শুভ মা দিবস

Reading Time: 3 minutes
সম্ভবত পৃথিবীর তাবত মানুষ তাঁর প্রিয় মানুষের তালিকায় প্রথমেই বলেন যে মানুষটির নাম সে তাঁর মা, আর যদি বলা হয় প্রিয় শব্দটি কি? নিশ্চয় সেটি সুমধুর মা ডাক। মাকে ভালোবাসতে কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। তবুও পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে কয়েক যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মা দিবস।

প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হয়। দেশ ও অঞ্চলভেদে কোথাও কোথাও অবশ্য মা দিবসের তারিখ ভিন্ন হয়ে থাকে।

মা দিবসের সূত্রপাত ও ইতিহাস

ইতিহাস খতিয়ে দেখা যায়, মা দিবসের সূচনা প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের আরাধনা, প্রাচীন রোমানে দেবী জুনোর আরাধনা ও ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে মাদারিং সানডের মতো বেশ ক’টি আচার-অনুষ্ঠান। মায়েদের সম্মানে পালিত মাদারিং সানডে পালিত হতো নির্দিষ্ট একটি রোববারে।

এ তো গেলো গোঁড়ার দিককার কথা। যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামে এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের  পৈচাশিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদার’স ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিলো। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন। এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন  মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এসময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান।

মায়ের মৃত্যুর পর আনা মেরি জার্ভিস মায়ের শান্তি কামনায় ও তার সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের জন্য প্রচারণা চালান। তিন বছর পর ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার অ‍ান্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালিত হয়।

চার্চটি বর্তমানে International Mother’s Day Shrine নামে পরিচিত। আনা রিভিজ সাদা কারনেশন ফুল ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই নিজের ও সব মায়ের সম্মানে চার্চে উপস্থিত সব মায়েদের দু’টি করে সাদা কারনেশন ফুল উপহার দেন অ‍ানা মেরি জার্ভিস।

কিন্তু এখানেই অ‍ানা মারি জার্ভিস থেমে ছিলেন না। ১৯১২ সালে তিনি স্থাপন করেন মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এসময় জার্ভিস মা দিবসকে ছুটির দিন করার লক্ষ্যে ও দিনটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচারণা চালান। তার এই প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায়। তারপর ১৯১৪ সালে তার প্রচেষ্টা সফল হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

এরপর থেকেই সরকারিভাবে মা দিবস পালিত হতে থাকে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই মা দিবসের মূল প্রাধান্যকে ছ‍াড়িয়ে যায় দিনটির বাণ্যিজ্যিক প্রভাব। মা দিবসে ফুল বিক্রি ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে ওঠে যাতে করে আনা মেরি জার্ভিস প্রতিবাদী হয়ে পড়েন। দিনটির এমন অবমাননার প্রতিবাদে তিনি নিজের সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করেন ও ঘোর বিরোধিতার অভিযোগে গ্রেফতার হন।

মূলত আনা মেরি জার্ভিসকেই মা দিবসের আসল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। মা দিবসের এই দিনে বিশ্বের সব মমতাময়ী মায়ের প্রতি ইরাবতী পরিবারের আন্তরিক শ্রদ্ধা।

শুভ মা দিবস।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>