| 16 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

গল্প: মারমেইড ও একটি অবিশ্বাস্য রাত । রেহানা বীথি

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

রিকশা ছুটছে। দু’পাশ দিয়ে হাওয়াও ছুটছে ফুরফুর করে। আরও কত কী ছুটছে! অটো, কার, ট্রাক, বাস, মানুষ…

রিকশার সিটে বসে আছি, অথচ আমার মনও তো ছুটে চলেছে সমান তালে। এখন রাত আটটা, তাতে কী? মন উড়তে পারে যথা-তথা, যখন-তখন। যুবক রিকশাওয়ালা বলেছিল, “আফা, হুড তুইলা দিই, রাইতের কালে একলা তো!”

বলেছিলাম, “আরে বাদ দাও। আজ আমার মন উড়বে ভেবেছে। একলা-ট্যাকলা কোনও ব্যাপার না! জোরে চালাও… জোরে…!”

রাইতের কালে একলা মেয়েমানুষের মুখে এমন কথা বোধহয় ছোকরা জীবনে শোনেনি। অবাক হল। অবাক হয়েই ছুটল।

আমার মন ছুটছে, তার একটা খুব জুতসই কারণ আছে। মাইনে পেলাম আজ। অনেকগুলো কড়কড়ে হাজার টাকার নোটের একটা বান্ডিল যখন হাতে এল, বেশ অনেকক্ষণ থম মেরে বসে থাকলাম নিজের ডেস্কে। তখন বিকেল। তারপর বিকেল শেষ হয়ে গেল। সন্ধে হল। আমি বসেই থাকলাম। একসময় অফিসের পিয়ন এসে বলল, “আফা, বাড়ি যাইবেন না, রাইত লাগবার ধরছে তো!” আমার হুঁশ হল। ধন্ধ কাটিয়ে উঠে বেরোলাম। আর তখনই আমার মনে হল, ভীষণ বেগে ছুটতে ইচ্ছে করছে। ছোটার তুমুল ইচ্ছে নিয়ে রাস্তায় নেমে এককাপ চা খেলাম এবং বাড়ি ফেরার কথা ভুলে গেলাম। এক মমতাময়ী ভদ্রমহিলা যে আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছেন, তা-ও ভুলেই গেলাম।

মাইনে, জীবনের প্রথম মাইনে। এত সুখ… এত আনন্দ! এর মাঝে ফোন বাজছে কেন? কেন কোলের ওপর রাখা হাত ব্যাগটার ভেতর ঝংকার তুলে কেঁপে কেঁপে উঠছে নীল আলো? এই মুহূর্তে ওই যন্ত্রটা আমার কাছে চরম বেরসিক। ছুটন্ত মনকে বেঁধে ফেলতে চাইছে কথার খেলায়?

তা হবে না বাপু! ব্যাগের জিপার খোলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে এখনই নেই হে অবোধ যন্ত্র! থেমে যাও।

কিন্তু যন্ত্রটা থামছে না। বেজেই চলেছে। যুবক রিকশাওয়ালা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, “আফা ফোন ধরেন। জরুরি দরকার না হইলে কেউ এতবার ফোন করে না।”

কথা ঠিক। তবে আমাকে এমন হন্তদন্ত হয়ে ফোন করার তো একজনই আছে। জানি, সেই মমতাময়ীই। ধরতেই বললেন, “কী রে, কোথায় আছিস? এখনও বাড়ি ফিরছিস না কেন? কোনওদিন তো এত দেরি হয় না!”

“ওফ্ মা, কোনওদিন দেরি হয় না বলে কি কখনও দেরি হবে না? তুমি সবসময় একটু বেশি বেশি ভাবো।”

“ভাবি কি আর সাধে? চারিদিকে যা সব শুনি, বিপদ ওঁৎ পেতে থাকে সবখানে। তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। রাত কত হয়েছে হিসেব আছে? মেয়েমানুষের জন্যে রাত বড় ভয়ঙ্কর। অবশ্য এখন দিনও… “

ফোন কেটে দিই। জানি, না ফেরা পর্যন্ত ভদ্রমহিলা আরও বার কয়েক ফোন করবেন। ধরবো না। ছোটা শেষ হলে ঘরে ফিরবো। তার আগে তাঁর জন্যে একটা পেঁয়াজ কালারের শাড়ি কিনবো। ওই রঙে ভীষণ মিষ্টি দেখায় তাঁকে।

রঙটির কথা মনে হতেই মনে এল একটি শিউলি গাছ। মনে এল হালকা কুয়াশার ভোর। গাছের নিচে বিছিয়ে আছে কমলা রঙের ডাঁটা নিয়ে সাদা সাদা ফুলগুলো। গাছের ডালে হালকা দোল দিয়ে আরও কিছু ফুল ঝরাচ্ছেন এক ভদ্রলোক। পেঁয়াজ কালারের শাড়ি পরে টুপটুপ করে এক একটা ফুল তুলে আমার ছোট্ট হাতের মুঠো ভরে ফেলছেন ভদ্রমহিলা। আমি নাকের কাছে নিয়ে শুঁকছি আর বলছি…”খুউব মিষ্টি গন্ধ মা, তোমার মতো মিষ্টি!”

ফুল তোলা ছেড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কী আদর! তারপর ওই শাড়িটাই আমি তাঁকে বার বার পরতে বলেছি। উনি পরেছেন, আর আমি অনুভব করেছি এক অপার্থিব ভোর। একসময় বোধহয় শাড়িটা পুরোনো হয়ে পরার অযোগ্য হয়। তারপর আরও কত রঙের শাড়ি পরেছেন উনি। কিন্তু কোনও ভোর আর তেমন বোধ আনেনি। এনেছিল নিস্তব্ধতা। এক অসহনীয় নীরবতা গ্রাস করেছিল আমাকে এবং তাঁকে।

কি হয়েছিল? তা এক রহস্য।

কেন? সে-ও এক জটিল অতীত।

যে জটিলতার জট খুলতে গেলে তাঁর ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগতো। আমি চাইনি, তিনি আঘাত পান। তিনজনের জীবনে একজনকে বাদ দিয়ে আমরা দু’জন হয়ে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। আমরা ধীরে ধীরে সুখী হওয়ার পথ খুঁজে নিলাম এবং দেখতে দেখতে একসময় নীরব থেকে মুখর হতে শিখলাম। আর এখন তো একেবারে বাঁধনহারা। নদীর মতো কলকল করে বয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

আহা সুখ! নিদারুণ সুখ!

একটা ঝলমলে শপিংমল অতিক্রম করে যাওয়ার সময় রিকশার গতিরোধ করে নেমে পড়লাম। ঘড়িতে দেখলাম নটা পঁয়ত্রিশ। হয়ে যাবে। আধাঘণ্টার মধ্যে একটা পেঁয়াজ কালারের শাড়ি পছন্দ হবে না? বাড়িও এই এলাকায়। ঝটপট কিনে চটপট বাড়ি ফিরবো। যদিও কিছুক্ষণ কঠিন মুখের মোকাবেলা করতে হবে। তবে শাড়ি এবং আমার মাইনে হয়তো তাঁর মুখের কাঠিন্য দূর করবে সহজেই। অসময়ে বলিরেখা আসা শুষ্ক মুখটা আর্দ্র হয়ে উঠতেও পারে। মনে মনে সেই মুখটা কল্পনা করে আমি শাড়ি কিনে বেরিয়ে এলাম। আমাকে দেখে মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে এল যুবক রিকশাওয়ালা। আমি তো অবাক!

“এই তুমি এখনও এখানে কেন? আমি তো সেই কখন নেমে পড়েছি!” বলে কোমরে হাত রেখে কটমট করে ওর দিকে তাকালাম।

কিন্তু কী আশ্চর্য, একটুও বিব্রত না হয়ে হাসিমুখেই ও বলল, “ভাড়াডা না মিটাইয়াই চইলা গেছিলেন আফা। ভাবলাম… “

আমার মুখ-চোখের কটমটে ভাবটা মুহূর্তেই ভ্যানিশ। একটু লজ্জিতও হলাম। সেটা গোপন করতেই, কোমর থেকে হাত উঠিয়ে ওর কাঁধে একটা মৃদু চাপড় দিয়ে হেসে বললাম, “আরে, ভেবেছিলাম তোমার রিকশাতেই বাড়ি পর্যন্ত যাব। কিন্তু, এখান থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। তুমি এখন যেতে পারো।”

“তা পারি। কিন্তু এতক্ষণ বইসা থাকার পরও আপনেরে বাড়ি না পৌঁছানের আফসোস থাইকা যাইবো মনে। সেইডা কি ঠিক হইবো?”

“অদ্ভুত ছেলে তো তুমি!”

“তা কইতে পারেন। তয় আমার বাড়িও আশেপাশেই। আপনেরে আমি আগেও দেখছি। বাড়িও চিনি। তাই মনে হইলো… “

ওর কথা শেষ হতে না দিয়ে হঠাৎই উঠে পড়লাম রিকশায়। ঝলমলে মেইনরোড ছেড়ে রিকশা ঢুকে পড়লো আবছা গলির আলো-আঁধারিতে। আমার ভয় ভয় করা উচিত, কিন্তু উড়ুক্কু মন ভয়কে একেবারেই থিতু হতে দিচ্ছে না। ঠোঁট দুটোকে গোল করে শিস বাজাতে লাগলাম। পাশ দিয়ে বিকট শব্দে একটা বাইক চলে গেল। এই রস-কষহীন শহরেও কারও শখের কাঠগোলাপের মাতাল করা ঘ্রাণ ভেসে আসছে।

দশটা পেরিয়ে গেলেও লোকজনও নেহাৎ কম নয়। হাতে পেঁয়াজ কালারের শাড়ির প্যাকেট, বাঁ কাঁধে কড়কড়ে নোটের বান্ডিল নিয়ে ঝুলছে ব্যাগ। আমি যেন শূন্যে ভেসে আছি। একটা গান ধরব নাকি? ওই যে ওই রবীন্দ্রসংগীতটা… “আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা, এসো হে…”

ধুর! শিস দেয়া পর্যন্তই থাক। গান বোধহয় একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে। তাছাড়া এই চৈত্রে বাদলধারা কোথায়?

অবশ্য গলির উঁচু-নিচু বাড়িগুলোর ফাঁক গলে যে আকাশ দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে চাঁদ বেশ হেসে হেসে আমার সঙ্গে সঙ্গে চলছে। এমন হাসিমাখানো চাঁদ তো বহুবছর দেখা হয়নি! এমন নেচে ওঠা মনও বহুবছর পর পেলাম। নিজেকে মনে হচ্ছে এই চাঁদরাত এবং পথের রানী। ওই গানটা গাইলে মন্দ কী!

“চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে

উছলে পড়ে আলো… “

কিন্তু একসঙ্গে এতজনের শিস দেয়ার আওয়াজ কেন? হঠাৎ করে গলিটা একদম ফাঁকা! আনন্দে ডুবে যেতে যেতে কি আমরা ভুল কোনও গলিতে এসে পড়েছি? একটু আগেই তো অল্পস্বল্প লোকজনের চলাফেরা দেখেছি। এখন কেউ নেই। শুধু একযোগে একাধিক মুখের শিস দেয়ার আওয়াজ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে যেন অন্য কোনও ভুবনে, কোনও স্বপ্নলোকে প্রবেশ করেছি আমি। আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল। সম্মিলিত শিসের শব্দ ক্রমশ নিকটবর্তী হচ্ছে। আমার রিকশাটা কি এগোচ্ছে না? যুবক রিকশাওয়ালা তো বেশ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতেই চালাচ্ছে, কিন্তু রিকশা যেন একজায়গাতেই থেমে আছে। দূরে কোথাও কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা গেল। প্রায় সাথে সাথেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে একটা দোকানের ঝাঁপ খুলে কেউ বলে উঠল,

“আইজ আপনেগো এত দেরি হইল ক্যান ভাইজান, দূরে গেছিলেন বুঝি?”

“হ্যাঁ বসির মিয়া, একটু দূরেই যেতে হয়েছিল। চা দাও তাড়াতাড়ি।” একথা বলে শিস দেয়া দলের একজন দুটো ভারি চটের ব্যাগ এগিয়ে দিল।

বসির মিয়া নামক চা দোকানি ব্যাগদুটো নিয়ে কোথায় যেন রেখে, কেটলি চাপিয়ে চুলা ধরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। খেয়াল করলাম, আমার রিকশা সত্যি সত্যিই থেমে আছে। কেন? বুঝলাম না। রিকশাওয়ালা বলল, “আফা, চা খাইবেন? এই রাইতে চা খাইতে খারাপ লাগবো না।”

কী তাজ্জব কথা! এসব কী হচ্ছে? মনে মনে এমন ভাবনা এলেও রিকশাওয়ালার প্রস্তাব মন্দ লাগলো না। দোকানের সামনের দু’খানা বেঞ্চ অলরেডি শিস দেয়া দলের দখলে। তবুও নেমে পড়লাম রিকশা থেকে। দোকানিকে বললাম,

“দু’কাপ চা এদিকেও দেবেন।”

 


আরো পড়ুন: রেহানা বীথির গল্প: একটি ভাঙনের গল্প

দোকানি যেন মহাখুশি। কোন ঘুপচি থেকে সাঁই করে একটা টুল এনে বসতে দিল। বসলাম। বসে দুটো বেঞ্চ দখল করা দলটির দিকে মনোযোগ দিলাম। দেখি, ওরাও আমাকে দেখছে। মুখে হাসি ছড়িয়ে হাই করতেই ওরাও হাসলো। কুড়ি বাইশ বছরের কয়েকজন যুবক। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, নিজেদের ওপর বড় নির্দয় ওরা। মাথায় উসকো-খুসকো চুল। পরনের শার্ট-প্যান্ট এমনকি পায়ের কেডসও চরম অবহেলার শিকার। কিন্তু ওদের সবার মুখগুলো ঝলমল করছে। প্রত্যেকের মুখেই রয়েছে যেন এক আলাদা দীপ্তি এবং নিখাঁদ ভদ্রতা। জানতে চাইলাম, “সবাই নিশ্চয়ই বন্ধু তোমরা? কি করো?”

“ঘোড়ার ঘাস কাটি আপু!” বলে একজন হো হো করে হেসে উঠল। ওর দেখাদেখি অন্যরাও হেসে উঠল। রিকশাওয়ালা এতক্ষণ রিকশার ওপরেই বসেছিল। ওদের হাসি দেখে উৎসাহী হয়ে এগিয়ে এসে হাসিতে যোগ দিল। আমিও একটু হাসলাম বটে, তবে মুখে খানিকটা গাম্ভীর্য এনে বললাম,

“তা এই ঘাস কাটাকাটির কাজ সম্পর্কে কি একটু বিস্তারিত জানতে পারি?”

দলের একজন, যে ভীষণ রোগা আর লম্বা, সে বলল, “বলার মতো তেমন কিছু নেই আপু। লেখাপড়ার ফাঁকে আমরা সামান্য কিছু করার চেষ্টা করি, এই যা।”

বললাম, “তাই নাকি? ইশ, আমারও লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কাজ করার ইচ্ছে ছিল, জানো? কিন্তু মা কখনও রাজি হননি। অথচ টাকার কত দরকার ছিল… “

চা দোকানি বসির হঠাৎ বলে উঠল, “ট্যাকা রোজগারের লাইগা এ্যারা কুনু কাম করে না গো আফা! এ্যারা হইল গিয়া ফেরেশতা। বস্তির পোলাপানগো ল্যাহাপড়া… “

আমাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আওয়াজ তুলে চায়ে চিনি মেশাতে মেশাতে বসির মিয়া আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু ওকে থামিয়ে দিয়ে দলের বেঁটেমতো ছেলেটি হাসতে হাসতে বলল,

“বসির মিয়া আমাদেরকে ভালোবেসে যা-তা বলে ফেলে। ওর কথায় গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই আপু। আপনার কথা বলুন শুনি।”

“আরে, আমার তেমন কোনও কথা নেই! দুখিনী মায়ের সম্বল বলতে পারো। যে মা তাঁর মেয়েকে বলেন কিনা জলপরী।

আমি আবার কাউকে আপনি-টাপনি বলতে পারি না। আর তোমরা তো আমার ছোট ভাইয়ের মতোই, তাই না?”

“একদম।” বলে ছেলেটি খুব আন্তরিকভাবে হাসলো। এদিকে বসির মিয়ার চা রেডি। ট্রেতে কাপ সাজিয়ে সে পরিবেশন করতে করতে বলল,

“আইজ আমার ভাইগ্গো খুবই ভালা। ভাইজানেরা তো ছিলই, নতুন এক আফারে পাইলাম। মাঝে মইধ্যে আইসা চা খায়া যাইয়েন আফা।”

ছেলেগুলোর মুখ দেখে মনে হল, ওদেরও একই প্রস্তাব। দেখতে দেখতে আমাদের মধ্যে বেশ একটা আড্ডা জমে উঠল। কোথাকার কোন অপরিচিত কয়েকটি ছেলে আর একটি মেয়ের, গভীর রাতে একেবারে বন্ধুর মতো আচরণ যেন খুবই স্বাভাবিক। এই রাত এবং এই গলিও আমাদের স্বাভাবিক আনন্দযজ্ঞে সামিল হয়ে মুহুর্মুহু রঙ বদলাতে লাগলো। রঙ বদলাচ্ছে বসির মিয়ার একচালা চায়ের দোকানটিও। রঙের বদল ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের আড্ডায়।

আমরা গল্প করতে করতে কখনও হেসে গড়িয়ে পড়ছি, কখনও বা গম্ভীর। নিজেদের পরিচয়গুলো এই মুহূর্তে এতটাই অবান্তর যে, একবারও তা নিয়ে কেউ কাউকে প্রশ্ন করিনি।

কখন যেন খালি হয়ে গেছে সবার কাপ। আমরা বোধহয় আরও একবার বসির মিয়াকে অনুরোধ করতাম ওগুলো ভরে দিতে, কিন্তু তখনই আমার মোবাইলটা বেজে উঠল।

ভদ্রমহিলার গলায় উৎকণ্ঠার প্রবল স্রোত। এখন মধ্যরাত। এখনও কেন একজন যুবতী কন্যা বাড়ির বাইরে? অজানা আশঙ্কায় তাঁর গলা কেঁপে কেঁপে উঠল। বললাম,

“এই তো মা, এখনই ফিরছি। ভয় পেয়ো না, আমার সঙ্গে কয়েকজন ছেলে আছে।”

যেন আঁতকে উঠলেন তিনি। আমি নিশ্চিত তাঁর চোখের সামনে সিনেমার পর্দার মতো একে একে ভেসে উঠছে সব নারকীয় বিভৎসতা। যা কিনা খুব স্বাভাবিক, খুব সত্যি।

কিন্ত, আজ রাতের এই অভাবনীয় সময়টুকুও তো খুব সত্যি!

বসির মিয়াকে বিদায় দিয়ে আমরা এগোলাম। ছেলেগুলো শিস দেয়া শুরু করলো আবার। আমিও ঠোঁট মেলাতেই একজন বলল,

“গান জানেন না আপু? আকাশের ওই হাসতে থাকা চাঁদ দেখে রবি ঠাকুরের সেই গানটা শোনার ভীষণ ইচ্ছে জাগছে।”

নিঃশব্দে হেসে আমি গলা ছেড়ে গাইতে লাগলাম…

“চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে…. “

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত