটেপুটে ঠকিয়ে দেয়। তাই সে বারকয়েক স্বামীকে বলেছেও-‘দোকানে যাওনা কেন?’
ইলমুদ্দীন স্ত্রীকে বলে- ‘জানম! কাজ করে করে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাই কয়েকটা দিন একটু আরাম করছি।’
‘তা দোকান ছেড়ে এসেছো কার হাতে?’
মীর আনওয়ার আছে।.. ওই’ই সব দেখাশোনা করে।
‘বিশ্বস্ত কী?’
‘হ্যাঁ। হ্যাঁ। খুবই বিশ্বাসী লোক। পইপই হিসেব বুঝিয়ে দেয়। তুমি ও নিয়ে মাথা ঘামিওনা।’

যাবিদা খুব গম্ভীর হয়ে ভেবে বলে, কেন মাথা ঘামাবো না। বাচ্চাকাচ্চা তো আছে নাকি! আমার তো কোন চিন্তা নেই, কিন্তু ওদের কথা তো ভাবতে হবে, না!.. আপনার নওকর যদি টাকা নিয়ে ভেগে যায়, তখন বুঝবেন বাচ্চাদের…!

ইলমুদ্দীনের চোখে জল এসে যায়। ‘যাবিদা শোনো…তাদের মালিক আল্লাহ। তাছাড়া আমার নওকর বড় বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন। তোমার অত ভাবতে হবে না। সন্দেহের কোন কারণ নেই।’
‘আমার তো কোন সন্দেহ নেই’ কিন্তু কিছু সময় মা-কে সন্তানের ব্যাপারে ভাবতে হয়।’

ইলমুদ্দীন গভীর পেরেশানিতে হাবুডুবু খায়, কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারে না। যাবিদা দিনভর আপনমনে কথা বলে আর বাচ্চার কাপড় সেলাই করে। তার মোজা ধোয়। তার জন্য শীতের সুয়েটার বুনে। কয়েকবার স্বামীকে বলে-নানা সাইজের ছোটছোট জুতোও খরিদ করিয়ে এনেছে। যেগুলো নিত্য ভোরে সে পালিশ করে।

ইলমুদ্দীন এসব কিছু দেখতো আর তার হৃদয় অনবরত কাঁদতো৷ সে ভাবতো হয়তো তার কোন পাপের শাস্তি তার স্ত্রী এভাবে ভোগ করছে। কি গুনাহ তা! তার ইলম ইলমুদ্দীনের ছিলো না।

একদিন তার এক বন্ধু তার সঙ্গে সাক্ষাত করে। সে ছিলো খুবই চিন্তিত। ইলমুদ্দীন এর কারণ জানতে চাইলে বলে, এক মেয়ের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক হলে এখন সে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। বাচ্চা ফেলে দেয়ার সমস্ত পদ্ধতিই গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। ইলমুদ্দীন তাকে বলে, দ্যাখো। বাচ্চা ফেলে টেলে দেবার চেষ্টা করো না। বাচ্চা হতে দাও।’

তার বন্ধুটি, যার এ অনাগত সন্তানের প্রতি কোনরূপ আগ্রহই ছিলো না। নির্জীব কণ্ঠে বলে, বাচ্চা দিয়ে করবোটা কী?
‘আমাকে দিয়ে দিও।’

বাচ্চা হতে কিছুদিন বাকী ছিল। এসময় ইলমুদ্দীন তার স্ত্রী যাবিদাকে একরকম বুঝিয়ে ফেলেছে যে সে গর্ভবতী। আর একমাস পর তার বাচ্চা হবে।
যাবিদা বারবার বলতে থাকে, ‘আমার আর এখন বেশী বাচ্চার দরকার নেই। পূর্বেরটাই কম কিসে?
ইলমুদ্দীন নিশ্চুপ হয়ে থাকে।
ইতোমধ্যে তার বন্ধুর প্রেমিকার একটি ছেলে সন্তান হয়। সে তা যাবিদার কাছে নিয়ে আসে। যাবিদা তখন ঘুমে। ইলমুদ্দীন বাচ্চাটিকে তার পাশেই শুইয়ে দেয়। এবং একটু পর জাগিয়ে বলে, ‘যাবিদা আর কতকাল এভাবে বেহুশ থাকবে। দেখো! তোমার পাশে কে?

যাবিদা পার্শ্ব বদল করে দেখে তার পাশে ফুটফুটে একটি শিশু। কি সুন্দর হাত পা নাচাচ্ছে!
ইলমুদ্দীন তাকে বলে- ছেলে হয়েছে। এখন আল্লাহর অশেষ দয়ায় আমাদের পাঁচ পাঁচটি সন্তান হলো।
যাবিদা উৎফুল্ল হয়ে বলে- ‘এই ছেলে কখন হলো?’
‘ভোর সাতটায়।’
‘আর আমি তা জানলামই না!..মনে হয় ব্যাথায় বেহুশ হয়ে গিয়েছিলাম, তাই না?
হ্যাঁ। এমন কিছুই হবে’ ইলমুদ্দীন বিড়বিড় করে বলে। যাক এখন আল্লাহর ফযল ও করমে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

পরদিন ইলমুদ্দীন যখন তার স্ত্রীকে দেখতে যায়- দেখে সে রক্তে রঞ্জিত। তার হাতে ঘরে রাখা ধারালো ছুরি। ওটা দিয়ে সে তার বুক ফেঁরে ফেলেছে।
ইলমুদ্দীন চিৎকার দিয়ে তার হাত থেকে ছোড়া ছিনিয়ে নেয়- ‘এ কি করেছো তুমি?’
যাবিদা তার পাশে শোয়ানো বাচ্চাকে দেখিয়ে বলে- ‘সারারাত কেঁদেছে ও। কিন্তু আমার বুকে দুধই আসছে না। অভিসম্পাত এর উপর।’
তারপর সে আর কিছু বলতে পারেনি। রক্ত বিধৌত একটি আঙুল তার পাশে শিশুটির ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে দেয়। এবং চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে।

 

 

 

 

 

 

কৃতজ্ঞতা: বিডি টুয়েন্টিফোর ডট কম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত