Maznu-Shah,irabotee.com

ইরাবতী এইদিনে: একগুচ্ছ কবিতা । মজনু শাহ

Reading Time: 3 minutes
Maznu-Shah,irabotee.com
আজ ২৬ মার্চ কবি মজনু শাহ’র শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার  তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।

অস্তিত্ব

অস্তিত্বের রঙ কী– মাঝে মাঝে ভাবি। যেমন কোনো রাজমহিষীকে দেখি নি কখনো, তবু তার মুখের রঙকাহিনি মনে পড়ে। ঐ হাবা অরণ্যের পাশে, চুম্বকের বিছানাই আমার সব। রাত্রিবেলা, প্রান্তরে, দেখা দেয় মহাজাগতিক ডিম। হারেমের রূপসীরা সেই দিকে দৌড়াতে থাকে। সবাই রঙ পেয়েছে, রসিকতাও। কেবল এই বহু ছিদ্রময় অস্তিত্ব, প্রতিমুহূর্তে অস্বীকার করে রঙ, আর সর্বত্র কায়েম রাখে তার অট্টহাসি। সেদিন সাপরাজার সাথে দেখা, বৃত্তান্ত শুনে বললেন, এইসব রেখে, কিছুকাল মেঘে মেঘে পায়চারি করুন–

***

রক্তবর্ণনার ভিতর দিয়ে যাই। হে অভিরূপ, তুমি কোন্ পাখি? নির্জন ঘাটে শুয়ে কেউ কেউ ক্ষয় হয়ে যায়। মাছরাঙা একপ্রকার আলোজাদু। কাব্যের, ইশারার সমস্ত বীজ, জবাকুসুমের মুখ থেকে শুনি। আমার মৃত্যুচিন্তা মুদ্রিত আছে ঐ কাঠবাদামের গায়ে, কাঠবেড়ালি আজ সকাল থেকে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যত অদ্ভুত আলো দেখ, সবই মাছরাঙাটির।

***

যে-কোনো সুদূরকে আজ অপরাহ্ন বলে মনে হয়। যে-কোনো প্রণয়, বল্মীকস্তূপের প্রায়। । অতি শাদা ফুলের রাত্রিসংলাপ ছুটে যায় কার পানে! মনে রেখ ঘাসেদের বিপুল অভ্যর্থনা, পতঙ্গদের মৃত্যুনাচ। আমার সবুজ অক্ষরগুলো ধুলোয় ঘুমায়। বাঁকা পথ দিয়ে যেতে যেতে কিছু শশীবাক্য আজ তোমায় শোনাতে হলো। আগামী কোনও ঝড়ে হাতি, হিতোপদেশ সবই হয়ত একসঙ্গে উড়বে।

দাম্পত্য

যখন তুমি মেয়েমানুষ থেকে দূরে আছ, পড়তে পার চিহ্নবিজ্ঞান, চাঁদের নিচে ডিগবাজি খেতে পার কিছুক্ষণ বা বানাতে পার চাবুক। আসলে তোমার জন্যে কোথাও অপেক্ষা করে আছে কাঠবেড়ালি, তার বগলে এ বছরের রাশিফলের বই, আর অন্য হাতে সেক্স-পিস্তল।

যখন তুমি পুরুষমানুষ থেকে দূরে আছ, খাও যত ইচ্ছে পপকর্ণ, নিজের ভয়ংকর গোপন কথাগুলো নিজেকেই আরেকবার শোনাও ফিসফিস করে। একখানা জ্যান্ত কবিতার বই সঙ্গে রেখ, তোমার দিকে এগিয়ে আসা বিচ্ছুগুলো পিটিয়ে মারার জন্য ওটা লাগবে। খবরদার, ভুলেও বেড়াল কোলে নিও না, যা দিনকাল পড়েছে, স্তনে আঁচড় দেবার ঘটনা গত পরশুও ঘটেছে ভূতের গলিতে। এ সময় ইউক্লিডের উপপাদ্যগুলো মনে আছে কিনা, সেটা আঙুল দিয়ে লিখে দেখতে পার বালিতে।

সহজ কবিতা

হেঁটে হেঁটে একদিন আমরা হয়ত আরও সহজ কবিতার কাছে পৌঁছব। তার রূপ কি হবে বাগীশ্বরী বজ্রের, নিখিল ঘাসের? তার শুরু নক্ষত্রের বিরহ দিয়ে! রাঙা ধূলির পথ অনন্ত প্রস্থানের ইঙ্গিত দেয় আমাদের। যদিও অন্ত নাই, শুধু অজস্র মুকুল, অজস্র না-ফোঁটা কুঁড়ি। সৃষ্টিতত্ত্ব একটা তেজপাতাগাছ বা অন্যকিছু। মহাসময় তার কাছে আসে, ঘুম আর বিষাদ আলোচনা যারা করেছিল, তারাও। প্রতিমুহূর্তে নিকটবর্তী হয় চিরন্তন শবাধার। মধ্যরাতের পর একটি প্রাচীন শ্লোক একা একা জ্বলে ওঠে কারো ঘরে। সুর লেখে কেউ তখন, বাইরে মৃদু কাঁপতে থাকা পাতাদের কাছ থেকে বাক্য আসে একের পর এক। কখনো না-লেখাও সুন্দর, ঐ যেমন নির্বাক সন্ন্যাসিনী, যেমন শিশির। মুগ্ধ বা বিভ্রান্ত খরগোশ, খরগোশের সামান্য ঘর, সবই আজ গ্রন্থ প্রায়।

 

ঘুঘু

ঘুঘুদের ডাক শোনামাত্র আমার মাথা শয়তানি চিন্তায় ভরে ওঠে। তুমিও কম বজ্জাত নও, বাজিয়ে দিয়েছ হেমঘণ্টা। কাকাবাবু, আমার কথায় কি আর মৃত তারাগুলো ঝরবে? সাদা রঙ সম্পর্কে গত ছ-সাত বছর প্রায় কিছুই ভাবি নি, রাত্রির আকাশ এখনো নিরক্ষর। সাদা মাকড়শার সঙ্গে অবশ্য মাঝে মধ্যে দেখা হয়, তারা ইদানীং ঘুমোবার জন্য বেশি পছন্দ করে তোমার না-খোলা জানালা। ঘুঘুদের ডাকের সঙ্গে, সাদা রঙের সঙ্গে এবার হয়ত মীমাংসায় যেতে হবে।

*

রামঘুঘু, তিলাঘুঘু, কণ্ঠিঘুঘু— তোমরা সব কোথায়? যখন আমি ঘুমে কাদা, গুপ্তরোগ ছড়িয়ে পড়ে তোমাদের। টেলিগ্রাফ শব্দটির আয়ু ফুরিয়ে এলো দেখতে দেখতে। আড়াই হাত লম্বা এক জাহাজবিজ্ঞানীর সঙ্গে সেদিন ঋতুবিপর্যয় নিয়ে তর্ক হলো, মাছেদের হিংস্রতা নিয়েও অল্পবিস্তর। মানুষের মধ্যেও কিছু ঘুঘু আছে নিশ্চয়! ভ্রমণাকাঙ্ক্ষা জাগে তাই সরুপথে, খালি পায়ে, রেললাইনের পাশে। হাঁটা থামিয়ে, যখন বজ্রাহত বাক্যগুলো বলতে থাকি, গাছে গাছে বানরদের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়।

 

রম্যদ্বীপ

মনে পড়ে রম্যদ্বীপ। কুমারত্ব হারানো অসংখ্য হাঁস ঘুরছে সবখানে। ঝরে পড়া ফিকে লাল পাতার বিছানা ঐ। একটানা উড়োশেয়ালের কান্নার ভেতর যেন তুমি নও আর সামান্য ব্রাজক।

সবজান্তা পাখিরা ফিরে আসে আর তর্ক করে।

কাল ভোরে হয়তো-বা উঠবে ভেসে গীতরত মস্তক, অর্ফিয়ূসের। আর কেন বীণা তৈরি করো, ঘুমপ্রবণ বোতাম আর শাদা নুড়িগুলো রাখো কেন গোপন ঝুড়িতে—

আঙুর, সনেটগুচ্ছ, পেকে ওঠে আর নষ্ট হয় এখনো কোথাও।

একটি অতৃপ্ত গান নানা সুরে গায় এক অন্ধ কাকাতুয়া। তুমি আজ ধূলিসম্রাটের মতো কেউ। ক্রমে গৃহ, লক্ষ্য আর স্তনচ্যুত।

বোঝে, কে কার অতল! গূঢ় সত্য লুকায় এখন তার ভুরুর ধনুকে। এসে পড়ে অন্তিম স্তবক। হোলি গ্রেইল থেকে রক্ত মুছে গিয়ে শুধু বীজ, খোসা আর তিক্ত-মধুর প্রবচনে ভরে। সঙ্গে নাও মর্মর-পেটিকা, ঢালুতে দাঁড়ানো শিউলি, ঐ শিউলিতল, তোমাকে রচনা করে, হেম যেন, শুরু হয় রাতের মৃগয়া।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>