| 20 এপ্রিল 2024
Categories
গীতরঙ্গ

গীতরঙ্গ: ঢাকায় মোটর যানের সূচনা ইতিহাস । পলাশ পোড়েল

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

বৃটিশ রমনীদের ইচ্ছা পূরণের হাত ধরেই ঢাকায় মোটর যানের ইতিহাসের সূচনা :
পলাশ পোড়েল

 

বাংলাদেশের ঢাকার যানবাহনের ইতিহাসে ইংরেজদের অবদান থুড়ি ! বলাভালো বৃটিশ রমনীদের অবদান অনস্বীকার্য। লর্ড কার্জন ও স্যর হার্বাট রিড এই দুইজনের স্ত্রীগণ এতে প্রত্যক্ষ মদত দিয়েছেন। তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে এই গতি যন্ত্রের চাকায়।যদিও প্রথম গাড়ী এসেছিল নবাবদের হাত ধরেই !
*একটু ফিরে দেখি সেই সব কাহিনী আর ইতিহাসের পাতায় –
ঢাকায় প্রথম অটোমোবাইলের চাকা কখন ঘুরেছিল? প্রশ্ন আছে, নেই সঠিক কোনও উত্তর। তবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে অনুমান করা যায়, ঢাকার প্রথম গাড়ি কোনো উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মকর্তা বা কোনও জমিদার নিয়ে এসেছিলেন। এইচ এইচ রেনল্ডস প্রথম গাড়িটি বোম্বে থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন ১৮৯৮ সালে। আর কলকাতায় আনার কয়েক বছরের মধ্যে মোটরগাড়ি চলে আসে ঢাকায়। সেটাই কি ১৯০৪ সালে? কেননা সে বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছেন স্ত্রী লেডি মেরি কার্জনকে নিয়ে। তাঁদের আগমন উপলক্ষে মনোরম ভাবে সাজানো হল নবাবের শাহবাগের বাগানবাড়ি। আর তড়িঘড়ি করে নবাব বেশ কয়েকটি গাড়ি কিনে আনলেন কলকাতা থেকে। সেই গাড়িবহরের একটিতে লেডি কার্জন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে বসলেন, লর্ড কার্জন দাঁড়ালেন পাশে; চারটি গাড়ি সারিবদ্ধ ভাবে বাড়ির সামনের চত্বরে দাঁড় করানো। এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি তুললেন সে সময়ের বিখ্যাত জার্মান ফটোগ্রাফার ফ্রিৎস কাপ। ঢাকার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাক্ষী রয়ে গেল আমাদের জন্য নবাবের মোটরগাড়ি।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Motor Jaan irabotee-gitaranga-special


*ইংরেজ আমলের শুরুর দিক থেকেই মোটামুটি বলা যায়-
বিশ শতকের প্রথম থেকেই ঢাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি ও জমিদাররা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনা শুরু করেছিলেন। তবে ঢাকার সাধারণ জনগণকে নতুন এই যন্ত্রটিতে চড়তে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও কিছুটা সময়। আর সেটার সুযোগ এসে গেল ত্রিশের দশকে জনসাধারণের জন্য ট্যাক্সি সার্ভিসের শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে।
*ঢাকায় প্রথম গাড়ি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় তারও নেপথ্যে রয়েছেন আর এক বৃটিশ রমণী। আসুন জেনে নিই ইতিহাসের পাতা থেকে সেই কথা।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Motor Jaan irabotee-gitaranga-special


ঢাকায় প্রথম গাড়ি প্রদর্শনী হয় জুলাই ১৯৪০ সালে। সস্ত্রীক ঢাকায় এলেন নতুন গভর্নর অব বেঙ্গল স্যার হার্বাট রিড। লেডি হার্বাটের শখ হলো, মোটর প্রদর্শনী করবেন। এর আগে পূর্ববঙ্গে কখনও মোটরগাড়ির প্রদর্শনী হয়নি। গভর্নরের আদেশ বলে কথা। ধনাঢ্য ব্যক্তি, জমিদার ও খানবাদুর- যাদের গাড়ি আছে, তাদের সবাইকে অংশ নিতে হবে এই মোটর প্রদর্শনীতে। পুরান ঢাকার বিখ্যাত মির্জা আব্দুল কাদের সর্দারের ছিল একটি নতুন অস্টিন গাড়ি। কাদের সর্দার ঠিক করলেন, তিনিও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। ফটোগ্রাফার মাস্টার মোস্তফা হোসেন, লরি মাস্টার অমূল্য বাবু আর খাজা ইসমাইলকে নিয়ে বসলেন শলাপরামর্শ করতে। ঢাকার বিখ্যাত নাট্যকার প্রয়াত সাঈদ আহমেদ এক আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ঢাকার এই মোটর প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কারের জন্য মনোনীত গাড়িটির ছবি মোস্তফা হোসেন তুলেছিলেন। যুদ্ধের সময় মোস্তফা বেকার হয়ে পড়েন। এরপর তিনি একটি বক্স ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলার কাজ শুরু করেন। ইংরেজ সেনাদের ছবি তুলতেন ভিক্টোরিয়া পার্কে। মোস্তফার স্টেজের অভিজ্ঞতা গাড়িসজ্জার পরিকল্পনায় কাজে লাগালেন কাদের সর্দার। সে সময় যুদ্ধের সঙ্গে বসবাস, তাই মোস্তফা হোসেন যুদ্ধকে প্রতীকী করে অস্টিন গাড়ি ডেকোরেট করার প্ল্যান করলেন। সিদ্ধান্ত হলো, ‘সাপকে বধ করছে ময়ূর’- এই দৃশ্যটি গাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হবে। জার্মানির হিটলার সাপ আর ব্রিটিশ সম্রাট ময়ূরের প্রতীক। শান্তির প্রতীক ময়ূর সেই সাপকে মেরে ফেলেছে। ময়ূরের আকৃতি দিয়ে সাজানো এই গাড়ির পাশে চালক প্রথম পুরস্কারের ট্রফি হাতে গর্বিত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে। ছবি তোলা হবে। ছবি তুললেন পুরান ঢাকার ফটোগ্রাফার মাস্টার মোস্তফা হোসেন। ছবিটি ঢাকার ইতিহাসের এক চকমপ্রদ ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেল। ১৯৪০ সালের ১৯ জুলাই রমনার রেসকোর্সে নানা রঙে-ঢঙে সজ্জিত গাড়ি জড়ো হয়েছিল। লেডি হার্বাট প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন। প্রায় কুড়িটি গাড়ি তাতে অংশ নেয়। লেডি হার্বাট ঘুরে দেখলেন সজ্জিত গাড়িগুলো। কাদের সর্দারের গাড়িটিই তিনি বেছে নিলেন প্রথম পুরস্কারের জন্য। কাদের সর্দারের সময়োপযোগী সৃষ্টিশীল আইডিয়ার তারিফ করলেন। প্রথম পুরস্কারের কাপটি তাই তাকেই দেওয়া হলো।
অবশ্য আরও অনেক অনেক কাহিনী আছে তারপরও।সেসব কথা পরে আলোচনা করা যাবে।ঢাকার মোটর যানের ইতিহাসে ইংরেজদের সেই সব কাহিনী আছে গল্পের মতন।

 

 

* কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
১। পালকি থেকে বাতানুকুল গাড়ি: ঢাকার জনপরিবহণের একাল-সেকাল- সৈয়দুল হাসান খোকন
২।কিছু আলো নীল ঢাকায় কলের গাড়ি – সমকাল

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত