মধ্যপ্রাচ্যের কবিতা

Reading Time: 2 minutes

ইরাকি কবি ফাদিল আল-আজ্জায়্যি এর কবিতা

সর্বশেষ ইরাক

প্রতি রাতে টেবিলের উপর এই প্রাণটাকে রাখি

এবং কান টেনে ধরি

চোখ থেকে আনন্দ-অশ্রু না ঝরা পর্যন্ত।

বিমান দ্বারা অনুপ্রবিষ্ট আরেকটি ঠান্ডা শীত

এবং সৈন্যগণ একটি ছোট পাহাড়-প্রান্তে

ইতিহাসের অপেক্ষায় বসে

আঁধার জলায় উদিতহতে

হাতের বন্দুকসহ

ফেরেস্তাশিকারের

বিপ্লব-প্রশিক্ষণে।

রোজ রাতে হাতের ওপর এ দেশরাখি

এটা আমার আঙ্গুলের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়

সন্মুখ রণাঙ্গন হতে সরে যাওয়া সৈন্যর মত!

একটি যাদুভূখন্ডে

আমরা দুঃখী নাইটদের গল্পে মেতে থাকতাম

যারা রাতের উল্কাদের মত সুদূর আকাশ পেরিয়ে এসে

জলন্ত ঘোড়া থেকে নামত।

অজস্র ঘুমন্ত ডাইনোসর আছে আমাদের,

যারা গায়ক পাখিতে ভরা সবুজ ঘাসের আদরে

আমাদের পাথর করে রাখতো।

এরপর যেন সে স্থির নিদানে পৃথিবীটা নতুন করে জন্ম নিতো,

দেবতারা আমাদের প্রতিবেশী ছিল,

এবং আমরা তাদের অলৌকিকে বিশ্বাসী ছিলাম।

একদিন কী যে ভুলে তাদের কাজে হাত হতে গেলাম,

ওরা রক্তখোর ভূগোল লেলিয়ে দিলে

আমরা পথ থেকে পিছলে গেলাম

গহীন কোন উপত্যকার দিকে,

ভিন্ন কোন জাদুর ভূখন্ডে।

কি নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকতায়!

ইরাকি কবি সামি মাহদি এর কবিতা

উত্তরাধিকার

পৃথিবী ও আকাশের মাঝে

আমি একটা মানচিত্র আঁকতে চাই

নবাগতের জন্য

আমার মৃত্যুর আগে

তাকে তার জাতাধিকার বুঝিয়ে দিতে

ভালবাসাপ্রখর দীপ্তি

একটি মই

আর বন্ধুপূর্ণ লিভিং রুম।

যুদ্ধের দিনলিপি

গাজলা হরিণের গাল বেয়ে নয়নতারা ঝরছিল সেদিন

যেদিন সেতুতে বর্ষিত বোমা ছিল বৃষ্টির ফোঁটা,

ভালবাসার সুরে ছিল বিচূর্ণ রাগ

আর আযানের সাথে মায়েরা হতভম্ব

আমরা আগুন দিয়ে রোজ ভোরের অজুসারি

আমাদের নামাজে, তেলায়াতে, ডুব সঞ্চালনে

আমরা সংগ্রহ করি আমাদের শরীরের অবশিষ্টাংশ

এবং ঘরদোরের ধ্বংসাবশেষ

এরপর আমরা আত্মা শুদ্ধ করি ক্ষত আর রক্ত দিয়ে

প্রচুর পেয়েছি আমরা

আমাদের আর কিবা পাবার আছে?

ও ভূখন্ড, নিঃস্ব রোগী, তুমি তো জানো

প্রচুর নিয়েছি আমরা

আমাদের গ্রহণগুলো তাই

গ্রহণ করছে আমাদের এখন

আমাদের সাথে পথিক ও পথ উভয়ই প্রস্তুত!

ইরাকি কবি দুনিয়া মিখাইল এর কবিতা

রত্ন

নদীটাকে আর উপেক্ষা করা হল না

এই শহরে কেউ দীর্ঘজীবী নয়

মানচিত্রে দীর্ঘ আর কিছুই নেই

ওখানে সেতুটি ছিল

যে রোজ আমাদের পার করে দিতো

সেতুটি

যুদ্ধে নদীর দিকে উল্টে পড়ে আছে।

এটা যেন সেই ললনা যে ছিল টাইটানিকে

তার উল্টে পড়া নীল হীরার সাথে!

আমি তাড়া-হুড়োয় ছিলাম

গতকাল আমি একটি দেশ হারিয়েছি।

তখন তাড়া-হুড়োয় ছিলাম।

হয়তো তাই লক্ষ্যই করিনি এটা কখন আমার ভেতর থেকে পড়ল

মনভোলা গাছের ডাল থেকে খসে পড়া মৃতের মত

ক্ষমা কর, যদি কেউ বয়ে যায়-

ফিরে যায় প্রতিবাদে

সম্ভাব্য আকাশের খোলা সুটকেসে

অথবা একটি খোদাইকৃত পাথরের উপর

ফাঁক হওয়া ক্ষতের মত

কিম্বা আবৃত

উদ্বাস্তুদের কম্বলে,

অথবা বাতিলকৃত

পরাজিত লটারির টিকিটের মত,

অথবা প্রায়শ্চিত্ত ভুলে যাওয়া অসহায়ত্ব

কিম্বা কোন লক্ষ্য ছাড়াই এগিয়ে গিয়ে জমে ওঠা ভিড়

শিশুটির জিজ্ঞাসার মত

নয়তো যুদ্ধের ধোঁয়ার সাথে উত্থানরত

অথবা অথৈ মরুতে পড়ে থাকা শিরস্ত্রাণমাঝে পুরানো বালির ঘূর্ণন

কিম্বা আলিবাবার চুরি যাওয়া বয়াম

নয়তো পুলিশপোশাকে ছদ্মবেশী;

বন্দী পালানোর উস্কানি!

অথবা সেই মহিলা- মনের জবরদখলে

যে আজো হাসবার চেষ্টায় রত

নয়তো বিক্ষিপ্ত

আমেরিকায় নতুন অভিবাসীর স্বপ্নের মত

যদি কেউ এটাকে পেরিয়ে যেতে হোঁচট খান

ফেরত দেবেন দয়া করে

দয়া করে ফেরত দেবেন স্যার

দয়া করে ফেরত দেবেন ম্যাডাম

এটা আমার দেশ

আমি তাড়া-হুড়োয় ছিলাম।

গতকাল যখন এটা হারিয়ে গেছে!

One thought on “মধ্যপ্রাচ্যের কবিতা

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>