| 17 জানুয়ারি 2025
Categories
কবিতা সাহিত্য

মায়ার মলাট থেকে জন্মদিন

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

নিউজপেপার

যা বলবা চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট করে বলবা, এখানে সারাদিন বন্ধ জানালায় একটা শালিক পাখিরে ঠোকরাতে দেখি শার্শি, মনে মনে তোমার কথা ভাবি; এমনটা নয়তো যে, তুমিই পাঠাইছো পাখিটা!

আমার টেবিলে নিউজপেপার, অর্ধসত্যের মাস্তানি করে; সবগুলা ফটোতে
আনাড়ি গ্রাফারের হাত, অথচ, বাংলাদেশের মেঘ হিমালয় হয়ে কতো কতো দিন

সবার উপরে ওঠে, ঝোলাঅলা কবিরাও দেখতেছে না সেসব, কারে গালি দিবা?

এইখানে ঝর্ণাকলম হতে, ক্ষোভরঙ লেপ্টে যাচ্ছে হৃদয়ে-

গরুর গাড়ির আওয়াজ নিয়া ফুসফুসে বসে কবিতার আসর, এইগুলাতে কাজ হবে না; সেইটা তুমিও জানো, এই যে মহাস্থানে আইসা টমেটো বেঁচার লাভহীন চেষ্টাটা রহিমের, করিম‌ও সেসব জানে; তাও সে চালু রাখে অটোর ব্যাটারি, তারে অনেকগুলা ট্রিপ দেয়া লাগবে; অনেক ধুলার মধ্যে, মনের গালাগালিরে ফালায় রাইখা সে গতর খাটে বাংলাদেশে!

 

আমার সোনার বাংলা

স্বরলিপি থেকে উড়ছে জোনাই, পিছন পিছন চাঁদের আলো

ডিঙিয়ে যাচ্ছে বেতফল, সেখানে ঘাম জুড়াচ্ছে হরিয়াল-

বাতাস এখানে বিউগল, দূর থেকে কান পাতে অদৃষ্টের হরিণশাবক!

কোথায় যাবে, এই নয়নাভিরাম ছেড়ে? আর্ত কোন‌ও স্বরের কাছে

তোমাকে করজোড় দেখি, ভাঁটফুল ফুটে আছে অল্প পরিচয়ে;

যেনো বাতাসে মাফলার খুলে গিয়ে কাঁপছে আকাশ!

খালের ওপর কাঁপতে থাকে সাঁকো, যেনো তোমার চোখে অমিয়ভূষণ, এরপর

প্রশস্তির বাঁকে এসে থামছে তরী; নুড়ি পাথরের তলে চূর্ণ বালি

এখানকার কথ্যভাষার মতো উজ্জ্বল!

যাত্রা ফুরালো বুঝি? পিঠে কার ধারাবিবরণী বহন করছে চাঁদ?

চাঁদের হাসি ফলো করে করে, বাড়ি ফিরছে নাকি কেউ?

 

পরপারহীন হাসি

     

এই পরপারহীন হাসির নিচে

আমারে লুফে নাও ধারা-

বান নেমে যাওয়া পানির মতো, খড় ও কুটার সাম্রাজ্য রেখে গেছো বুকে ও বন্ধনে!

এইসব রণতাড়িত দেহ, ঘৃণা গিজগিজ মগজত্রিপল, প্রেমের কুপির নিচে উজ্জ্বল; ঘণ্টাধনি এসে শিশুদের নামতার ভিতর, সুর জমা করে রাখছে! স্বপ্নকে তর্জনী তুলে ডাকি, মাতৃভাষার ভিতর;

যতো ছায়া মাঠ ভরে রাখে, ধরে রাখে অভিমান উচ্চতা; শুনে ফেলে পাতার কলহ ফুল, যতো দীপাবলি ঘিরে আছে জ্বরের ফোঁপানি-

আমি ততো নীল রঙ, লাল রঙ, মেঘ নেমে এসে ফেরি করে যায় ফোক গান;

আমি ততো শ্বাসমূল- দুই পাড়ে ঝড় নিয়ে শোনাতে এসেছি নদীদের রূপকথা!

 

ঘুমাও বরং

একদিন আগুন আমাকে বিনাশ করে গেলো পুড়ে, আমি কিছুই বললাম না;
একদিন কোথা থেকে জলোচ্ছ্বাস এসে, ভাসিয়ে নিয়ে গেলো আমার অস্তিত্ব;
আমি তারপর‌ও কিছুই বললাম না,একদিন একাই হাঁটছি এমন আধো রাতে
আমার ছায়া আমাকে গিলে নিতে চাইলো, আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমার সমস্ত অনুশোচনার ওপর;

সামনে হেমন্ত, ঝরা পাতাদের করুণা হতে, কোনো দস্যুর ফেলে যাওয়া ভায়োলিন

যেনো বেজে ওঠে, কোনো প্রান্তর শুষ্ক রেখে ফিরে আসে আদ্রতা, উপনিবেশ তৈরি করে

এক পাতা হতে আরেক পাতার দিকে ভেসে আসছে পিঁপড়া;

সামনে বিস্মৃতিও, গলাজলে ডুবে থাকা গাছে এলিয়ে রাখছে গা, ভারী হয় পুঁথিবর্ণে;

দুদিনের জ্বর এসে ক্লান্ত করেছে তোমায়

তুমি ঘুমাও সখা, তুমি ঘুমিয়ে থাকো বরং!

 

শিকার

আজ কোনো প্রহরীর দিকে ছুটে আসে তারাদের ছুঁড়ে দেয়া শিস, আর সেইসব শিসের টুকরা কুড়াতে পৃথিবীতে মেঘ নামে, যেনো প্রশ্নপত্র বাঁধা এক দিগন্তের অধিকারী তুমি, শিকারে এসেছো আর ডাল থেকে ডালে ঝাঁপ দেয় ভ্রান্ত বানর, ভগ্ন হৃদয় থেকে আসে বাজের আওয়াজ- কার হাতে তুলে দিতে চাও, একে?

তুমি এক গল্পের ঘোর থেকে ছুটে যাও আরেক যুদ্ধগাঁথায়, মাটিতে দেবে আছে কর্ণের রথের চাকা, ভীম নেই তবু শোনা যায় শল্যের চিৎকার; তুমি নিঃসঙ্গ, নিজেই ছিঁড়েছো তোমার হাস্যোজ্জ্বল ফটো, ঘর থেকে হাত বের করে আঁচ করতেছো শীত।

ঠান্ডা বাতাস আসে, মৃতদের কথা নিয়ে নির্বাক পৃষ্ঠা ওড়ে, সমস্ত রাত; এই ফাঁকে ভেবে নিতে চাও নাকি, কলোনির ছাল ওঠা ছাদ?

ঐদিকে হেলে আছে কাকতাড়ুয়া, ধান থেকে ধানের দূরত্বে উঁকি দেয় শোলের পোনা, বাতাসে জুড়ায় নিশি; ধরো, এই পথ একদিন তোমার‌ই ছিলো- এঁকেবেঁকে সারারাত শেষে পেয়ে গেছে সড়কের দেখা, এই মাটি তোমার চেনা; এইখানে, তিতির গড়িয়ে নেমে আসে গম্ভীরা!

কতো রাত থেমে গেছে ঢালের দিকে এসে, হোস পাইপ-চাতাল লক্ষ্য করে; দ্যুতি ও দন্ডের কাছে ম্লান জীবনচিত্র নিয়ে, কতোদূর যেতে পারো তুমি?

নিশিডাক, আকাশে বিছানো দেখো;

মেঘ হতে মেঘে উড়ছে জোনাক!

 

জিরাফ

মনে করি ভালোবেসে আছো, ডাঙা ও দ্বিধায়-

একটি মূর্ছনা অভিমুখে ভেসে আসে তারস্বর, মিঞ্জিরি ছায়ার নিবেশে

মৃৎফুল কারুকাজ, আমাকে শান্ত রাখে একাকীত্ব, মনে করি ব্যথা ও বিবিধ

সব‌ই তুমি জানো!

আছি এক স্বীকারোক্তির মতো, দৃশ্যত, আসলে অলীক মৃগয়া ডাকে, চার পায়ে ডাকে

রণসজ্জার দৌড়- হয়তো জানালার দিকে এসে, বকুলে পূর্ণ হচ্ছে বাতাস!

অতুল জিরাফ দূরে

ঘাড় বেঁকে হেঁচকি লুকায়!

  

সুবিল

 

এখানে শীতের শরীরে সুবিল, ভ্যান থেকে ধোঁয়াওড়া মাছ নামে-

ছায়াফুল উজ্জ্বলতা নিয়ে

সোয়েটারে ফুটে আছে, এখানে মায়ের হাতে উলবোনা সুঁই!

আমার সন্ধান পাবে যে কোনো বিমূঢ়তার পাশে- থৈ পাওয়া গাছে, ঢেউ লেগে সেখানে

বিলের পানিও সুবর্ণপ্রায়, গড়িয়ে দিচ্ছে পোনাদের সার্কেল;

হিংসা ও হননেচ্ছার কাছে সারাদিন শিশিরপতন দেখি, একটা সাঁতারের ভিতর ডুবে যাচ্ছে

নিহিলিজম!

আলগুলি কেটে রেখেছে কেউ, মাটি ও মৃদঙ্গধারা

সেঁচ পেয়ে হাস্যোজ্জ্বল, এখানে শীত;

এতো কুয়াশা, এতো অনাদ্রতার ভিতর

ডুবে যায় রাজার‌ দালান, ঘোড়ার আড়াই ঘর;

তুমি কিনা শূন্যে রচিত পয়ার, দোহাগান- আমাকে

হেস্তনেস্ত করো!

ঝিঁঝিঁ ঢুকে জ্বলজ্বলে কালাইয়ের ক্ষেত, হাওয়া আসে, হাওয়া ফিরে যায়;

অনিদ্রার কাছে এসে বুদ্বুদের গল্প করে শিশির!

 

বাক্যব্যাধি

এসব যে কেনো বলি? কেনো যে বাক্যব্যাধি, সমস্ত গোলাপে ছড়ায়? তার কিছু ব্যাখ্যা থাকা দরকার। কি করে বাগানে এলো, ছানিপড়া গ্লানির কোকিল!

এর ওপর মেঘের পর মেঘ, ধুলার পর ধুলা, টিবির জীবাণু, হাওয়ার কম্পাস এসে জমা হচ্ছে দিনকে দিন! যেনো এক কাঠের চশমা চোখে,ঘাড় তুলে বৃদ্ধ সৈনিক, দেখে পতাকার পৌরুষ। গান গায় শিশুরা, আর, এক বিজয় দিবসএসে মুখ ধোয় বিধবার চোখের পানিতে, যেনো তারা বৃষ্টিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে বয়স্ক ভাতার কার্ড!

কেনোই বা বলছি এসব, কেনো সব মৃত নদী এসে ফোক ছেড়ে আশ্রয় নেয় মেটাল রকে, যেমন, তুমিও পিতার পাঁজর হতে বের করে আনছো তারার ছুরিটা, তাঁর চাওয়া ছিলো সামান্য পেনশন; তোমার বাড়িয়ে দেয়া হাতকেও, বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা চোখের অডিটরটি!

ছিন্ন কাঁথার নিচে, কাঁপছে চরাঞ্চল; এখানে মাঠের পর মাঠ জুড়ে খড়ের গন্ধ, আর, এক রুগ্ন বাঁশিতে যেনো নিস্ফল বাজনা ওঠায় মহাকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস! এর ভিতর বাইকে করে আসে শ্রমিক নেতারা, মৌজ করে, মৌন আলোয় তারা হাসে, গজদন্ত; গ্লেস মারে ত্রাণের জ্যাকেট, গায়ে!

 

গুমবর্ণ

আমাকে ছুঁতে এগিয়ে আসছে মৌরি ফুলের হাওয়া, পিছনে ধর্মের ঢাল, ক‌ওমী লেবাস, মৃতদের করোটি; আমাকে ধাওয়া করে গুমবর্ণিল নিউজ পেপার, আর, তোমরা যেখানে দেশলাই জ্বেলে একের পর এক ধরিয়ে যাচ্ছো সিগারেট, আমার কথায় গাত্রদাহ? মরিচের ফলন ভালো না। তোমাদের বৃষ্টির মতো কথার মশলা এই ধাওয়া আটকাবে?

আঁচ পেয়ে ফোস্কা পড়ছে ত্বকে? এরপর মৃত্যু নিয়ে কথা, বারো মুখে তেরো গল্প; সাতখুনে পাথরচাপা দিয়ে, বেসিনে হাত ধোয় জেলা বিচারক, জানালায় রক্তবর্ণ পর্দা, মুখে হাত চেপে আলোর নকশা কাটে বাংলাদেশের রোদ!

পৃথিবীকে এগিয়ে দিচ্ছি হাত, নদীপাড়ে পিলার পড়েছে।

আসন্ন গ্রীষ্মে, হাওয়া খাবে হাওয়া, দল বেঁধে, সেতুর ওপর!

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত