| 25 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

ন্যাড়া একটি বৃক্ষ

আনুমানিক পঠনকাল: 12 মিনিট

 

তুই আমারে কি রাখবি? মুই-ই তোর লগে থাকমু না,কাইলই তোরে তালাক পাঢাইয়া দিমু, মোরে এহনো চেনো নাই? মুইও সোলেমান কবিরাজের মাইয়া মোসাম্মাদ পারুল বেগম।দাঁত মুখ খিচিয়ে, শরীরের সমস্ত শক্তিতে কথা বলতে বলতে সাত বছরের ছেলে মানুর হাত ধরে তীব্র কষাঘাতে জীর্ণ দরজা খুলে উঠোনে নামে পারুল।
পাশের ঘর থেকে পারুলের শাশুড়ি আম্বিয়া বেগম ঘুম ঘুম চোখে দরজায় দাঁড়ায়,ও বৌ এতো রাইতে কই যাইতেছো?
জাহান্নামে যাইতেছি- রাস্তার দিকে হাঁটতে হাঁটতে জবাব দেয় পারুল।
জাহান্নামে যাইতে চাও,যাইবা। আমরা কেউ মানা করুম না। তয় এতো রাইতে যাওনের কাম নাই। মেরধা বাড়ির একটা ইজ্জ্ত আছে ।
ঘুমে ঢুলুঢুলু ছেলে মানুর হাত ধরে দ্রুত হাঁটছে পারুল,আম্বিয়া বেগমের শ্লেষমা মেশানো কথা তার কানে পৌঁছতে পারে না। হন হন হাঁটছে আর কাঁদছে সে। মায়ের টানা হেচরায় মানুর,চোখের ঘুম এতোক্ষণে উবে গেছে। সেও মায়ের সঙ্গে পালা দিয়ে হাঁটছে। কিছুদূর হাঁটার পর সামনে একটা ছোট খাল পরে। খালের উপর বাঁশের সাঁকো। মানুর হাত ধরে পারুল সাঁকোটা পার হয়ে সামনে দাঁড়াইতেই দেখতে পায়,তাল গাছের মতো উঁচু একটা সাদা মানুষ দুদিকে লম্বা দুটি হাত বাড়িয়ে সামনে দাঁড়ানো। ভয়ে আধমরা হয়ে কাঁপতে শুরু করে পারুল।
মা কি অইচে?
হাত বাড়ায় পারুল,সামনে ওইডা কি?
মানু ভালো করে তাকিয়ে জবাব দেয়,কই কি? কিছুইতো দেহি না।
পারুল তখন আরও ভালো করে তাকায়,সত্যিই তো সামনে কিছু নেই। শুকনো খটখটে সাদা এক চিলতে পথ সামনে পড়ে আছে। সে মানুর একটা হাত শক্ত করে ধরলো, যাই।
মায়ের সঙ্গে সায় দেয় মানু,হ, লও।
দুজনে হাঁটতে থাকে। গ্রামের গভীর রাত। আশ্বিন মাস। আকাশে আধ ফালি চাঁদ। সামনে বেশ কয়েকটি বড় বড় শিরিষ গাছ। শিরিষ গাছের ঘন ডালপালা আর বাতাসের মৃদু দোলায় আলো ছায়ার খেলায় পারুলের চোখের সামনে সামান্য একটি বিভ্রমের সৃষ্টি হয়েছিল। মানু’র সাহসে ভর করে বিভ্রম কাটিয়ে পারুল আবার হাঁটতে শুরু করে। এই গ্রাম বহেরাতলা পার হয়ে পরের গ্রাম তালতলায় যাবে। তালতলা পারুলের বাপের বাড়ি।

দশ বছর আগে,পারুল যখন তালতলা বহুমুখি হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী,হঠাৎ বিয়ে হয় বহেরাতলার আবুল হাশেম মৃধার ছেলে আবুল কালামের সঙ্গে। আবুল কালাম তালতলা বাজারের মুদি দোকানদার। পারুলের বড় মামা আবদুল হাই গিয়েছিল ছেলের দোকান দেখতে। তার আগে পারুলকে দেখে গেছে কালামের বাবাসহ আত্মীয় স্বজনেরা। তারা পারুলকে এক প্রকার পছন্দ করেই রেখেছে। কারণ মেয়ে দেখে মেয়ের হাতে সোনার বালা পরিয়ে দিয়ে গেছে ছেলের বাবা আবুল হাশেম মৃধা। পারুলের বাবা সোলেমান কবিরাজ খুব খুশি। মা রেহেনা বেগম নিঃশব্দ। কারণ সোলেমান কবিরাজের মুখের উপর বা কথার উপর কথা বলার সাহস কোনোদিনই অর্জন করেনি। রেহানা বেগম রুটি বাটার বেলুনের মতো সংসারের রুটি বেলে গেছে নিঃশব্দে। মামা আবদুল হাই ছেলে আবুল কালামের মের্সাস মৃধা স্টোর দেখে এসে দারুণ খুশি। খুশির আরও কারণ ছেলে,পারুলের ভাবি স্বামী ভয়ানক দিলদরিয়া মানুষ। বড় মামাকে পেট ভরে সন্দেশ আর রসে ডোবানো রসেগোল­া খাইয়েছে। এতো মিষ্টি জীবনে আর কেউ খাওয়ায়নি তাকে। সুতরাং পারুলকে বিয়ে এখানে এবং এই ছেলের কাছেই দিতে হবে। পারুলের বাবা সোলেমান কবিরাজ আর মামা আবদুল হাই মিলে এক রাতে পারুরকে বিয়ে দেয় কালামের সঙ্গে। পারুল শশ্বুড় বাড়ি এসে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়ে খুব শীঘ্রই একজন গৃহবধূতে পরান্তরিত হলো। দুঃখে আনন্দে দিন রাত তার ভালোই কাটছিলো। মেয়ের মোটামুটি সুখ দেখেই সোলেমান কবিরাজ ইহলোক ত্যাগ করে।
হঠাৎ বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো পারুলের সংসারে আসে বিপদ। এক রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফিরবার পথে পুলিশ গ্রেফতার করে কালামকে। প্রতি রাতে বাজারের লেবু হাওলাদারের গদীতে বসে অনেকের সঙ্গে জুয়া খেলে কালাম। জুয়া খেলে হেরে হেরে লেবুর শ্যালক আমীরের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার করেছে। অনেকবার বলার পরও টাকা না দেওয়ায় থানায় মামলা করেছে আমীর। যার ফলাফল গ্রেফতার। তখনও বেঁচেছিল কালামের বাবা আবুল হাশেম। ছেলেকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে কয়েক হাজার টাকা গেলো। আর বাজারের মের্সাস মৃধা স্টোরটি আমীরকে দিতে হলো। নিট ফলাফলে পারুলের স্বামী কালাম এখন শূণ্য মানুষ। সারাদিন বাড়িতে অসুস্থ মুরগীর মতো ঝিমায় আর লম্বা দমে বিড়ি টানে। পারুল অনেকভাবে বোঝাতে থাকে,পুরুষ মানুষ, এইরহম বাড়িতে বইয়া থাকলে চলে?
কি করমু?
কি করবেন হেইডাতো জানি না। তয় একটা কিছুতো করতে অইবো।
আমিতো কোনো দিশা পাইতেছি না।
একটা কাম করবেন?
বিড়ির পুটকি টানতে টানতে তাকায় কালামÑকি কাম?
খুলনায় যান।
অবাক কালাম খুলনায় যামু?
হ, হেই হানে আমার বড় খালা থাহে। বড় খালার ছেলেগো এহন মেলা টাহা পয়সা অইচে। হেগো অনকে ব্যবসাপাতি আছে। হুনচি দোকানও আছে। আপনে গেলে একটা না একটা কাম পাইবেনই।
আমি আবুল হাশেম মেরধার পোলা,আমি যামু মাইনষের কাম করতে? এইডা তুমি কইতে পারলা? আমার বাপের একটা ইজ্জত আছে না?
কমু না কি করমু কন ? আর কয় মাস পরতো সংসারে আরও মুখ আইবে। হের একটা ববিষৎ আচে না? আপনের লাইগা বাড়ির সবাই আমারে খোটা দেয়।
বিড়িটাকে টানতে টানতে আর টানতে পারছে না কালাম। টান দিলেই ঠোট পোড়ে। তারপরও একটা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে তীব্র চোখে তাকায় পারুলের দিকেঠঠখোটা দেয় ক্যান?
দিবো না! কয় তোর জামাই একটা বাদাইম্যাÑনাইলে এই বয়সের কোনো পুরুষ মানুষ বাড়িতে বইসা থাহে? দুনিয়ায় কতো কাম আছে, একটা কামে লাগতে ক।
দুহাত উপড়ে তোলে কালাম, আলা জী বরে করে বিকট একটা হাই তোলে দেহি, কি করা যায়।
কিন্তু কিছুই করে না কালাম। কেবল বাবার সংসারে খায় ঘুমায় আর রাস্তার মোড়ে তাস খেলে সময় কাটায়। আর প্রতি রাতে পারুলের সঙ্গে ঝগড়া লাগে। তাদের ঝগড়ার মধ্যে মানু আসে এক ভোরে, পৃথিবীতে। কালামের বাবা আবুল হাশেম দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মরা যায়। তার রেখে যাওয়া জায়গা জমি তিন ভাই আর তিনবোনের মধ্যে ভাগ হলো। কালাম অনেকটা ফুলবাবু হয়ে কাখে একটা তিন ব্যান্ডের ট্রানজিস্টার নিয়ে রাত বিরেতে ঘুরে বেড়ায়। বাচ্চাদের মতো রেডিওতে অনুরোধের আসরে চিঠি লিখতে শুরু করলো। তার বড় ইচ্ছে বেতারের সুকন্ঠী উপস্থাপক হেনা কবীরের কণ্ঠে তার নাম শুনবে। আর শুনবে বেদের মেয়ে জোসনা ছায়াছবিতে গাওয়া এন্ডু কিশোরের গান বেদের মেয়ে জোসনা আমায় পাগল করেছে…..।
কালামের অন্য দুই ভাইয়েরা তাদের জমিতে নিজেরা চাষবাস শুরু করেছে। কয়েকটা গরু এসেছে তাদের গোশালায়। কিন্তু কালাম একেবারে বিপরীত। এলাকায় যাত্রা কিংবা সার্কাস এলে রাত জেগে দেখে। শোনা যায় যাত্রাদলের মেয়েদের সঙ্গে নাকি ফষ্টিনষ্টিও করে বেড়ায়। লোকমুখে শুনে পারুল জিজ্ঞেস করলে খেঁকিয়ে ওঠে কালাম,তোরে এইসব কেডায় কইচে? ক আমারে, হালার ঘাড় মটকাইয়া আহি। আমি মেরধা বাড়ির পোলা,আমার একটা সোন্মান আছে না? আমি ওইসব ছ্যামড়িগো ধারে যাইতে পারি? ক দেহি কেডায় তোরে আমার নামে বদনাম কইচে?
নাম বললে নেমে আসবে আর এক বিপদ। তাছাড়া কি করে বলে বাড়িতে এসব বলেছে তারই বড় ভাই মালেক। বললে দুই ভাইেয়ের মধ্যে রক্তারক্তির ঘটবে। দাঁতে দাঁত কামড়ে থাকে পারুল। বুঝতে পারছে তার জীবন রঙের ভান্ড উল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, চোখের সামনে। কিন্তু সে কি করতে পারে? তার হাতে কিছু নেই। কালাম কাজ করে না, চাষবাসের চেষ্টা করে না সারাদিন ঘোরে,খায় আর ট্রানজিস্টারের গান শোনে। এভাবে একটা মানুষের সংসার চলে? চলতে পারে? ছেলেটার ভবিষৎ চিন্তায় পারুল অনেক কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু বলতে গেলেই কালামের চোখমুখ হিংস্র হয়ে ওঠে। পারুল তখন এই মানুষটিকে আর চিনতে পারে না।
গত চার বছরে মালেক ভাই দুই খান হাল দিচ্ছে মাঠে। একেবারে বড় ভাই খালেক দিয়েছে একখান হাল। আর কালাম বড় ভাইদের উন্নতি দেখে খায়, ট্রানজিস্টার বাজায় আর ঘুমায়।
কয়েকমাস পর হঠাৎ এক রাতে পারুলের জন্য নতুন একটি শাড়ি, একটা কদুর সুগন্ধি তেল, কোমড় ভেঙ্গে টেবিলের উপর বসতে পারে এমন গোলাকার বড় একটি আয়না আনে কালাম। মানুর জন্য আনে লাল জামা, পায়ের জুতো আর খেলনা রিকশাগাড়ি। পারুল কিছুটা বিস্মিত । তার অকমর্ণ্য স্বামীর উপহার পেয়ে ভেতরে ভেতরে আপ্লুত । তারপরও জানতে চায় এতোসব যে আনচেন টাহা পাইছেন কোতায়?
টাহা কোতায় পইচি হেইডা দিয়া তোর কাম কি? তোরে আইনা দিচি তুই পরবি। আমি দেখুম।
টাহা কোতায় পাইচেন না কইলে আমি কছিুই পড়মু না। মানুরেও পরতে দিমু না।
তুই কইলো বাড়াবাড়ি করো মাগী তেতে ওঠে কালাম।
আপনে খালি খালি গালাগাল করতেছেন ক্যান? আমিওতো চাই আমার স্বামী আমারে নতুন শাড়ি আইন্যা দেবে, আমি পড়মু। আমার সাধ আল­াদ আচে না। কন আচে না? এহন কন
কি কমু?
টাহা কোম্মে পাইচেন?
কালামের হাতের ট্রানজিস্টারে রুনা লায়লা তখন গাইতেছিল সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী……..লাউয়ের আগাগো খাইলাম ডগাগো খাইলাম, লাউ দিয়া বানাইলাম ডুগডুগি…….। সেই তিন ব্যাটারীর জাপানী ন্যাশনাল প্যানাসনিক ট্রানজিস্টারটা হঠাৎ ছুটে আসে পারুলের দিকে উল্কাপাতের গতিতে। চকিতে, কিংবা চোখের পলকে মাথাটা একটু সরায় পারুল, তারপরও ট্রানজিস্টারটা জানালা গলে বাইরে যাওয়ার আগে পারুলের ডান কপালে আলতো চুমু খেয়ে যায়,ফলে কপাল ফেটে টাটকা রক্তের নহর বইতে থাকে। পারুল কপালে হাত দিয়ে টাটকা রক্তের রাঙা হাত দেখে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরে মেঝের উপর । কালাম জামার উপর সোয়েটার চাপাতে চাপাতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। মানু আহত মায়ের উপর বসে হাউমাউ কাঁদতে থাকে। মানুর কান্নার শব্দে বিরক্তির সঙ্গে ঘরে ঢোকে আম্বিয়া বেগম কি অইচে? এতো কাঁনতেছো ক্যান? ঘরে কেউ নাই?
কিন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে এক পলকেই পরিস্থিতি বুঝে আম্বিয়া বড় ও মেঝো ছেলের বৌবে ডেকে আনে। সবাই মিলে সেবা করে পারুলকে সুস্থ করে তোলে। পারুলের চিকন কপালে একটি স্থায়ী দাগ আসন গাড়ে। কয়েকদিন ধরে পারুলের অবচেতন মনে একটা বিপদের কালো বেড়ালকে দেখতে পায়। অনুভব করছে একটা সর্বনাশের লাটিম হাতের তালুতে ঘুরছে। কিন্তু বিপদটি কি বুঝে উঠতে পারে না।ঝট
তার মেজোভাসুর মালেক একটা কুমির। এলাকার গরীব মানুষের সম্পত্তি অদ্ভুত কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নেয়। মালেক প্রথমে একটা র্টাগেট ঠিক করে এগোয়। টার্গেট করা পরিবারের একজন হিতাকাংখী হিসেবে নিজেকে আস্তে আস্তে জড়ায়। কারো অসুখ হলে নিজে থেকেই ডাক্তারের কাছে নেয়। ঔষুধ কিনে দেয়, মাছ মাংস যা লাগে পাঠায়। ঈদে জামা কাপড় দেয়। তারপর অবস্থা বুঝে মালেক জানায় তোমাদের পিছনে আমার এতো টাকা খরচ হয়েছে, টাকাটা দাও।
বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো সেই পরিবারের মানুষগুলো চমকে ওঠে। তাদেরকে বোঝায় মালেক তোমাগো বিপদে আমি টাহা দিচি। টাহাতো আলার গোলার ধান না যে একবার নেলে আর দেতে অইবে না!আর নগদ না দিতে পারো অসুবিধা নাই তোমাগো বসত বাটিখানতো আছে। দলিলপত্র রেডি থাকবেআনে , সাবরেজিট্রি অফিসে যাইয়া একখান টিপ দিলেই অইবে। চিন্তা কইরো না রিকশায় নিমু আবার রিকশায় লইয়া আমু।
কথা বলতে বলতে মালেক লুঙ্গির কোচড় থেকে দুমরানো মোচরানো টাকার একটা বান্ডিল বার করেÑএই নাও, নগদও কিচু দিয়া গেলাম। মাইনষে আমারে খারাপ মানু কয়,আমি সবই হুনি,কষ্টও পাই। এহন কও,তোমাগো বিপদের সমায় কে আছিল? এই আমি আবদুল মালেক আছিলাম। এহন তোমরাই কও আমি কি খারাপ মানু?
এইভাবে নিজস্ব ফাঁদে ফেলে রাবেয়া, সুলতান, তোবারক আর সর্বশেষ দীনুদের পরিবারকে ভিটে ছাড়া করেছে আবদুল মালেক। সেই মালেকের সঙ্গে গত কযেকদিন ধরে কালামকে ঘুরতে দেখেছে পারুল। দুজনে ফুসুর ফাসুর কি সব আলাপ করে। পারুল কাছে গেলে কথা ঘুরিয়ে নেয়। মালেকের ঘর থেকে ইদানীং তরকারি আসে। গতকাল দুইটা বড় ইলিশ মাছও পাঠিয়েছে। মানু ইলিশ মাছ দেখে ফড়িংয়ের মতো নাচতে শুরু করে। ফিরিয়ে দেয়ার ইচ্ছে হলেও মানুর মুখের দিকে তাকিয়ে পারে না পারুল।
মা আমি ইলিশ মাছের লেজটা খামু মানু আবদার করে।
মালেকের সঙ্গে হঠাৎ খাতিরের বিষয়ে কালামকে জিজ্ঞেস করলে হাসে আরে,মাইঝা ভাইজানের লগে ব্যবসা করতেছি।
কি ব্যবসা করবেন আপনে? কন্ঠে প্রবল সন্দেহ পারুলের।
সামনের মাসে সুন্দরবনে যামু।
ক্যান? সুন্দরবনে যাইবেন ক্যান?
মৌ আনতে। বাড়িতে বালতি ভরা মৌ আনমু। খাবি আর বিলাবি, বিলাবি আর খাবি।
মৌ আনবেন আপনে? পারুলের গলায় নিখাদ অবিশ্বাস মযে মানু একটা গাচ বাইয়া নাহোইল পারতে পারে না, হেই মানু সুন্দরবনের বড় বড় গাছে উইঠ্ঠা মৌ পারবেন কেমনে? মৌমাছিতে কামড়াইবে না?
হাসে কালাম পাগল, মুই কি নিজে গাছে উঠুম? আমাগো লগে লোক যাইবেÑযাগো অভিজ্ঞতা আছে। হ্যারা গাছে উটবে মৌ পারবে, মুই খালি হিসাব করমু কয় বালতি অইলো। আর পেঠ ভইরা মৌ খামু। দেশে আইন্না মৌ বেচুম । এক এক কেজিতে দুইশো তিনশো টাহা লাভ। এক নৌকা মৌ আনতে পারলে কেল্লাফতে।
গম্ভীর গলায় বলে পারুল হোনেন, আপনেরে একখান কতা কই?
কানে ট্রানজিস্টার লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে তুই আমার বৌ, একখান কতা কবি ক্যান দশখান ক।
আপনে আপনের মাইঝা ভাইয়ের লগে কোনো ব্যবসায় যাইয়েন না।
চোখ বড় বড় করে তাকায় ক্যান?
হেয় আপনেরে খাইয়া হালাইবে,আপনে টেরও পাইবেন না।
চোখের দৃষ্টি এবং গলার স্বর মুহূর্তে পাল্টে যায় কালামের আমার সামনে আমার ভাইয়ের বদনাম কইতেছো?
মরিয়া হয়ে জবাব দেয় পারুল বদনামের কি কইলাম? আপনে চোহের সামনে দেহেন না রাবেয়া ,সুলতান, তোবারক আর দীনুদের কি করচে আপনের মাইঝা ভাই?
তুই যদি আর একটা কতা কও তোরে কইলো তালাক দিয়া দিমু মাগী,খালি ঘর পোড়ার মইধ্যে আলু পোড়া দেও। এতোদিন পর আমি একটা ব্যবসার লাইন ধরতেছি, কোতায় আমারে উৎসাহ দেবে, না কানের কাছে কুটনাগো নাহান কুটনামি করতেছে। বাইরানী কোথাকার….ছিনাল মাগী….
নিজের উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর বাস্পরুদ্ধ কান্নাকে চেপে ঘরের ভেতরে ঢোকে পারুল মনু এ কেমন পুরুষ? কতায় না পারলে খালি তালাকের কতা কয়! খালি তালাকের কতা কয় তালাক জিনিষটা কি? তালাক খালি হেয়ই দিতে পারে? আমি কি হেরে তালাক দিতে পারি না? আামিও তো দিতে পারি। কই হের মতো তো কতায় কতায় তালাকের ভয় দেহাই না।

মাস খানেকের মধ্যে আবদুল মালেক আর কালাম বড় একটা নৌকা, সঙ্গে চারজন লোক নিয়ে সুন্দরবনে চলে যায়। কালাম সুন্দরবনে যাবে শোনার পর থেকেই পারুলের ভেতর ভয় দানা বাঁধে। কয়েকমাস আগে পাশের বাড়ির আসমানের বাবা চানমিয়া গোলাপাতা কাটতে গিয়েছিল সুন্দরবনে। ফিরে আসেনি, বাঘে খেয়েছে। গোলাপাতা কাটে নদী বা খালের পাড় থেকে, তাতেও বাঘের কবল থেকে রেহাই পায়নি চানমিয়া। আর মৌ আনতে হলে সুন্দরবনের গভীরে ঢুকতে হবে, গাছে গাছে চোখ রাখতে হবে কোনগাছে মৌমাছিরা বাসা বানিয়ে মধু সঞ্চয় করেছে। পারুলদের গ্রামের লোকেরাও সুন্দরবনে যায়, শুনেছে তাদের কাছে সুন্দরবনের গা ছমছম করা নানা গল্প। জানে, নিষেধ করলেও শুনবে না অকমর্ন্য মানুষটি। তাই কিছু বলেনি। আর কথা বলতেও ইচ্ছা করে না আজকাল। কেবল বুকের মধ্যে উথাল পাতাল একটা হাহাকার করুণ বাঁশি বাজাচ্ছে।
মানুকে স্কুলে দিয়েছে পারুল। ছেলেটার ভালো জামা প্যান্ট নেই। নেই আস্ত একটা শ্লেটও। পাশের বাড়ির একটা ছেলের ভাঙ্গা একটা শ্লেট এনে দিয়েছে। সেই ভাঙ্গা শ্লেটের উপর মানু মনের খুশিতে হরেক রকম ছবি আঁকে। মাকে দেখায়, পারুল খুশিতে মানুকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে। স্বপ্নের এক রঙিন ছবি দেখে সে। রাতে ছেলেকে বিছানায় নিয়ে সুন্দরবনরে গল্প , রাক্ষস ক্ষোক্কসের গল্প শোনায়। মানু বারবার রাখাল রাজপুত্রের গল্প শুনতে চায়। যে রাখাল বালক মাঠে গরু চরাতো, সে ছিলো খুব সাহসী। দেশের সেনাপতি রাজাকে মেরে সিংহাসন দখল করে সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন চালাতে শুরু করলে একদিন রাখাল বালক তার অন্য রাখাল বন্ধুদের নিয়ে সৈন্যদল গঠন করে অত্যাচরী রাজার সৈন্যদের বিরুদ্বে যুদ্ধ শুরু করে। দেশের সাধারণ মানুষও যোগ দেয় রাখাল রাজার পক্ষে ছোটে হাজার হাজার ঘোড়া, হাতি। যুদ্ধের মাঠে তরবারির ঝনঝনান, সৈন্যদের আর্তনাদ মানুকে খুব উল­সিত করে। পারুল বলেও খুব দরদ দিয়ে। হাত পা নাড়িয়ে এমনভাবে বলে মানুর মনে হয় চোখের সামনে সেইসব ঘটনা ঘটছে। মানুর এই উল্লাসের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি সুন্দরবন থেকে ফিরে আসে কালাম অসুস্থ শরীরে। পুরো অভিযানটিই ব্যর্থ।
মালেক জানায় সুন্দরবনে যাবার দুদিন পরই কালামের জ্বর আসে। নৌকায় কালামরে একলা রাইখ্যা মধু খোজতে য়াওয়া যায় না। নৌকায় বাঘটাক আইতে পারে। সুন্দরবনে হক্কলে বইয়া বইয়া খাওয়ার চাইতে ফিইরা আহা ভালো । তাছাড়া ঔষদপত্র নাই।

কযেকদিন জ্বরে ভোগার পর কালাম সুস্থ হয়ে ওঠে। কালামের চিকিৎসা ঔষধপত্র বড় ভাই মালেকই যোগান দেয়। এবং মাস খানেক পর এক সন্ধ্যায় মালেক জানায় গত এক বছরে তার থেকে কালাম নানা সময়ে টাকা এনেছে প্রায় আশি হাজার। কাগজে সব হিসেব দেখায়। পারুলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কালাম নির্বিকার। এমন একটা ঘটনা ঘটবে কালাম মনে হয় তার জন্য প্রস্তত ছিলো। মালেক তার টাকা চায়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জমি। কালাম জমির দলিল দিতে রাজি হয়। কয়েকদিন কালাম আর পারুলের মধ্যে চলে তুমুল ঝগড়া মারামারি। পারুলকে মারতে মারেত কালামের জিজ্ঞাসা আমি আমার বাপরে জমি বেচুম আমার ভাইযের কাচে, হেতে তোর কী?
তুমি জমি বেচলে কী খাইয়া থাকুম? আমাগো মানুর কী অইবে?মার খেতে খেতে পারুল বলে।
আমি কী মইরা গেচি?
তুমি করবা বাল। তুমি বাইচা থাকলেইবা মরলেই বা কী? আমাগো মুহে দুইডা ভাত দিতে পারো? হারাদিন গায়ে বাতাস লাগাইয়া ঘুইরা বেড়াও। আর বাপের সামান্য ধানীজমি বেকুবের নাহান বেচলেÑযামু কোতায়? আমার মানুর কি অইবে?আমর কি অইবে?
চারপাশের লোকেরা মজা দেখে, অনেকেই পারুলের ব্যথায় সমব্যথী হয়। কিন্তু কারো কিছু করার থাকে না। মালেককে জমি লিখে দেয় কালাম। মালেক আরও কিছু টাকা দেয়। মাস খানেক বেশ ভালোই চলে। হাতের টাকা শেষ হলে আর চলে না। পারুলদের দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে। নিজের জন্য যত না তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় মানুর জন্য। ছোট্ট বাটা ভরা মিষ্টি একটি মুখ খিদেয় কেমন আমচুর হয়ে থাকে। কালাম আগের মতো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ছেলের জন্য বাধ্য হয়ে পারুল বড় ভাসুর মালেকের বাড়িতে ধান বানার কাজ নেয়। নিজের জমির ধান তাকে বেনে,ঝেড়ে,তুলে দিয়ে আসতে হয় মোড়ায়। বিনিময় ভাসুর বৌ একটু বেশিই দেয়।

পারুলের এক মামাতো ভাই জহিরুল মালয়েশিয়া থাকে। সে দেশে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে কয়েকটি ভিসা। এক সময়ে পারুলের সঙ্গে জহিরুলের বিয়ের কথা হয়েছিল। কিন্ত পারুলে বাবা সোলেমান কবিরাজ রাজি ছিলো না। কারণ জহিরুল বেকার। আজ সেই জহিরুল অনেক টাকা পয়সার মালিক।
মানুর ভবিষৎ ভেবে পারুল অস্থির। ভাসুরের বাড়িতে কাজ করাটাও তার জন্য ভয়ানক যন্ত্রনার। প্রতি মুহূর্তে সে আত্মপীড়নে দগ্ধ হয়। যে কোনোভাবে সে এই দগ্ধচুলো থেকে মুক্তি চায়। নিজের গ্রামে এসে জহিরুলের সঙ্গে কখা বলে। মানুর বাবা কালামের জন্য পারুল একটি ভিসা চায়। জহিরুল সঙ্গে সঙ্গে রাজি । আবার ফিরে আসে কালামের বাড়ি। রাতে ধীরে সুস্থে মনের ভেতর অনকে স্বপ্নের আলপনা আঁকতে আঁকতে কালামকে জানাতেই সে ক্ষেপে ওঠে আহত শুয়োরের মতো আমি বিদেশে যামু না।
ক্যান যাইবেন না? আপনে দেশে থাইকা কী করবেন? জহিরুল কম টাহায় ভিসা দেবে। সবার থন নিতাতেছে এক লাখ টাহা,আমারে দেবে মোডে পঞ্চাশ হাজার টাহায়। বেতনও ভালো বেশীদিন না, বছর তিনেক থাইকা আহেন। আপনের আমার আমগো পোলার একটা ভবিষৎ আচে না?
দাঁত মুখ খিচায় কালাম আমি বিদেশে গেলে তোর মজা অয়?
মাইনে?
মাইনে কি? তুই কী মনে করস তোর কায় কায়বার আমি কিছু বুঝি না? হোন, আমি অইলাম আবুল হাসেম মেরধার পোলা আবুল কালাম মেরধা। আমি সব বুঝি।
কি বোঝেন আপনে?
আমারে বিদেশে পাঠাইয়া তুই জহিরুলের লগে ফষ্টিনষ্টি করবি। তুই মনে করছোস আমি কিছু জানি না। আমি সব জানি তোরে তোর মামাতো ভাই এই জহিরুল বিয়া করতে চাইছিলো না?তহন হের টাহা পয়সা আছিলে না, বিয়া অয় নাই। এহন কম টাহা লইয়া আমারে মালয়শিয়া পাঠাইয়া তোর লগে আকারে কুৎসিৎ ইঙ্গিত করে কালাম হেই ঝাল এহন মিঢাইবে তোর মামাতো ভাই আমিও ঘুঘু,হেই চান্স আমি হেরে দিমু না। আমার নামও কালাম। আমার বাপের নাম আবুল হাশেম মেরধা।
আপনে একটা আস্তা শুয়ার।
কি কইলি? আমি শুয়ার? তোর মুখ আমি ভাইঙ্গা হালামু দরজার দাশা নিয়ে পিটাতে শুরু করে কালাম।
পারুল রুখে দাঁড়ায় দেহেন, আপনে আমারে অনেক মারচেন। আর মাইরেন না কইলাম।
তোরে মারলে কি অইবে?
ভালো অইবে না।
তুই কি হরবি আমার?তোর মতো নষ্ট মাইয়া মানুষ আমারে কি হরবে?তোরে আমি কালকাই তালাক দিয়া দিমু,তোরে আমি রাকমু না কালাম আবার দাশা উঠায়।
নিজের মাথার উপর নেমে আসার আগেই দরজার মোটা দাশা ধরে ফেলে পারুল তুই হরবি আমার….কুৎসিত গাল দেয় পারুলও। তোর মুরোধ আমার জানা অইচে মেরদার পো মেরদা….পারুল এক ধাক্কায় দরজার দাশাসহ কালামকে মেঝেতে ফেলে দেয়। চার হাত পা ছড়িয়ে কালাম মাটিতে পড়ে হতভম্ভ। তার গায়ে হাত তুললো পারুল ! বৌয়ের হাতে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে ছড়িয়ে পড়বে সে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না। ঘুমঘুম চোখে মানু দেখছে পিতার এই মুমূর্ষ দৃশ্য। কালাম উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু সে শরীরে কোনো শক্তি পায় না। কোনোভাবে দুমরানো মোচড়ানোর জটিলতা থেকে উঠে বসবার আগেই ঘর থেকে বের হয়ে গেছে পারুল,সঙ্গে মানু।

কালাম কয়েকটি দিন প্রবল ঘোরের মধ্যে কাটায়। রাতের সেই পতনের দৃশ্যটা থেকে সে এক মুহূর্তের জন্য মুক্তি পাচ্ছে না। দিনে রাতে সব সময়ে পতনের হিমায়িত দৃশ্যটা তার চারপাশে ঘুর ঘুরে যাত্রার নায়িকাদের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসে আর নাচে। নাচে হাসে আর চিমটি কাটে। না পারে কাউকে বলতে,না পারে বমি উগড়ে ফেলে দিতে। দৃশ্যটা ছায়ার মতো তার চেতনালোকে লেপ্টে থেকে পলে পলে উপহাস করছে শালা! বৌয়ের আতে মাইর খাইছো?
কয়েকটা দিন কাটানোর পর কালাম মনে মনে একটা প্লান তৈরী করে। ফুসলিয়ে পারুলকে বাড়িতে এনে এমন শাস্তি দেবে কি শাস্তি দেয়া যায়? অনেক শাস্তি ভাবে কিন্তু কোনোটাই তার পছন্দ হয় না। এরকবার ভাবে পারুলকে গভীর রাতে বালিশ মুখে চেপে ধরে মেরে বস্তা ভরে কচানদীতে ফেলে দেবে। শাস্তিটা কঠিন হলো না,আরও কঠিন শাস্তি দিতে চায় কালাম। আচ্ছা পারুলের হাত পা বেঁধে মুখে কাপড় গুজে একটু একটু করে হাত পা কাটলে কেমন হয়? সঙ্গে সঙ্গে কালাম সিদ্ধান্ত নেয় তার স্ত্রী পারুলকে সে এই সুন্দর শাস্তিটাই সে দেবে। ধারালো ব্লেড দিয়ে পারুলের মখমলে শরীর একটু একটু কাটবে আর জিজ্ঞেস করবে তুই আমারে কোন সাহসে তুই কইলি? আমার গায়ে আত তুললি? এহোন তোরে আমার আত দিয়া কোন বাজানে বাচাইবে? আমার লগেতুই তোকারী করার ফল,আবুল হাশেম মৃধার পোলার শরীরে হাত তোলার মজাডা তোমারে বুঝাইয়া দিমু কড়ায় গন্ডায়।

পরের দিন বিকেলে কালাম স্থানীয় হাট থেকে তিন কেজি মিষ্টি নিয়ে তালতলা গ্রামে যায়। অনেক বছর পর সে মিষ্টি নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। তার একটু একটু শরম লাগছে। কিন্তু পারুলকে শাস্তি দিতে হলে একটু আধটু শরমে কিচ্ছু যায় আসে না। মিষ্টিটা একটা ভাণ। একটা ছলনা কালামের চোখে ভাসে শাস্তি দেয়ার অবর্ননীয় মধুর দৃশ্যাবলী। রক্তাক্ত সেই দৃশ্যাবলী আর পারুলের আর্তি ও আর্তনাদ উপভোগ করতে করতে কালাম তালতলা গ্রামে ঢোকে। সোলেমান কবিরাজের বাড়ির সামনে একটা মাঠ। মাঠে অনেকের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে মানু। মানু বাপকে দেখে দৌড়ে আসে বাজান?
কালামও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বাজান? তোমরা কেমুন আচো?
ভালো নাই বাজান মানুর চোখে পানি।
ক্যান ভালো নাই? কি অইচে? মায়ে মারচে?
মায়ে কেমনে মারবে? হেতো বিদেশ গেছে
তোমার মায়ে কোতায় গেচে? কথাটা ঠিক বুঝতে পারে না কালাম।
মালায়শিয়া গেছে।
কালামের ভেতরটা একদম খালি হয়ে যায়। মনে হয় সে মাটিতে নেই। সে শূণ্যে উড়ছে ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো আকাশ জুড়ে। ঢোক গিলে কালাম আবার জিজ্ঞেস করে তোমার মায়ে কই গেছে?
কইলাম না, মালায়শিয়া গেচে।
হাচা?
হ,হাচাই কইতেছি। বিস্যুৎবার গেচে। তিন বচ্চর পর আইবে। যাবার সমায় কইচে মায়ে আমারে লাল জামা,নতুন শিলাট, আর নতুন বই কিইন্না দেবে। হাতে তিন কেজি মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে মাঠের মাঝখানে আবুল হাশেম মৃধার ছেলে আবুল কালাম ন্যাড়া একটি বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকে ছালবাকল হীন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত