| 19 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস নারী

প্রাচীন মিশরের নারী ও নারীর অধিকার

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

 

।।সুস্মিতা দেব।।


টা প্রায়ই ধারণা করা হয় প্রাচীন বিশ্বে নারীরা সামান্য ক্ষমতা বা প্রভাব ভোগ করতো। তবে প্রাচীন মিশরে নারীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী চিকিৎসক, রাজনৈতিক উপদেষ্টা, অধ্যাপক  এমনকি শাসক হয়ে উঠতে পারতো। কিন্তু ইতিহাসে আজকের সংস্কৃতির নারীদের মতো তাদেরকেও সর্বত্র সংগ্রাম করে তাদের অধিকার অর্জন করতে হতো।

প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসে প্রথম পরিচিত মহিলা শাসক প্রথম রাজবংশের রাজত্বকালে বসবাস করতেন। তার নাম Merneith ছিল; তিনি রাজার সঙ্গী এবং ২৯৭০ খিষ্টপূর্বাব্দে একজন শাসক ছিলেন।

সমঅধিকারের হাজার বছর পর চতুর্থ টলেমি শক্তিশালী নারী রীতির ঐতিহ্য বন্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনি আইন পরিবর্তন করে অনেক অধিকার বাতিল করেন যা নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছিল।

এটা আসন্ন জাহাঁবাজ বিশ্বাসের অন্ধকার যুগের চরিত্রগত সুচনা, যার শিকড় রোম ও গ্রিসে ছিল।
তবে মিশরের নারীরা পুরুষ শাসিত সমাজ মেনে নিতে চায়নি। মিশরীয় সভ্যতার শেষ পর্যন্ত তারা অধিকারের লড়াই করে গেছেন। সাধারণভাবে, গবেষকরা ধারণা করেন যে, ৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে মহান বিজ্ঞানী হাইপেশিয়ার মৃত্যুর সাথে সাথে মিশরীয় নারীদের স্বাধীনতা শেষ হয়ে যায়। এই ঘটনার আগে তিন সহস্র বছর পর্যন্ত প্রাচীন মিশরীয় নারীরা সমাজে অনেক অধিকার লাভ করেছিল।

নারী, যিনি ইতিহাস রচনা করেন

প্রাচীন মিশরে Seshat কে লিপিকারদের দেবী বলা হতো। তার পূজারিণীদের অনেকে শিক্ষিত লেখক ছিল, যারা বিত্তবান পরিবার ও শাসকদের জন্য কাজ করতো।

তাছাড়া, এটা মনে হয় যে উন্নত, শিক্ষিত নারীরা সব সময় লিখন বিদ্যার পাঠ নিতো। দেইর এল-মদিনার নারীদের হতে জানা যায় যে মিশরীয় সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর মহিলারাও লিখতে পারতো। চিত্রকার, চিত্রশিল্পী, পাথর রাজমিস্ত্রি ও অন্যান্য শ্রমিকদের স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের কাছে পত্র আদান-প্রদান করতেন। তারা দৈনন্দিন জীবনের ঝঁড় ঝামেলা সম্পর্কে, তাদের অনুভূতি এবং যা কিছু তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সে সব সম্পর্কে লিখতো। পুরুষের মতো একজন রাজকীয় লিপিকার হতে নারীদের কি অসুবিধা ভোগ করতে  হতো তা আমরা জানি না। যাইহোক, পুরুষদের চেয়ে যে তাদের বেশি কিছু করতে হতো এর কোনো প্রমাণ নেই। তাই ধরে নেওয়া যায় যে পরীক্ষায় তারা সমান সুযোগ পেতেন। ৬ষ্ঠ রাজবংশের শাসকদের সময় প্রথম পরিচিত মহিলা লিপিকারের নাম পাওয়া যায়। ৫ম রাজবংশের উজির Ihy-এর মাস্তাবায় (সমাধি স্থান) Idut-এর নাম পাওয়া যায়। তিনি সম্ভবত ফেরাও উনাসের (Unas) কন্যা ছিলেন।

থীবজ নগরীর সমাধিক্ষেত্রের অংশ, দক্ষিণ Al-Assasif সমাধিক্ষেত্রের TT390 নং সমাধিতে Irtyrau নামক একজন নারী সমাহিত ছিলেন। তিনি ফেরাও প্রথম Psamtik-কের কণ্যা, প্রথম Nitocris-এর প্রধান লিপিকার, দেবতা আমুনের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। ৫৮৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে Nitocris আমুনের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। Irtyrau, এবাইডোস নগরের একটি বিশিষ্ট পরিবার Thinite-এর সদ্যস ছিলেন। ১৮২০ সালে উইলকিনসন, হেই ও বার্টনের দল Irtyrau এর সমাধির আবিষ্কার করেন।

Ankhesenpepi-II
রাণী Ankhesenpepi II ও তাঁর পুত্রের মূর্তি

ফেরাও এর উজির

প্রাচীন মিশরে কিছু মহিলা উজির (vizier) (ফেরাওর সর্বোচ্চ কর্মকর্তা) হতে পারতেন। তাদের মধ্যে শুধু দু জনের নাম নিশ্চিত করে জানা যায়। ঐতিহাসিক লিপিতে প্রথম জন নেবেত (Nebet) নামে পরিচিত। মিশরের পুরনো সাম্রাজ্যের ৬ষ্ঠ রাজবংশের ফেরাও পেপির রাজত্বকালের সময় তিনি উজির ছিলেন। তার স্বামী ছিলেন রাজ-কর্মচারী Khui, যিনি রাজার আদালতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে ছিলেন। Nebet এবং Khui এর কন্যারা, প্রথম Ankhesenpepi এবং দ্বিতীয় Ankhesenpepi, প্রথম পেপির স্ত্রী হন। প্রথম Ankhesenpepi ফেরাও Merenre Nemtyemsaf এর মা ছিলেন। তাঁর বোন আরেক জন ফেরাও দ্বিতীয় পেপির জন্ম দেন। তাছাড়া, দ্বিতীয় Ankhesenpepi, তাঁর প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর Merenre Nemtyemsaf  কে বিয়ে করেছিলেন। Nebet তার সময়ের একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকে বিশ্বাস করেন তিনি রাজপরিবারের রাজকুমারী ছিলেন।

এছাড়াও টলেমিদের সময়কালে, ৫ম টলেমির রাজত্বকালে, একজন নারী উজির হয়েছিলেন।
তাঁর নাম রানী প্রথম ক্লিওপেট্রা সায়রা। তিনি দ্বিতীয় ক্লিওপেট্রা, ষষ্ঠ টলেমি এবং অষ্টম টলেমির মা ছিলেন। ২০৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তিনি রাজা মহান তৃতীয় এন্টিওসাস (Antiochus) ও তাঁর স্ত্রী লিওডাইসের কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মিশরের মহান ক্লিওপেট্রাদের একজন এবং সম্ভবত এই দেশের একমাত্র রাণী যিনি উজির হয়েছিলেন।

সে্কমেতের চিকিৎসকগণ

প্রাচীন মিশরের ঔষধ খুব উন্নত ছিল এবং দেবী সে্কমেত এর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। প্রাচীন বিশ্বের সব চিকিৎসক মানব দেহের গোপন রহস্য জানতে মিশরে আসতো। তা সত্ত্বেও, মিশরে নারীরা ধাত্রী থেকেও বেশি কিছু হতে পেরেছিল। তারা রাজ পরিবারের চিকিৎসক ছিল এবং সার্জারীও করতো।
প্রায় ২,৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ২য় ও ৩য় রাজবংশের সময়কালে প্রথম পরিচিত মহিলা চিকিৎসকের নাম জানা যায়। তার নাম ছিল মেরিট পতাহ (Merit Ptah)। তাঁর নাম Saqqara-র স্টেপ পিরামিডের পাশের সমাধিক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায়, যা আরেক জন মহান উজির, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী, ইম্হোটেপ দ্বারা নির্মিত। শিলালিপিতে বলা হয়েছে, মেরিট পতাহ এর পুত্র মহাযাজক এবং প্রধান চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এতে মনে করা হয় যে তিনি তাঁর পুত্রের শিক্ষক ছিলেন। কিছুকাল পরেই অন্য আরেক মহিলা রাজসভার সবচেয়ে প্রভাবশালী চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। তাঁর নাম পেসে্সহেত (Peseshet) ছিল। তিনি ৪র্থ ও ৫ম রাজবংশের রাজত্বকালে বাস করতেন। তিনি রাজ্যের প্রধান ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

নারী মস্তিষ্কের বিস্মৃত শক্তি

প্রাচীন মিশরে নারীরা তাদের ঐতিহ্যগতভাবে
নিবেদিত অনেক কাজ করতো। কিন্তু তারা নিজেদের স্বাধীন বস্ত্র, গয়না এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কর্মশালার মালিক হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। এমনকি তারা রাজনৈতিতে, চিকিৎসায়, ধর্মে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতো।
যদিও তাদেরকে শত শত বছর ধরে অনেক ঐতিহাসিকেরা  অবমূল্যায়ন করেছেন, তবুও প্রাচীন মিশরের শক্তিশালী সভ্যতায় তাদের শক্তিশালী অবস্থান বহু অংশে আধুনিক নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।

তথ্যসূত্র:

http://www.ancient-origins.net/history-famous-people/feminism-and-battle-women-s-rights-ancient-egypt-005895

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত