মদহোশি

Reading Time: 2 minutes

অস্থির লাগছে। একেকটা গান বরাবর ঝামেলা পাকায়। অরুণিমাকে নিয়ে আলোচনা হলে বন্ধুরা ঠেলাঠেলি করে হেসে গড়িয়ে পড়ে।কারণ ওর প্রেম।”আজকের দিনে এরকমটা হয় নাকি, এক্কেরে রাধা রাধা একটা ভাব।বলে না যদিও মালটা কে, তবে অনেককেই তো মনে হয়।কার ঘাড়ে চেপেছে কে জানে?” প্রিয় বান্ধবী শব্দ শাণায়।

সুমন ওর বন্ধু। চারটি বছর ধরে অপেক্ষায় আছে। যদি কোনদিন…।নিষ্ফলা অভিমান এক রাগের জন্ম দেয়। অরুণিমা কিছু লিখলে না পড়েই ও লেখে ” বড্ড একঘেয়ে। সেই একজন লেখিকা আর তার প্রেম। অনেকদিন ধরে লিখছ।” অরুণিমা পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিয়ে একটা গল্প লেখে ও প্রত্যাশিত ভাবে একই ফিডব্যাক পায়। না পাওয়ার নানা প্রকাশ আর কি! সুনন্দা ওর খুব প্রিয় বান্ধবী। অন্ধ অনুকরণ করতে চায়, শব্দ থেকে শুরু করে ঘাড় বেঁকিয়ে ঠিক যেভাবে অরুণিমা হেসে ছবি তোলে আর আড়াইশো লাইক পড়ে সেদিন ই, সেটাও। আর সুযোগ পেলে বলে, সব ই ছক গো, লেখা ছাপা হওয়া, বড় কবিদের স্নেহভাজন হওয়া, এসব তুমি পারো , আমাকে তেমন কেউ পাত্তা দেবে কেন? ওর মনখারাপ বোঝে অরুণিমা। তাই হাত ছাড়ে না কখনো। জানে, প্রবল ঈর্ষায় পোড়ে সুনন্দা, তবুও।
এই যে সক্কলকে ক্ষমা করে দেওয়া বা জাস্ট ভুলে যাওয়া অরুণিমা পারে কারণ ও ভালোবাসতে জানে।

ভালোবাসা. .মাটি থেকে আকাশে উঠে যাওয়া একটা সিঁড়ি যেন।অনিমেষের প্রতিটা নিঃশ্বাস ও এঁকে দেয় শব্দের আদরে।আলোর ঝালর দোলে। অদৃশ্য সব কথোপকথন আলগোছে শুয়ে পড়ে খাতার উপরে। কিছু চায় না অরুণিমা। ওদের ভালোবাসাটুকুকে অক্ষরে অক্ষয় করে যাবে।কত মানুষের তো কত সখ থাকে। অরুণিমার সখ ভালোবাসাটুকু। অনিমেষ বাইরে থাকলে অস্থিরতা বাড়ে।ইউটিউবে দেখে” জাদু হ্যায় , নশা হ্যায় ” একসময় এই গান ওকে ফ্যান্টাসি শিখিয়েছিল। ওর বিপাশা সাজতে ইচ্ছে করে। লজ্জা নেই ওর। ওর ইচ্ছেরা দুর্বিনীত।অনাবশ্যক লজ্জার ভারে তারা ক্লান্ত নয়।কাউকে নিয়ে এত টলমল , এত তীব্র আকুলতা খুব বিরল মধ্যবয়সে। কেউ নিজের মনে একটা বাসরঘর বানিয়ে রাখে অনন্ত সময় ধরে, নিতে কষ্ট মানুষের । যা নিজের ক্ষমতার বাইরে, তাকে অবিশ্বাস করার , আঙুল তোলার চেষ্টা মানুষের সহজাত।অনিমেষ নেই । আর জাদু হ্যায় তেরা হি জাদুর রাণী মুখার্জির মতো ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অরুণিমা। চুমোয় ভরিয়ে তোলে অনিমেষকে। এত মোটা শরীরে ওরকম লাফ দিয়ে কোলে ওঠা যাবেনা। শুধু ওইটুকুর জন্য প্রাণপণ রোগা হওয়ার চেষ্টা করছে অরুণিমা। রুম্পা শুনে হেসে কুটিপাটি। “বিয়াল্লিশ বছর বয়সে রোগা হওয়ার এইটা কারণ, সত্যি তুই পারিস ও। ”
“দেখিয়ে দেবো” মনে মনে বলে অরুণিমা।আর একমনে হোয়াটস্অ্যাপে অনিমেষের পাঠানো গান শুনতে থাকে। কোন ট্যুরে গিয়ে পাঠিয়েছিল। রুম্পাকে গানটা পাঠায়। সকালে অনেকক্ষণ রুম্পাকে অনিমেষের গল্প করেছে। ভালোবাসার এ এক টিন-এজ আদিখ্যেতা।প্রিয় বান্ধবীকে বললে বোধহয় অনন্ত মিস করাটা কমে।বাচ্চাদের মতো বারবার হোয়াটস্অ্যাপ খুলে দেখে রুম্পা কিছু ফিডব্যাক দিল কিনা। সবটাই ওই ” মদহোশ দিল কি ধড়কন”..। কেউ বোঝেনা,বয়েই গেল। এই অনুভূতিটুকু র মধ্যে বাঁচার চেয়ে বড় পরিত্রাণ আর নেই।
অনিমেষকে লিঙ্ক পাঠিয়েছে ” যব সে তেরে নয়না”র, “দেখো রণবীর কে দিয়ে বানশালি প্রথম আমাদের কথা ভেবেছে। শুধু তোমরা ” মেরে খোয়াবো মে আয়ে” দেখে তোয়ালের ওপারের কথা ভাববে, তা হবেনা। আমাদের ও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর দেখো রণবীরের এখানে প্রেমের প্রকাশটি কী তীব্র,চোখে মুখে একটা ভালোবাসার আরাম-গন্ধ।”ফোন আসে ভোরবেলা। ভিডিও কলে হোটেলের জানলার পাশে একজন নাদুসনুদুস চেহারার লোক তোয়ালে পরা।
হেসে ফেলে অরুণিমা। খুশি হয়ে যায়। আরেকবার সব্বাইকে ক্ষমা করে দিয়ে বলে ” ভালোবাসা ভালো …ভালো…ভালো।”

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>