ইরাবতী ইতিহাস: দেশলাই । রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা)
“নমামি বিলাতি অগ্নি —- দেশলাই রূপী
চাঁচাছোলা দেহখানি , শিরে কালো টুপী”
চাঁচাছোলা দেহখানি , শিরে কালো টুপী”
বলুন তো কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা?কবি হেমচন্দ্র ১৮৮৪ সালে দেশলাই কাঠির এই স্তবটা রচনা করেছিলেন।আমাদের এই বাংলাতে দেশলাই কবে এসেছে, তা বলা বেশ মুশকিল। ১৮৬৪ সাল নাগাদ রসরাজ অমৃতলাল বসুর স্মৃতি কথায় পাড়ায় পাড়ায় দেশলাই ফেরী করার উল্লেখ আমরা পাই।
আগুন আবিস্কারের পর জ্বালানটা মানুষের কাছে কঠিন ছিল। তাই অনবরত আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হত, মানুষকে।চকমকি পাথর ঠুকে আগুন জ্বালাতে হত। তারপর, সহজ দাহ্য পদার্থ তে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হত। যেমন- কাঠের গুঁড়ো, তুষ, দড়ি। কিন্তু যে প্রয়োজন মানুষ অহরহ অনুভব করত, সেটা হলো তাৎক্ষণিক আগুন বা চাওয়া মাত্র আগুন। সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত মানুষ এই অসুবিধার সন্মুখিন হচ্ছিল।
১৬৬৯ সালে সাদা ফসফরাস আবিস্কারের পর আয়ারল্যাণ্ডের রবার্ট বয়েল ১৬৮০ সালে দেখলেন; সাদা ফসফরাসের সঙ্গে গন্ধক মেশালে আগুন জ্বলে ওঠে। রাসায়নিক বিক্রিয়া তীব্র এবং অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে এই পদ্ধতিকে বাতিল করতে হয়। ১৮০৫ সালে ফ্রান্সের শঁষেল দেখলেন যে কাঠির মাথায় চিনি আর পটাশিয়াম ক্লোরোটের মিশ্রণ লাগিয়ে, ওই কাঠি গাঢ় সালফিউরিক আ্যাসিডের সংস্পর্শে আনলে আগুন জ্বলে ওঠে।
যাই হোক, এরপর বিভিন্ন বিজ্ঞানী নানাভাবে চেষ্টা করেছেন, আগুন জ্বালাতে, কিন্তু আগুন জ্বললেও সে গুলো নিরাপদ ছিল না।
অবশেষে, লাল ফসফরাসের আবিস্কারের পর (১৮৪৫) সুইডেনের জে লুন্ডষ্ট্রম ১৮৫৫ সালে সেফটি ম্যাচ বা নিরাপদ দেশলাইয়ের পেটেন্ট নেন। এটাই আমরা এখন ব্যাবহার করি।দেশলাই বাক্স জমানোর অনেকের অভ্যাস আছে। এই শখকে বলা হয় “ফিলুমেনি”। আর যাঁরা জমান তাঁদের বলা হয়- “ ফিলুমেনিষ্ট”। ল্যাটিনে “লুমেন” মানে আলো, আর তার থেকেই এই শব্দটির উৎপত্তি।
জাপানের তেইচি ইয়োসিজাওয়া, দেড়শোরও বেশি দেশের ৭ লক্ষেরও বেশি দেশলাই জমিয়ে গিনেস বুকে নাম তুলেছেন।
জাপানের তেইচি ইয়োসিজাওয়া, দেড়শোরও বেশি দেশের ৭ লক্ষেরও বেশি দেশলাই জমিয়ে গিনেস বুকে নাম তুলেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে ডঃ উৎপল সান্ন্যাল ৩৫ বছর ধরে ১০০ এরও বেশী দেশের ২৫ হাজার দেশলাই বাক্স জমিয়েছেন। এটা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
হলান্ডে একটি দেশলাই কাঠি তৈরী হয়, যার ওজন ছিল ১০০০ কিলোগ্রাম আর লম্বায় ছিল- ৬২ ফুট। ২৫ শে জুন, ১৯৮৮ সালে এটি একনাগাড়ে ৬ ঘন্টা ৪৫ মিনিট জ্বলেছিল।
দেশলাই বাক্সতে নানারকম বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে, বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছাপা হয়েছে। তবে সে অন্য আর এক কাহিনী।
তথ্যসূত্র ও গভীর ঋণ- সাপ্তাহিক বর্তমান, ৬ ই ফেব্রু-২০১০। পৃষ্ঠা -৩৯। লেখক- ডঃ উৎপল সান্ন্যাল। প্রবন্ধের নাম- দেশলাইয়ের দেশে।

কথাসাহিত্যিক