মারজুক রাসেলের গুচ্ছকবিতা
আজ ১৫ আগষ্ট কবি ও অভিনয় শিল্পী মারজুক রাসেলের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
কাজি অফিস

ঝিনুক নেব না বলিনি, শামুকও নেব;
বিনিময়ে শামুক-ঝিনুক এলোমেলো
করার সাড়ে ছ’ইঞ্চি এই ছুরিটা ধারালো,
তোমাকে দেব।
যত্ন আমিই নেব- যত্ন যোগ, কামসূত্র ও বিজ্ঞানসম্মত-
তুমি শুধু মাঝেমধ্যে, সহ্যে কুলোলে প্রতিদিন
ওকে ব্যবহার করে চকচকে রাখতে সাহায্য করবে-
পুংঃ ওয়াদা?
স্ত্রীঃ ওয়াদা।

চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো
আমি ইশকুলকে নাইনে পড়াই। লাইন (প্রেম!) করার চেষ্টা বলে ‘চালিয়ে যাও’… চালাতে গিয়ে বন্ধুকে দাঁড় করিয়ে তার সাইকেল, সাইকেল-আরোহণ, লক্ষ্য রিকশা, রিকশার মেয়েটা, মেয়েটার ইশকুল, ইশকুলের গেট থেকে দারোয়ানের তেল-চকচকে লাঠি আর রাগী চোখ দেখে ফিরে আসা। লুকিয়ে ধুমপান। পয়সা অনুকূল টাকায় উত্তীর্ণ হলে সিনেমা-হল, ফারুক-ববিতা। সেলুন দেখলেই ঢুকে পড়া, চুলসহ নিজেকে আঁচড়ে নেয়া। ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’ নোটিশের পুস্তিকা দেরত দিতে যাওয়া সন্ধ্যা, সন্ধ্যামালতী। টেক্কা-সাহেব-বিবি-গোলামের ব্যবহার শেখানো বয়োজ্যেষ্ঠদের পেছনে লেগে-থাকা রাত্রি, টুয়েন্টি নাইন, কলব্রিজ, ব্রিজ… । বাকি চাইবার আগে দোকানের বেড়ায় টাঙ্গানো ‘বাকী দেয়া বড় কষ্ট, বাকিতে বন্ধুত্ব নষ্ট’- লেখাটাকে মনেমনে আবজর্না-পর্যায়ে ছুঁড়ে ফেলা। বাবার পকেট, পকেট থেকে দুচারখানা ছোট নোট সরানো, ধরা পড়ে যাওয়া, আমার উপস্থিতিতে মাকে শুনিয়ে বাবার (বড় হলে চোর হবে) ভবিষ্যদ্বাণী । … কোন বাড়ির একতলা-দোতলা-তেতলা-চারতলা-পাঁচতলার বারান্দায় দিকটায় শুকোতে দেয়া যাবতীয় নারীপোশাকে দৃষ্টি আটকানো আমার ১৭, আমার অন্যায়…
মুরব্বিস্থানীয় নিকটজনেরা বয়সকে দোষ দেয়। বয়স আমাকে পুনরায় প্রশ্রয় দিয়ে বোঝায়- ‘চাঁদ ও তার বুড়ি, দুইজনেই কলঙ্কের সমান অংশিদার।’

জয় স্বাধীনতার জয় –
স্বাধীনতা নিয়ে এখনো পক্ষ-বিপক্ষ,তর্ক-বিতর্ক,
মিছিল-মিটিং,সভা- সমাবেশ,হাতা-হাতি, মারামারি,
খুনোখুনি, থানা-পুলিশ,জেল-হাজত ,সাজা মওকুফ,
কুচকাওয়াজ,সমরাস্ত্র প্রদর্শনী,পার্টি-মদ্যপান,
দেশাত্মবোধক গান, ঘোষক- ঘোষক না, ছুটিছাটা,
মিলাদ মাহফিল, পতাকা বিক্রয়,ক্রীড়ানুষ্ঠান,
কনসার্ট,সংবাদ,পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা,
রেডিও –টিভির বিশেষ আয়োজন,ছবি অংকন, পাঠ্যপুস্তকে
ইতিহাস নবায়ন, প্রবন্ধ,কলাম,কবিতা, গল্প,
উপন্যাস, নাটক,থিয়েটার,সিনেমা ,গবেষনা…
কত না কিছুই হয় –
জয় স্বাধীনতার জয় –
স্বাধীনতায় আব্বা সরকারি মা বিরোধীদলে
স্বাধীনতায় মা সরকারি আব্বা বিরোধীদলে –
আমাদের জীবনযাপন দারিদ্র্যসীমার তলে –
… ‘দাতা গাছে তোতা পাখি’-
আর অন্যান্য আন্তর্জাতিক, স্থানীয় গাছে –
আব্বা মইরা ভুত,
মা পেত্নি হয়ে আছে ।

পুড়ে গেছে। দরোজা খুলেই তোমাকে পেলাম রান্নাঘরে প্রথম দিবস-
বলো-না জলকল্যাণ, যে-সব মাছের জন্যে সমর্পিত এই দেরি, এই পুড়ে যাওয়ার
গন্ধ, এই চারের বয়েম; টোপ আর বড়শি- ছিপের ওজনের সঙ্গে শূন্য থলের
উল্লাস, এই ‘হেঁটে যাবো-না-যানবাহনে?’- দোটানায় ভোগা, এই পথের পাশের
রেস্তোরাঁর সাইনবোর্ডে খাসি আর মোরগের পাশে মাছের ছবিকে ভালোবেসে
ফেলা, এই হাই-ইশকুলে পড়ার সময় ‘মৎস্যকুমারী’ সিনেমা দেখার কথা টিকেট
কাটার পর থেকে মনে পড়ে যাওয়া, এই জাল কোথায় বিক্রি হয় জানতে চাওয়া
– তারা অবশ্যই ধরা পড়ে যাবে ধৈর্যধারী
সুনামপ্রয়াসী মাছ শিকারির হাতে- মোড়ল
তখনই স্বপ্ন তোমাদের দেখে কলহ শিখবে রাতে।

হাতকে তালাক। যেখানে বিদ্যুৎ গেলে যাই
বৃষ্টি এলে ঠিক তার কাছাকাছি—
তারপর যদি বন্ধু কাঁচাতে লবণ ওরা,
সংসারেও দামি সব ধনবাদী সাপ—
বিক্রি, চলো সাঁকোর ওপারে বিক্রিহীনতার হাটে।
ফল—
যার কিছু ঝুঁকে-পড়া গাছ বেঁচে থাকে,
ছেলেটি ছায়ায় বসে ছেঁড়া-পাতা আঁকে।
দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর
চিহ্ন রাখে খোঁজ আয়ু কতদূর গেলে অপরাধ গড়পড়তার,
নিয়মিত শেভ— পবিত্র সেলুন,
থলেভর্তি বাজারের পুঁইশাক উঁকি দ্যায়— ‘ভালো আছি,
কাঁটা দিত বুড়ি— ঝাঁট দ্যায় পথ,
এতদিনে সেই প্রান্তবর্তী পথিক পেয়েছি।’
