গজল সম্রাটের গানে গানে

Reading Time: 2 minutes

আজ ১৩ জুন গজল সম্রাট মেহেদী হাসানের প্রয়াণ দিবস। ইরাবতী পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।


‘মেহবুব সুর’- এর অধিকারী গজল সম্রাট মেহেদী হাসান । কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাঁর গজল শুনে বলেছিলেন, ‘ মেহেদী হাসানের কণ্ঠে বাস করেন স্বয়ং ঈশ্বর।’ প্রয়াত আরেক কিংবদন্তী গায়ক মো. রফি বলেছেন, ‘ আমরা গান করি আমজনতার জন্য আর মেহেদী হাসান গান করেন আমাদের জন্য।’ এসব মন্তব্য থেকে অনুধাবন করা যায় তিনি কত বড়ো মাপের শিল্পী ছিলেন।

এ জন্যই বোধ হয় তাঁকে বলা হয় শাহেনশাহ-ই-গজল । যাদুকরী এই গায়কের জন্ম ১৯২৭ সালের ১৮ জুলাই, রাজস্থানের ঝুন ঝুন জেলার লুনা গ্রামে,এক সংগীত পরিবারে। তাঁর বাবা ওস্তাদ আজিম আলী খান এবং চাচা ওস্তাদ ইসমাইল খান ছিলেন ধ্রুপদী সংগীতের প্রখ্যাত পণ্ডিত। শৈশব থেকেই সংগীতের ধ্বনি মাধুর্য তাঁকে আন্দোলিত করেছে। হাতেখড়ি বাবা-চাচার কাছে।

বরোদার মহারাজার দরবারে প্রথম গান গাইলেন। প্রায় ৪০ মিনিট তিনি সেই আসরে রাগ বসন্ত পরিশেন করেন। শিশু মেহেদী এভাবে ধ্রুপদী ও খেয়াল পরিবেশন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের পরে শিল্পী ভারত ছেড়ে পাকিস্তানের শাহিওয়াল এলাকায় চলে আসেন।

নতুন দেশে এসে তাঁর পরিবার বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। জীবনের তাগিদে তরুণ মেহেদী হাসানকে জীবনসংগ্রামে নামতে হয়। কিন্তু সংগীতের দুর্নিবার আকর্ষণ তাঁকে সংগীতচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। এই কালজয়ী শিল্পীকেও জীবনের শুরুতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

লাহোরের বেশ ক’টি অনুষ্ঠানে গান গাইলেন কিন্তু সাফল্য পেলেন না। দমে যান নি। ১৯৫৭ সালে রেডিও করাচি স্টুডিওতে অডিশনের সুযোগ আসে। অডিশনে গাইলেন ঠুমরি, রাগ খাম্বাজ, পিলু, দেশ, তিলক, কামোদ । মুগ্ধ হলেন রেডিও কর্মকর্তাগণ। তিনি এ গ্রেডের শিল্পীর তালিকাভুক্ত হলেন। যদিও এ গ্রেডের শিল্পীর সম্মানী ছিলো ১৫ রুপী; কিন্তু তাঁর সম্মানী করা হলো ৩৫ রুপী।

পাকিস্তানী ফিল্মী গানের সর্বকালের সেরা গানগুলো মেহেদী হাসানের গাওয়া। তাঁর গায়কী জীবনে খ্যতি এন দেয় বিখ্যাত সেই গান ‘ গুলুমে রাঙ্গ ভারে’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পঁচিশ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি।

দুরূহ গজলও তাঁর কণ্ঠে কেমন হূদয়ছোঁয়া হয়ে ওঠে। কখনো উর্দু সাহিত্যের ছাত্র না হয়েও উর্দু গজলের শব্দ ও সুর নিয়ে খেলা করেছেন তিনি। উর্দু গজল ছাড়াও বাংলা গানেও রয়েছে তাঁর স্মরণযোগ্য অবদান। তাঁর গাওয়া বাংলা গান, ‘হারানো দিনের কথা মনে পড়ে যায়’; ‘ঢাকো যত না নয়ন দুহাতে’; ‘তুমি যে আমার’ প্রভৃতি গান বাংলাদেশের সংগীতপ্রেমিরা চিরদিন মনে রাখবে।

এমন মহৎ শিল্পীদের কখনোই দেশ কালের সীমায় বাঁধা যায় না। এঁরা সর্ব দেশের, সর্ব কালের , সর্ব মানবের। দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর অবশেষে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে তাঁর মহাপ্রয়ান ঘটে ২০১২ সালের ১৩ জুলাই।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>