| 10 অক্টোবর 2024
Categories
এই দিনে কবিতা সাহিত্য

মুহম্মদ নূরুল হুদা’র কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আজ ৩০ সেপ্টেম্বর কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা’র জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


আমরা তামাটে জাতি

রোদ্দুরে নিয়েছি আর বৃষ্টিতে বেড়েছি
সহস্র শতাব্দী দিয়ে নিজেকে গড়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।

আগমনী স্মৃতি হয়ে লেগে আছে আঠালো জীবন
আমাদের জন্মলগ্ন জাতিস্বর পায়
যৌবন-ঘুঙুর হয়ে যায় বেজে যায়
ব্রহ্মাণ্ডের মতো এক স্বয়ম্ভু স্বপন-
সব স্মৃতি সব ধ্বনি একাঙ্গে পুষেছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।

কেউ কেউ তূণধারী, কেউ কেউ বেহালাবাদক
কারো হাতে একতারা কারো হাতে ধারালো ফলক
অনন্ত সময় জুড়ে জমিজমা জুড়ে
আমরা তো উৎসবে মেতেছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।

সমুদ্রের তলরূপী, গুহারূপী, মাতৃগর্ভরূপী
হৃদয়ের স্বপ্নশয্যা ছেড়ে
সঙ্গিন-সদৃশ সকল লাঙল উঁচিয়ে
মার্চ পাস্ট করতে করতে আমরা এসেছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।

এই আসা এই গতিভাষা
এ পথে রচিত হলো আমাদের সব ভালোবাসা।

ভালোবাসা জোসনা রাতে অশ্রান্ত বর্ষণ
ভালোবাসা তীব্র তাপে ভুবন-কর্ষণ
ভালোবেসে জীবনকে আনগ্ন চেয়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।

রাজধর্ম পিছে ফেলে, পিছে ফেলে গোত্রের আরতি
লোকধর্মে লোকসঙ্ঘে সুদীক্ষা নিয়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।

তোমার তরঙ্গ

 

 

অঙ্গের অনঙ্গ থেকে

যে-তরঙ্গ আসে

আমার অনঙ্গ তাকে

যদি ভালোবাসে

মেঘে মেঘে উড়ে যায়

 

শাদা বালিহাঁস

আমরা দেখিনি কিছু

দেখেছেন কবি কালিদাস

দেখেছেন উদয়াস্ত

সুনীল আকাশ

 

ততক্ষণ

ভাবনা,

যতক্ষণ

তোমাকে

পাব না।

 

পেলেও

ভাববো,

কেননা

তোমাকে তো

ধরে রাখতে

পারবো না

 

 

পথ ছেড়ে পথে যাই

পথে পথে যাই

সব পথ মিলে গেছে

তোমার পথেই

আমাদের

অন্য পথ নেই

 

তোমার ভিতরে আমি

আমার প্রবাহ

আমার ভিতরে তুমি

তোমার প্রবাহ

 

আমরাই আমাদের দাহ

 

উড়ে আসে তোমার সংকেত

ভাষাহীন উচ্চারণহীন

উড়ে যায় আমার সংকেত

ভাষাহীন উচ্চারণহীন

অঙ্গ কাঁদে অঙ্গে পরাধীন

আমরা সেই সংকেতেই লীন

 

পাথর-বিবাহ

 

আমার চারপাশে চকচক করছে আদিম পাথর। হায়, পাথর খুঁটতে খুঁটতে আমার পাখিরাও ভুলে গেছে পাললিক চর। অন্ধ

আমি, আমিও পাথর তুলে রেখেছি আমার দুচোখে। আমার আগে আগে স্বয়ং পাথর আমাকেই শোঁকে। চোখ থেকে বুক, বুক থেকে সারাশরীর। শরীর ছেড়ে ত্রিভুবন ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার মন অধীর।

ঘুরতে ঘুরতে আমি নিজেই এখন জাফলং থেকে কুড়িয়ে-পাওয়া চাঁদের পাথর। চাঁদ মানে এই পৃথিবীর বুকে লকেটের মতো

ঝুলে-থাকা এক পাথুরিয়া চর। সেই চরে কোন দূরতম দ্বীপ থেকে উড়ে এলে হে আমার পাথরতমা?

তারপর শুরু হলো আমাদের শুভদৃষ্টি।

তারপর শুরু হলো আমাদের পাথরদৃষ্টি।

ডানা মেললো না নজরুলের বুলবুল।

‘দৃষ্টিতে আর হয় না সৃষ্টি আগের মতো গোলাপ ফুল।’

 

অনন্তর সাঙ্গ হলো জনে জনে পাথর-বিবাহ।

আহা! পাথর বোঝে না পাথরের অন্তর্দাহ!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত