| 20 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

যুগল কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

কপার-লাইন অথবা …

এই যে ছুঁড়ে ফেলা-ছুটে আসা তোমার বাঁশি,
এই যে আনাড়ি চাঁদ বা ফাঁদ
এই যে ভুল কুড়োনো আমার ভয়ংকর তৃপ্তি, একে তুমি কী নামে ডাকবে?

নদীর মতো যে-শিরদাঁড়া ভিজিয়ে ফেলে অসময়
অথবা নোলক পরা যে-বিকেল বুকের ভাঁজে
রেখে যায় কোনও শিরোনামহীন পৃথিবী কিংবা
অসমাপ্ত এক ভূমিকম্প;
আদৌ কি তাকে কোনও নামে জড়ানো যায়?

এই তো সেদিন আমার ‘পিয়া তোরা ক্যায়সা অভিমান’
পড়তে গিয়ে একশ’ আট বার আমার নাভিতে ঠোঁট রাখতে-রাখতে বললে যে প্রতিটি ঠোঁট রাখা মানেই
প্রতিটা জন্মে শুধু আমাকেই পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আসলে।

আসলে তোমারও একটা কুহু আছে।
আমারও একটা কুহু আছে।
তোমার টান আছে, তান নেই।
আমার তান আছে, টান নেই।

প্রতিটা জন্ম আসলে কুহুজন্মের কুহক
একে তুমি কী নামে ডাকবে?
ফালা-ফালা আগুনের আদৌ কি কোনও নাম হয়?

 

 

 

জলঙ্গির পাড়ে অন্য বনলতা

চোখের সামনে খুন হতে দেখলাম।
অথচ, দিনের পর দিন পুলোওভারে
মহীয়সী আলোর মতো সজাগ ছিল সে বা তারা।
তাই ছিল প্রতিটি কথারই নানা রং!
‘আজি যত তারা তবে আকাশে..’

চোখের সামনে মার্জিতভাবে ধর্ষিত হল সে।
সাজানো ছকে সব থেকে গেল
হাইটেক-টেকনোলজির ড্রাইভে। হার্ড-ডিস্কে।

চোখের সামনে তিল-তিল করে মরতে-মরতে
সে আশ্রয় নিয়েছিল একটি নিবিড় বুকে।
সেই বুক ঘুম দিয়েছিল।
চিনিয়েছিল নিজেকে রক্ষা করার যাবতীয় গোপন।
প্রাপ্যের চেয়ে সে অনেক বেশি দিয়েছিল;
অযোগ্য অন্ধকারে ভুল করে জ্বলিয়েছিল ঝাড়-লণ্ঠন।
নিভে গিয়েছিল বা নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

চোখের সামনে দেখলাম
হত্যার আগের যাবতীয় প্রকৌশল।
দেখলাম, ত্বকের সাতটি স্তরের সাত-কলা।
সঙ্গম দেখলাম। দেখে তুমুল ভিজলাম।
শরীর থেকে সবক’টা তাপ রেখে এলাম
মারাং-বুরুং এর পায়ে।
সাদা-লাল সব রঙের মুরগিও রেখে এসেছিলাম।

স্লো-পয়েজেনিংয়ের মতো ক্ষয়ে যাচ্ছে
দেওয়ালের নিজস্ব রং।

অথচ, জলঙ্গির ধেউয়ের মতো অস্থির-চঞ্চল-পাগলপারা নদীটি,
ঝর্নার মতো ঝনঝন করে হেসে ওঠা নদীটি..
লেবু ফুলের আস্ত বাগান তুলে এনে দিয়েছিল
তার উঠোনে অথবা জীবনে।
অথচ কানামাছি জীবন মাথার কাছে রেখে গেল
কত-শত গানের গল্প।
তোমাকে বহুক্ষণ গান শোনায় মৌসুমি-হওয়া।
আর আমাকে বেঁচে থাকার গুনগুন শুনিয়ে
ঘুম দেয় কেউ। তোমার গান, আমার ঘুম সবই তো
ইথারের খেলা। মায়া পুড়ে গেলে
তার আগুন নিভিয়ে দেয় মৌসুমি হওয়া।
তখনও আমি তার আর সে আমার
শ্বাসের শব্দে ঘুমে মগ্ন…

হত্যাই ছিল শেষমেশ। বাঁচালো না কেউ।
বাঁচতে দিল না…
চোখের সামনে খুন হতে দেখলাম
ঝলমলে নদীটিকে…

দূরে তোমাকে রাখতেই হত;
জল নিরুপায় হলে ধর্ষকাম আগুন
বেপরোয়া হয়ে ওঠে!
আমি তোমার শ্বাসে শ্বাস রেখে
প্রলাপ আওড়ে বলি কত কথা!

এক-একটা জন্মান্তর কিতকিত খেলার মতো
পার করে শঙ্খমালা, দু’হাতে দু’পায়ের দু’দিক
থেকে সামান্য তুলে রেখেছে লাল ঢাকাই
ওর গোড়ালিতে আজীবনের সমস্ত জন্ম লেখা ছিল

কেউ আমার ডাকনাম রেখেছে ‘খলনায়িকা’
মৃত্যুর অনেক পরে জেনেছি…
অন্তত নদী নামের চেয়ে ঢের ভালো !

বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগৎ আঁকতে গিয়ে
ভেঙে গেল ঘুম…
শঙ্খমালারা মরে না।
সমস্ত জন্ম অতিক্রম করে সে জেগে থাকে জীবনানন্দের জন্য। ধানসিঁড়ির জন্য।
হেমন্তের ধানের জন্য…

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

One thought on “যুগল কবিতা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত